মাহমুদ আল জামান নামে কবিতা লিখতেন আবুল হাসনাত। ষাট দশকের বিশিষ্ট এই কবি শেষ সময়ে এসেও কাব্য–পঙ্ক্তিতে ধরে রেখেছিলেন সময়ের অমলিন অনুভব। অপ্রকাশিত কবিতা দুটির প্রথমটি তিনি লিখেছিলেন হাসপাতালে যাওয়ার আগে, আর দ্বিতীয়টি হাসপাতালের শয্যায় লেখা তাঁর শেষ কবিতা। দুটি কবিতাই কবির সহধর্মিণী নাসিমুন আরা হকের সূত্রে প্রাপ্ত।
ঝড়ো হাওয়া আর পোড়ো বাড়িটাকে মেলাবেন?
মালতী সেদিন অপরাহ্নের রোদে
উদ্বাস্তু হলো
নদীর স্রোত আর পাখির কলরব
শুনতে শুনতে
সে বিলীন হয়ে গেল জনারণ্যে
ট্রেনে যেতে যেতে ধর্ষিত হয়েছিল
তারপর গহন অরণ্যের নীরবতায়
দেখেছিল ত্রাস ও উল্লাস
হাসপাতালে লেখা
আমার রোদ্দুর ঢেকে যাচ্ছে কালো মেঘে
হায় ছায়াবৃতা দাও, আমাকে দাও সজীব
সহজ উজ্জ্বলতা
ঘুম নেই চোখে, তাকিয়ে থাকি
অক্সিজেনের মিটারে।
দ্বিতীয় কবিতার শিরোনামটি কবির দেওয়া নয়।
নিবেদিত পঙ্ক্তিমালা
তারিক সুজাত
ভুবনডাঙায়
(প্রিয় অগ্রজ আবুল হাসনাত স্মরণে)
এখনই ফিরে যাব?
এত যে বৃষ্টির অবিরল ধারা
আকাশ কী দুঃখ পেল
শুধুই কি আলো জ্বেলে গেছি
নিভন্ত কলমে?
নরম মাটির টানে
কুমোরের হাত চলে যেত কাব্যের শরীরে
গনগনে অক্ষরের ছাঁচে গড়েছি প্রতিমা
উত্তাল উনসত্তর, মিছিলের ঘর্মাক্ত মুখ
যুদ্ধদিনের ধূসর দুপুর,
কোথায় হারিয়ে গেছে
বিসর্জন প্রথম অর্জন
কোনো এক জীবনের!
গল্পের কৃষক হয়ে বুনে গেছি পতাকার রং
কথার শরীরে কথা গেঁথে গেঁথে
বিরাণ প্রান্তরে তুলে গেছি নিঃসঙ্গ দেয়াল
নিজের অজান্তে কোনো ভুল তো করিনি
কতবার আমি ভেঙেছি নিজেকে
ভাঙা টুকরোগুলো সাজাতে সাজাতে
সন্ধ্যার আজানে মিশে গেছি।
বাকি রাত পড়ে আছে
সাদা পৃষ্ঠাগুলো ফের ডাক দেবে,
অসমাপ্ত পাণ্ডুলিপি শেষ হবে নতুন সকালে
এত যে সৃষ্টির আর্তনাদ
সেই আলোকিত দিনে
নতুন কালির গন্ধে
যেন আরও একবার ফিরে আসি
তোমাদের উদাসীন ভুবনডাঙায়!