অরুন্ধতী রায় কী লিখেছেন ‘আজাদি: ফ্রিডম, ফ্যাসিজম, ফিকশন’ বইটিতে?

সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে অরুন্ধতী রায়ের নতুন বই ‘আজাদি: ফ্রিডম, ফ্যাসিজম, ফিকশন’। বইটি বেশ সাড়া ফেলেছে। কিন্তু কী আছে এই বইটিতে? ভবিষ্যতে কী আছে আমাদের সামনে? বইয়ের নিবন্ধগুলো ঘেঁটে তৈরি করা হয়েছে এই লেখা।

‘ভবিষ্যতে কী আছে আমাদের সামনে?’
‘নতুন করে নতুন এক বিশ্বকে কল্পনা করা; একমাত্র এটাই।’
অরুন্ধতী রায় নিজের প্রশ্নের উত্তরে এ কথাই বলছেন তাঁর সদ্য প্রকাশিত ‘আজাদি: ফ্রিডম, ফ্যাসিজম, ফিকশন’ গ্রন্থের ভূমিকায়।

তিনি বলছেন, ‘আমরা এই বইটার শিরোনাম কী হতে পারে, তা নিয়ে আলাপ করছিলাম। যুক্তরাজ্য থেকে বইটির প্রকাশক সাইমন প্রসার আমার কাছে জানলে চাইল, ঠিক কোন ভাবনা তোমাকে ভাবিয়েছে যখন তুমি “আজাদি” নিয়ে ভাব? এক মুহূর্ত দ্বিধা না করে নিজেকেই অবাক করে দিয়ে আমি উত্তর দিলাম, “একটি উপন্যাস!” আমার মতে, একটি উপন্যাস হলো স্বাধীনতা...যার সঙ্গে যুক্ত থাকে দায়িত্ব। সেই স্বাধীনতা সত্য ও ধ্রুব। এই গ্রন্থের বেশ কিছু রচনা একজন ঔপন্যাসিকের দৃষ্টিভঙ্গীতেই লেখা হয়েছে। রচনাগুলোয় আমার উপন্যাসের জগতের ছায়া এসে পড়েছে।’ অরুন্ধতীর কথা থেকেই বোঝা যায়, স্বাধীনতা, ফ্যাসিজম আর গল্প-উপন্যাসের মিলিত মোহনা এই ‘আজাদি’।


‘আজাদি’ উর্দু শব্দ। এর অর্থ স্বাধীনতা। বহু বছর ধরে কাশ্মীরের মুক্তিকামী জনগণ নিজেদের অস্তিত্বের পক্ষের স্লোগান হিসেবে উচ্চারণ করে আসছে ‘আজাদি’। পরিহাসের বিষয় হলো ভারতে বসবাসকারী লাখ লাখ ভারতীয় নাগরিকই আজ এই স্লোগানই উচ্চারণ করছে দেশটির সাম্প্রতিক হিন্দুত্ববাদের বিরুদ্ধে। যে ভারতকে কাশ্মীরিরা ‘আধিপত্যবাদী দেশ’ হিসেবে চিহ্নিত করে, সেখানের নাগরিকেরাই ‘আজাদি’ স্লোগানকে নিজেদের প্রতিবাদের হাতিয়ার হিসেবে নিয়েছে এখন।

অরুন্ধতী রায় প্রশ্ন রাখছেন, এই যে স্লোগানটা সবার হয়ে উঠেছে, এর মধ্যে দিয়ে কি কোনো ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে, নাকি আরও দূরত্ব নির্মিত হচ্ছে? শুধু ভারতেই নয়, পুরো বিশ্বেই এই স্লোগান আজ প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। করোনাভাইরাস এই আজাদিকে সবার সামনে বিরাট প্রশ্ন আকারে আবার দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। আন্তর্জাতিক সীমানা রুদ্ধ হচ্ছে, নিজের দেশের মধ্যেও নাগরিকেরা নিজ ঘরে বন্দিজীবন যাপন করছে। এভাবে পুরো পৃথিবীই যেন অসাড় হয়ে পড়ছে, থমকে আছে ধ্বংসের মুখোমুখি; যার বেশির ভাগ কারণই অর্থনৈতিক।

পেঙ্গুইন প্রকাশনী থেকে অতি সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে অরুন্ধতী রায়ের ‘আজাদি: ফ্রিডম, ফ্যাসিজম, ফিকশন’ নামের একটি নিবন্ধ সংকলন। গ্রন্থিত নিবন্ধগুলোর কয়েকটি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দেশের সভা-সেমিনারে লেখক বক্তৃতা হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। এই গ্রন্থের বিভিন্ন নিবন্ধের ভেতর দিয়ে অরুন্ধতী পাঠকদেরকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছেন স্বাধীনতা বিষয় নিয়ে নতুন করে গভীরভাবে চিন্তা করতে। কারণ, কোভিডের এই মহামারিকালে এবং এর আগের বিভিন্ন সময়েও স্বৈরতন্ত্র জেঁকে বসেছে বিশ্বের প্রভাবশালী রাষ্ট্রগুলোয়। এই পরিপ্রক্ষিতে এ বই যেন বিশেষ কিছু ঘোষণা করছে স্বাধীনতা নিয়ে। এসব গভীর ভাবনার নিবন্ধে রাজনীতি ও সাহিত্য নিয়ে খোলামেলা কথা লিখেছেন তিনি। তাঁর ভাবনা পাঠকদের নতুনভাবে হিসাব কষতে সাহায্য করবে স্বাধীনতা, স্বৈরতন্ত্র আর সাহিত্য বিষয়ে। অরুন্ধতী রায়ের ধারণা, ‘আজাদি’—এই শব্দটি এ মুহূর্তে আমাদের সামনে অনিশ্চয়তার দোলায় দুলছে।

বইটি প্রকাশিত হওয়ার পরে অরুন্ধতী রায় আমেরিকার নিউ মেক্সিকো বিশ্ববিদ্যালয়ের আমেরিকান স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক নিক এস্টেজকে দীর্ঘ এক সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। সাম্প্রতিক নিবন্ধের বিষয়ে তাঁর নিজের ভাবনা তুলে ধরেছেন সেখানে। ওই সাক্ষাৎকারের পরে দ্বিমুখী প্রতিক্রিয়া এসেছে পাঠক আর শ্রোতাদের কাছ থেকে। বেশির ভাগ পাঠক-শ্রোতাই লেখকের সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন; আবার অরুন্ধতী রায়কে ভারতবিরোধী অভিধা দিতেও অনেকে ছাড়েননি। কী আছে এই গ্রন্থের নিবন্ধগুলোয়? কী বলতে চেয়েছেন লেখক ‘আজাদি’ বিষয়ে...তা এখন পাঠকের হাতে পৌঁছে গেছে। তবু যাঁরা এখনো হাতে পাননি, তাঁরা একটা ধারণা পেতেই পারেন অরুন্ধতী রায়ের নিবন্ধের কিছু নির্বাচিত অংশ পাঠ করে।


‘আজাদি’র গ্রন্থসূচিতে প্রথম নিবন্ধ হিসেবে ২০১৮-এর জুনে লন্ডনে ব্রিটিশ লাইব্রেরিতে দেওয়া তাঁর সাহিত্যের অনুবাদ বিষয়ে ‘ডব্লিউ জি সেবাল্ড বক্তৃতা’টি গ্রন্থিত হয়েছে। ‘ইন হোয়াট ল্যাঙ্গুয়েজ ডাজ রেইন ফল ওভার টরমেন্টেড সিটিজ’ শিরোনামের নিবন্ধে অরুন্ধতী লিখছেন, দেশভাগের নির্মমতার বলি হয়েছে যা কিছু, তার মধ্যে অন্যতম হলো ভাষা। হিন্দুস্থানে হিন্দি আর উর্দুকে দেখা হচ্ছে যথাক্রমে হিন্দু আর মুসলিমদের ভাষা হিসেবে। আর ভাষার এই শ্রেণিবিভেদ হিন্দুত্ববাদ উসকে দিতে নিয়ামক হয়ে কাজ করছে।
‘আমার প্রথম উপন্যাস “দ্য গড অব স্মল থিংস” প্রকাশিত হওয়ার সপ্তাহখানেক পরে কলকাতায় এর একটা পাঠ-আয়োজন ছিল।

দর্শক-শ্রোতার মধ্য থেকে হঠাৎ একজন উঠে দাঁড়িয়ে উষ্মার সঙ্গে বললেন, “সেরা কোনো উপন্যাস কেউ কি কখনো বিদেশি ভাষায় লেখে? নিজের মাতৃভাষার বাইরে অন্য কোনো ভাষায়?” আমি নিজে কখনো মনে করিনি, সেরা একটা উপন্যাস লিখেছি। আমি তাঁর রাগের কারণটা বুঝতে পারলাম। একজন ভারতীয় হয়ে, ভারতে বাস করে ইংরেজিতে একটা উপন্যাস লিখেছি আর তা দেশে-বিদেশে সাড়া ফেলেছে, এটা তিনি সহজে মানতে পারছেন না। আমার উত্তরটি তাঁকে আরও রাগিয়ে দিল। বললাম, “নবোকভ”। শুনে তিনি রেগে ঝড়ের বেগে বেরিয়ে গেলেন সেই অনুষ্ঠানস্থল থেকে।


‘আমার মা হলেন একজন সিরিয়ান–খ্রিষ্টান নারী, যিনি কেরালায় থাকতেন আর মালয়ালাম ভাষায় কথা বলতেন। আর বাবা ছিলেন বাঙালি, কলকাতাবাসী। আসামের চা-বাগানে কাজ করতেন। সেই কাজের সূত্রে তিনি কেরালায় আসেন আর তখন আমার মায়ের সঙ্গে পরিচয় ও পরিণয় হয়। তাঁরা দুজন পরস্পর ইংরেজিতে কথা বলতেন। আসামের শিলং শহরে আমার জন্ম। জন্মের পরে প্রথম দুবছর আমার কাটে শিলংয়ে। আমার জন্মের আগে থেকেই মা-বাবার মধ্যে সম্পর্কের তিক্ততা শুরু হয়েছিল এবং সেটা বাড়ছিলই। তাঁরা যখন ঝগড়া করতেন, আমি চা-বাগানের কোনো কর্মীর ঘরে গিয়ে আশ্রয় নিতাম। আর তখন তাঁদের কথাবার্তা শুনে শুনে হিন্দির মতো একটা ভাষা শিখে গেলাম। তাঁরা বলতেন বাগানিয়া, মানে বাগানের ভাষা। এরপর আমার মা-বাবা পৃথক হয়ে গেলে মায়ের সঙ্গে আমি আর আমার ভাই দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ুতে চলে এলাম। ওখানেই মালয়ালামকে নিজের ভাষা মনে করে বড় হতে থাকলাম আমি। কিন্তু স্কুলে একটু উঁচু ক্লাসে উঠতেই মা আমার কেরিয়ার নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়লেন। তিনি তখন জোর করতে থাকলেন, আমি যেন স্কুলে, ঘরে-বাইরে—সবখানেই ইংরেজিতে কথা বলি। এমনও হলো, একেক দিন সারা বিকেল ও সন্ধ্যা ধরে, পাতার পর পাতা ভরে হাজারবার আমাকে লিখতে হতো, “আমি ইংরেজিতে কথা বলব।” ১৬ বছর পার হলে আমাকে দিল্লিতে চলে আসতে হলো, একা। সেখানে স্থাপত্যের একটা স্কুলে আমার ভর্তি হওয়ার কথা। হিন্দি বলতে তখন আমি একেবারেই পারতাম না, ভাঙা ভাঙা, দু-একটা বাক্য ছাড়া। অথচ দিল্লিতে আসার পরে আমার একটাই কাজ হলো, কথাবার্তা, প্রশ্নোত্তর—সবই হিন্দিতে শোনা আর বলার চেষ্টা করা। ধীরে ধীরে হিন্দি ভাষায় আমার দখল চলে এল।’


এরপরে লেখক অন্য এক অনুচ্ছেদে লিখছেন, ‘“দ্য মিনিস্ট্রি অব আটমোস্ট হ্যাপিনেস” অন্তত ৪৮টা ভাষায় লেখা হয়েছে। হিন্দি আর উর্দু—এই দুটো ভাষাতেও হয়েছে। দুটো ভাষাতেই আমার মনে হয়েছিল, এবার আমার ঘরের ভাষায় ফিরল এই উপন্যাস। যদিও ভারতে আজকাল উর্দুভাষী তরুণ প্রজন্ম পারসি হরফে পড়তে পারে না, তারা কেবল দেবনাগরী হরফেই পাঠ করে। উর্দু এখন আর ততটা মুসলিমদের ভাষা হিসেবে ধরা হয় না, যতটা ধরা হয় “পাকিস্তানি” ভাষা হিসেবে। সেটা অনেক ভারতীয় জাতীয়তাবাদপুষ্ট মানুষের চোখে একধরনের অপরাধই বটে।’


এ নিবন্ধের একেবারে শেষে পৌঁছে অরুন্ধতী রায় লিখছেন, ‘বাগানিয়া, মালয়ালাম, হিন্দি, ইংরেজি, উর্দু—এত সব ভাষাবৈচিত্র্যের ভেতর দিয়ে বেড়ে ওঠাটা একটা আনন্দের এবং অর্জনের বিষয়। “দ্য মিনিস্ট্রি অব আটমোস্ট হ্যাপিনেস”-এর কেন্দ্রীয় চরিত্র আনজুম জান্নাত গেস্টহাউসে নিজের ঘর বানিয়ে নিল। সেখানে এই দুনিয়া ছেড়ে যাওয়া অন্যদের সঙ্গে দেখাও হতে থাকল। জান্নাতে যে শব-আয়োজনগুলো মাঝেমধ্যে হয়, সেখানে আরবি ভাষার ফাতেহা পাঠ হয়, তারা হিন্দিতে “দ্য ইন্টারন্যাশনাল” গায়, আবার শেক্‌সপিয়ারের “হেনরি ভি” গল্প থেকে ইংরেজিতে পাঠও করা হয়। তো, পাবলো নেরুদার সেই প্রশ্নের উত্তরে কী বলব, যা আমার এই নিবন্ধের শিরোনাম? ...“ইন হোয়াট ল্যাঙ্গুয়েজ ডাজ রেইন ফল ওভার টরমেন্টেড সিটিজ?” যন্ত্রণাবিদ্ধ শহরকে ভিজিয়ে কোন ভাষায় বৃষ্টি পড়ে? উত্তরে আমি নির্দ্বিধায় বলব, তর্জমার ভাষায়।’

‘আজাদি’র শেষ নিবন্ধ দ্য পেনডামিক ইজ আ পোর্টাল’-এ অরুন্ধতী রায় লিখছেন, ‘২০২০-এর এপ্রিলে দাঁড়িয়ে কেউ কি এমন আছেন, যিনি এতটুকু আতঙ্কিত না হয়ে ‘gone viral’ শব্দটি উচ্চারণ করতে পারেন? কেউ কি এমন আছেন, যিনি দরজার হাতল, কাগজের বাক্স কিংবা বাজারের থলের দিকে সন্দেহভরা দৃষ্টিতে তাকাচ্ছেন না, ভীতি নিয়ে স্পর্শ করছেন না সেগুলো? প্রতিনিয়ত তাদের ভাবনায় কি এক অদেখা জীবাণু তাড়া করে ফিরছে না যে এই বুঝি আমাদের ফুসফুসের মধ্যে ওরা ঢুকে গেল! একজন আগন্তুককে চুমু খাব, লাফ দিয়ে পাবলিক বাসে উঠব বা কোনো রকম ভীতি ছাড়াই সন্তানকে স্কুলে পাঠাব...এমনটা কেউ কি ভাবতে পারছেন?


‘এ রকম একটা সময়কে সামনে রেখে কে নিছক আনন্দের জীবনের কথা ভাবছেন, কোনো ঝুঁকিহীন জীবনের কথা ভাবছেন? আমাদের মধ্যে প্রায় সবাই-ই কি নিজেরা হাতুড়ে এপিডোমোলজিস্ট, ভাইরোলজিস্ট, পরিসংখ্যানবিদ বা ঈশ্বরপ্রেরিত দূত হয়ে উঠছি না মনে মনে? কোনো চিকিৎসক বা বিজ্ঞানী কি গোপনে প্রার্থনা করছেন না একটা অলৌকিক ঘটনা ঘটার জন্য? কোনো বিজ্ঞানবিদ্বেষী ধর্মীয় পুরোহিত সবার আড়ালে বিজ্ঞানের কাছেই নত হতে চাইছেন না? আবার এই ভাইরাস যখন সর্ববিস্তারী রূপ নিয়েছে, তখন সারা দিন পাখির গান শুনে, রাজপথে ময়ূরের পেখমখোলা নাচ দেখে অথবা আকাশের নৈঃশব্দ্যে পুলকিত হচ্ছেন, এমন কেউ কেউও তো আছেন, নাকি?


‘করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় আড়াই কোটি আর মৃত্যু ছিনিয়ে নিয়েছে নয় লাখ মানুষের প্রাণ। অনুমান করা যায়, এই সংখ্যা দিনের পর দিন আরও বাড়বে। ভাইরাস এমনভাবে তার পরিধি বাড়িয়েছে, যা দেশ, কালের সীমানা মানছে না। একদিকে ছড়িয়ে পড়ছে ভাইরাস আর অন্যদিকে মানুষ অসুস্থ হয়ে দেশ, শহর ও নিজের ঘরে বন্দী জীবনযাপনে বাধ্য হচ্ছে। কিন্তু এর প্রবাহ ঠিক পুঁজিবাদের প্রবাহের বিপরীতে বইছে। সে লাভ খুঁজছে না, সে খুঁজছে শুধু বিস্তার। কোনো রকম আর্থিক লাভ–ক্ষতির প্রত্যাশা ছাড়াই সে তার গতিপথ নির্মাণ করে নিচ্ছে। ইমিগ্রেশনের বিধিবিধানকে একটা তামাশায় রূপান্তরিত করেছে। ডিজিটাল খবরদারি, স্বাস্থ্যপরীক্ষার নিয়মনীতি—এসব সবকিছুকেই সে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করতে পেরেছে। আলাদা করে যেটা বলার, তা হলো বিশ্বের সবচেয়ে ধনী আর ক্ষমতাশালী রাষ্ট্রগুলোই সবচেয়ে বেশি ঘায়েল হয়েছে এই ভাইরাসে। পুঁজিবাদকে যদিও নাস্তানাবুদ করে ফেলেছে এই মহামারিকাল; তবে আমরাও আলাদা করে ভাবার সুযোগ পেলাম, এই পুঁজিবাদের ভাঙচুর টুকরোগুলোকে আবার জোড়া লাগাব, নাকি অন্য কোনো ব্যবস্থায় নতুন করে ভাবব!


‘বিশ্বনেতারা যাঁরা এই মহামারি সামাল দেওয়ার কাজে সামনের সারিতে কাজ করছেন, তাঁরা সবাই-ই যুদ্ধবাজ। তাঁরা শুধু হুমকি দেওয়ার জন্যই বলেন, তা নয়, তাঁরা আসলেই যুদ্ধ করতে চান। কিন্তু এই মহামারি যদি সত্যিই একটা যুদ্ধের সমান হতো, তাহলে আমেরিকার মতো প্রস্তুত তো আর কেউ ছিল না। তবু আমরা দেখতে পেলাম, মাস্ক, গ্লাভস আর চিকিৎসাসামগ্রী—এসব সরবরাহে আমেরিকার সরকারের ভাগে কম পড়ল। অথচ এটা যদি অস্ত্র, বোমার বিষয় হতো, তাহলে আর কমতি হতো না কিছুতে।

নিউইয়র্কের গভর্নরের সংবাদ সম্মেলনে আমরা শুনতে পাই, আমেরিকার মতো দেশে এই মহামারিতে তাদের চিকিৎসাব্যবস্থার কী নাজেহাল অবস্থা! পৃথিবীর অন্য প্রান্তে বসে আমরা অবাক হয়ে তখন বলতে থাকি, “হা ঈশ্বর, এই হলো আমেরিকা”!’
লেখক আরও লিখছেন, ‘এবার ফিরি নিজের দেশের দিকে। ভারতের মতো একটা দরিদ্র দেশ—এই মহামারিতে যে কিনা আটকে আছে সামন্তবাদ আর ধর্মীয় আধিপত্যবাদের মাঝখানে। ঘুরপাক খাচ্ছে উগ্র হিন্দুত্ববাদ দ্বারা শাসিত জাতপাতের বিভেদ আর পুঁজিবাদের মধ্যখানে। গত ডিসেম্বরে চীন যখন উহানে শুরু হওয়া করোনাভাইরাস সামলাতে ব্যস্ত, ঠিক ওই সময় ভারত সরকার মুসলিম নাগরিকত্ব বিল নিয়ে ফুঁসে ওঠা আন্দোলনকে নগ্নভাবে আক্রমণ করছে। আর শেষ পর্যন্ত সেই বিল সংসদে উঠিয়ে পাসও করে ফেলছে। আমাদের দেশে ৩০ জানুয়ারি প্রথম কোভিডে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হলো, যার আগের দিন ফিরে গেছেন আমাজন বনখেকো আর কোভিড অস্বীকারকারী নেতা বোলসোনারো। এরপরের মাসে এলেন ট্রাম্প, যখন কোভিড আরও বিস্তারী। তিনি তখন গুজরাটে ‘নামাস্তে ট্রাম্প’ নামের আয়োজনে ক্রিকেট স্টেডিয়াম উদ্বোধন করতে লাখো মানুষের জমায়েতে উপস্থিত হলেন রাষ্ট্রীয় অতিথি হিসেবে। অথচ ভারত সরকার ফেব্রুয়ারিতে যথেষ্ট সময় হাতে পাওয়ার পরেও কোভিড নিয়ন্ত্রণে গুরুত্ব দেয়নি।


‘এর পরপরই শুরু হলো দিল্লি সংসদের নির্বাচন; ক্ষমতাসীন বিজেপি নিশ্চিত হার থেকে বেঁচে যাওয়ার জন্য জোর চেষ্টা চালাল। রাজনৈতিক প্রহসনের এক খেলা খেলল তারা। অতি উগ্র হিন্দুত্ববাদের একটা প্রচার তারা শুরু করল। শারীরিক আক্রমণের ভয় দেখানো আর যারা বিদ্রোহী ছিল, তাদের সরাসরি গুলি করার হুমকি থাকত সেই প্রচারে। শেষ পর্যন্ত তারা হারল। আর এই হারের পেছনে দায়ী করা হলো মুসলিমদের। এর শাস্তি হিসেবে প্রতিবেশী কর্মজীবী মুসলিমদের ওপরে হামলে পড়ল সশস্ত্র উগ্র হিন্দুরা; পুলিশের সহায়তায় সেই ঘটনা ঘটেছিল উত্তর দিল্লিতে। অজস্র ঘর, দোকান, মসজিদ, স্কুল—সব পুড়িয়ে দেওয়া হলো। তাতে মারা গেল প্রায় ৫০ জন মানুষ, মুসলিম ও কজন হিন্দু। হাজার হাজার মুসলিম কবরস্থানে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিল তখন। নির্যাতিত অনেক মৃত মানুষকে উদ্ধার করা হলো নর্দমা থেকে। আর সেই সময়টাতেই প্রথম ভারতীয় প্রশাসন করোনাভাইরাস নিয়ে আলোচনায় বসেছিল। সরকারে আর প্রশাসনের আলোচনায় এই প্রথম কোভিড এল। আর সেবারই ভারতীয় জনগণ প্রথম স্যানিটাইজার শব্দটি শুনল সতর্কতা হিসেবে।


‘মার্চ মাসটা সরকারের কাটল অন্য কাজের ব্যস্ততায়। মধ্যপ্রদেশে কংগ্রেস শাসনকে হটিয়ে বিজেপি সরকারকে বসানোর আয়োজনে কোভিডের কথা বিবেচনায় রাখেনি। ১১ মার্চ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কোভিডের সংক্রমণকে মহামারি হিসেবে ঘোষণা করল। অথচ ভারতীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ১৩ মার্চ এটিকে গুরুত্ব না দিয়ে “স্বাস্থ্যের জন্য জরুরি হুমকি নয়” বলে বার্তা দিল। শেষ পর্যন্ত মার্চের ১৯ তারিখে মোদি এই সংক্রমণ নিয়ে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিলেন। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার আহ্বান আর বারান্দা থেকে কাঁসর-ঘণ্টা বাজানোর আহ্বান ছাড়া তিনি আর কিছুই বললেন না। মোদির আহ্বানে আনন্দচিত্তে সাড়া দিতে দলে দলে মানুষ কাঁসর–ঘণ্টা বাজিয়ে, নাচতে নাচতে রাস্তায় মিছিল বের করল। সামাজিক দূরত্ব মানার নির্দেশ কোনো কাজই করল না। গোমূত্র খাওয়ার হিড়িক পড়ল। মুসলিমরাও মনে করল, এই ভাইরাস থেকে নিস্তার পাওয়া যাবে শুধু আল্লাহর উপাসনায়। তাই তারাও দলে দলে মসজিদে ভিড় জমাতে লাগল। আর এর ঠিক চার দিন পরেই এল সেই ঘোষণা, যা পুরো ভারতকে স্তব্ধ করে দিল মাত্র চার ঘণ্টার নোটিশে। অবিরাম লকডাউন! কর্মজীবী মানুষকে, কাজের জন্য শহরে থাকতে আসা মানুষকে নিজ নিজ গ্রামে ফেরত যাওয়ার সময়টুকু না দিয়ে সেই তামাশাপূর্ণ “লকডাউন” চাপিয়ে দেওয়া হলো। হেঁটে দলে দলে গ্রামে ফিরতে থাকা অসহ দুর্দশাগ্রস্ত মানুষকে মিডিয়া তখন নাম দিল পরিযায়ী শ্রমিক! একেবারে শূন্য প্রস্তুতিতে কোটি মানুষকে পথে নামিয়ে দেওয়া হলো—আশ্রয়হীন, খাদ্যহীন, কর্মহীন।’


আরও এক জায়গায় অরুন্ধতী রায় লিখছেন, ‘কিছু মানুষ তাদের স্মৃতিতে সেই ১৯৪৭ সালকেই দেখতে পেল, যখন ভারত বিভক্ত হয়েছিল আর পাকিস্তান জন্ম নিল। তবে এবারের এই শহরছাড়া, নামান্তরে দেশান্তরিত হওয়ার দৃশ্যের মধ্যে শ্রেণিবৈষম্য যতটা ছিল, ধর্ম ততটা ছিল না। এখানে সবাই যে সবচেয়ে দরিদ্র শ্রেণির মানুষ ছিল, তা-ও নয়, মধ্যবিত্ত কর্মজীবী শ্রেণির মানুষও এই দলে ছিল প্রচুর পরিমাণে। এ অবস্থা যখন চরমে, আমি একটা পত্রিকার “সাংবাদিক-পাস” নিয়ে প্রায়ই দিল্লি আর উত্তর প্রদেশের সীমান্ত এলাকা গাজিপুরে যেতাম। ওদের সঙ্গে কথা বলতাম, সত্যদর্শনের চেষ্টা করেছি।


‘সেই সময়টার সঙ্গে পুরাণের সাদৃশ্য আছে বলে মনে হলেও আসলে তা নয়। বাইবেলের লেখাতেও এমন দৃশ্য ছিল না, যেখানে এত বেশিসংখ্যক মানুষ এভাবে এক জায়গায় মানবেতর জীবন কাটাতে পারে। কোভিড সংক্রমণে শারীরিক দূরত্ব মানার কথা বলা হলেও এখানে ঠিক তার উল্টোটা ঘটল। এসব মানুষের দুর্দশা দেখলে মনে হবে যে মোদি নিজ দেশের মানুষকেই শত্রুপক্ষ মনে করে এই অবস্থা চাপিয়ে দিয়েছেন। প্রায় ৪০ কোটি ৫০ লাখ মানুষের দেখভালের প্রয়োজনের কথা মোদি বিবেচনাতেই রাখেনি। যাদের সঙ্গে আমি কথা বলেছি, ওদের কাছে ভাইরাসের ভয়ের চেয়েও এই কর্মহীনতা, ক্ষুধা আর গৃহহীনতার কষ্টই তাদের আরও বেশি যন্ত্রণা দিচ্ছিল।

‘আজাদি’র শেষ নিবন্ধ ‘দ্য পেনডামিক ইজ আ পোর্টাল’-এ অরুন্ধতী রায় লিখছেন, ‘২০২০-এর এপ্রিলে দাঁড়িয়ে কেউ কি এমন আছেন, যিনি এতটুকু আতঙ্কিত না হয়ে ‘গন ভাইরাল’ শব্দটি উচ্চারণ করতে পারেন? কেউ কি এমন আছেন, যিনি দরজার হাতল, কাগজের বাক্স কিংবা বাজারের থলের দিকে সন্দেহভরা দৃষ্টিতে তাকাচ্ছেন না, ভীতি নিয়ে স্পর্শ করছেন না সেগুলো? প্রতিনিয়ত তাদের ভাবনায় কি এক অদেখা জীবাণু তাড়া করে ফিরছে না যে এই বুঝি আমাদের ফুসফুসের মধ্যে ওরা ঢুকে গেল! একজন আগন্তুককে চুমু খাব, লাফ দিয়ে পাবলিক বাসে উঠব বা কোনো রকম ভীতি ছাড়াই সন্তানকে স্কুলে পাঠাব...এমনটা কেউ কি ভাবতে পারছেন?

‘তবে ভারতের আঞ্চলিক সরকারগুলো এই বিপদের দিনে কেন্দ্রীয় সরকারের চেয়ে অনেক বেশি দায়িত্বশীল ও মানবিক ভূমিকা পালন করেছে। ট্রেড ইউনিয়ন, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো মানুষের সহায়তায় যার যার সাধ্যমতো এগিয়ে এসেছে। কেন্দ্রীয় সরকার এখানে পুরোপুরিই ব্যর্থ; আর ব্যর্থ হবে নাই–বা কেন, তাদের জাতীয় ত্রাণ তহবিলে অর্থেরই ঘাটতি ছিল। বাইরের মানুষের অনুদানে যা সংগ্রহ হচ্ছিল, তা দিয়ে মোদির মুখের ছবিওয়ালা খাবারের বাক্স বানিয়ে কিছু মানুষের মধ্যে বিলি করা হচ্ছিল। মোদি সেই সময়টাতে নিজের যোগব্যায়ামের ভিডিও করে প্রচার করতে ব্যস্ত থাকে। এসব ভিডিওতে তিনি ভারতীয়দের লকডাউন অবস্থায় কী করে মানসিক চাপ থেকে দূরে থাকা যায়, সেই বার্তা দিচ্ছিলেন। এই আত্মপ্রচার একটা জাতির কঠিন সময়ে কী ভীষণ সমস্যার! তাঁকে কে বোঝাবে, এসব যোগাসনের ভিডিও প্রচারের চেয়ে ফরাসি প্রধানমন্ত্রীকে বরং আলোচনায় ডেকে বসা উচিত। তাঁকে বলুন, ফাইটার জেট বিক্রয়ের চুক্তিটা বাতিল করে সেই ৮০০ কোটি রুপি ফেরত দিক, যা দিয়ে আমাদের ক্ষুধার্ত অসহায় মানুষকে খাদ্য সরবরাহ করতে পারি।


‘অনেকে আবার নিজেদের মতো করে ভাবছেন, চীন হয়তো এই করোনাভাইরাসের উদ্ভাবক। আমি এই বিতর্কে না জড়িয়ে শুধু বলব, এই মহামারি পুরো বিশ্বকে স্তব্ধ করে দিয়েছে। সব মানুষের সামাজিক, অর্থনৈতিক জীবনকে ধ্বংসের প্রান্তে এনে পৌঁছে দিয়েছে। আমরা এখন কেবলই ভাবছি, এসব অসাড়তা কাটিয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপনে কখন ফিরব বা আদৌ ফিরতে পারব কি না! এমনিতেই বিশ্বের অনেক ধারণাই এখন বদলে গেছে, এই মহামারি বদলে দিয়েছে। তো আমদের সামনে এখন নতুন প্রশ্ন এসে দাঁড়িয়েছে, আমরা পুরোনো পৃথিবীতে না ফিরে নতুন ব্যবস্থায় নতুন ধারণার এক নতুন বিশ্ব গড়তে চাই কি না! আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, পুরোনো সব সংস্কার, বিদ্বেষ-ব্যবস্থার খোলনলচে বদলে আলোকিত এক বিশ্বের প্রস্তুতি নেওয়া উচিত আমাদের। যদিও জানি, সেই পথটা খুব সহজ নয়। তবু আশা না ছেড়ে, তা পূরণের জন্য লড়াইটা জারি রাখতে হবে। বিদ্বেষ আর মন্দ সংস্কারগুলো ত্যাগ করার শিক্ষা আর সাহস জমাতে হবে আমাদের।’


অরুন্ধতী রায়ের লেখা এই নির্বাচিত অংশগুলো পাঠ থেকে এ গ্রন্থ সম্পর্কে একটা ধারণা পাঠকের ভাবনায় ছাপ ফেলে। এরপরও যেটা বলার, ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলো যখন ঘটতে থাকে, তাৎক্ষণিকভাবে আমরা হয়তো গভীরে ঢুকে বিস্তারিত জানতে পারি না। লেখক এই বইয়ে ক্রান্তিকালের ঐতিহাসিক বিষয়গুলোর ধারাবর্ণনা দিলেন তাঁর লেখা বিভিন্ন নিবন্ধে। বিশ্বরাজনীতি শুধু নয়, ভারতীয় রাজনীতিতে আধিপত্যবাদ আর শাসন দিনের পর দিন দিন যে শুধু বেড়েই চলেছে, সে বিষয়গুলোয় তিনি আলোকপাত করেছেন।


বইটিতে আরও বর্ণিত হয়েছে কাশ্মীরের স্বাধীনতার প্রেক্ষাপট, ভারতীয় সৈন্য দিয়ে তাদের নির্যাতনের কাহিনি। কাশ্মীরে বেশির ভাগ মানুষ মুসলিম এবং তা পাকিস্তানের সঙ্গে সীমানা ভাগাভাগির গা ঘেঁষে অবস্থিত। এখানে সারা বছরই লড়াই, সংগ্রাম, নির্যাতন, নিয়ন্ত্রণ লেগেই থাকে। কারণ, দুপক্ষই তাদের অধিকারের দাবিতে শক্ত অবস্থান নিয়ে আছে। ২০১৯ সালের আগস্ট থেকে আধিপত্যবাদ আর নিয়ন্ত্রণের চূড়ান্ত ক্ষমতা দেখাতে মোদি সরকার সেখানে সৈন্য দিয়ে ঘিরে রেখেছে, মার্শাল ল জারি করেছে। কাশ্মীরকে বাইরের বিশ্ব থেকে একেবারে বিযুক্ত করে রেখেছে অনির্দিষ্টকালের লকডাউনের ঘোষণা দিয়ে। সব রকম ডিজিটাল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে, ইন্টারনেট, মেইল—সবই সেখানে মৃত অবস্থায়। আমরা ছয় মাসের লকডাউনেই সব রকম যোগাযোগব্যবস্থা হাতের মুঠোর মধ্যে ভরেও এমন বন্দী বন্দী ভাব নিয়ে বিরক্ত হয়ে উঠছি। আর সেখানে ভাবা যায়, এক বছরের বেশি সময় ধরে এমন শক্ত লকডাউন আর সেনা নিয়ন্ত্রণে কাশ্মীরিরা কেমন কঠিন জীবন যাপন করে? এসবই এসেছে অরুন্ধতীর ‘আজাদি’তে।


‘আজাদি’—এই স্লোগান যেখানে এ উপমহাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমদের অস্তিত্বের স্লোগান হিসেবে পরিচিত, তা আজ ভারতের আধিপত্যবাদের বিপক্ষেও দারুণভাবে উচ্চারিত হচ্ছে। ৩ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত ‘আজাদি: ফ্রিডম, ফ্যাসিজম, ফিকশন’-এর নিবন্ধগুলোয় অরুন্ধতী রায় ভারতের আধিপত্যবাদ আর রাষ্ট্রের কর্তাব্যক্তিদের ভূমিকা নিজের বুদ্ধিবৃত্তিক সাহসী লেখনী আর সহমর্মিতার মিশেলে গভীরভাবে বর্ণনা করেছেন। কম লেখকই আছেন, যাঁরা সাহসের সঙ্গে এভাবে সত্য উচ্চারণ করতে পারেন।