জালাল উদ্দিন রুমির কবিতা

মরমি কবি জালাল উদ্দিন মুহাম্মদ রুমি (১২০৭—১৭ ডিসেম্বর ১২৭৩) ছিলেন ত্রয়োদশ শতকের একজন ফারসি কবি, সুফিতাত্ত্বিক ও আইনজ্ঞ। জালাল উদ্দিন মুহাম্মদ বালখী নামেও তিনি পরিচিত। খ্যাত হয়েছেন মাওলানা রুমি নামেও। বর্তমানে ইউরোপ–আমেরিকা ছাড়া প্রাচ্যের দেশগুলোতেও রুমির কবিতা খুবই পাঠকপ্রিয়। কারণ, তাঁর কাব্যের প্রতিটি চরণে রয়েছে অধরা এক উপলব্ধির পৃথিবী। এখানে অনূদিত কবিতাগুলো রুমির জগৎখ্যাত ‘মসনভি’ থেকে নেওয়া। এই বইকে ফারসি ভাষার শ্রেষ্ঠ কাব্যগ্রন্থ হিসেবে ধরা হয়। এখানে প্রণয়ের পরম্পরায় বিধৃত আছে সৃষ্টির সরাৎসার। রুমির ভাষায়, ‘প্রেমাস্পদ সব, প্রেমিক এক আবরণ’। আজ কিংবদন্তিতুল্য এই কবির জন্মদিনে ফারসি ভাষা থেকে তাঁর কবিতা অনুবাদ করেছেন জাভেদ হুসেন

কোলাজ: মনিরুল ইসলাম

প্রেমাস্পদ সব, প্রেমিক এক আবরণ

০১.
এক মুখ সর্বদা ফিরে আছে প্রিয়র দিকে
এক চেহারা নিজেই হয়েছে প্রিয়র মুখ
০২.
প্রাণের প্রাণ! তোমার কাছে আমার যত অনুযোগ
সে তো আমার হৃদয়ের হাল শোনানোর বাহানা
০৩.
এসো! আমাকে আমার কাছ থেকে কিনে নাও
আমি তোমার না হয়ে বদনাম হতে চাই না
০৪.
মিষ্টি আর তিক্তের সমুদ্র একসঙ্গে বয়
তবু মাঝে তার দেখো ব্যবধানের চিহ্ন রয়
০৫.
পরখ করার শক্তি আছে যার
বিশ্বাস থেকে সন্দেহ সে পৃথক করে রাখে
০৬.
যখন ইচ্ছে বেদনাকে আনন্দ করে দাও
পায়ের শিকল মুক্তির বার্তা শোনায়
০৭.
এই সমুদ্রে আমাদের শরীর ও প্রাণ—
জলের স্রোতে যেন বয়ে যাওয়া পেয়ালা
০৮.
কীভাবে চিনবে প্রতিটি রং আলাদা করে
যতক্ষণ তুমি খোদ আলোকেই না দেখছ
০৯.
সত্য যদি আমাদের বেদনা না দিত
কী করে জানতাম আনন্দ কাকে বলে
১০.
বুদ্ধি থেকে যখন ভাবের স্রোত ওঠে
তখন সে মিশে যায় কথা আর শব্দে
১১.
কথাও শব্দ হয়ে হারিয়ে গেল
ছিল স্রোত, উঠে মিলিয়ে গেল
১২.
আমরা বীণা তুমি তার মিজরাব
এ অঝোর বরষন আমার নয়, কাঁদছ তুমি

১৩.
তুমি সব ছিনিয়ে নিলে অভিযোগ কেন হবে?
চিত্র তো চিত্রকরের সামনে কাঙাল হবেই
১৪.
মোম ও সলতে ছিল অনুজ্জ্বল
আগুনে নিজেকে বিলিয়ে হলো সর্বাঙ্গ আলোকময়
১৫.
হৃদয়বানের বিদ্যা তার কাজের অধীন
শরীরসর্বস্বের বিদ্যা তার মাথার বোঝা
১৬.
আমার পথই আমার চলার পাথেয় লুটে নিল
আমার শরীর আমার প্রাণ হরণ করতে চায়
১৭.
প্রিয়র মিলন না হলে প্রাণ সে প্রাণহীন
আলো অন্ধকারতম সে উজ্জ্বল মুখের আলো ছাড়া
১৯.
যার বুকের দরজা খোলা
ধুলোকণায় সে সূর্যের জ্যোতি দেখে
২০.
শোনো! নিজেই এসেছি চলে তোমার কাছে
আমার চাইতেও তো তুমি আমার নিকটে আছ
২১.
প্রেমের কারণ কী করে বয়ান করা যায়
প্রেমে যে প্রতি পদক্ষেপেই পরীক্ষা
২২.
যদি ব্যাখ্যা করো তা–ও মন্দ নয়
তবে জেনো, ভাষাহীনতাই প্রেমের ভাষা
২৩.
প্রেমের ব্যাখ্যা সব লিখে রাখছিল কলম
প্রেমের বয়ান শুনতে গিয়ে স্তব্ধ হয়ে গেল
২৪.
শুধু নামের কখনো কি কোনো অর্থ হয়?
ফুল না থাকলে ফুল লেখার অক্ষর অর্থহীন
২৫.
তোমাকে পেলে পাওয়া হয় সকল গন্তব্য
না বলেই সমাধান হয়ে যায় সব মুশকিল
২৬.
আবার যদি আসে সেই সুগন্ধের দোলা
হে বন্ধু! এবার যেন হাত শুন্য থেকে না যায়

অন্য আলো ডটকমে লেখা পাঠানোর ঠিকানা: [email protected]