আগে যা ছিল কল্পনায়, এখন তা বাস্তব

কল্পবিজ্ঞান উপন্যাস ও সিনেমার অনেক কিছুই আজকের জমানায় নিরেট বাস্তব। কী সেগুলো? তথ্য–উপাত্ত ঘেঁটে লিখেছেন আহমাদ মুদ্দাসসের

স্টার ট্রেক সিনেমায় এলিয়েনের ভাষা বোঝার জন্য ব্যবহার করা হয়েছিল ইউনিভার্সাল ট্রান্সলেটর

১০০ বছর আগের কারও সঙ্গে দেখা করে যদি বলা হতো, আগামীকাল একটা জুম মিটিং আছে। সবাই যার যার বাসায় বসে একসঙ্গে মিটিং করবে। মিটিংয়ে অংশ নেওয়া সবাই সবাইকে একই স্ক্রিনে দেখতে পাবে। শুধু একটি ইন্টারনেট সংযোগসহ ফোন থাকলেই হবে। মহাশূন্য থেকে এক নভোচারী এই আলোচনায় যুক্ত হবেন। তিনি আছেন শূন্যে ঝুলে থাকা এক মহাকাশ স্টেশনে। যেখানে কোনো মাধ্যাকর্ষণ নেই। ভেসে ভেসে তিনি নিজের প্রতিদিনের কাজ করছেন। এসব শুনে ১০০ বছর আগের লোকটার চোখ ছানাবড়া হয়ে যাওয়ার কথা।

তো ওই লোকটাকে যদি আজকের দিনের স্বাভাবিক কিছু শব্দ বলা হয়, যেমন স্মার্টফোন, চালকবিহীন গাড়ি, কম্পিউটার, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, মহাকাশ স্টেশন, ড্রোন—তার একই রকম অনুভূতি হওয়ার কথা। কোনোভাবেই তাঁকে হয়তো বোঝানো যাবে না, তাঁর সময়ের ১০০ বছরের মধ্যেই এমন গাড়ি চালানো যাবে রাস্তায়, যেটা নিজে নিজে চলবে। গাড়ি কথা বলবে। গন্তব্য নিজেই জিজ্ঞেস করবে। জায়গার নাম বললে নিজে নিজে চালিয়ে পৌঁছে দেবে গন্তব্যে।

প্রযুক্তিবিদদের হাত ধরে বর্তমানে এ সবই খুব স্বাভাবিক হয়ে গেছে। একসময়ের কল্পনাগুলো বর্তমানে বাস্তব। দেখে মনে হতে পারে, উদ্ভাবকেরা গল্প–উপন্যাস বা কল্পবিজ্ঞান পড়ে কিংবা সিনেমা দেখে ধারণা নিয়েছেন। বাস্তব প্রযুক্তি তৈরি করেছেন সে ধারণা থেকে। এই মনে হওয়াটা ভুল নয়। এগুলো আসলেই উদ্ভাবকদের ধারণাকে প্রভাবিত করেছে।

১৯৬৮ সালের সিনেমা ২০০১: আ স্পেস ওডিসিতে দেখা যায়, একটি মহাকাশযানে বিশেষ একটি কম্পিউটার আছে। এই কম্পিউটার ব্যবহার করে মহাকাশযানে থাকা এক লোক পৃথিবীতে তাঁর মেয়েকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন ভিডিও কলে। সিনেমাটি তৈরি হওয়ার ৫০ বছর পরের পৃথিবীতে ভিডিও কল করা হয়ে গেছে একদম স্বাভাবিক। এখন তো মহাশূন্য থেকে নভোচারীরাও ভিডিও কলে যুক্ত হচ্ছেন। আবার কোভিড এসে যোগাযোগের ধরন একদম বদলে দিয়েছে। নতুন এ বাস্তবতায় ভিডিও কলের চর্চা ও গুরুত্ব বেড়েছে। বাসায় বসে পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে, যে কারও সঙ্গে যুক্ত হওয়া এখন খুব স্বাভাবিক।

৩০ বছর আগে ফিরে যাই। এক লোক আপনমনে হাঁটছেন আর হাত নেড়ে নেড়ে অদৃশ্য কারও সঙ্গে কথা বলছেন—এমন দেখলে রাস্তায় লোকেরা তাঁকে পাগল ভাবত। এখন এ রকম অনেকেই কথা বলতে বলতে হাঁটেন। আমরা জানি, তাঁর কানে ছোট একটা ইয়ারবাড আছে। এটি ব্লুটুথের মাধ্যমে যুক্ত আছে তাঁর ফোনে। ফোনের ও পাশে কারও সঙ্গে তিনি কথা বলছেন। এমন ইয়ারফোনের ধারণা পাওয়া যায় ফারেনহাইট ৪৫১ নামের এক উপন্যাসে, যেটি প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৫৩ সালে। বাস্তবে ওই সময়েও ইয়ারফোন ছিল। কিন্তু ওজন ছিল কয়েক টন। দেখতে খুবই বিদ্‌ঘুটে। উপন্যাসে বলা হয়েছিল ভবিষ্যৎ পৃথিবীর এমন এক সময়ের কথা, যেখানে বই নিষিদ্ধ। মানুষ কানে ঝিনুকের মতো বস্তু নিয়ে ঘুরে বেড়ায়, যার মাধ্যমে তৈরি হয় শব্দের বৈদ্যুতিক মহাসাগর। পৃথিবীর সব শব্দ শোনা যায় এই কল্লোলে।

‘স্টার ট্রেক’ নামের টিভি সিরিজে দেখা যায়, মহাকাশ ভ্রমণের সময় ক্যাপ্টেন কার্ক ও স্পক এলিয়েনের সঙ্গে কথা বলেন। এলিয়েনরা অপিরিচিত কোনো ভাষায় কথা বলে। এখানে একটি ‘ইউনিভার্সাল ট্রান্সলেটর’ বা বিশ্বজনীন অনুবাদক যন্ত্র ব্যবহার করে এলিয়েনের ভাষাকে তাৎক্ষণিক অনুবাদ করতে দেখা যায়। বর্তমানে এলিয়েন খুঁজে পাওয়া না গেলেও যোগাযোগের জন্য ভাষার বাধা আর নেই। যেকোনো ভাষা থেকে স্কাইপের নতুন অনুবাদ পদ্ধতি ব্যবহার করা যায়। যোগাযোগ করা যায় তাৎক্ষণিক অনুবাদের মাধ্যমে।

একদিন যা ছিল কেবল বিজ্ঞান কল্পকাহিনি, কেবলই কল্পনা, শতবর্ষের ব্যবধানে প্রযুক্তিবিদদের হাত ধরে সেগুলো এখন প্রতিদিনের জীবনের স্বাভাবিক অনুষঙ্গ হয়ে গেছে। তবে সব বিজ্ঞান কল্পকাহিনি বাস্তব রূপ পাবে না। আসলে খুব অল্প কিছু ধারণাই মিলে গেছে বাস্তবের সঙ্গে; অথবা সামনে মিলবে।

সূত্র: ভেইল ডেইলি এবং স্পেস ডটকম