কবিতার প্রহর

শামসেত তাবরেজী
নিখিল গাছ

দাঁড়িয়ে আছে নিখিল গাছ, শিকড় নাই
উড়াল ডাল পত্রপাতা নবোদ্গম,
দয়াল যিনি নিরালাতে ফর্দাফাই
চেয়েছি তার বাকল-ফাটা খুন-জখম।

উটের পেট খালাস-দ্যাখে শিশু-উট
স্যান্ড ডিউনের ঢেউয়ের পর ঢেউ ছাড়া
আর কিছু নাই, কেম্নে তবে বাপের পুত
নিখিল গাছের ওপর মেঘের পাঁয়তারা। 

নুহের বান আসছে নাকি এই দিকেই?
মাকড়ি খসে পড়ল একটি তারার-
বাচ্চা উটের জিবখানি খায় চেটেই
কার্বনের ভেতর ছিল শর্করা।

আধো ঘুমে এ পাশ থেকে আর-পাশে
আমার উট কেঁপে ওঠে কার বীজের
স্পর্শ পেয়ে সৃষ্টি সুখের উল্লাসে,
নিখিল গাছ স্ববিরোধী বৃষ্টিতে-যায় ভিজে।

আলফ্রেড খোকন
মৃদু অভিপ্রায়

আজই প্রথম সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় কোকিলের ডাক শোনা গেল;
এই ডাক রুটিনমাফিক,
তাতে কোনো ব্যাকুলতা নাই।
দৃশ্যত বেসরকারি উদ্যোগে যেসব বনজঙ্গল বেড়ে ওঠে
সেসব জায়গা থেকে যখন কোকিলের ব্যাকুল কণ্ঠস্বর কানে আসে
তাতে ফাল্গুন-চৈত্রের প্রতি একধরনের তীব্রতা বেড়ে যায়।
আজ সকালে যখন অফিসার্স কোয়ার্টারের ভেতর দিয়ে
রমনার দিকে হেঁটে যাচ্ছিলাম
তখনই কলোনির সুউচ্চ ইউক্যালিপটাসগাছের মগডালে
একটি কোকিলের মৃদু অভিপ্রায় টের পাই;
কিন্তু এই অভিপ্রায়ের মধ্যে চোখের পলক পড়তেই
অন্য এক আকর্ষণিয়া আমার মনোযোগ কেড়ে নেয়।
তার প্রতি মনোযোগ দিতে গিয়ে
হঠাৎ কোকিলকে হারিয়ে ফেলি।
আপনারা তো জানেনই কোকিল বেশ চতুর পাখি,
তা না হলে কি অন্যের বাসায় ডিম পেড়ে আসে!
যখনই সে টের পায় তার প্রতি কারও মনোযোগের,
মুহূর্তেই চুপটি মারে পাতার আড়ালে
ফাঁকি দিয়ে অন্য ডালে চলে যায় চোখের পলকে।
এ বাগানে আমরা যতই খুঁজতে থাকি,
পাশের বাগান থেকে শোনা যায় তার রাগত স্বর;
আবার কোকিলের জন্য মনোযোগ প্রতিস্থাপন করতেই দেখি—সে নেই!
পৃথিবীতে এই হয়—
মনোযোগের মৃদু অভাব পেলেই
পৃথিবীর সব আকর্ষণিয়া সন্তর্পণে বাঁক নেয় ধু ধু গলিতে।
তখন আমিও হারিয়ে ফেলি তাকে—
আজ প্রত্যুষে ইস্কাটন গার্ডেনের সরকারি কোয়ার্টারে
কোকিলের ডাক শোনার পর এমনই মাশুল দিতে হলো,
একটি পলক ছোঁ মেরে নিয়ে গেল ঢেউ, গভীর তরঙ্গ-মৃদু অভিপ্রায়িকাকে।

বিজয় আহমেদ
ট্রমা

এই ট্রমার পর অন্য কোনো স্নেহের
ট্রমার ভেতর পড়ে যাব দেখো!
আমার কোনো অসুখ থাকবে না।
কাউকে ডেকে বলব না, ‘সুধা কি সত্যিই
মনে রেখেছে অমলকে?’
নার্সিংহোমের টিকিটের জন্য কিউতে দাঁড়িয়েও
থাকব না, কানে হেডফোন গুঁজে!
ব্যান্ডের ভোকাল ছেলেটাকেও আর বলব না
আমাকেও গেয়ো, যখন ভয়ানক দুপুর!
শুধু এক নিরুপম মাছের পাখনা ধরে জেগে
থাকব সারাটা দিন
দেখো, একদিন ঠিক আমি সেরে উঠব!