টিয়া পাখির আত্মকথা

তোমাকে উৎফুল্ল রাখতেই
আমার এই চাঞ্চল্য, আমার এই ব্যস্ত হয়ে ওঠা
তুমিই চেয়েছিলে মরু বুকে
এক ফোঁটা জল।
অথচ এখন আমার কিচিরমিচির
তোমার অসহ্য লাগে, অস্থির হয়ে ওঠো তুমি
আমি বুঝতে পারি, তোমার ভেতরে আমার অনুপস্থিতি
কিছু জানতে পারি না মন্থর নিবাসের তোলপাড়
কিংবা ক্ষুধার্ত ঝিনুকের নীরবতা।
কী করে জানব বলো
কোনো দিন তো বলোনি পরিমাপের ব্যাকুলতা।
আসলে বুঝি তুমিই জানো না
অন্তরের গতিপথ কী করে হয়ে ওঠে সুধাময়।

এই আমরা নারীরা কোনো দিন
বিহ্বলতা চাইনি, তবুও খাঁচার ভেতর
আমাদের পালক ঝরে
আজকাল ঠিকমতো উড়তেও পারি না
কেমন যেন হাওয়ার মাঝে
ধুলো জমে থাকে, ডানা দুটো ভার হয়ে আসে।

তোমাদের কাছে তো সারা জীবন
একটি আকাশ চেয়েছি,
শুধু চেয়েছি দুহাত বাড়াও
চলো মুক্ত গগনে উড়ি।
সেই তোমরাই বলো অধিকার দিলাম
বৃত্তের ভেতর থেকেও সুবাসিনী ঠোঁটে
বুলি ফোটে যখন, আবার তোমরাই শুধাও
অনর্থক চেঁচামেচি।
নীরব থাকলে হয়ে উঠি অহংকারী,
তোমরাই করো রহস্যের সৃষ্টি
আমরা হয়ে উঠি রহস্যময়ী ।
ভালোবাসলে বলো আবেগী
আর না বাসলে ছলনাময়ী ।

কী করব বলো—
শুরু থেকেই আমাদের
নিরাপদ আশ্রয়ের ছিল বড্ড অভাব
আমরা তো ইচ্ছে করলেই পারি না
উন্মুক্ত প্রান্তরের সবুজ ঘাসে শুয়ে
তারাভরা রাতের জ্যোৎস্না দেখতে
কিংবা তৃষ্ণার দিনে
পাড়ি দিতে অজানায়।
পায়ে সুতোর টান লাগে যে
ব্যথা পাই, তপ্ত দহনে।

আমরা তো সর্বতই চাই
তোমাদের রিক্ত থালা ভরিয়ে দিতে
বিশালতার সমুদ্রে সাঁতার কাটতে।
অথচ পরাধীনতার আশ্রমে
আমাদের দীর্ঘনিশ্বাসের উত্তাপে উনুন জ্বলে,
জলে ফোটে স্বপ্ন
বাষ্প হয়ে উড়ে যায় মেঘেদের দেশে।

জানি না কবে সকাল হবে কবে?
চৈতন্যের ঘুম ভাঙবে তোমাদের,
একদিন হয়তো শিকল ছিঁড়ে
উড়ে যাবে পাখি—সুদূরে
না-ফেরার দেশে;
তোমাদের বোধের উৎস হবে সেদিন
যেদিন শূন্য খাঁচা পড়ে রইবে।

অন্যআলো ডটকমে লেখা পাঠানোর ঠিকানা: [email protected]