রুশ সাহিত্যিকেরা শরৎকাল নিয়ে যা বলেছেন

কোলাজ: মনিরুল ইসলাম
শরৎ নিয়ে বাঙালির উদ্দীপনার শেষ নেই। তবে রুশ সাহিত্যিকেরাও কম কথা বলেননি এ ঋতু নিয়ে। লিখেছেন হুমায়ূন শফিক।

চারদিক রঙিন পাতায় ভরে উঠেছে। নেই শীতল বাতাস। আকাশ পরিষ্কার। রাশিয়ার শরৎকালটা এ রকমই। তারপরও রাশিয়ার মহৎ লেখকদের মধ্যে শরৎ নিয়ে আছে মিশ্র অনুভূতি।

কিছু লেখকের জন্য শরৎকাল ছিল খুবই উপভোগ্য সময়। ফিওদর দস্তয়েভ্স্কি তাঁর বইয়ের প্রধান চরিত্রদের দিয়ে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে ভালোবাসতেন। তাঁর প্রথম উপন্যাস পুওর ফোক–এ (দুই ব্যক্তির পত্রালাপের মাধ্যমেই সাজানো হয়েছিল সম্পূর্ণ উপন্যাস) ভারভারা ডবরোজলোভা লিখেছেন, ‘শরৎকালে কত সহজেই না আমি অভ্যস্থ হয়ে গেছি! খুবই ছোটবেলায়, তখনো আমি বেশ সংবেদনশীল; তবু কেন যে শরতের সকালের চেয়ে শরতের সন্ধ্যাকে বেশি পছন্দ করতাম! আমাদের বাড়ির পাশের পাহাড়ের পাদদেশে একটা বিশাল পুকুর ছিল। সেই দৃশ্য এখনো আমার চোখে লেগে আছে। বিস্তৃত একটা জায়গা, সার্ফেসটা স্ফটিকের মতো পরিষ্কার।’ দস্তয়েভ্স্কি এই বইয়ের প্রধান চরিত্রকে দিয়ে সময়টাকে ‘গোল্ডেন টাইম’ বলে অ্যাখ্যা দিয়েছেন।

কিন্তু লিও তলস্তয় শরৎ নিয়ে কিছুটা বিরক্ত ছিলেন বোধ হয়। তাই বলেছেন, ‘একজন চিত্রশিল্পীর তাঁর ছবির সমাপ্তির শেষ ছোঁয়া দিতে যেমন আলোর দরকার হয়, তেমনি আমারও অভ্যন্তরীণ আলো দরকার। কিন্তু আমার মনে হয়, শরৎকালে তা সম্ভব নয়।’ জানা যায়, এমনই এক শরৎকালে এই বিখ্যাত ঔপন্যাসিক রাইটারস ব্লকে পড়েই করেছিলেন এই উক্তি।

শরৎকে গোর্কি সাহেব বিষাদের সময় বললেও কবি আলেকজান্ডার পুশকিন একে ‘বোল্ডিনো অটাম’ বা উদ্যমী শরৎ বলেছেন। ১৮৩০ সালের ৩ সেপ্টেম্বর নিজের পরিবারের কাছে বোল্ডিনোতে ফিরে আসেন পুশকিন। মস্কোতে তখন শুরু হয়েছিল কলেরা মহামারি। ডিসেম্বর পর্যন্ত তিনি পরিবারের সঙ্গেই ছিলেন। এ সময় তিনি পাঁচটি কাব্যিক উপন্যাস ও ত্রিশটির মতো কবিতা লিখেছিলেন। এক চিঠিতে প্রকাশককে পুশকিন বলেছেন, ‘চারপাশ ফাঁকা, প্রতিবেশ নেই বললেই চলে, ইচ্ছেমতো ঘোড়া দৌড়ানো যায়, বাড়িতে বসে যতক্ষণ খুশি লেখা যায়। সবচেয়ে মজার বিষয় হলো, এ সময় আমাকে কেউ বিরক্ত করেনি।’

আবার আন্তন শেখভের গল্প নিয়ে ম্যাক্সিম গোর্কি খুবই মজা করে বলেছেন, ‘আন্তন শেখভের গল্পগুলো পড়লে মনে হবে শরৎকালের শেষের দিকে নিজেকে হুট করেই ফিরে পেয়েছি, যখন চারপাশের বাতাস খুবই স্বচ্ছ হয়, চারপাশের গাছগুলোকে নগ্ন মনে হয়, ঘরগুলোকে ছোট ছোট লাগে, মানুষেরা হয় তীক্ষ্ণ।’ সমস্যা হলো, গোর্কি ছিলেন শেখভের সবচেয়ে বড় সমালোচক এবং শরৎ ঋতু খুবই অপছন্দ করতেন তিনি। শরৎকে মনে করতেন একাকীত্ব, স্থির, আশাহীন, অদ্ভুত এক ঋতু। শরতের আকাশ তাঁর পছন্দ ছিল। তাঁর কাছে এ সময়ের আকাশকে ফ্যাকাশে মনে হতো। খুবই বিরক্তি ও অলসতার সময় বলতে শরৎকেই বুঝতেন গোর্কি।

শরৎকে গোর্কি সাহেব বিষাদের সময় বললেও কবি আলেকজান্ডার পুশকিন একে ‘বোল্ডিনো অটাম’ বা উদ্যমী শরৎ বলেছেন। ১৮৩০ সালের ৩ সেপ্টেম্বর নিজের পরিবারের কাছে বোল্ডিনোতে ফিরে আসেন পুশকিন। মস্কোতে তখন শুরু হয়েছিল কলেরা মহামারি। ডিসেম্বর পর্যন্ত তিনি পরিবারের সঙ্গেই ছিলেন। এ সময় তিনি পাঁচটি কাব্যিক উপন্যাস ও ত্রিশটির মতো কবিতা লিখেছিলেন। এক চিঠিতে প্রকাশককে পুশকিন বলেছেন, ‘চারপাশ ফাঁকা, প্রতিবেশ নেই বললেই চলে, ইচ্ছেমতো ঘোড়া দৌড়ানো যায়, বাড়িতে বসে যতক্ষণ খুশি লেখা যায়। সবচেয়ে মজার বিষয় হলো, এ সময় আমাকে কেউ বিরক্ত করেনি।’

তবে একটি কবিতায় পুশকিনও শরৎকে বলেছিলেন ‘বিষাদের ঋতু’। আর সেটি হয়তো বলেছিলেন ওই চলমান কলেরা মহামারির কারণেই।

সূত্র: রাশিয়া বিয়ন্ডের বিভিন্ন সময়ের লেখা। (আরবিটিএইচ ডট কম)

অন্য আলো ডটকমে লেখা পাঠানোর ঠিকানা: [email protected]