প্রবীণ বটবৃক্ষের প্রস্থান

সম্প্রতি চলে গেলেন আবুল কালাম মোহাম্মদ যাকারিয়া। এ দেশে তিনি যেমন প্রত্নতত্ত্ব চর্চার পথিকৃৎ, তেমনি অনুবাদ সাহিত্যেও তাঁর অবদান বিস্তর। তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা
আবুল কালাম মোহাম্মদ যাকারিয়া (১৯১৮-২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬), প্রতিকৃতি: মাসুক হেলাল
আবুল কালাম মোহাম্মদ যাকারিয়া (১৯১৮-২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬), প্রতিকৃতি: মাসুক হেলাল

২০১৩ সাল। ঢাকার কলাবাগানের একটি অপরিসর ঘরে মুখোমুখি হয়েছি প্রায় শতবর্ষী এক মানুষের—আবুল কালাম মোহাম্মদ যাকারিয়া। বাংলাদেশে প্রত্নতত্ত্ব চর্চার পথিকৃৎ এই মানুষটি কথা শুরুর আগেই বলে উঠলেন, ‘তুমি ইজহারুল হকের ছেলে না?’ তাঁর কথা শুনে বেশ অবাক আমি! তখনই মনে পড়ল, এই বিশাল ব্যক্তিত্বকে প্রথম দেখেছি ১৯৬৮ সালের শুরুতে দিনাজপুর জিলা স্কুলের পুরস্কার বিতরণী সভায়। তখন আমি ছাত্র আর তিনি দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক। আমার আব্বার সঙ্গে তাঁর সখ্য ছিল, তবে সেই সখ্যর গভীরতা কতটুকু সেটি জানা ছিল না।
দীর্ঘ বিরতির পর ২০০৬ সালে আব্বার পরিচয় ধরে তাঁর কাছে যাই আমার গবেষণার তথ্য সংগ্রহের কাজে। এরপর আমি চলে যাই রাজশাহী, বিচ্ছিন্ন হয় যোগাযোগও। তো, এ দফায় আমাকে দেখে এত সহজে তিনি চিনে নিতে পারবেন, ভাবতে পারিনি। সেই থেকে আবুল কালাম মোহাম্মদ যাকারিয়ার সঙ্গে নতুনভাবে আমার সম্পর্কের সূত্রপাত এবং নিয়মিত যাতায়াত শুরু হয়। আমি আগ্রহী হই তাঁর আত্মজীবনী রচনায় সাহায্য করতে। কাজটি খুব সহজ ছিল না। তাঁর স্মৃতি খুব সতেজ থাকলেও গুছিয়ে বলতে পারছিলেন না, উপরন্তু মাঝেমধ্যে বার্ধক্যজনিত অসুস্থতা পেয়ে বসছিল তাঁকে। অবশেষে তাঁর আত্মস্মৃতিটি শেষ হয়েছে, তবে তিনি শেষবারের মতো সম্পাদনা করতে পারেননি। এর আগেই চলে গেলেন না ফেরার দেশে।
বাংলাদেশে প্রত্নতত্ত্ব চর্চার প্রাণপুরুষ আবুল কালাম মোহাম্মদ যাকারিয়া মারা গেছেন গত ২৪ ফেব্রুয়ারি। তাঁর মৃত্যুতে বাংলাদেশে প্রত্নতত্ত্ব চর্চার একটি যুগের সমাপ্তি ঘটল। বহুমুখী প্রতিভা ও অসাধারণ পাণ্ডিত্যের অধিকারী মোহাম্মদ যাকারিয়ার বিচরণ ছিল প্রত্নতত্ত্ব, ইতিহাস, নৃতত্ত্ব, মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্য, ফারসি ও ইংরেজি সাহিত্য থেকে অনুবাদসহ নানা ক্ষেত্রে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই ছিল তাঁর অবাধ বিচরণ ও কৃতিত্বের স্বাক্ষর। পারিবারিক ঐতিহ্যের কারণে ফারসি ভাষায় ছিল প্রভূত পাণ্ডিত্য।
তাঁর জন্ম ১৯১৮ সালে বর্তমান ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার দরিকান্দি গ্রামে। বাবা এমদাদ আলী মিয়া ও মা আতিকুন্নেসা বেগম। পূর্বপুরুষেরা ভূস্বামী হলেও ইংরেজের সূর্যাস্ত আইনে তাঁরা দরিদ্র কৃষকে পরিণত হন। যাকারিয়ার বাবা ছিলেন ফারসি ও আরবি ভাষার পণ্ডিত ও পুঁথি সাহিত্যের কর্ণধার।
দরিকান্দি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাধ্যমে শিক্ষাজীবন শুরু হয় যাকারিয়ার। পরে রূপসদি মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন ১৯৩৯ সালে। এরপর ঢাকা কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যে কৃতিত্বের সঙ্গে শিক্ষাজীবন শেষ করেন। শিক্ষাজীবনেই ধর্মীয় বিভেদের কারণে তিক্ততা ও বঞ্চনার অভিজ্ঞতা হয়। স্কুলজীবনে ব্যক্তিগতভাবে হিন্দু সহপাঠীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা ও বন্ধুত্বে কোনো সমস্যা না হলেও অনেক হিন্দু পরিবার ও সমাজ তাঁকে গ্রহণে দ্বিধান্বিত ছিল। স্কুলজীবনে সক্রিয় ছিলেন ব্রতচারী আন্দোলনে। যদিও পরে জানতে পারেন যে এটি ছিল ইংরেজদের পৃষ্ঠপোষকতায় স্বদেশি আন্দোলনের বিরুদ্ধে একটি উদ্যোগ। ঢাকায় অবস্থানকালে তিনি পতনোন্মুখ ইংরেজ শাসনামলের শেষ দশকের রাজনীতির উত্থান-পতন, সমাজ জীবনের অবক্ষয় আর আন্তধর্মীয় সম্পর্কের টানাপোড়েন লক্ষ করেছিলেন নিবিড়ভাবে।

শিক্ষাজীবন শেষে ১৯৪৬ সালে বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজে যোগ দেন শিক্ষক হিসেবে। এখানে তিনি সান্নিধ্য পেয়েছেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও ভাষাবিদ ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর। শহীদুল্লাহর অনুপ্রেরণায় এ সময় একবার মহাস্থানগড় ভ্রমণ করেন তিনি। মহাস্থানগড় তাঁকে যেমন দারুণভাবে আলোড়িত করে তেমনি বিস্তার করে সুদূরপ্রসারী প্রভাবও। প্রত্নতত্ত্বের প্রতি যাকারিয়ার যে অনুসন্ধিৎসা, বলতে গেলে তার বীজ প্রোথিত হয় এখানেই। কলেজজীবনেই তিনি প্রত্নতাত্ত্বিক নলিনীকান্ত ভট্টশালীর সান্নিধ্য পেয়েছিলেন, যা তাঁকে এ বিষয়ে সাধারণভাবে আগ্রহী করেছিল।
প্রায় এক বছর শিক্ষকতার পর ১৯৪৭ সালে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট পদের জন্য নির্বাচিত হন যাকারিয়া। শিক্ষা ও গবেষণায় ঝোঁক থাকা সত্ত্বেও দরিদ্র ঘরের সন্তান হওয়ায় তিনি সিভিল সার্ভিসকে বেছে নেন পরিবার প্রতিপালনের জন্য। ১৯৫৮ সালে প্রশাসনিক বিষয়ে উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্য গেলেন যুক্তরাষ্ট্রে। ওই প্রশিক্ষণের মধ্যেই ৪৫ দিনের ছুটি নিয়ে ঘুরে দেখলেন গ্রিস, ইতালি ও ইংল্যান্ডের বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থান। এসব ঐতিহাসিক স্থানের প্রত্ননিদর্শন দেখে তিনি যে ভীষণভাবে অভিভূত হয়েছিলেন, নানা সাক্ষাৎকারে বলেছেন সে কথা। আরও বলেছিলেন যে ১৯৪৬ সালে মহাস্থানগড় ভ্রমণ তাঁকে প্রভাবিত করেছিল ইউরোপের প্রাচীন প্রত্ননিদর্শনগুলো ঘুরে দেখতে।
ভারত বিভাগের পর এ অঞ্চলের প্রত্নতত্ত্বের চর্চায় যে শূন্যতা তৈরি হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরেও তা অব্যাহত ছিল। এ দীর্ঘ সময়ে এই মহৎপ্রাণ ব্যক্তির নিঃস্বার্থ প্রচেষ্টায় বাংলার প্রত্নতত্ত্ব চর্চায় প্রাণের সঞ্চার হয়। একজন সরকারি কর্মকর্তা হয়ে নিজের স্বাভাবিক দায়িত্বের বাইরে গিয়েও বাংলার আনাচকানাচে তিনি ঘুরে বেড়িয়েছেন দেশের গৌরব অন্বেষণে। তাঁর এই প্রচেষ্টা আর উদ্যোগের প্রমাণস্বরূপ তিনি রচনা করেন বাংলাদেশের প্রত্নসম্পদ। এই বইয়ে তিনি সাবলীল বর্ণনায় গ্রন্থবদ্ধ করেছেন বাংলাদেশের প্রায় সমগ্র প্রাচীন কীর্তিসমূহ। এটি বাংলাদেশের প্রত্নসম্পদের একটি আকর গ্রন্থ। প্রত্নতত্ত্ব বিষয়ে যাকারিয়া আরও লিখেছেন বৃহত্তর ঢাকার প্রাচীন কীর্তি, বাংলাদেশের প্রাচীন কীর্তি—হিন্দু ও বৌদ্ধ যুগ, বাংলাদেশের প্রাচীন কীর্তি—মুসলিম যুগসহ একাধিক মূল্যবান বই। তাঁর উদ্যোগে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে দিনাজপুর জাদুঘর। জাদুঘরের সংগ্রহ বৃদ্ধিতেও রয়েছে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ অবদান।
বাংলার অন্যতম প্রাচীন সীতাকোট বৌদ্ধবিহার তাঁর আবিষ্কৃত প্রত্নস্থল, পরবর্তী সময়ে এর খননকাজ তাঁর ব্যক্তিগত তত্ত্বাবধান ও নির্দেশে শেষ হয়। এ সম্পর্কে তিনি বিশদভাবে বলেছেন ২০১৪ সালের ৫ সেপ্টেম্বর প্রথম আলোয় প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে:
‘যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফেরার পর যোগ দিলাম দিনাজপুর জেলার জয়েন্ট কালেক্টর অব রেভিনিউ হিসেবে। সেখানে প্রায় দুই বছর অবস্থানকালে ঘুরে বেড়িয়েছি দিনাজপুরের বিভিন্ন জায়গায়, প্রথমত পেশাগত কারণে; দ্বিতীয়ত প্রত্নতত্ত্বের প্রতি আমার আগ্রহ থেকে। দিনাজপুরের বিভিন্ন এলাকায় আমি লক্ষ করলাম প্রচুর উঁচু ঢিবি বা স্তূপ। শুধু বিরামপুর, নওয়াবগঞ্জ, ঘোড়াঘাট আর গোবিন্দগঞ্জ (রংপুর) এলাকায় প্রায় ৫০০-৬০০ উঁচু ঢিবি দেখেছি। এগুলো প্রায় সবই ছোট-বড় প্রত্ননিদর্শন, কালের বিবর্তনে যা মাটিচাপা পড়ে গেছে।
এই ঘোরাঘুরির মধ্যেই নজরে এল চরকাই-বিরামপুর থেকে সাড়ে চার কিলোমিটার পূর্বে সীতাকোট নামে একটি বাঁধানো পুকুর। কিন্তু এটিকে ঠিক পুকুর হিসেবে মেনে নিতে মন সায় দিচ্ছিল না আমার। আশপাশের সাধারণ মানুষের কাছে এটি হিন্দু পৌরাণিক কাহিনিতে বর্ণিত সীতার দ্বিতীয় বনবাসের স্থান। এ কারণেই এর নাম সীতাকোট। মি. ওয়েস্টমেকটও (পাহাড়পুর বিহারখ্যাত প্রত্নতাত্ত্বিক) এটিকে মজে যাওয়া বাঁধানো পুকুর হিসেবে নথিভুক্ত করেছিলেন।
কিন্তু ওই স্থানটিকে নিছক পুকুর বলে মানতে চাইল না আমার মন। তাই নিজের উদ্যোগে এই এলাকাটি খুব গভীরভাবে নিরীক্ষণ করতে থাকলাম আমি। এরপর আমার বদ্ধমূল ধারণা হলো যে এটি একটি বৌদ্ধবিহার। সে সময় আমার আগ্রহ আর ঘন ঘন সীতাকোট ভ্রমণে অনেকেই বিস্মিত হতেন।
দিনাজপুরের তৎকালীন জেলা কালেক্টর তো আমার এই আগ্রহকে এক ধরনের পাগলামি মনে করতেন। তবে সীতাকোট নিয়ে আরও অগ্রসর হওয়ার আগেই দিনাজপুর থেকে আমি বদলি হয়ে গেলাম অন্য জায়গায়।
১৯৬৭ সাল। আবার ফিরে এলাম দিনাজপুরে, জেলা প্রশাসক হিসেবে। এবার আবার নতুন উদ্যমে শুরু করলাম কাজ—উদ্যোগ নিলাম সীতাকোট বিহার খননের। এ সময় খননকাজের জন্য অর্থ সাহায্য চেয়ে পাকিস্তান প্রত্নতত্ত্ব বিভাগকে একটি চিঠিও দিলাম। পরে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ তহবিলের নিশ্চয়তা দিলে শুরু হলো খননকাজ। এটা ১৯৬৮ সালের ঘটনা। এর মধ্যে একদিন আমি দিনাজপুর জেলা পরিষদের সভায় প্রস্তাব করলাম, সীতাকোট বিহার দিনাজপুরের একটি প্রত্নসম্পদ এবং এটির খনন ও সংরক্ষণের দায়িত্ব দিনাজপুর জেলা পরিষদের। বেশ কাজ হলো এতে। জেলা পরিষদ থেকে ১০ হাজার টাকা বরাদ্দ হলো। ওই সময় প্রতি সপ্তাহে দুই-তিনবার খননকাজ দেখতে সীতাকোট বিহারে যেতাম আমি। এ দফায় সীতাকোট বিহারের প্রাথমিক খননকাজ শেষ হলো; পাশাপাশি প্রতিষ্ঠিত হলো যে এটি একটি বৌদ্ধবিহার।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর প্রায় চার বছর পালন করেছি শিক্ষাসচিবের দায়িত্ব। এ সময় সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন ইউসুফ সাহেব (এম ইউসুফ আলী)। তিনি দিনাজপুরের মানুষ। সীতাকোট বিহার খননের কাজটি পূর্ণতা পেল তাঁর সহযোগিতায়।’
বাংলাদেশের প্রাচীন ইতিহাস চর্চার একটা বড় বাধা ভাষা। কেননা সে সময়ের ইতিহাসের উৎসগুলো পালি, সংস্কৃত, আরবি, ফারসি ইত্যাদি ভাষায় রচিত। বাংলাদেশের মতো তৃতীয় বিশ্বের অনুন্নত রাষ্ট্রে ইতিহাস চর্চার মতো অলাভজনক বিয়ষগুলো অনেকাংশেই অবহেলিত। পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও শিক্ষার্থী-গবেষকেরা এ পথে পা বাড়াতে পারেন না। বাংলার মধ্যযুগের ইতিহাস চর্চার এই ভাষাগত প্রতিবন্ধকতা দূর করে গবেষকদের জ্ঞানের দ্বার উন্মোচন করেছেন আবুল কালাম মোহাম্মদ যাকারিয়া। নিরলস শ্রম ও মেধা দিয়ে একের পর এক উৎসগ্রন্থ মূল ফারসি ভাষা থেকে অনুবাদ করেছেন তিনি।
সরকারি চাকরি করেও নিরলসভাবে করেছেন গবেষণার কাজ। ফারসি ভাষায় ইতিহাসের উৎস বইগুলোকে তিনি বাংলায় অনুবাদ করেছেন এবং জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত এ কাজ করে গেছেন; বয়স তাঁর জন্য বড় বাধা হয়ে ওঠেনি। মূল ফারসি ভাষা থেকে তাঁর অনূদিত বইগুলো হলো তবকাত-ই-নাসিরী, তারিখ-ই-বঙ্গালা-ই মহাব্বতজঙী, মোযাফ্ফরনামা, নও বাহার-ই মুর্শিদকুলি খানিসহ সুবিশাল সিয়ার-উল মুতাখ্খিরীন।
বাংলাদেশের পুঁথি সাহিত্য নিয়েও অনেক গবেষণা করেছেন তিনি। তাঁর বাবাও ছিলেন পুঁথি সাহিত্যের ভক্ত এবং তাঁর সংগ্রহে অনেক পুঁথিও ছিল। ফলে বালক বয়স থেকেই যাকারিয়া পুঁথি সাহিত্যের প্রতি আকৃষ্ট হন। গুপিচন্দ্রের সন্ন্যাস, গাজী কালু চম্পাবতীর পুঁথি পুঁথি সাহিত্যে তাঁর অনন্য সম্পাদনা। এ ছাড়া তাঁর সংগ্রহে ছিল অনেক মূল্যবান ও দুষ্প্রাপ্য পুঁথি।
তাঁর লেখা প্রথমা প্রকাশন প্রকাশিত নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা পলাশীর ইতিহাসের একটি আকর গ্রন্থ, আরও লিখেছেন দিনাজপুর মিউজিয়াম, কুমিল্লা জেলার ইতিহাস, বরেন্দ্র অঞ্চলের ইতিহাস (সম্পাদনা)। দুই খণ্ডে প্রকাশিত গ্রাম বাংলার হাসির গল্প ছাড়াও কয়েকটি উপন্যাস ও গল্পগ্রন্থসহ অন্যান্য বিষয়ে তাঁর রচিত অনেক বই এখন প্রকাশের অপেক্ষায়।
কৃতিত্বপূর্ণ দীর্ঘ সরকারি চাকরি জীবনে ধাপে ধাপে উন্নতি লাভ করে ১৯৭৬ সালে শিক্ষা ও সংস্কৃতিসচিব হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন তিনি। প্রখর মেধা ও স্মৃতির অধিকারী এই কর্মবীর পণ্ডিত নিরলসভাবে কাজ করে গেছেন তাঁর নিজস্ব জগতে। কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্য ভূষিত হয়েছেন বিভিন্ন পুরস্কারে। বাংলা একাডেমি, ইতিহাস পরিষদ ও ইতিহাস একাডেমি থেকে পেয়েছেন পদক। এ ছাড়া এশিয়াটিক সোসাইটি অব বাংলাদেশ তাঁকে দিয়েছে ‘ম্যান অব দ্য ইয়ার’ স্বর্ণপদক। সর্বশেষ ২০১৫ সালে পান একুশে পদক। তবে বাংলাদেশের ইতিহাস, সাহিত্য, অনুবাদ ও প্রত্নতত্ত্বে আবুল কালাম মোহাম্মদ যাকারিয়ার অবদান যেকোনো পুরস্কারের ঊর্ধ্বে। নানা অর্থেই তিনি ছিলেন আমাদের প্রবীণ বটবৃক্ষ। মৃত্যুর মধ্য দিয়ে এই প্রবীণ বটবৃক্ষের যেমন প্রস্থান হলো, তেমনি যেন শেষ হলো একটি যুগেরও। তাঁকে শ্রদ্ধা।