দৈত্য হবে রাজা!

অলংকরণ: মাসুক হেলাল
অলংকরণ: মাসুক হেলাল

তার রাজা হওয়ার ইচ্ছের কারণেই যত অশান্তি!
অথচ আট-দশটা বনের চেয়ে ভিন্ন এই বনে সবাই সুখে-শান্তিতে বসবাস করত। সেখানে আছে বিচিত্র সব গাছ আর ফল-ফুলের বাগান। হাজারো প্রজাতির পশুপাখি বসবাস করলেও বনে কোনো রাজা ছিল না। সেখানে সবাই সমান। ছিল না কোনো ঝগড়াঝাঁটি, মারামারি, এমনকি হিংসা-বিদ্বেষও। পাখিও ছিল অজস্রÊ। তাদের কিচিরমিচিরে সারা বন মুখরিত হয়ে থাকত। এভাবে দিন কাটছিল মহা-আনন্দে।
কিন্তু এই সুখের দিনেই দুঃখ হয়ে এল এক দৈত্য। বনের একটু দূরেই তার আস্তানা। দুষ্ট দৈত্যটা চেয়েছিল, সে-ই হবে বনের রাজা। তাই ভেবেচিন্তে সে একটা ফিন্দ অাঁটল। দলবল নিয়ে সে বনের প্রাণীদের খাবার সংগ্রহের পথগুলো বন্ধ করে দিল। সে পথে কেউ গেলেই তাদের আটক করে ফেলত।
এদিকে বনের জীবজন্তুরা পড়ল মহা-দুশ্চিন্তায়। খাবার আনতে যে যায়, সে-ই আর ফিরে আসে না। ভয় পেয়ে তারা বনের আশপাশে চলাচল বন্ধ করে দিল। কিন্তু এভাবে আর কদ্দিন? না খেয়ে সবার মরার উপক্রম হলো।
বনের মধ্যে সবচেয়ে বয়স্ক হলো সিংহ মামা। বনের সবাই ঠিক করল, সমাধান চাইতে তার কাছেই যাবে। সব শুনে সিংহ গলা খাঁকারি দিল। বলল, ‘দেখো ভাগনেরা, আমার শরীরটা খুব খারাপ। আজকাল অনেক কিছুই মনে থাকে না। বুদ্ধিশুদ্ধিও লোপ পেয়েছে। তাই আমি এই দায়িত্ব শিয়ালের ওপরই সঁপে দিলাম। সে পণ্ডিত; চালাকও বটে। সে নিশ্চয়ই একটা উপায় বাতলে দেবে।’ সবাই সিংহের কথায় সায় দিল।
বাঘ বলল, ‘যেভাবেই হোক, দৈত্যকে কখনোই বনের রাজা হতে দেওয়া যাবে না। আমাদের সমাজে এসে দৈত্য শাসক হবে, এটা কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না।’
শিয়াল পণ্ডিত গালে হাত দিয়ে সব শুনল। মাথা চুলকে বলল, ‘দৈত্যকে ঠেকানো সহজ কাজ নয়। আমাদের বুদ্ধি দিয়ে মাথা ঠান্ডা রেখে কাজ করতে হবে। হুমম... একটু ভাবতে দাও।’
তখন হরিণ ভায়া বলল, ‘যা করার জলদি করো। নইলে আমাদের মরতে হবে।’
ভেবেচিন্তে অনেকক্ষণ পর শিয়াল বলল, ‘তোমরা পিঁপড়ে সমাজের সঙ্গে কথা বলো। লাল-কালো সবাইকে ডাকো। তারাই একমাত্র ভরসা। তারা দল বেঁধে যদি দৈত্যদের বিরক্ত করা শুরু করে, বনের রাজা হওয়া তো দূরের কথা, ওরা তখন বনের আশপাশ ছেড়েও পালাবে।’
মুরিব্বদের আদেশ পেয়ে দল বেঁধে ছুটল পিঁপড়েরা। দৈত্যরা তখন সব ঘুমিয়ে ছিল। ঠিক সেই সময় এক একটা পিঁপড়ে দৈত্যের নাক, কান, মুখ আর চোখের ভেতর ঢুকে গেল!
আর যায় কোথায়! দৈত্যের দল তখন ‘ওরে চোখ গেল রে, কান গেল রে’ বলে দিল ভোঁ দৌড়!
আনন্দে পশুপাখিরা সব হইচই করে নাচতে আর গাইতে লাগল।