টুয়া ফর্সস্ট্রামের একগুচ্ছ কবিতা

টুয়া ফর্সস্ট্রাম সমকালীন ফিনল্যান্ড-সুইডিশ কবিদের মধ্যে অত্যন্ত জনপ্রিয়। জন্ম ১৯৪৭ সালে, ফিনল্যান্ডে। হেলসিংকি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাহিত্য অধ্যয়ন করেছেন। বর্তমানে বাস করছেন ফিনল্যান্ডের হেলসিংকিতে। তিনি কবিতা লেখেন সুইডিশ ভাষায়। ফিনল্যান্ড-সুইডেনের অধিকাংশ সাহিত্য পুরস্কার তিনি অর্জন করেছেন। তাঁর কবিতায় ফিনল্যান্ডের ভূপ্রকৃতি, ভ্রমণ আর ব্যক্তির সঙ্গে ব্যক্তির সম্পর্কের মধ্যে দ্বন্দ্বের প্রবল উপস্থিতি দেখা যায়। কবিতায় খেলা করে বিষাদের সুর লক্ষণীয়। ধ্রুপদি সাহিত্যের পাশাপাশি দর্শন, ভিসুয়্যাল আর্টকে কবিতায় ব্যবহার করেছেন তিনি। প্রাণিজগতের নানান পশুপাখিও তাঁর কবিতার অন্যতম মেটাফোর। এখানে অনূদিত কবিতাগুলো ‘ওয়ান ইভিনিং ইন অক্টোবর আই রোওড আউট অন দ্য লেক’ (২০১৫) কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া। প্রতিটি কবিতাই শিরোনামহীন। সুইডিশ থেকে ইংরেজিতে বইটি অনুবাদ করেছেন ডেভিড ম্যাকডাফ। আর বাংলায় অনুবাদ করেছেন মাজহার জীবন

এক.

ক্ষতি কতটা তা আন্দাজ করা কঠিন

পরে তা জানাব তোমাকে আমি

লেকে অক্টোবরের এক সন্ধ্যায় নৌকা বাইছিলাম

বেশ জোরে বইছিল বাতাস, ছোট্ট ফাইবার গ্লাসের নৌকা

লেসের কাছ থেকে ধার করা ওটা

ঢেউয়ের তোড় দ্বীপের দিকে নিচ্ছিল ঠেলে

মাছগুলো বেহাতই হয়ে যাচ্ছিল প্রায়

কত যে অনুভব করেছি তোমার অভাব

সবকিছু যেন খোসার মতো হালকা

অন্ধকার গাঢ় হয়ে আসছিল আমার কোনো বোধ ছিল না

দুই.

তিরস্কার কোরো না আমাকে তুমি

ইলশেগুঁড়ির ভেতর দিয়ে দেখো আমাকে

আমার কাছ থেকে মুখ ফেরাতে পারবে না

জলে ভাসছে ওজনহীন খোসা

মৃদু বিদ্যুচ্চমক পড়ছে আমাদের সবার ওপর

এবং খরগোশের ওপর

তিন.

পরবর্তী অধ্যায়: ভুলে যাওয়ার আগে

পরবর্তী অধ্যায়: অন্ধকার

বৃষ্টি আর সহানুভূতি

অক্টোবর এসে গেল তাই বেড়েছে শীত

আমাকে অবশ্যই কাঠ জোগাড় করতে হবে

আমাকে তালায় চাবি লাগাতে হবে

তারপর আবার আমি সেই আওয়াজ শুনি,

অদ্ভুত কিন্তু পরিষ্কার সে আওয়াজ

ছোট্ট শিশু এখন তুমি বড় হয়েছ

ছোট্ট খরগোশ শাবককে আর ভয় পেয়ো না

চার.

কিন্তু তুমি কেন দুঃখিত

যখন ঘুমোতে যাই

জানি আমি কেন দুঃখিত

পাঁচ.

অন্ধকার, বৃষ্টি, সহানুভূতি

আকণ্ঠ নিমজ্জিত গোলাপসন্ধ্যা

মেইলানের রাস্তা ধীরে ধীরে বরফেমোড়া

একটা নিখুঁত আটপৌরে সন্ধ্যা

ছয়.

দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলের আবহাওয়ার পূর্বাভাস

আর নানা খবর নিয়ে এক সকাল

কেউ কিছু রাখবে ফেরতও দেবে

গাঢ় রং

সাত.

আমাকে করো না তিরস্কার

ফিরিয়ে নিয়ো না মুখ

শিলা-কাঁকর মুখমণ্ডলে বহমান

জলে অলডার ফুলরেণু ভাসমান

আট.

সদয় হয়ে মৃতরা আমাদের সাথে কথা বলে

কিন্তু ভয় পেয়ে যাই আমরা, গুলিয়ে

ফেলি সবকিছু

কালো একটা বস্তু এখানে

মৃতরা তার তোয়াক্কা করে না

আমরা তাদের একটা অ্যাপার্টমেন্ট দিলাম

উঠোনমুখো জানালা কিন্তু ওরা আসে আর যায়

রাতে ঘুমোয় না তারা, কোনো

ওষুধ খায় না, ঘর্মাক্ত হয় না

দামি পোশাকও কেনে না

আমার মা বাবাকে জিজ্ঞেস করি

মিওলবোলস্টায় বিদ্যুৎঝড়ে পড়লাম, বৃষ্টি

শিলাবৃষ্টিতে পরিণত হলো, চারদিক শুধু সাদা আর সাদা

পুরান রাস্তা স্বাস্থ্যকেন্দ্র অবধি মোটা চেইনে আটকানো

রাস্তার একপাশে দাঁড়াতে বাধ্য হলাম

পুলিশের একটা গাড়ি এসে থামল, এবং চলেও গেল

আমাদের শৈশবকে আমরা ধ্বংস করতে পারি না

আমার মা-বাবাকে বলি তাদের দুশ্চিন্তার কিছু নেই

ড্যানড্যালিয়নের ফুল ফোটা হয়েছে শেষ

তাড়াতাড়ি মেরামতের কাজ শেষ হবে

কালো বস্তুটার ব্যাপারে আমি জিজ্ঞেস করলাম

তারা কি বাড়ি ফেরার জন্য উদগ্রীব—জানতে চাইলাম

তারা আমার দিকে ঘুরে তাকাল,

মনে হলো আগ্রহী

মনে হলো মোটা আর ভয়ংকর শক্ত

ঘনত্বের ব্যাপার যা আমি বুঝি না

মনে হয় আমাদের নিয়ে তারা উৎসুক

কারণ আমরা অসুখী হয়ে কাঁদি ও হাসি

টুপটাপ বন্য বৃষ্টি ধাতব শিটে ঝরছে, ছোট ছোট গোলাকার

শিলা পড়ে লাফিয়ে উঠে আবার পড়ে যাচ্ছে

একের পর এক বরফের স্তর জমছে

মৃতরা মনে হয় খেলে না, তারা হোঁচট খায়

এবং মিলিয়ে যায়।

আমি তাদের সাহায্য করতে চাইলাম, বুঝালাম

বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যাবে,

আর শীতেরা চলে আসছে, ওরা বুঝলো মনে হলো না।

অন্য আলো ডটকমে লেখা পাঠানোর ঠিকানা: [email protected]