সম্ভাবনাময় ফুল চাষ

ফুল লতা বাহারি পাতা—মৃত্যুঞ্জয় রায়
ফুল লতা বাহারি পাতা—মৃত্যুঞ্জয় রায়

ফুল লতা বাহারি পাতা—মৃত্যুঞ্জয় রায়

অ্যাডর্ন পাবলিকেশন

প্রচ্ছদ: সব্যসাচী হাজরা

দাম: ৭৫০ টাকা

মানুষের সৌন্দর্যবোধের চিরন্তন ধারণার মধ্যে প্রথম চিত্রকল্পটি হলো ফুল। নন্দনতত্ত্ব আর ভালোবাসার প্রধান প্রতীকও ফুল। ফুল ভালোবাসে না এমন মানুষ বোধ হয় পৃথিবীতে পাওয়াই যাবে না। অতীতকালে ফুল কেবল মানুষের মনের ক্ষুধা মেটালেও, এখন মুক্ত বাণিজ্যের আজকের দিনে ফুল থেকে উপার্জিত আয়ে অনেকেরই পেটের ক্ষুধা মিটছে। কৃষিপ্রধান দেশ হওয়ায় বাংলাদেশে ফুল চাষের সম্ভাবনা বিশাল এবং এই খাত থেকে বিরাট অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। ১৯৯০ সালে ফুলের বিশ্ববাণিজ্যের পরিমাণ দুই হাজার কোটি ডলার। ২০১২ সালের জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে দুই কোটি ২৮ লাখ ডলারের ফুল বিদেশে রপ্তানি করা হয়েছে। জাপানের একজন সাধারণ লোক গড়ে প্রতিবছর ফুলের জন্য ব্যয় করে ৭০ ডলার। বাংলাদেশে প্রথম বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষের সূচনা হয় ১৯৮৩ সালে। যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার পানিসারা গ্রামের শের আলী সরদার সে বছর ৩০ শতক জমিতে রজনীগন্ধা ফুলের আবাদ করে বাণিজ্যিক ফুল চাষের সূচনা করেন। আমাদের মোট শ্রমশক্তির প্রায় ৬০ ভাগ যেহেতু কৃষিকাজের সঙ্গে জড়িত, ফুল চাষের দিকে একটু মনোযোগী হলে এই খাত থেকে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা যায়। আমাদের দেশে বিভিন্ন প্রজাতি মিলিয়ে কমপক্ষে প্রায় ৫০০ ধরনের ফুল পাওয়া যায়। ফুল চাষ-সম্পর্কিত দরকারি সব তথ্য-উপাত্ত, বাংলাদেশের বিভিন্ন ফুল, বিশ্বের ফুলের বাজার, চাহিদা, আমাদের এখানে জন্মে বা জন্মাতে পারে—এমন প্রায় ৩০০ ফুলের পরিচিতি, ৩৭৮টি ফুলের রঙিন ছবি, চাষাবাদের অন্তরায়গুলো ইত্যাদি নিয়ে কৃষিবিদ মৃত্যুঞ্জয় রায় লিখেছেন ফুল লতা বাহারি পাতা শিরোনামের বইটি। ফুল চাষের ইতিহাস, ফুলের বাংলা নামকরণ, শ্রেণীবিন্যাস, বাংলাদেশে ফুল চাষের সম্ভাবনা ইত্যাদি সম্পর্কে আলোচনা করেছেন বইয়ের প্রথমেই। এরপর রয়েছে বীজ ও কলম থেকে চারা তৈরির পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা। তবে, কলম থেকে চারা তৈরির বর্ণনার পাশাপাশি এতে ছবি সংযুক্ত হলে পাঠক আরও বেশি উপকৃত হতেন বইটি থেকে। বিভিন্ন অধ্যায়ে বিভক্ত করে অত্যন্ত গোছালোভাবে ফুল চাষের খুঁটিনাটি নিয়ে বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন লেখক। রয়েছে মৌসুমি ফুল, এর চাষপদ্ধতি, বাহারি পাতার গাছের বৈশিষ্ট্য ও চাষপদ্ধতি। ১৫টি সারণিতে নানা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেওয়া হয়েছে, যা ফুলচাষিদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিবেচিত হবে। অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্ব বৃদ্ধির ফলে সরকারিভাবে ফুল চাষের ব্যাপারে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হলেও তা খুবই অপর্যাপ্ত। খাতটির সম্ভাবনার তুলনায় তা একেবারেই নগণ্য। আধুনিক প্রযুক্তি, ফুলের জাত উন্নয়ন, সংরক্ষণের ব্যবস্থা, প্রক্রিয়াকরণ, পরিবহন ইত্যাদি বিষয়ের দিকে সরকারি আগ্রহ এবং নজরদারি না বাড়ালে আমাদের এই সম্ভাবনাময় খাতটি খুব বেশি দূর যেতে পারবে না। মালয়েশিয়ার ফুলের বাণিজ্যিক খামারগুলো স্বয়ংসম্পূর্ণ। একেক উপত্যকায় চাষ হচ্ছে একেক ফুলের। চাষ থেকে শুরু করে প্যাকিং ও পরিবহনব্যবস্থা রয়েছে নিজস্ব। আমাদের পার্বত্য অঞ্চলে এমন অনেক অনাবাদি উপত্যকা আছে, যেগুলোতে মালয়েশিয়ার অনুরূপ খামার করা সম্ভব। প্রায় একই রকম জলবায়ু ও প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যে মালয়েশিয়া-থাইল্যান্ড বছরে ১০-২০ মিলিয়ন ডলারের ফুল রপ্তানি করে। পর্যাপ্ত উদ্যোগ থাকলে রপ্তানিতে আমরা তাদের ছাড়িয়ে যেতে পারি। বাংলাদেশ থেকে বিশ্ববাজারে রপ্তানি করা ফুলের মধ্যে বেশির ভাগই গোলাপ। অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের গোলাপের মান ভালো হওয়ায় আন্তর্জাতিক বাজারে এর চাহিদাও বেশি। ফলে, গোলাপ চাষের ভালো সম্ভাবনা রয়েছে বাংলাদেশে। শুধু ঢাকার বাজারে প্রতিদিন এক লাখ গোলাপ বেচাকেনা হয়। বেসরকারি উদ্যোগ ও সরকারের কার্যক্রমের সমন্বয়ে আমাদের এই খাত দ্রুত বৈদেশিক আয়ের আরেকটি দুয়ার খুলে দিতে পারে। ফুল চাষের নানা দরকারি দিক নিয়ে আলোচনা ও ফুলের পরিচিতি নিয়ে সুবিন্যস্ত আলোচনা বইটিকে অনন্য করে তুলেছে। বাংলাদেশে ফুল চাষের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবার জন্য বইটি বিশেষভাবে কাজে লাগবে। এ ছাড়া ফুলপ্রেমিকদের সংগ্রহে যুক্ত হওয়ার মতো অনেকগুলো বৈশিষ্ট্য রয়েছে বইটির।