
প্রথমা প্রকাশনের ‘পৃথিবীর পাঠশালা’ সিরিজের ৪ নম্বর বই কাঠবিড়ালি। এই সিরিজের অন্য তিনটি বইও বিভিন্ন প্রাণীকে নিয়ে লেখা। এটির বিষয় কাঠবিড়ালি। এ বইয়ে প্রাণীটি সম্পর্কে প্রায় আদ্যোপান্ত বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে। ‘প্রায়’ বলা হলো এ কারণে যে, যেহেতু এ বইয়ের কলেবর খুবই সীমিত এবং একটি বিশেষ বয়সী অর্থাৎ কিশোর-কিশোরীদের জন্য লেখা, সে কারণে আরও অনুপুঙ্খ তথ্য যে লেখক রেজাউর রহমান এ বইয়ে সন্নিবেশ করেননি, সেটা বেশ স্পষ্ট।
আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের বিখ্যাত কবিতা ‘কাঠবিড়ালি’ পড়ে প্রাণীটি সম্পর্কে একধরনের ধারণা লাভ করেছিলাম। তবে কবি আর গবেষক তো এক নন। রেজাউর রহমান সত্যিকার অর্থেই আমাদের দেশের সেই ধরনের গবেষক, যিনি যে বিষয়ে হাত দেন, তার নাড়ি-নক্ষত্রের হদিস বের করে ছাড়েন। অর্থাৎ তথ্য সন্নিবেশে তিনি কার্পণ্যের তোয়াক্কা করেন না। এ বইও তার ব্যতিক্রম নয়।
মোট সাতটি অধ্যায়ে বিভক্ত বইটি। অধ্যায়গুলো হলো: ‘পরিচিতি’, ‘আদি পরিচিতি’, ‘বর্তমান অবস্থান’, ‘কাঠবিড়ালির আকার-প্রকার’, ‘কীভাবে তারা জীবন কাটায়’, ‘আচার-আচরণ’ এবং ‘প্রকৃতি ও কাঠবিড়ালি’।
প্রাণীটির পরিচিতি দিতে গিয়ে শুরুতেই লেখক রেজাউর রহমান বলছেন, ‘কাঠবিড়ালি আমাদের বেশ পরিচিত একটি প্রাণী, বিশেষ করে আমরা যারা গ্রামে জন্মেছি বা সেসব জায়গায় আমাদের আসা-যাওয়া রয়েছে, প্রায় সময়ই প্রাণীটি আমাদের চোখে পড়ে। বনজঙ্গলের গাছপালার প্রাণী হলেও কাঠবিড়ালি গাছের খুব উঁচুতে থাকে না, মাঝামাঝি অবস্থানে থাকে বেশি। তাই সহজে সবার চোখে পড়ে।’ এ তো গেল সহজ-সরল কথা। কিন্তু কাঠবিড়ালি যে উড়তেও পারে, উড়ে এখান থেকে সেখানে যায়, এ বই পড়ে সেটা এই প্রথম জানলাম।
>

কাঠবিড়ালি—রেজাউর রহমান
প্রচ্ছদ ও অলংকরণ: অশোক কর্মকার
* প্রকাশক: প্রথমা প্রকাশন,
ঢাকা প্রকাশকাল: মার্চ ২০১৬
* ২৪ পৃষ্ঠা
* দাম: ১৩০ টাকা
আরও মজার তথ্য আছে। ইংরেজিতে কাঠবিড়ালিকে ‘স্কুইরাল’ বলা হয়ে থাকে। শব্দটা কোথা থেকে কীভাবে কত দিনে বিবর্তিত হয়ে এই নাম ধারণ করল, রেজাউর রহমান তার বিশদ বিবরণ দিয়েছেন। অঞ্চলভেদে ইংরেজি বা বাংলায় একে আর কী কী নামে ডাকা হয়, দেওয়া হয়েছে সে-সম্পর্কিত তথ্যও। শুধু তা-ই নয়, এদের মধ্যে কারা নিশাচর ও দিবাচর, আছে সে-সংক্রান্ত তথ্যও। প্রাণীটির আদি পরিচয় অর্থাৎ কীভাবে তারা বিবর্তিত হয়ে বর্তমান রূপে অস্তিত্বমান, লেখক তুলে ধরেছেন সে-সংক্রান্ত পরিসংখ্যান মোটামুটি বিস্তারিতভাবে। বলছেন, ‘এ ধরনের প্রাণীদের সূত্র ধরে বিশেষজ্ঞরা দেখেছেন যে, কাঠবিড়ালি বা কাঠবিড়ালি ধরনের মেরুদণ্ডী প্রাণীগুলোর উদ্ভব হয়েছিল পাঁচ কোটি বছর আগের কোনো একসময়ে। তবে সেই সব প্রাচীন প্রাণীর জীবাশ্ম বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে, তখন এসব প্রাণীর আকার-আয়তন বর্তমান সময়ের কাঠবিড়ালিদের চেয়ে ভিন্নতর ছিল।’
‘বর্তমান অবস্থান’ অধ্যায়ের মাধ্যমে জানা যাচ্ছে, বিশ্বে কাঠবিড়ালি গোত্রে ২৭০টি প্রজাতি রয়েছে। বাংলাদেশে আছে মাত্র আটটি প্রজাতি। লেখক বলছেন, ‘মেরু অঞ্চল বাদ দিয়ে পৃথিবীর প্রায় সর্বত্র কাঠবিড়ালি দেখা যায়। তবে দক্ষিণ আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়ার কিছু অংশে, দক্ষিণ আফ্রিকা ও মাদাগাস্কারে এদের দেখতে পাওয়া যায় না।’
এসব তথ্যের পাশাপাশি লেখক কাঠবিড়ালিরা গাছে কীভাবে বাসা বেঁধে থাকে, গাছ থেকে কীভাবে ওঠে বা নামে, দিয়েছেন তার বিবরণ। কীভাবে, কী খেয়ে তারা জীবন ধারণ করে, ফসলের সুরক্ষা কীভাবে করে, শীত কিংবা গ্রীষ্মে কীভাবে তারা কাটায়, আছে সে-সংক্রান্ত তথ্যও। পাতায় পাতায় ছবি—অবশ্যই প্রাসঙ্গিক—বইটিকে জীবন্ত ও সমৃদ্ধ করে তুলেছে।
অন্তিমে লেখক রেজাউর রহমান এই নিরীহ প্রাণীটির অস্তিত্ব যে বিলুপ্ত হওয়ার পথে, সবিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরেছেন সে কথা। শুধু তুলে ধরেই ক্ষান্ত হননি, সংবেদনশীল লেখক হিসেবে কাঠবিড়ালিকে বিপন্নতার হাত থেকে রক্ষা করার লক্ষ্যে আমাদের সচেতন ও সক্রিয় হওয়ারও আহ্বান জানিয়েছেন।
এমন একটি প্রয়োজনীয় বই লেখার জন্য রেজাউর রহমানকে অশেষ ধন্যবাদ।