সাদিকা রুমনের কবিতা

সাদিকা রুমনের কবিতায় পাওয়া যায় এক সহজ অনুভব। ব্যক্তির অনুভূতি ও মানুষের অন্তর্গত বিভিন্ন বিষয়-আশয়কে কবিতার পঙ্‌ক্তিতে মূর্ত করে তুলতে চান তিনি। কবিতায় লিখতে চান যাপিত জীবন। টাঙ্গাইলে জন্ম নেওয়া এই কবি পড়ালেখা করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে। কবিতার পাশাপাশি শিশুসাহিত্যেও মনোযোগী তিনি। ‘স্বপ্নের কাচঘরে ঘুমন্ত জংশন’ নামে এই কবির একটি কবিতার বই আছে।

সাদিকা রুমন

যেয়ো

যত দূর পারো যেয়ো
লোকালয় পার হয়ে যেয়ো, যেয়ো অরণ্য পেরিয়ে
শহর পেরিয়ে শহরতলি
গাঁ পেরিয়ে নদী, নদীর ওপার বসা হাট
হাট পার হলে ধুলোঢাকা পথ
ঘুমে নুয়ে পড়া সুনসান ইটের পথ পাড়ি দিয়ে
নেমে যেয়ো খেতের বাতর ধরে,
দীর্ঘদেহী শিরীষের ছায়া পায়ে মেখে
স্টেশন, বন্দর, ঘাট পার হয়ে যেয়ো...

নৈঃশব্দ্য বুনতে বুনতে যেয়ো
যত দূর পারা যায়
ফিরতি পথ ভুলে গেলে ক্ষতি নেই
কেননা পেছনে কিছুই তেমন পড়ে নেই
ভাঙা পালার স্তব্ধতা ছাড়া।

পরিযায়ী

মুখোমুখি বসে থাকা নয়,
চলে যাওয়া সহজ জেনে
পরিযায়ীস্বভাব মানুষ চলে যায়—
দৃশ্য থেকে দৃশ্যের আড়ালে
ঘরের আগল খুলে দ্বারের ওপারে
আগুনের আলিঙ্গন ছেড়ে
বরফমস্তক পর্বতশৃঙ্গের দিকে
ভাটার শিয়র থেকে
উজানের দুর্নিবার টানে!

কতভাবেই মানুষ
চলে যায়,
কত অজুহাতে
চলে যাওয়া কিছুতেই বিস্ময়কর নয়
বরং বিস্ময়কর থেকে যাওয়া
পথপাশে অশ্বত্থের অনড় ঋজুতা নিয়ে থেকে যাওয়া
শীতের পাংশুটে দিনে রোদের আশ্বাসহীন
অনন্ত দুপুর হয়ে থেকে যাওয়া।

অলংকরণ: সব্যসাচী মিস্ত্রী

বলে ফেলা পুরোনো গল্প

অমল মুগ্ধতা মরে যায়,
শিশুতোষ চোখ ম্লান হয়ে এলে
বিস্ময় মিলিয়ে যায় বিনা কলরবে।
মানুষ বিস্মিত হতে চেয়ে তবু
দান বদলের জারিজুরি রপ্ত করে
এপিঠ-ওপিঠ বদলে
উনুনের পাশে হাত রাখে নানান কায়দায়
সময়ের রুলটানা খাতায় মানুষ কেবল
পুনরাবৃত্ত বর্ণমালাই লিখে চলে
নতুনত্বের অনিপুণ ভানে
মুগ্ধ হতে চেয়ে
অজ্ঞাত আকাশে ওড়ায়
পাংশুটে চোখ
পুনরাবৃত্ত সবই
তুমি-আমি-সব
ভিন্ন পিরান জড়িয়ে বলে ফেলা গল্পের
শব্দ-বাক্যে হেঁটে চলি মলাটবন্দী!
কখনো দুদণ্ড থেমে ঊর্ধ্বমুখী হয়ে ভাবি,
আকাশে কি চোখ লেখা থাকে!

সে গল্পও বলে ফেলা, পৃথিবীর মতোই প্রাচীন।


অন্য আলো ডটকমে লেখা পাঠানোর ঠিকানা: [email protected]