আহসান হাবীবকে কেন ‘বস’ বলেন সবাই

আজ ১৫ নভেম্বর রম্যপত্রিকা ‘উন্মাদ’–এর সম্পাদক ও কার্টুনিস্ট আহসান হাবীবের জন্মদিন। নতুন প্রজন্মের কার্টুনিস্টরা তাঁকে সবাই ‘বস’ বলেন। কেন তাঁকে ‘বস’ বলা হয়, জন্মদিনে সে কথা জানাচ্ছেন কার্টুনিস্ট মেহেদী হক।

আহসান হাবীব
ছবি: সংগৃহীত

নব্বই দশকের শেষ দিকে নতুন এক শব্দ এল ঢাকায়, ‘বস’। এখন যেমন ‘ব্রো’। আসলে খেলাচ্ছলে আর কিছুটা সারকাজম করে এটা বলা হতো। নিজেরা নিজেরা, বন্ধুরা বন্ধুরা, সবাই সবার বস। তবে ব্যাপারটা তরুণ ইয়ার বন্ধুবান্ধবদের মধ্যেই ছিল। ব্যতিক্রম শুধু কার্টুনিস্ট আহসান হাবীব। তিনি খুব ক্যাজুয়ালি যেকোনো সময় যেকোনো ট্রেন্ড চট করে খুব স্মার্টলি আত্মস্থ করে নেন। এবং তখন আমরা বন্ধুবান্ধবদের মুখে এই শব্দ শুনেছি কি শুনিনি, তার আগেই শোনা গেল তিনি বলছেন, ‘বস, এইটা একটু আঁইকা দাও তো, বস এইটা টাইপ করে দাও।’ এমনকি রিকশা থেকে নেমে রিকশাওয়ালাকে বলা, ‘বস, ভাঙতি তো নাই।’ এই রকম আরকি। ভালোই চলছিল।

কিন্তু ‘উন্মাদ’ পত্রিকার সবার কাছে এর সম্পাদক আহসান হাবীব কীভাবে ‘বস’ হয়ে উঠলেন?

এর উত্তরে বলা যাবে, তিনি বস, কারণ তিনি আহসান হাবীব; অথবা তিনি আহসান হাবীব, তাই তিনি বস। মানে কিনা নিজেই নিজেকে একবার ধারে কাটছেন, আবার ভারেও কাটছেন। ‘উন্মাদ’ নিয়ে উন্মাদনায় মত্ত কার্টুনিস্ট ও আইডিয়ানিস্টদের কাছে তিনি একমেবাদ্বিতীয়ম, বাংলা রম্যজীবী ও প্রেমী সমাজে তিনি ‘গ্র্যান্ডফাদার অব জোকস’। প্রায় অর্ধশতাব্দী ধরে বাংলা কার্টুন ও রম্যসাহিত্য, সঙ্গে জোকস ও শিশু–কিশোরসাহিত্য নিয়ে অনায়াস এগিয়ে যাওয়া এই মানুষের হাত ধরে তৈরি হয়েছেন অসংখ্য কার্টুনিস্ট। আর তিনি শুধু কার্টুনিস্টই তৈরি করেননি, বাংলাদেশে রম্যসাহিত্যের বিকাশেও তাঁর অবদান বলাই বাহুল্য।

মেহেদী হকের আঁকা আহসান হাবীবের কার্টুনচিত্র

সেই অবদানের বিত্তান্ত পরে কখনো বিশদে বলা যাবে। এখন ওই ‘বস’ বিষয়ে আবার ফিরে যাওয়া যাক। ‘উন্মাদ’–এর অফিস এমন এক জায়গা, যেখানে তখন আমরা সবাই সবার বস। কিন্তু আরও হাজারো চটজলদি ট্রেন্ডের মতো এই ‘বস’ ট্রেন্ডও চলে গেল কিছুদিন যেতে না যেতেই। তার বদলে চলে এল ‘পেইন’, ‘প্যারা’, চলে এল ‘হুদাই’। কিন্তু ‘উন্মাদ’–এ রয়ে গেল ‘বস’। আর সেটা এখন আর সবাই নন, একজনই, ওয়ান অ্যান্ড অনলি দ্য বস—আমাদের আহসান ভাই। আহসান হাবীব।

একটা ছোট মজার ঘটনা দিয়ে শেষ করা যাক। ‘উন্মাদ’ পত্রিকার এক ভ্রমণে একবার সবে কথা বলতে শেখা এক পিচ্চিও গিয়েছিল। পুরোটা ভ্রমণের সময় তার মুখে কোনো কথা নেই, গা গা, গি গি ইত্যাদি বাদে। শেষ দিন যখন সবাই চলে আসব, বিদায়ের সময় পিচ্চি হাত নেড়ে টা টা দিতে দিতে আহসান হাবীবের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘বস’।
ছোট–বড় সবার সেই ‘বস’, ‘গ্রান্ডফাদার অব জোকস’ আহসান হাবীবের জন্মদিনে শুভেচ্ছা, সবার পক্ষ থেকে হ্যাপি বার্থডে, বস!