নিখোঁজ বিজ্ঞপ্তি

একবার এক ভালোবাসা দিবসের আশপাশে লেখক সাদাত হোসাইনের জীবনে ঘটল এক অপ্রত্যাশিত ঘটনা। একটা কবিতার সূত্র ধরে এক মেয়ে ফোন করল তাকে। এরপর খুব দ্রুতই ঘটতে থাকল চমকপ্রদ সব ঘটনা। পড়ুন ভালোবাসা দিবসের সত্য কাহিনি।

ইউনিভার্সিটিতে পড়ি। বন্ধু সুমন তখন নিয়ম করে পত্রপত্রিকায় লেখা পাঠায়। সেসব ছাপাও হয়। আমি তখন লেখালেখি থেকে স্বেচ্ছানির্বাসনে। ব্যক্তিগত, পারিবারিক নানান সংকটে বিধ্বস্ত প্রায়। কারও সাথে কথা বলি না। কোথাও যাই না। সারাক্ষণ রুমবন্দী হয়ে বসে থাকি। শীত যাই যাই করছে। রুক্ষ প্রকৃতি হঠাৎ হঠাৎ মন কেমন করা হাওয়ায় বলছে, ‘আসছে বসন্তদিন’। পাতা ঝরার গল্প শেষে গাছে গাছে লেখা হচ্ছে ছন্দে-গন্ধে ফুল-পাতার কাব্য। তবে সেসবে আমার মন নেই। আমি তখন বন্ধ ঘরের অন্ধকারে নিমজ্জমান মানুষ।

সেই আমি সেদিন সন্ধ্যায়, একা একা হেঁটে চলে গেলাম ইউনিভার্সিটির ডেইরি গেটে। সেখানে আলো-ঝলমলে দোকান। চারপাশে হাসিমুখ মানুষের মুখরিত ছবি। আমি চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছি। সুমন আমায় ডাকল, ‘কী করছিস?’
আমি তাকালাম, ‘কিচ্ছু না।’
‘চল চা খাই।’
‘আমি চা খাই না।’
‘সিগারেট?’ বলে হাসল সুমন। সে জানে, আমি সিগারেটও খাই না। বলল, ‘তুই এমন কেন?’
আমি বললাম, ‘কেমন?’
‘সাদা পাতার মতো। কোথাও কোনো দাগ নেই। পড়াও যায় না কিছু।’
আমি জবাব দিই না। তবে সুমনের কথাটা ভাবি। আসলেই কি আমি সাদা পাতার মতো? কোথাও কিছু লেখা নেই আমার—না দুঃখ, না আনন্দ; না অন্য কিছু? নাকি অপাঠ্য আমি? লুকানো গোপন কোনো কালিতে হয়তো সযত্নে সংগোপনে আড়াল করে রাখা আছে বুকের গহিনে গভীর কোনো গল্প? সেই গল্প কেউ পড়তে পারে না। পড়ার দায়ও নেই।
সুমন আমাকে পাশে বসিয়ে সিগারেট ধরায়। আমি চুপচাপ তাকিয়ে থাকি। সে বলে, ‘চল একটা কাজ করি।’
আমি তাকাই, ‘কী কাজ?’
‘চিঠি লিখি।’
‘চিঠি?’
‘হুঁ।’
‘কাকে?’
‘তা তো জানি না।’
আমি অবাক চোখে তাকাই। সুমন বলে, ‘পত্রিকায়।’
‘পত্রিকায় চিঠি লিখবি?’ আমি এবার কপাল কোঁচকাই, ‘কী নিয়ে? ইউনিভার্সিটির অনিয়ম? ছাত্ররাজনীতি? প্রশাসন?’
সুমন হাসে, ‘উঁহু। বসন্ত এসে গেছে...।’
‘মানে কী?’
সুমন তার হাত থেকে একটা ভাঁজ করা ম্যাগাজিন বের করে। তারপর পাতা ওলটায়। তারপর থামে। একটা বিজ্ঞপ্তি দেখিয়ে বলে, ‘দেখ?’
‘কী?’
‘ওরা ভালোবাসা দিবসের বিশেষ সংখ্যা বের করবে। সেখানে চাইলে যে কেউ চিঠি লিখতে পারে। প্রথম তিনজনের জন্য মোবাইল ফোন উপহার। আর সাথে একটা ইন্টারেস্টিং ব্যাপার থাকবে।’
আমার তখন একটা মোবাইল ফোনের খুব দরকার। হাতের ফোনটার মৃতপ্রায় দশা। ফলে সেটাই আমার কাছে সবচেয়ে বেশি ইন্টারেস্টিং মনে হয়। তাই অন্য ঘটনাটি আর জানতে চাই না আমি। সুমনকে বলি, ‘তুই লিখবি?’
‘লিখব কী রে? অলরেডি লিখে ফেলেছি।’
সুমন তার পকেট থেকে মুখবন্ধ একখানা খাম বের করে। আমি খামটা খুলি। ভেতরে লেটার প্যাডে লেখা গোটা অক্ষরের দীর্ঘ চিঠি। আমি আগ্রহ নিয়ে সেই চিঠি পড়লাম। চিঠির শেষে সুমনের ফোন নম্বর দেওয়া। আমি বললাম, ‘ফোন নম্বরও দিতে হয়?’
‘হুম। তবে অনুমতি ছাড়া ছাপবে না।’
আমি কথা বলি না। সুমনের চা-সিগারেট শেষ হয়। আমরা ওয়েসিস নামে দোকানটাতে চাই। সুমন চিঠি কুরিয়ার করবে। খামের ওপর পত্রিকার ঠিকানা লেখে। চিঠিটা শেষবারের মতো আরেকবার দেখে নিয়ে খামে ঢুকিয়ে মুখ বন্ধ করে। তারপর দোকানির কাছে খানিক আঠা চাইল মুখে সেঁটে দেবে বলে। আর ঠিক সেই মুহূর্তে আমার কী যে হলো! আমি ওর হাত থেকে নির্বিকার ভঙ্গিতে খামটা নিয়ে নিই। তারপর আলগোছে খুলে ফেলি মুখ। এরপর চিঠিটার শেষাংশে যে ফাঁকা জায়গাটুকু রয়েছে, সেখানে খসখস করে নীল কালির অক্ষরে লিখে ফেলি:
‘আমি একদিন নিখোঁজ হব, উধাও হব রাত প্রহরে,
সড়কবাতির আবছা আলোয়, খুঁজবে না কেউ এই শহরে।
ভাববে না কেউ, কাঁপবে না কেউ, কাঁদবে না কেউ একলা একা,
এই শহরের দেয়ালগুলোয়, প্রেমহীনতার গল্প লেখা।’
এটুকুই। আর কিচ্ছু না। তারপর টুক করে নিচে লিখে দিলাম নিজের নাম আর ফোন নম্বর। সুমন অবাক চোখে আমার দিকে তাকায়, ‘এক কাগজে দুই লেখা?’
আমি হাসলাম, ‘তাতে কী?’
‘সমস্যা হবে না?’
‘কেন? ওরা কি বলেছে যে এক কাগজে দুজন লিখতে পারবে না?’
‘না, তা বলেনি। কিন্তু...।’
‘কিন্তু কী?’
‘ওরা তো চিঠি লিখতে বলেছে, কবিতা না।’
‘কবিতাও তো চিঠিই? কত কত কথা, অনুভব সে বয়ে বেড়ায়।’
সুমন সম্ভবত আমার কথা বুঝতে পারে না। সে অবাক তাকিয়ে থাকে। আমরা অন্ধকার মাঠ পেরিয়ে নিঃশব্দে হেঁটে চলে আসি হলে। তারপর সুমনের সঙ্গে দীর্ঘদিন কথা হয় না আমার। দেখা হয় না। আমার আধভাঙা ফোনে মাঝেমধ্যে নানান মানুষের ফোন আসে। কথা বলতে গেলে শব্দবিভ্রাট হয়। ফলে আমি খুব একটা ফোন ধরি না। ঠিক সেই সময়ে এক ভোরে, অদ্ভুত এক কাণ্ডে হতভম্ব হয়ে গেলাম আমি। ফোনের স্ক্রিনজুড়ে অসংখ্য মিসড কল। অসংখ্য নম্বর। তাদের কাউকেই আমি চিনি না। সুমন এল তার কিছুক্ষণ বাদেই। তার চোখেমুখে উত্তেজনা। আমি বললাম, ‘কী হয়েছে?’
‘তোর লেখা ছাপা হয়েছে।’
‘লেখা? কিসের? কোথায়?’ আমি তত দিনে দিব্যি ভুলে গেছি সেই লেখার কথা।
‘ওই যে ম্যাগাজিনে।’
‘ওহ্।’ আমি হতাশ গলায় বলি, ‘ওরা কি আমাকে ফোনটা দেবে?’
‘কেন, তোকে ফোন করেনি?’
আমি ওকে ফোনের স্ক্রিন দেখাই। অসংখ্য মিসড কলের ভিড়ে কে কেন ফোন করেছে, তা বোঝার উপায় নেই। সুমন বলল, ‘ওরা সম্ভবত তোকে ফোন করেছিল, তুই ধরিসনি। তোর নম্বরটাও ছাপা হয়ে গেছে লেখার সাথে। আর...।’
‘আর কী?’
‘এই দেখ?’

সুমন পত্রিকাটি বাড়িয়ে দিল আমার দিকে। আমার লেখাটা সেখানে জ্বলজ্বল করছে। আমাকে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। হ্যাঁ, ফোনটা আমি পাচ্ছি! সারাটা দিন উত্তেজনায় আমি বুঁদ হয়ে রইলাম, আমার নিস্তরঙ্গ জীবনে অদ্ভুত এক কম্পন নিয়ে এল ওই ঘটনা। সাথে যন্ত্রণাও। দিন-রাত ফোন আসতে লাগল। আমি তার সব ধরতে পারি না। ইচ্ছাও হয় না। বিরক্ত লাগে। সেকালে পত্রিকায় ফোন নম্বর ছেপে দেওয়া ভয়ানক এক ব্যাপার। সারাক্ষণ রাজ্যের ফোন আসতে থাকে। উদ্ভট উদ্ভট সব কথা। হাসি, ঠাট্টা, প্রেম। আরও কত কী! নিজেকে বড্ড নিরাভরণ মনে হতে থাকে আমার। হয়তো অন্য কোনো সময় হলে উপভোগ্যই হতো। কিন্তু তখন আমি জীবনের চাপে চিড়েচ্যাপটা। ওসবে খুব ক্লান্ত হয়ে যাই। নতুন ফোনটা পাওয়ার সাথে সাথেই অদ্ভুত এক কাজ করি আমি। সুমনকে ডেকে বলি, ‘আমার কাছে তোর একটা পাওনা আছে।’
সুমন বলে, ‘কী?’
আমি হাসতে হাসতে বলি, ‘এই সিম কার্ডটা।’
সুমন সরু চোখে তাকায়। আমি বলি, ‘এই সিমে রোজ অসংখ্য মেয়ে ফোন করে। তারা কত কত রোমান্টিক কথা বলে। কবিতা, গান শোনায়। হোপ, ইউ উইল লাইক ইট।’
সুমন চকচকে চোখে তাকায়। ওর যেন বিশ্বাসই হয় না। সে সিমটা লুফে নেয়। আমি হাসি।
সেটা সুমন উপভোগ করেও। রোজ কত কত তরুণীর সাথে তার গল্প হয়। কথা হয়। আমি তখন ছুটে বেড়াই দেশের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত। জীবন ও জীবিকার কঠিন যুদ্ধে বিধ্বস্ত এক মানুষ। ওই লেখা, ওই ফোন, ওই অসংখ্য তরুণীর কথা আমি ভুলে যাই। ক্রমশই ডুবে থাকি জীবন ও যন্ত্রণার গহিনে। তারপর এক রাতে আমার রুমের দরজায় করা নাড়ে সুমন। আমি হাসিমুখে বলি, ‘কেমন চলছে সব?’
সুমন চিন্তিত গলায় বলে, ‘গত কদিন আগে অদ্ভুত একটা ঘটনা ঘটেছে।’
‘কী?’

মেয়েটির কথা শুনে আমি থ হয়ে গেলাম। সুমন যে বলেছিল, আমি সাদা পাতার মতো। আমাকে পড়া যায় না। তাহলে এই অচেনা-অজানা মেয়েটি কী করে এমন অবলীলায় আমাকে পড়ে ফেলল? এমন অকপট, সহজ অথচ গভীরতম সংবেদনশীলতায়?

‘একটা মেয়ে ফোন করেছে। আমি ধরলাম। কিন্তু কিছুক্ষণ কথা বলতেই সে বলল, যিনি পত্রিকায় ওই লেখাটি লিখেছিলেন, তিনি আপনি? আমি বললাম, হুঁ। মেয়েটি কিছুক্ষণ কথা বলল। উদ্ভট সব কথা। নানান প্রশ্ন। আমি রোজ রাতে একা একা ল্যাম্পপোস্টের নিচ বসে থাকি কি না, কখন লিখি, এই সব। আমি যতটা সম্ভব জবাব দেওয়ার চেষ্টা করলাম। কিন্তু শেষে সে বলল, যে ওই লেখাটা লিখেছে, সে নাকি কোনোভাবেই আমি না।’
‘কী বলছিস?’
‘হুম। আমি যতই বোঝাই, সে বলে ইম্পসিবল। ওই লেখাটা যিনি লিখেছেন, তিনি কোনোভাবেই আপনি হতে পারেন না। কোনোভাবেই না।’
আমি অবাক গলায় বলি, ‘কী বলছিস তুই?’
‘হুঁ। এতটা অবাক কখনো হইনি আমি।’
‘তারপর?’
‘অনেক বোঝানোর চেষ্টা করলাম। বিষয়টা আমাকে হতভম্ব করে দিয়েছে। কেবল কথা শুনে কেউ কীভাবে এত কনফিডেন্ট হতে পারে!’
‘তারপর?’
‘অসংখ্যবার সে অনুরোধ করেছে, একবার ওই লেখাটি যিনি লিখেছেন, তার সাথে কথা বলতে চায় সে। এক মিনিটের জন্য হলেও! সে কোনোভাবেই মেনে নিতে চায় না যে ওই লেখাটি আমার। আমি ওটি লিখেছি...।’
চিন্তিত ভঙ্গিতে বললাম, ‘তুই কী বললি?’
‘শেষমেশ স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছি। তুই কি একটু কথা বলবি? প্লিজ?’
কী করব, তা বুঝতে পারছিলাম না আমি। বিষয়টি অদ্ভুত ও রহস্যময়। একই সাথে কৌতূহলোদ্দীপকও। খানিক চুপ থেকে বললাম, ‘আচ্ছা।’
মেয়েটির সাথে আমার কথা হলো অন্য একদিন।
সে বলল, ‘আপনি কখনো শূন্য রাস্তায় ল্যাম্পপোস্টের আলোতে বসে থেকেছেন?’
‘হুঁ।’
‘কখন?’
‘আমার যখন ইচ্ছা হয়, তখনই।’
‘কিন্তু দিনের আলোয় কি অমন শূন্য রাস্তায় ল্যাম্পপোস্টের আলোয় বসে থাকা যায়?’
‘যায়।’
‘কী করে?’
‘কল্পনায়।’
‘কল্পনায়?’
‘হুঁ।’
‘তার মানে আপনি বাস্তবে কখনো অমন নিঃসঙ্গ রাতের হলদে আলোর ল্যাম্পপোস্টের নিচে বসে থাকেননি?’
‘উঁহু।’
‘কেন?’
‘আমার বাস্তব ভালো লাগে না বলে।’
‘মানুষ কখন বাস্তবের চেয়ে কল্পনায় বেশি বাঁচতে চায়, জানেন?’
‘কখন?’
‘যখন সে সত্যি সত্যি কাউকে ছুঁয়ে দিতে পারে না, তখন কল্পনায়ই সে সবকিছু স্পর্শ করতে চায়।’
মেয়েটির কথা শুনে আমি থ হয়ে গেলাম। সুমন যে বলেছিল, আমি সাদা পাতার মতো। আমাকে পড়া যায় না। তাহলে এই অচেনা-অজানা মেয়েটি কী করে এমন অবলীলায় আমাকে পড়ে ফেলল? এমন অকপট, সহজ অথচ গভীরতম সংবেদনশীলতায়?
সে বলল, ‘আমিও একদিন সত্যি সত্যি ল্যাম্পপোস্টের ওই হলদে আলো মেখে এই শহর থেকে নিখোঁজ হয়ে যেতে চাই।’
‘কেন?’
‘ওই যে, কোথাও সত্যিকারের স্পর্শের অনুভব নেই বলে!’
আমি কথা বলি না। চুপচাপ ফোন কানে চেপে বসে থাকি। মেয়েটি বলে, ‘আপনি খুব অবাক হয়েছেন, তাই না? কী করে আমি বুঝলাম যে আগে যার সাথে ফোনে কথা হতো, ওই মানুষটা আপনি নন?’
‘হুঁ।’

‘আপনার লেখা চার লাইনের ওই শব্দগুলো আমারও। ঠিক ওই অনুভবগুলো রোজ আমি বুকে পুষে রাখি। একাকী, নিঃসঙ্গ এক মানুষের অনুভব। যার রোজ মনে হয় এই প্রেমহীনতার শহর থেকে সে হারিয়ে যাবে। কিন্তু একা একা হারিয়ে যাওয়া যায় না, জানেন তো?’
‘একা একা হারিয়ে যাওয়া যায় না?’
‘উঁহু।’
‘তাহলে?’
‘বুকের ভেতর একটা তীব্র স্পর্শের অনুভব লাগে। ওইটুকু নিয়ে হারিয়ে যাওয়া যায়।’
আমি কথা বলি না। অন্ধকার আমাকে নৈঃশব্দ্যের অতল কোথাও হারিয়ে ফেলতে থাকে।
মেয়েটি বলল, ‘ওই স্পর্শটুকুই যে কখনো পাওয়া হলো না আমার! তাহলে কী নিয়ে হারাব আমি?’
একদম চুপ করে থাকি। মেয়েটি হাসে, ‘আপনি আমাকে ওই অনুভবটুকু দেবেন? যেটুকু ইচ্ছা হলেই আমি ছুঁয়ে দেখতে পারব? যার পুরোটুকুতে কেবল আমারই স্বত্ব?’
আমি কথা বলি না। অন্ধকার আর নৈঃশব্দ্যের শরীর বেয়ে ক্রমশই ভেসে আসতে থাকে আশ্চর্য এক সম্মোহন। তাতে আমি ডুবে যেতে থাকি। তার সাথে আমার কথা হতে থাকে। দীর্ঘ দিবস, দীর্ঘ রজনী, দীর্ঘ বরষ-মাস। তারপর কোনো এক ভরা বর্ষায় সে হুট করে বলে, ‘আমার এখন কী মনে হয়, জানেন?’
‘কী?’
‘আমি এখন হারিয়ে যেতে পারি।’
‘কেন?’
‘কারণ, আমার বুকে ওই অনুভবটুকু জমা হয়েছে। ওটুকু বুকে পুষেই আমি এবার হারিয়ে যেতে চাই...।’
সে আর কিছুই বলতে দেয় না আমাকে। ফোনের ওপারে অদ্ভুত এক নৈঃশব্দ্য ভর করে। আমি সেই শব্দহীন ফোন কানে চেপে বসে থাকি। হয়ে থাকি এক আশ্চর্য নিখোঁজ বিজ্ঞপ্তি। তার সাথে কখনো আর কথা হয় না আমার। দেখাও না। অথচ এক রহস্যময় অদৃশ্য, অস্পৃশ্য মানবী জনম জনমের স্পর্শ হয়ে ছুঁয়ে দিতে থাকে বুকের গহিন কোণ!

অন্যআলো ডটকমে লেখা পাঠানোর ঠিকানা: [email protected]