আমি পাঠককে ইতিহাসের গল্প বলেছি

আমাদের দেশে রাজনীতির বই কিংবা রাজনৈতিক সাহিত্যকে সরস কথনভঙ্গি ও যুক্তি-তর্কের মিশেলে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন লেখক-গবেষক মহিউদ্দিন আহমদ। তাঁর প্রতিটি বই—তা হোক রাজনৈতিক দলের ইতিহাস কিংবা দিক পরিবর্তনকারী ঘটনা, অসম্ভব পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছে। এই কথোপকথনে নিজের লেখালেখি নিয়ে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সোহরাব হাসান

মহিউদ্দিন আহমদ
ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

প্রশ্ন :

আপনি একসময় সক্রিয় রাজনীতি করতেন। এখন সেই রাজনীতিকে লেখালেখির প্রধান উপজীব্য করেছেন। এই দুইয়ের মধ্যে কোনো দ্বন্দ্ব দেখেন কি?

মহিউদ্দিন আহমদ: একদিক থেকে এটি আমার জন্য সুবিধা হয়েছে। আমি রাজনীতির ভেতরটা কমবেশি জানি। লেখার সময় আমার মাথায় থাকে পাঠক, যাঁরা বিভিন্ন শ্রেণি, পেশা ও মতের। আমার চেষ্টা থাকে তাঁদের কত বেশি তৃপ্তি দেওয়া যায়; মনের চাহিদা মেটানো যায়। চিন্তা থাকে আমি নির্মোহভাবে পাঠকের কাছে সত্য তুলে ধরতে পারছি কি না।

প্রশ্ন :

আমাদের এখানে রাজনৈতিক সাহিত্য বলতে নীরস ও কাটখোট্টা গোছের বইকে বোঝাত; যা তথ্য ও তত্ত্বে আকীর্ণ থাকত। আপনি সেই ধারায় পরিবর্তন এনেছেন। অনেকের মতে, আপনি ননফিকশন রাজনৈতিক লেখায় ফিকশনের আমেজ দিয়েছেন। এটি কি আগে থেকে চিন্তাভাবনা করে, না লিখতে লিখতে কাঠামোটা দাঁড়িয়েছে?

মহিউদ্দিন: আমাদের এখানে পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে দুজন খ্যাতিমান লেখকের রাজনৈতিক বই উল্লেখযোগ্য বলে মনে করি—আবুল মনসুর আহমদ ও বদরুদ্দীন উমর। এর মধ্যে আবুল মনসুর আহমদের বইগুলো মূলত আত্মজীবনীমূলক। কিন্তু বদরুদ্দীন উমর গবেষণামূলক বই–ই লিখেছেন বেশি। প্রবন্ধের ভঙ্গিতে লেখা এসব বইয়ে প্রচুর তথ্য আছে। কিন্তু ভাষাটা আকর্ষণীয় নয়। ফলে সাধারণ পাঠককে খুব আকৃষ্ট করে না। বাংলাদেশের পাঠকের বেশির ভাগই গল্প–উপন্যাস পড়েন; আমি চিন্তা করলাম, রাজনৈতিক সাহিত্য কীভাবে তাঁদের কাছে পৌঁছানো যায়। মনে মনে আকাঙ্ক্ষা ছিল, গল্প উপন্যাস না লিখেও আমি জনপ্রিয় লেখক হব। আগে সে রকম প্ল্যাটফর্ম পাচ্ছিলাম না। প্রথমা প্রকাশন আমাকে সেই প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে দিল—সত্যিকার অর্থে।

প্রশ্ন :

প্রথমা কীভাবে প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে দিল?

মহিউদ্দিন: আমার রাজনৈতিক সিরিজের বইগুলো সিংহভাগ পাঠকের কাছে সমাদৃত হয়েছে।ইগুলো হলোথাক্রমে জাসদের উত্থান-পতন: অস্থির সময়ের রাজনীতি, আওয়ামী লীগের উত্থান পর্ব (১৯৪৮-১৯৭০), আওয়ামী লীগ ১৯৭১, আওয়ামী লীগ: বেলা অবেলা (১৯৭২-১৯৭৫), বিএনপি: সময় অসময়। আদতে প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান, যিনি প্রথমারও কর্ণধার, আমাকে বইগুলো লিখতে উৎসাহিতরেন। তিনি বললেন, বাংলাদেশে প্রধান প্রধান দলের ইতিহাস থাকা দরকার। আপনি জাসদের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। জাসদের একটা ইতিহাস লিখুন। আমি লেখা শুরু করলাম। বইটি পাঠকও লুফে নিলেন। এরপর বললেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ইতিহাসও লিখুন। আমি আওয়ামী লীগ নিয়ে লেখা শুরু করলাম। অনেক দূর এগোলামও। একদিন তিনি বললেন, আওয়ামী লীগ এখন থাক। বিএনপির বইটিই আগে লিখুন। এভাবে রাজনৈতিক সিরিজের বইগুলো লেখা হলো।

প্রশ্ন :

আপনার লেখালেখির একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান সমসাময়িক ব্যক্তিবর্গের সাক্ষাৎকার, যাঁরা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ঘটনার সঙ্গে যুক্ত। প্রচলিত ধারণা হলো, রাজনীতিকেরা সত্য কথা বলেন না। আপনি যেসব সাক্ষাৎকার নিয়েছেন, তাতে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য এসেছে, একজন অপরজনের বক্তব্য খণ্ডন বা অস্বীকার করেছেন। এ থেকে ইতিহাসের সত্য বের করা কঠিন নয় কি?

মহিউদ্দিন: আমার লেখালেখির একটা বড় উপাদান এই সাক্ষাৎকার। তবে প্রশ্ন পাঠিয়ে কারও সাক্ষাৎকার নিইনি। আমি জানি তাতে সত্য উঠে আসবে না। আমি তাঁদের সঙ্গে কথা বলেছি অন্তরঙ্গভাবে। আগে হোমওয়ার্ক করেছি। কথার পিঠে কথা বলেছি। পাল্টা প্রশ্ন করেছি। এতে ভেতরের অনেক কিছু বেরিয়ে এসেছে। অনেকে নিজের ভূমিকাকে বড় করে অন্যের ভূমিকা ছোট করে দেখেছেন। সে ক্ষেত্রে দুজনের কথা তুলে ধরেছি। ক্রস চেক করেছি। পাঠক বিচার করবেন কার কথা সত্য। আমি মনে করি, এতে আমার বইগুলো ঋদ্ধ হয়েছে। ইতিহাসের অজানা অনেক উপাদান উঠে এসেছে; রাজনৈতিক দলের দলিল, নেতাদের বক্তৃতা–বিবৃতিতে যা পাওয়া যায় না।

প্রশ্ন :

এই সিরিজে আপনার প্রথম বই জাসদের উত্থান-পতন নিয়ে বেশ আলোচনা–সমালোচনা হয়েছে। অনেকের অভিযোগ—আপনি সিরাজুল আলম খানের প্রতি পক্ষপাত দেখিয়েছেন এবং কর্নেল তাহের ও তাঁদের অনুসারীদের (যাঁরা ৭ নভেম্বরের অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন) অবিচার করেছেন। তাঁদের জাসদে ‘বহিরাগত’ বলেছেন। কী বলবেন?

মহিউদ্দিন: জাসদের বইয়ে যা হয়েছে, সিরাজুল আলম খানের প্রসঙ্গগুলো সমালোচনার দৃষ্টিতে দেখা হয়নি। তখনো সবকিছু আমার জানা ছিল না। অনেক প্রশ্নের উত্তর তিনি এড়িয়ে গেছেন। পরে আরও অনেকের সঙ্গে কথা বলে, অনুসন্ধান করে নতুন তথ্য পেয়েছি, যা আমি প্রতিনায়ক: সিরাজুল আলম খান বইয়ে যুক্ত করেছি। সেখানে তোফায়েল আহমেদ অনেক বিষয়েই সিরাজুল আলম খানের সঙ্গে একমত হননি। জাসদে বরাবর দুটি ধারা ছিল। একটি রাজনৈতিক ধারা। আরেকটি সামরিক ধারা। রাজনৈতিক ধারার নেতৃত্বে ছিলেন সিরাজুল আলম খান। দ্বিতীয় ধারার নেতৃত্ব দিতেন কর্নেল তাহের ও তাঁর অনুসারীরা। তাঁরা মনে করেন, ৭ নভেম্বরের বিপ্লব সফল হয়েছিল। রাজনৈতিক সমর্থন না পাওয়ায় সেই সফলতা ধরে রাখতে পারেননি। এ জন্য সিরাজুল আলম খানই দায়ী। কিন্তু আমার মনে হয়েছে, ৭ নভেম্বর ঘটনা ছিল খুবই অপরিপক্ব, যাকে বলা যায়, অ্যাডভেঞ্চারিজম। এর জন্য কেবল তাহের নন, পুরো দলকে চড়া মূল্য দিতে হয়েছে।

প্রশ্ন :

আপনার গবেষণামূলক লেখালেখিতে কোনটি বেশি গুরুত্ব পায়—তথ্য-দলিলপত্র, না সমসাময়িক ব্যক্তিদের কথোপকথন?

মহিউদ্দিন: কথোপকথনও গবেষণা ও অনুসন্ধানের অংশ। আমরা যেমন পুরোনো দলিল বক্তৃতা বিবৃতিকে গবেষণার বিষয় হিসেবে ব্যবহার করি, তেমনি সমসাময়িক চরিত্রগুলোর সঙ্গে কথা বলেও অনেক কিছু পাওয়া যায়। কোনোটি ফেলনা নয়। সাক্ষাৎকার হলো ইতিহাসের সবচেয়ে জীবন্ত অংশ। সেকেন্ডারি সূত্রগুলো সহায়ক তথ্য হিসেবে কাজে লাগতে পারে। তবে কার সাক্ষাৎকার নেব, সেটিও গুরুত্বপূর্ণ।

প্রশ্ন :

জাসদের উত্থান–পতন বইয়ে কাউকে আপনি মুক্তিযুদ্ধের মূল চরিত্র ও কাউকে পার্শ্বচরিত্র হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। পরবর্তী বইগুলোতে দেখা যায়, আপনি সেই অবস্থান থেকে কিছুটা সরে এসেছেন। এর ব্যাখ্যা কী?

মহিউদ্দিন: আমি নিজে কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি। যা লিখেছি তথ্যের ভিত্তিতে। একাত্তর নিয়ে আমাদের মধ্যে একধরনের আচ্ছন্নতা বা অগ্রাহ্য মনোভাব কাজ করে। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বাংলাদেশে খুব ভালো বই হয়নি। কিন্তু আমেরিকানরা ভালো বই লিখেছেন। ভারতীয়রা লিখেছেন। এমনকি পাকিস্তানিরাও লিখেছেন তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গিতে। কিন্তু এখানে সে রকম বিশ্লেষণী বই হয়নি।

প্রশ্ন :

মূলধারা ’৭১ কিংবা লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে—এই বইগুলোকে কি আপনি ভালো বই বলতে রাজি নন?

মহিউদ্দিন: এসব বইয়ের শুরুটাই হয়েছে ২৫ মার্চের পাকিস্তানি সেনা অভিযানের পর থেকে। বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে ভাষণ দিলেন। পাকিস্তানিরা এখানে গণহত্যা চালাল। আর মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়ে গেল। কিন্তু বিগত দুই দশকের যে রাজনৈতিক সংগ্রাম, সেটা অনুপস্থিত। দীর্ঘ রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার চূড়ান্ত রূপ ছিল সশস্ত্র সংগ্রাম। সে কারণে রাজনৈতিক সংগ্রামটা বুঝতে হবে। আমাদের সেক্টর কমান্ডারদের বইয়ে সশস্ত্র সংগ্রামের কথা আছে। রাজনৈতিক সংগ্রামের কথা নেই।

প্রশ্ন :

কিন্তু মঈদুল হাসানের মূলধারা ’৭১-এ?

মহিউদ্দিন: আমি যখন বইটি প্রথম পড়ি, তখন মনে হয়েছিল এটি মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এখানে লিখিত প্রথম ভালো বই। কিন্তু পরে মনে হয়েছে, মুজিবনগর সরকারের মধ্যে যে টানাপোড়েন ছিল, তার একটি অংশের প্রতি লেখকের দারুণ পক্ষপাত। এক পক্ষের চশমা পরে তো পুরো ক্যানভাসটা দেখা যায় না। তিনি মুজিব বাহিনী সম্পর্কে বেশ কিছু মন্তব্য করেছেন। কিন্তু মুজিব বাহিনীর কোনো নেতার সঙ্গে কথা বলেননি। তাহলে কীভাবে আমরা তাঁর ব্যাখ্যাকে অকাট্য ধরে নেব? গ্যারি জে বাসের ব্লাড টেলিগ্রাম বা শ্রীনাথ রাঘবনের ১৯৭১ মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ বই। আমি একাত্তরের ক্যানভাস নিয়ে যে বইটি লিখতে চাই, তা হলো ভারতের বাংলাদেশ যুদ্ধ।

প্রশ্ন :

এক–এগারো: বাংলাদেশ ২০০৭-২০০৮ লেখার পেছনে কী তাগিদ ছিল?

মহিউদ্দিন: একাত্তরের পর এক–এগারোর পরিবর্তন আমাদের রাজনীতির ইতিহাসে একটি বড় ঘটনা, যাকে দিক পরিবর্তনকারী হিসেবে আখ্যায়িত করা যায়। পঁচাত্তরের ঘটনা যেমন আমাদের রাজনীতির ব্যাকরণ পাল্টে দিয়েছে; তেমনি এক–এগারোও। স্বাধীনতার পর থেকেই সেনা-সিভিল সম্পর্কে টানাপোড়েন চলছিল। পঁচাত্তরে তা আরও স্পষ্ট হলো। সিভিল–মিলিটারি রিলেশনশিপ তৈরি হলো। এক–এগারোয় সেই সম্পর্ক অন্যভাবে এল। এত বড় একটি ঘটনার দলিল থাকা প্রয়োজন, এই তাগিদ থেকেই আমি এই বইটি লিখতে উদ্বুদ্ধ হই। এক–এগারো নিয়ে যখন লেখার সিদ্ধান্ত নিলাম, তখন এর মূল কুশীলবের সঙ্গে কথা বললাম। আমি জেনারেল মইন ইউ আহমেদ, ব্রিগেডিয়ার বারী, প্রধান উপদেষ্টা ফখরুদ্দীন আহমদসহ অনেকের সঙ্গে কথা বলেছি। অনেক অজানা তথ্য বেরিয়ে এসেছে। তবে একজন কথা দিয়েও সাক্ষাৎকার দেননি, মাসুদউদ্দিন চৌধুরী।

প্রশ্ন :

রাজনৈতিক দলের ইতিহাস লিখতে গিয়ে আপনাকে কী ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়েছে?

মহিউদ্দিন: কিছু কিছু দ্বিধা তো ছিল। আমি যখন রাজনৈতিক সিরিজের বইগুলো লিখি, তখন ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ। ফলে বিএনপি নিয়ে লিখলে তাদের পছন্দ না হলেও কিছু করতে পারবে না। রাজনৈতিকভাবে হয়রানির শিকার হতে হবে না। আওয়ামী লীগের ক্ষেত্রে কিছু ঝুঁকি ছিল। সেটি লেখক হিসেবে যেমন আমার, তেমনি প্রকাশকেরও। খুব বেশি নয়। আমি কিছুটা সেলফ সেন্সরশিপ করেছি। কিন্তু বই বের হওয়ার পর আওয়ামী লীগের কাছ থেকে বিরূপ মন্তব্য পাইনি।

প্রশ্ন :

প্রধান রাজনৈতিক দলের ইতিহাসের বাইরে অন্যান্য বিষয় নিয়েও আপনি বই লিখেছেন। বিশেষত সিরাজ সিকদারের দল সর্বহারা পার্টি। কীভাবে লিখতে শুরু করলেন?

মহিউদ্দিন: সত্তর দশকে যে দুজন ব্যক্তি তরুণদের নানাভাবে প্রভাবিত করেছেন, তাঁরা হলেন সিরাজুল আলম খান ও সিরাজ সিকদার। আমি সিরাজুল আলম খানকে নিয়ে লেখার পর মনে হলো সিরাজ সিকদারকে নিয়েও লেখা উচিত। সিরাজ সিকদারের সর্বহারা পার্টি ছিল গোপন। কেউ কারও নাম জানেন না। সবাই ছদ্মনাম ব্যবহার করেন। সিরাজ সিকদার নিজেও দলের অনেক ঘটনা জানতেন না। তাঁদের দলের দলিলপত্র সংগ্রহ করলাম। এরপর পূর্ব বাংলার শ্রমিক আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাকালীন তিনজন নেতার সঙ্গে কথা বললাম। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে ভেতরের অনেক কথা জানতে পারি। পরবর্তীকালে আরও অনেক দলিল সংগ্রহ করি; অনেকের সাক্ষাৎকার নিই। আমাদের এখানে রাজনৈতিক দলের প্রধানকে দেবদূততুল্য মনে করা হয়। তাঁর কোনো সমালোচনা করা যাবে না। বই বের করার আগেই একজন বামপন্থী বুদ্ধিজীবী বিরূপ মন্তব্য করলেন। বইয়ের নাম লাল সন্ত্রাস নিয়ে তাঁর আপত্তি। কিন্তু বইটি পড়লেই দেখতে পেতেন, লাল সন্ত্রাস আমি নেতিবাচকভাবে ব্যবহার করিনি। মাও সে–তুংও তো লাল সন্ত্রাস ব্যবহার করেছেন।

প্রশ্ন :

এই মুহূর্তে আপনি কী কী বিষয় নিয়ে কাজ করছেন?

মহিউদ্দিন: আমি দুটি বিষয় নিয়ে কাজ করছি। একটি হলো পার্বত্য চট্টগ্রাম। এতে শান্তিচুক্তির পূর্বাপর ঘটনাবলি তো থাকবেই। সেই সঙ্গে ১৯৮১ সালে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে জিয়াউর রহমান হত্যা ও পরবর্তীকালে জেনারেল মঞ্জুরের হত্যার বিষয়ও থাকবে। দ্বিতীয় বই ২০০১ সালের নির্বাচন–পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে। নির্বাচনের পর সংঘটিত সহিংসতার পটভূমিতে আল–কায়েদাসহ বিভিন্ন জঙ্গি নেটওয়ার্কের বিষয়টি তুলে আনার চেষ্টা থাকবে এখানে।

প্রশ্ন :

রাজনীতির মতো খটোমটো বিষয়কে যে আপনি পাঠকগ্রাহী করে তুলতে পেরেছেন, এর পেছনের রহস্যটা কী?

মহিউদ্দিন: চাল-ডাল–ঘি দিয়ে খিচুড়ি পাকানো হয়। কারওটা সুস্বাদু হয়, কারওটা বিস্বাদ। লেখাও সে রকম।অনেকে খুবই খটোমটো গদ্য লেখেন, পাঠক দাঁত বসাতে পারেন না। আমি প্রথমেই ঠিক করেছি রাজনীতি ও ইতিহাসের বিষয়গুলো গল্পের মতো বলে যাব, যাতে সব তথ্যই থাকবে; কিন্তু পাঠক ক্লান্ত হবেন না।পরিবেশনার ভঙ্গিটা হবে আকর্ষণীয়। আমি পাঠককে জ্ঞান দেওয়ার চেষ্টা করিনি। যেসব বিষয়ে তাঁদের কৌতূহল আছে, সেসব বিষয়ের গভীরে যেতে চেষ্টা করেছি। অন্তরালের ঘটনাগুলো তুলে আনতে চেয়েছি। আমার বিশ্বাস ছিল গল্প–উপন্যাস পাঠককে আকৃষ্ট করতে পারলে রাজনৈতিক সাহিত্যও পারবে। এসব তো তাঁদের চেনা জগৎ।