আংটি

আজও বউ হাতের আংটিটার দিকে তাকিয়ে আছে। আঙুল নেড়েচেড়ে দেখছে।

ফজলুর মেজাজ বিগড়ে যায়। বেশি পিরিত তার কোনোকালেই নাই। একটা আংটি—হোক সেটা সোনার, তারে এমন ঘুরায়া-ফিরায়া দেখার কী আছে? মেয়েমানুষের মায়া-টান কখন কোনটার ওপর পড়ে বোঝা মুশকিল। বিড়াল-কুকুর দেখলে দূর-দূর করে খেদাবে, আর একটা খরগোশ পাইলে তারে ধইরা চুমা খাবে। বসতভিটা খোয়া যাইব টেনশন নাই; আর কানের একটা দুল না নাকের নোলক হারাইল, দেখা গেল কাইন্দা-কাইটা দুই দিন ঘুম বন্ধ।

ফজলুর হাতের বিড়িটা পুড়ে পুড়ে অর্ধেক। টান দিয়েছে দুই-তিনটা বড়জোর। আজকাল বিড়ি হাতে নিলেই মনটা উদাস হয়ে পড়ে। দুনিয়ার যত ভাবের কথা মাথায় উঁকিঝুঁকি মারে তখন। বিড়িতে টান দিতে ভুলে যায় ফজলু। কতবার আঙুলে আগুনের ছ্যাঁকা খেয়েছে হিসাব নেই। এক বিড়ি আর কত দিন টানবে। মুখের রুচি উঠে গেছে।

‘খানি দেও।’

স্বামীর কথা শুনে শিরিন একটু চমকে ওঠে। হাতটা লুকানোর চেষ্টা করে। চোখে চোরা ভাব।

‘মায়ের দেওয়া আংটি, দিনে চব্বিশবার দেখনের কী আছে!’

তারপর বিড়বিড় করে বলে, ‘স্বামীর দেওয়া হইলেও কথা ছিল!’

বউ একবার মাথা তুলে না তাকিয়েই রান্নাঘরের দিকে গেল। ফজলু ইশ্ বলে ফেলে দিল বিড়িটা। আঁচ লাগা হাতটা ঝাড়া দিল বার কয়েক। ফকিন্নির বিড়ি তো মনে আগুন ধরাইতে পারব না, ধরাইব আঙুলে। ফুঁ!

মেজাজ বিগড়ে গেল ফজলুর। বসে পড়ল দাওয়ায়।

ফজলুর দাওয়ায় বসে পড়া মানে শিরিন জানে, তার নাশতা এখানেই নিয়ে আসতে হবে। নাশতা সামনে সাজিয়ে দিয়ে চুমকি পাশে দাঁড়িয়ে রইল—শুকনো রুটি আর ডাল। রুটি দিয়ে ডাল ভেজাতে যাবে, অমনি নড়ে উঠল তেলাপোকাটা। দুনিয়ার যত উজবুক কীটপতঙ্গ আছে, তেলাপোকা তাদের মধ্যে নাম্বার ওয়ান। কাজকাম নাই, এখানে-সেখানে ঘুরবে, লাফাবে; আতকা এসে হাতের ওপর পড়বে। কী চায় কী খোঁজে বোঝা মুশকিল। মেয়েমানুষ হলো তার লাফালাফির আসল জায়গা। আর মেয়েরাও সেই রকম। তেলাপোকা দেখলে, গায়ে পড়লে তাদের ভয় ছলাকলায় ভরে যায়—আঃ উঃ। ডালের মধ্যে নড়ছে উজবুকটা। একটু আগে বিড়ির বেহুদা আগুনে আঙুলে আঁচ লেগেছে, এখনো চিনচিন করছে। এখন ডালের ভেতর মশকরা করছে তেলাপোকা। বাটিটা ছুড়ে ফেলে দিল ফজলু। উঠে দাঁড়াল।

‘ফকিন্নির বেটি ফকিন্নি। সকালবেলা মশকরা করো, না? মন থাকে কই! ডাইলের ভিতর তেলাপোকা সাঁতরায় আর সে চায়া চায়া মজা দ্যাখে।’

হঠাৎ ফজলুর কী জানি হয়, বউয়ের হাত ধরে টান দিয়ে নিয়ে যেতে থাকে। শিরিন বাধাও দিতে পারে না। এমনই হঠাৎ করে ফজলুর মাথা গরম হয় যে সামাল দেওয়া মুশকিল। একদিন রাত্রিবেলা বিছানায় ফিসফিসিয়ে শিরিন তাকে বলেছিল, ‘আমাদের বাচ্চা হইব না? খালি খালি লাগে।’

ইনিয়েবিনিয়েই রঙ্গচ্ছলে কথাটা বলেছিল বটে কিন্তু ফজলু গেল চটে।

‘বাচ্চা? তুই খাওয়াবি? মাত্র একটা লাইন খুঁজতাছি ধরার, একটা উপায় করার, আর এখন তার দরকার বাচ্চা! ওহ্, বুঝছি, এইসব হইল তোমার চালাকি। বাচ্চা নিশ্চয় আইসা পড়ছে পেটে, এখন তারে হালাল করার মতলব। কার লগে, কার লগে হইছে, ওই!’

সেই রাতে শিরিন গলগল করে বমি করেছে। বিছানা-বালিশ একাকার। তার শরীরটা ভালো ছিল না। দুপুর থেকেই কেমন যেন অস্থির-অস্থির। বমি-বমি ভাব। সে জানে এটা আর কিছু না। তার শরীরের সমস্যা। ছোটবেলা থেকেই মাঝেমধ্যে তার এ রকম হয়। লিভারে একটা সমস্যা আছে। ডাক্তারি পড়নেওয়ালা সাজু ভাই একদিন বলেছিল। সাজু ভাই কে?

শিরিনের লজ্জা হয়, অন্তর পোড়ে। সাজু ভাই আবার কে হবে, ডাক্তার! মানুষের শরীর নিয়াই তার কারবার। মন নিয়া তো আর না!

ফজলু উঠানে পড়ে থাকা ডালের কাছাকাছি নিয়ে গিয়ে দাঁড় করায় শিরিনকে। বলে যে সে যেন ডালগুলো চেটে খায়। তেলাপোকাটা আবার ওড়ার চেষ্টা করছে। পারবে না। শিরিন তার দিকে তাকিয়ে থাকে। গায়ে পড়লে কত ঘৃণা করে, অথচ আজ বড় মায়া পড়ছে বেচারাকে দেখে।

২.

ফজলু চলে গেলে নিজের মতো করে এক-আধটু কেঁদে নিয়েছে শিরিন। তবে অন্যদের মতো না। কাউকে জানিয়ে শুনিয়ে কোনো দিনই সে কাঁদে না। বাপের বাড়িতে থাকতেও। যেদিন শুনল সাজু ভাই ডাক্তারি পাস করেছে, সেদিন প্রাণভরে কেঁদেছিল। কান্নার যে এত আনন্দ, সেদিনই বুঝেছিল শিরিন। আর সবাইকে এড়ালেও মায়ের চোখ, দেখে ফেলে, জিজ্ঞেস করে, ‘কিরে, শিরিন, কী হইছে তোর!’

শিরিন কিছু বলতে পারেনি। বলার তো কিছু নাই। সাজু ভাই ডাক্তারি পাস করছে। এটা কি কান্নার বিষয়?

তা-ও মা বুঝতে পারে। তাকে নিজের বুকের কাছে আগলে ধরে বলে, ‘খোয়াব মানুষরে বাঁচায়, কিন্তু খোয়াবই মানুষরে শ্যাষ কইরা দেয়, যদি সেইটা একদম আহাম্মকের খোয়াব হয়।’

শিরিন দেখেছিল, তখন, ছোট্ট জানালার ভেতর দিয়ে পড়ন্ত বেলার রং। লাল লাল হলুদ...ঠিকরে ঠিকরে পড়ছে। গাছগাছালির পাতাঝাড়ের ওপর রঙের আছড়। দুই একটা পাখি, পিনপিনিয়ে কী বলে যায় কে জানে। তারাও তাকে বুঝ দেয় হয়তো-বা। সুখের দিনে কাঁদতে নেই। শিরিনের ঘরের ভাঙা বেড়ার ফাঁক-ফোকর দিয়ে এইসব মন-বুঝ-দেওয়া পিনপিনানির জোর আর কতটুকুই-বা আসে। সূর্য ডুবে যায়। রাত আসে। শিরিন লুকায়। ফের গনগন করে জ্বলে ওঠে সূর্য। সব ফকফকা। শিরিন আর কই রাখবে নিজের মনের আড়াল! ভয় করে। সাজু ভাই বলত, প্রত্যেক মানুষের নাকি একটা মন-ক্যামনের দেশ আছে। শিরিনকে সে একদিন সেই দেশে নিয়ে যাবে। আহা রে, মন-ক্যামনের দ্যাশ!

সাজু ভাই কই যে গেল! যাবেই তো! সে কি একলা এক জায়গায় পড়ে থাকার মানুষ? ডাক্তার সে। মানুষের সেবা করবে, মানুষরে বাঁচাবে। মন-টনের কারবার—এসব হলো খাঁচার পাখির বিষয়। বন্দী হইয়া মনুয়া পাখি হায় রে কান্দে রইয়া রইয়া...।

তবে শিরিনের স্বামীও মানুষ খুব একটা খারাপ না। মেজাজ একটু গরম। তার মা তো বলেছিলই, স্বামীর হাতে মাইরধর না খাইলে স্ত্রীজীবন বৃথা। শিরিনের মায়ের কথাবার্তা আজব। শিরিনের মাঝেমধ্যে হাসিও পায়। আসলেই স্বামী তার কাজের মানুষ। কাজের সন্ধানে সন্ধানে থাকে। কিন্তু কথা হলো, কাজ তার ভালো জোটে না। সে ফকির কিন্তু মনে ওর রাজাবাদশার খায়েস। শিরিন মাঝেমধ্যে বলে, জমিজমা চাষ করেই তো তারা ভালো থাকবে। না, সেটা না। তার ইচ্ছা, জীবন পাল্টাইতে হইব। এইসব করলে জীবন এক পা দুই পা আগাইব ঠিক, কিন্তু পাল্টাইব না। জীবনের কি ওল্টন-পাল্টন কিছু আছে, শিরিন বোঝে না। শিরিনের কি পাল্টাইছে? এই তো সে ঘরসংসার করছে, স্বামীর সঙ্গে শুচ্ছে, ভালোমন্দ দুই-চারটা খাচ্ছে—এই রকমই তো চলছে। কেবল আগে সাজু ভাই ছিল, আসত, তাকে বলত মন-ক্যামনের একটা দেশে নিয়ে যাবে। এখন সে আসে না। কিন্তু তা-ও তো সে আছে। শিরিনের আড়াল জড়ায়াই আছে সে। সেটা আবার ক্যামনে!

ফিক করে হাসে শিরিন। এই হাসির মর্ম সে-ই জানে।

যা হোক, মানুষটা খারাপ না। কাজে বেরোনোর আগে তার জন্য ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনে নিয়ে এসেছে। ভালো ওষুধ। এক ডোজ খেয়েই পেটের সমস্যাটা সেরে গেছে। না সেরে উপায় কী! সাজু ভাই ডাক্তার হওয়ার পর দুনিয়ার সব ওষুধ সে যে সাজু ভাইয়ের নামে খায়। ভাবে, তার সাজু ভাইয়ের প্রেসক্রিপশন।

৩.

বিলকিস বানু ঝটিকায় ফজলুর বাহুর বান্ধন আলগা করে দিয়ে বলে, ‘এইসব বহুৎ হইছে। যেটা বলছি সেটা আগে করো। মোয়া তুমি ম্যালা খাওয়াইছ, এখন সন্দেশ খাওয়াও।’

বিলকিস বানুর ঠোঁটের দিকে গোল করে এগিয়ে রাখা ফজলুর ঠোঁটজোড়া মাঝখানে আটকে থাকে। বিলকিস হাতের একটা আঙুল জোর করে সেই গোলের ভেতর দিয়ে ঠেসে দিতেই যেন সংবিৎ ফেরে ফজলুর। আর বিলকিস হাসে।

‘আমি তো চেষ্টা করতেছি বিলকিস। আংটিটা কোনোমতেই হাতছাড়া করে না। চব্বিশ ঘণ্টার মইধ্যে পঁচিশ ঘণ্টাই আঙুলে পইরা থাকে। গরিব মায়ের দেওয়া জিনিস, মায়ার শ্যাষ নাই।’

‘খালি মায়ের দেওয়া বইলা না, বিয়াতে দিছে যে! এইটারে কয় মহব্বত। ভালোবাসা। তুমি যে ক্যান সুন্দর বউটারে ফালায়া আমার কাছে খুজুর-খুজুর করো বুঝি না। পুরুষ মানুষের মন আসলে বিড়াল-কুকুরের মন। চুকচুক না কইরা সুখ নাই।’

বিলকিস বানুর এসব আজাইরা তত্ত্বকথা শোনার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা ফজলুর নাই। তার গলা শুকিয়ে কাঠ। বিলকিসের ঠোঁটের গোলাপি রং তাকে পিপাসায় পোড়াচ্ছে। সে বিছানায় চিত হয়ে শুয়ে পড়ে। অসাড়। বিলকিস একটা মহা যন্ত্রণা। দেখলেই মনে হয় এরে দলন-পীড়ন করে শেষ না করলে শান্তি নাই। কিন্তু করতে গেলেই পদে পদে বাধা। ব্যাপারটা ফজলুর কাছে এ রকম: হান্ড্রেড সিসি মোটরসাইকেল, স্পিড এক শ কিলোমিটার পার আওয়ার, কিন্তু রাস্তায় দশ ফুট অন্তর অন্তর স্পিডব্রেকার।

বিলকিস চিত-হয়ে-শোয়া ফজলুর চোখের সামনে নিজের হাতটা নাচায়। ফজলু ধরতে যায়, পারে না। বিলকিস হাত নিয়ে খেলে।

‘দেখছ, সবগুলা আঙুল খালি। তোমার লাইগা। যেদিন তুমি আমারে আংটি পরাইবা সেদিনই এইটা পূর্ণ হইব। সোনার আংটি। পিওর গোল্ড।’

‘কিন্তু আমি যে পারতেছি না, বিলকিস। হারামজাদির আংটিসুদ্দা আঙুল কাইটা আনা ছাড়া পথ দেখতেছি না।’

‘কিন্তু আমারে ওইটাই পরাইতে হইব। তুমি না দিলেও ওইটা তোমার বিয়ার নিশানা। ওইটা হাতবদল হইলেই বুঝমু তুমি এখন আমার। এরপর আমারে আর তোমার ভাড়া দেওয়া লাগব না। এক ভাড়াতেই দুইজনে চলমু। তুমি আর আমি।’

বিলকিস খিলখিল করে হাসতে থাকে। ফজলুর পেটটা হঠাৎ গুলিয়ে আসে। বমি করে ফেলবে নাকি। নিজেকে সে প্রাণপণে সামলাতে চেষ্টা করে। এ সময় তার শিরিনের কথা মনে পড়ে। আহা রে, মেয়েটার যখন বমি হচ্ছিল, কত কষ্টই না পেয়ে থাকবে।

হাসতে হাসতে বিলকিস ঢলে পড়ছে ফজলুর ওপর। হাসতে হাসতেই তার কাশি শুরু হয়ে যায়। বেদম কাশি। কাশি আর আটকাতে পারে না। কাশতে কাশতে ওর চোখে পানি আসে। ফজলুর গায়ের ওপর সেই পানি টপটপ পড়ে। ফজলু অবাক তাকায়। বিলকিস অদ্ভুত!

৪.

রাত্রিবেলা। শিরিনের জ্বর। রোগজারি ছাড়া মেয়েটার দিন চলে না। জ্বরের ঘোরে প্রলাপ বকতে বকতে শিরিন ঘুমিয়ে পড়েছে। বেঘোর ঘুম। ঘুমের মাঝখানেও প্রলাপ বকছে। আজকেই সুযোগ ফজলুর। বুকে আশা বাঁধে। নিবু-নিবু হারিকেনের কুপি। বউয়ের হাতটা দেখতে পাচ্ছে। এতটুকুন আলোর মধ্যেও চিকচিক করছে আংটিটা। ফজলু এবার মনে বল নিয়ে নামে। ধরা খেলে কী বলবে তা-ও ঠিক করা আছে। আর জ্বরের মধ্যে শিরিন এত মাথা খাটাতে পারবে না। ফজলু আলতো করে বউয়ের হাতটা ধরে ঝটিকায় আংটিটা খুলে নিল। আঘাত পেয়ে উহু করে উঠে বসে শিরিন। সাথে সাথে তাকে আগলে ধরে শুইয়ে দেয় ফজলু।

‘কিছু হয় নাই বউ। আমি আছি, আমি আছি!’

বউটার মাথায় পট্টি দিয়ে দিতে শুরু করল ফজলু। বুকের ভেতর ধুকপুকানি। বউর জ্বরের গোঙানি তার কাছে মনে হচ্ছে বিলকিসের সুখের শিৎকার।

ভাঙাচোরা আলোর ঝিলমিল আজ এইসব ভাবসাবের সাক্ষী থাকে।

৫.

ফজলুর পরানো আংটিটা নিজের আঙুলে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখতে দেখতে বিলকিসের চোখেমুখে একধরনের আনন্দ খেলা করে। ফজলুর ভালো লাগে দেখতে। বিলকিসও আজ সকাল থেকে ঘরটাকে সাজিয়ে গুছিয়ে রেখেছে। ফজলু তাকে আংটি পরাবে—সোনার আংটি, দিনটাকে মনে রাখার মতো করে না রাখলে চলে! সে নিজেও সেজেছে সুন্দর করে। একটা নাকফুল পরেছে। কানে দুল। হাতে কয় গাছি চুড়ি। পায়ে নূপুর। আলতাও পরেছে। সব সাজন শেষ। ফজলু আংটি পরালেই মনে মনে আজ স্বামী পাবে সে। মনে মনে হবে বিবাহ। ভাড়া খাটার ধরাবাঁধা আর নাই। দুজনে মন খুলে কথা বলবে। ভালোবাসবে।

কিন্তু কী হলো কে জানে, হাত দিয়ে আংটিটা ছুঁয়ে দেখতে দেখতে হঠাৎ ক্ষেপে যায় বিলকিস। আংটিটা খুলে ফেলে এক টানে। জানালা দিয়ে ফেলে দেয় বাইরে।

‘এটা সোনা, না? এটা সোনা! ঠগ! জোচ্চোর! যাও, বাইর হয়া যাও। যাও!’

বলতে বলতে ক্ষিপ্ত বিলকিস হাতের চুড়ি ভাঙতে শুরু করে। ছিঁড়ে ফেলে পায়ের নূপুর। শাড়ির আঁচল দিয়ে মুছতে থাকে মুখের রং, পায়ের আলতা। ফজলু কিছু বুঝতে পারে না। বলতেও পারে না। বিলকিস তাকে ঠেলে ঠেলে বের করে দেয় ঘরের বাইরে। দড়াম করে দরজা বন্ধ করে দিয়ে অসাড় বসে পড়ে বিছানায়। কাঁদতে শুরু করে। একদম বাচ্চা মেয়ের মতো।

৬.

ফজলু নিজের অপকর্মের জন্য যেমন লজ্জিত হয় তেমনি তাকে অপমানও করে। নিজের মায়ের নামে এমন মিথ্যা কথা কী করে বলতে পারল শিরিন! ‘তোমারে তো এই রকম ভাবি নাই কোনো দিন। একটা নকল ইমিটেশনের আংটিরে সোনার বইলা চালাইছ। এইটা কইরা তোমার কী লাভ হইল, বউ! নিজে আমি খারাপ, কিন্তু তোমারে তো ভাবছিলাম...ছিঃ! ছিঃ!’

ঘর থেকে বের হয়ে যায় ফজলু। আংটিটা হাতে নিয়ে স্থির শিরিন। সাজু ভাইয়ের সেই স্মৃতি মনে পড়ে তার, যেদিন সে আংটিটা ওর হাতে পরিয়েছিল। বলেছিল, সোনার আংটি, শিরিন। একদম খাঁটি। আমাদের প্রেমও যে খাঁটি। মনে মনে আজ আমাদের সম্পর্কটারে খাঁটি করে নিলাম। ডাক্তারি পাস করলেই দেখো সব হবে। স-ব।

আংটির দিকে তাকাতে তাকাতে লজ্জা-অপমানে লাল হয়ে যায় শিরিন। মিথ্যার পর মিথ্যা তার মনের ভেতরে আছড়ে পড়ে। ধীরে ধীরে ঝাপসা হয়ে যেতে থাকে আংটিটা।