মানবাধিকারের সহজপাঠ

কোলাজ: মনিরুল ইসলাম

‘আমার বয়স মাত্র ১৪ বছর। আমি মারা যেতে চাই না, কিন্তু আমি জানি আমি মারা যাচ্ছি। আমি মনে করি, আমার শরীর ক্রেয়ো-প্রিজার্ভ (মৃতদেহ মাইনাস ১৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় হিমায়িত করে রাখার পদ্ধতি) করে রাখলে এক শ বছর পর হলেও আমাকে জাগিয়ে তোলা সম্ভব হবে। আমি মাটির নিচে সমাহিত হতে চাই না। আমি আরও বাঁচতে চাই। আমি মনে করি, ভবিষ্যতে আমার ক্যানসার সারিয়ে তোলার মতো চিকিৎসা আবিষ্কৃত হবে। আমি সেই সুযোগটা নিতে চাই।’

২০১৬ সালে যুক্তরাজ্যে একটি কিশোরী মেয়ে এমন অধিকার চেয়ে আদালতের কাছে উপরিউক্ত চিঠি লেখে। ব্রিটিশ আদালত তার এ অধিকারের পক্ষে স্বীকৃতি দেন। প্রশ্ন হচ্ছে, মৃত্যুর পর যে অধিকার ভোগ করা হবে, তা কি মানবাধিকার হিসেবে গ্রহণ করা হবে?

প্রতিষ্ঠিত মানবাধিকারের পাশাপাশি বর্তমান সময়ে বিকাশ হচ্ছে নতুন নতুন মানবাধিকার ধারণার। বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার, প্রযুক্তির বিকাশ ও উন্নয়ন এমন এমন ধারণা সামনে নিয়ে আসছে। কখনো কখনো এটি অভিনব বিতর্কেরও সৃষ্টি করছে। যেমন কিশোরী মেয়েটির এমন অধিকার প্রার্থনার বিষয়টি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুলের বই ‘মানবাধিকার’। প্রথমা প্রকাশন থেকে প্রকাশিত এই বই লেখক সরল ভাষায় লিখেছেন সব মানুষের জন্য। কেননা, আমরা অনেকেই মানবাধিকার শব্দটির সঙ্গে পরিচিত বটে, কিন্তু বিষয়টি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা রাখি না। কারণ, বাংলায় যেসব বই লেখা হয়েছে, তার একটি বড় অংশই বিদেশি বইয়ের ছায়ায় লেখা। সেখানে তথ্য আছে কিন্তু নেই স্বাধীন বিশ্লেষণ। আবার কিছু কিছু বাংলা বইয়ের ভাষা এত জটিল যে সহজে তা অনুধাবন করার উপায় নেই।

বইটিতে প্রাচীন ব্যাবিলনের সম্রাট হাম্মুরাবি কোড থেকে শুরু করে আধুনিক মানবাধিকার ধারণার বিকাশ, জাতিসংঘ ও সর্বজনীন মানবাধিকারের ধারণা, গুরুত্বপূর্ণ মানবাধিকার চুক্তি, মানবাধিকার বাস্তবায়ন পদ্ধতি, বাংলাদেশে মানবাধিকার  ও সংবিধান এবং মানবাধিকারের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রাঞ্জল ভাষায় আলোচনা করা হয়েছে। মানবাধিকার সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্যের পাশাপাশি করা হয়েছে এর নানা দিকের বিশ্লেষণও।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুলের বই ‘মানবাধিকার’। প্রথমা প্রকাশন থেকে প্রকাশিত এই বই লেখক সরল ভাষায় লিখেছেন সব মানুষের জন্য। কেননা, আমরা অনেকেই মানবাধিকার শব্দটির সঙ্গে পরিচিত বটে, কিন্তু বিষয়টি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা রাখি না। কারণ, বাংলায় যেসব বই লেখা হয়েছে, তার একটি বড় অংশই বিদেশি বইয়ের ছায়ায় লেখা। সেখানে তথ্য আছে কিন্তু নেই স্বাধীন বিশ্লেষণ। আবার কিছু কিছু বাংলা বইয়ের ভাষা এত জটিল যে সহজে তা অনুধাবন করার উপায় নেই।

একজন মানুষ গ্রেপ্তার হওয়া মাত্র তার তিনটি অধিকার জন্ম নেয়, যা লঙ্ঘনের সুযোগ কারও নেই। এর বাইরে আছে সরকারি চাকরিতে সমান সুযোগ লাভ, নির্বিঘ্নে ধর্ম পালন করা। আবার প্রায়ই আমরা টিভিতে দেখি, কোনো একজন গ্রেপ্তার ব্যক্তির বুকে কাগজ সেঁটে লেখা হয়েছে মাদক ব্যবসায়ী বা ধর্ষক! এভাবে কাউকে উপস্থাপন করা আমাদের সংবিধানে বর্ণিত কমপক্ষে চারটি মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। লেখক জরুরি প্রশ্ন তুলেছেন, ‘এ ধরনের বিষয় নিয়ে সাধারণত প্রশ্ন ওঠে না আমাদের সমাজে।’
বইটিতে মানবাধিকার সংরক্ষণের বাধা নিয়েও আলোচনা করেছেন লেখক। তাঁর মতে, প্রধান বাধা বৈশ্বিক রাজনীতির অধঃপতন। এর বাইরে মানবাধিকার না পেলে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি আদালতে যেতে পারেন। আদালত সরকারকে বাধ্য করেন, তা প্রতিপালন করতে। দেশে প্রতিকার না পেলে প্রতিকার পাওয়ার সুযোগ আছে আন্তর্জাতিকভাবেও। কিন্তু একজন ব্যক্তিকে তা জানতে হয়।

আসিফ নজরুল কলাম লেখক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক হিসেবে সুপরিচিত। মানবাধিকার নিয়ে বহু নিবন্ধ লিখেছেন, আলোচনায় অংশ নিয়েছেন দেশে-বিদেশে। তবে এ বিষয়ে এটি তাঁর প্রথম বই। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে প্রকাশিত এ বইটির মূল্য ২০০ টাকা। ছোট পরিসরের বইটি তিনি উৎসর্গ করেছেন ঝালকাঠির অদম্য তরুণ লিমন হোসেনকে। মানবাধিকার বিষয়ে সহজবোধ্য ও সুখপাঠ্য এ বইটি দেশের সচেতন প্রত্যেক নাগরিকের সংগ্রহে রাখার মতো।

অন্যআলো ডটকমে লেখা পাঠানোর ঠিকানা: [email protected]