ওমর আলীর কবিতা

ওমর আলী (২০ অক্টোবর ১৯৩৯—৩ ডিসেম্বর ২০১৫)
ওমর আলী (২০ অক্টোবর ১৯৩৯—৩ ডিসেম্বর ২০১৫)
ওমর আলী (২০ অক্টোবর ১৯৩৯—৩ ডিসেম্বর ২০১৫) অনেকটা নীরবেই চলে গেলেন ষাটের দশকের অন্যতম কবি ওমর আলী। এদেশে শ্যামল রং রমণীর সুনাম শুনেছি কাব্যগ্রন্থের মধ্য দিয়ে তাঁর চমক জাগানো আবির্ভাব। এরপর লিখেছেন আমৃত্যু। শেষ জীবনে অসুস্থ ছিলেন দীর্ঘদিন। এ কবির প্রয়াণের পর ছাপা হলো তাঁর দুটি অপ্রকাশিত কবিতা

দুঃস্বপ্ন
এখন ঘুমের মধ্যে মুখ দিয়ে কথা বের হয় না
ভয়ে গোঙাতে থাকি আঁ আঁ করে;
মনে হয়, ঊর্ধ্বশ্বাসে দৌড়াচ্ছি
আমাকে ধরতে আসছে বন্দুকধারীরা,
চিৎকার করতে যাই অ্যাপাচি অ্যাপাচি
কিন্তু কথা বের হয় না মুখ দিয়ে
শুধু গোঙাতে থাকি আঁ আঁ করে
হুইটজার কামান থেকে গোলা ছুড়ছে খুনিরা
বর্ডারের ওপার থেকে জবাব দিচ্ছে প্রতিপক্ষ,
ঊর্ধ্বশ্বাসে যেদিকে পারি দৌড়াচ্ছি—
আরও লোক আরও নরনারী প্রাণ নিয়ে;
হঠাৎ দেখি বিশাল শরীরের দুটো লাশ কুকুরে খাচ্ছে
মনে হলো, বিদেশি সৈন্য
তাদের হাড় মড় মড় করে চিবোচ্ছে কুকুর
ভেড়ামারা কলেজের উত্তর দিকে প্রস্রাবখানার দেয়াল
রাইফেলের গুলিতে ছিদ্র হয়ে আছে
যেমন দেখেছিলাম পাবনা জনতা ব্যাংকের...
নারকীয় পাবনা শহর...লাশ আর ছড়ানো ছিটানো
ট্রেসার লাইটে
ইউনিফর্ম পরা লাশগুলো ভেসে যাচ্ছে পদ্মা নদীর স্রোতে
দক্ষিণ দিকে...


সময়

সময় তো চলে যায়, সমুদ্রের ঢেউয়ের মতন
শেষ হয় তীরে গিয়ে, জীবন ফুরিয়ে যায় ঠিক
এখনি যখন প্রতি মুহূর্তের অতীতে গমন;
নতুন মুহূর্ত ফের জন্ম নেয়, সুখের দিকে
যায় যেন মরণের দিকে কোনো নতুন অতীতে।
যেমন একটি ফের সূর্যোদয় থেকে ক্রমাগত
সন্ধ্যার চরম কোণে যেতে থাকে মৃত্যু ছুঁয়ে নিতে,
রাতের আঁধাররেখা স্পর্শ করে সূর্য হয় গত।

অলংকরণ: অশোক কর্মকার
অলংকরণ: অশোক কর্মকার

আমারও প্রাণের আয়ু শেষ হয়ে যেতেছে তাহলে,
একটি নিশ্বাস থেকে মনে হয় আরেক নিশ্বাসে
আমিও যেতেছি কমে; যে রকম ধীরে ধীরে গলে
মোমের প্রদীপ জ্বলে আগুনের উত্তাপে, বাতাসে।
তাহলে, কী হবে, যদি আমারও সময় শেষ হয়,
কী হবে, হে প্রভু, পাব সে মুহূর্তে তোমার আশ্রয়?