কিসমত

কোলাজ: মনিরুল ইসরাম

বুড়িগঙ্গার ওপর দিয়ে উড়ে আসা দখিনা হাওয়া প্রাচীন লালবাগ কেল্লার বিশাল তোরণের চূড়া স্পর্শ করে উত্তরে বয়ে যেতে গিয়ে হরনাথ ঘোষ রোডের কিসমত হোটেলের ভেতরে থমকে দাঁড়ায়। পরীবিবির গল্প বলতে চায়। তখনœস্নিগ্ধ বাতাসে ভোরের আজান ভেসে আসে।

ঝনাৎ শব্দে সিরামিকের প্লেট ভাঙার শব্দ আসে কিচেনের ভেতর থেকে, ধলা বাবুর্চি ছুটে গিয়ে দেখে কালা মিয়া ভাঙা প্লেট হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মেঝের দিকে মুখ করে। খানকির পোলা, উইদিন না একটা পেলেট ভাঙলি, আবার আইজকা ভাঙছোস। খাড়া, আইজকা মালিকে আহুক, তরে কেমনে সাইজ করতে হয় দেকবি? আবার তখনই মনে মনে বলে, কী কইবো মালিকে, কিছুই কইবো না, আগেও তো পেলেট ভাঙছে ওই কালায়, কিচ্ছু কয়নাইক্কা, মালিকে নরম, দয়ার শরীল।

কিসমত হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট। ঘড়ি ধরে কাজ শুরু হয়ে যায় সেই সাতসকালে।
ধলা বাবুর্চি চুলার ওপর বসানো বড় হাঁড়িতে সবজি চাপায়। আজ ফুলকপি, গাজর, আলু, বেগুন, বরবটির মিশেলে সবজি হবে দুর্দান্ত। হোটেলে আসা কাস্টমার ছাড়াও আশপাশের মানুষ সকালের নাশতা নিতে আসবে। গরম-গরম পরোটার সঙ্গে এই সবজি খেয়ে তারা খুশি হবে। ধলা বাবুর্চি এসব ভেবে আনন্দিত। সকালে সবজির সঙ্গে থাকবে মুগডাল-মুরগি, খাসির নিহারি, ছোট ছোট টুকরার গরুর মাংস ভুনা। দুপুরে ভাতের সঙ্গে মাছ, মাংস আর রাতে তন্দুরির সঙ্গে বিরিয়ানি, খিচুড়ি, হাঁসের ভুনা মাংস। হোটেলে মানুষ আসে ক্ষুধার্ত হয়ে, রান্না ভালো হলে তবেই তারা হাপুসহুপুস করে খেয়ে নেয়, খাবার পর একরাশ তৃপ্তি নিয়ে বিল দিয়ে চলে যায়।

পরীবিবি কিসমত মিয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে বলে, কালা মিয়ারে আর পাঠাইও না। ক্যান, কী করছে কালায়? উই ছেঁড়া কোনো কামের না। একটা কইলে শুনে আর একটা। তারে আমি কইলাম একটা লাক্স সাবান আইনা দেও। সে আনল লাইফবয়। দেহো তো, ওই লাল সাবান তো আমি গায়ে লাগাই না।

পরদিন থেকে আর কালা মিয়াকে পাঠায়নি কিসমত। এসেছে অন্য একটা ছেলে।
সকালে দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ। উঠে যায় পরীবিবি, কে? দরজা খোলে সে। দেখে সামনে দাঁড়িয়ে আছে সুলতান মিয়া। তার হাতে টিফিন ক্যারিয়ার। সুলতান বলে, ভাবি, টিফিন বাটি খালি কইরা দেন। দুফুরে আমি ভাত দিয়া যামু।
টিফিন বক্সের ভেতরে একটাতে দুটো পরোটা, একটাতে সবজি, অন্যটাতে সুজির হালুয়া। সুলতানের দিকে তাকিয়ে পরীবিবি বলে, আইজ কী বাজার করছ?
বাজার করছি গরু, খাসি, মুরগি, রুই আর পাংগাস—আরও তিন–চাইর পদ। এখনো ধলা ভাইয়ে দুফোরের রান্না স্টাট করে নাই। দুফুরে আপনার লেইগা কী আনমু কয়া দেন।

মাছ আইনো না, আমার লেইগা গরু আনবা—কথা বলতে বলতে টিফিন বাটি খালি করে দেয় পরীবিবি।
সুলতানকে এর আগেও দেখেছে পরীবিবি, কিন্তু তার মধ্যে এত পরিবর্তন! ভালোই হলো সুলতানকে পেয়ে। পরীবিবি তাকে দিয়ে ছোটখাটো কাজগুলো করিয়ে নিতে পারবে। সাবান, তেল, শ্যাম্পু—দুদিন পরপর এসব লাগেই তার।

এখন প্রতিদিন সুলতান মিয়া সকাল-দুপুরে নাশতা আর ভাত নিয়ে আসে পরীবিবির জন্যে। আজ হোটেলের সম্মুখ থেকে চকবাজার পর্যন্ত পুরো রাস্তা জ্যাম। ক্যাশে বসে রাগে গজগজ করতে করতে কিসমত মিয়া বলে, আইজ এত্তো জ্যাম ক্যা? রিশকাঅলাগো সইজ্জো হয় না, না! শালার পুতেরা একটা লাইনে থাকবার পারে না। বাবুর্চি ধলা মিয়া একটা কঠিন গালি দিতে গিয়ে থেমে গেল। তারপরও বলল, এই লাকড়ি দেখছস, দিমুনে হোগার ভিতরে হান্দাইয়া। সে রাস্তায় নেমে গিয়ে শামসু হাজির ছেলেকে বলল, চাচা, আপনে ভলানটিয়ার পাঠাইয়া দেন। এত্ত জ্যাম হইলে কাস্টমার আইব কেমনে কন তো দেহি? শামসু হাজির ছেলে রুম্মন ইশারা করতেই পাঁচ–ছয়জন যুবক ছেলে লাঠি হাতে রাস্তায় নেমে গিয়ে রিকশার পেছনে দুমদাম বাড়ি মারতে শুরু করে—লাইন একটা করবি, বুজছস ছালার পো, কথা কইলে কানে যায় না, না?
আগামসি লেনের ডাক্তার বরকতুল্লাহর কাছে ওষুধ খায় কিসমত মিয়া। ডাক্তারের কাছে যাবে। খালি রিকশা পাওয়া কঠিন এখন। একে তো অফিস টাইম, তার ওপর আশেপাশে স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীদের ব্যস্ততা। চকবাজার থেকে আজিম পুর পুরো রাস্তাটাই জ্যাম। কিসমত ভেবেছিল, আজ একটু তাড়াতাড়ি ডাক্তার দেখানোর কাজটা সেরে ফেলবে। আজিমপুর রোড ধরে সামনে এগিয়ে যেতে একটা খালি রিকশা পেয়ে গেল কিসমত।

ডাক্তার সাহেবের মুখোমুখি বসে কথা বলছিল কিসমত।
যা যা ওষুদ দিছেন, সবই তো ঠিকঠাকমতো খাইছি। যেইভাবে ওয়াইফের লগে মিলতে কইছেন সেইভাবেই মিলছি, আপনে নতুন ওষুদ দেন ডাক্তার সাব।
কিসমত সাব, আপনে আমার পুরাতন রুগী। আপনারে আমি ওষুদ দিই খুব চিন্তাভাবনা কইরা। আইজকা নতুন ওষুদ দিমু না। অইজকা আপনেরে একটা নতুন কিছু দিমু, ওয়েট করেন...।

বরকতুল্লাহ ডাক্তার তার নিজের প্যাডে কিছু লিখে বললেন, শুনেন, অইজকাইল বড় বড় রোগের পরীক্ষা হয় মেশিনে মানে ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ল্যাবে, আপনে এই কাগজ নিয়া সোজা ধানমন্ডি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যানগা। ওরা আপনেরে সবকিছু বইলা দিব, ধরেন। এই কাগজে বেবাক লেইখা দিলাম।
কাগজ হাতে নিয়ে সেটার দিকে একবার তাকাল কিসমত মিয়া।
বলল, কইলাম নতুন ওষুদ দেন, ওষুদ না দিয়া আপনে আমারে কই পাঠাইতাছেন ডাক্তার সাব?
দেহেন, আপনের যে সমস্যা, এইখানে যাওয়া এখন জরুরি, আপনে যান, ডরের কিছু নাই।

ডাক্তার বরকতুল্লাহর দেওয়া কাগজ হাতে নিয়ে কিসমত যায় ধানমন্ডি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। যেভাবে তাকে শিখিয়ে দিয়েছেন ডাক্তার, টাকা জমা দেওয়ার পর সেভাবেই কিসমত চলে যায় সেখানে, কাউন্টারের লোকটা তার হাতে টাইপ করা কাগজ দিয়ে বলে, দোতলায় ২০৫ নম্বর রুমে চলে যান। সেখানকার সাদা অ্যাপ্রোন পরা এক ভদ্রলোক কিসমতকে জিজ্ঞাসা করে, আগে কখনো আইছিলেন এইখানে?
না ভাই, আগে আসি নাই। লোকটা প্রথমে কিসমতের বাঁ হাত থেকে সিরিঞ্জ দিয়ে রক্ত টেনে নেয়। তারপর একটা কাচের সেম্পল টিউব দিয়ে বলেন, ওই ওয়াশরুমে যান।

কিসমত লোকটার দিকে তাকিয়ে থাকে বোকার মতো! লোকটা বলে, আপনি তো আগে দেন নাই, না? কিসমত তাকিয়ে থাকে কিন্তু কিছু বলেন না। লোকটা তখন কিসমতকে বলে, বাথরুমে গিয়া আপনার বীর্য আনবেন এই সেম্পল টিউবে, আমরা পরীক্ষা করে দেখব আপনার ওটা ঠিক আছে কি না। কাচের সেম্পল টিউব হাতে নিয়েই কিসমত তার নিজেকে হারিয়ে ফেলে, এলোমেলো ভাবতে থাকে। অন্য রকম ভাবালুতা চলে আসে তার মনের গভীরে। পরীবিবির সঙ্গে তার বিয়ে হয়েছে সাত বছর, কিন্তু তাদের সংসারে কোনো সন্তান নেই। কী এক কঠিন জীবন হয়ে গেল তাদের দুজনের। বিয়ের পরপর তো ভালোই ছিল সবকিছু! কিন্তু এখন মানুষ তার বউকে বলে, উই বেডি তো বাঁজা, পোলাপাইন হইবো কেমনে, কিসমতকেও আড়ালে–আবডালে অনেক আজেবাজে কথা বলে খারাপ লোকেরা। হঠাৎ বুকটা কেঁপে ওঠে কিসমতের, তাহলে! ডাক্তার সাবে আগে কইত, আপনের ওয়াইফের দুষ। কিসমতও তাই ভেবে এসেছে এত দিন। কিন্তু ডাক্তার এখন সন্দেহ করছে তাকে! তাহলে কি তারই দোষ আছে বলে ভেবেছেন বরকতুল্লাহ ডাক্তার, সে কারণেই কিসমত বাবা হতে পারছে না! না, তা হতে পারে না। তার বাপ-চাচা–ময়মুরুব্বিদের সবারই তো সন্তান আছে। তবে তার দোষ থাকবে কেন!
কী হলো ভাই, এখানে দাঁড়িয়ে কী ভাবছেন, যান ওয়াশরুমে?

ও, যাইতাছি ভাই। ধীরে ধীরে ওয়াশরুমের দিকে হেঁটে যায় কিসমত।
পরদিন সন্ধ্যায় তার পরীক্ষার রিপোর্ট আনতে যায় কিসমত মিয়া। রিপোর্ট হাতে নিয়ে কিসমতের ভেতরটা পুড়তে থাকে হু হু করে, কাকে জিজ্ঞাসা করবে সে, কী লিখছে রিপোটে আমারে কইবেন ভাই?

সম্ভব না, কাউকেই এভাবে জিজ্ঞাসা করা সম্ভব না। তবু সে সাহস করে যেখান থেকে রিপোর্ট নিয়েছে, সেখানে চলে যায়। একজনকে একপাশে ডেকে নিয়ে বলে, ভাই, এই রিপোটে কী লিখছে আমারে কইবেন? লোকটা একটু রেগে গিয়েই বললেন, কী বলছেন এসব! যে ডাক্তার আপনাকে টেস্ট করতে দিয়েছেন, তাঁর কাছে যান। এই কাজটা তো তার, তাই না?

চেইতেন না ভাই, সেই ডাক্তার দেশে নাই। আপনে তো এইগুলা দেহেন সবসুমে, কন না ভাই? লোকটা অবাক হয়ে দেখল কিসমতকে। তারপর অনিচ্ছা সত্ত্বেও রিপোর্টটা দেখলেন। সঙ্গে সঙ্গে বুঝতে পারলেন, রিপোর্টে যা কিছু এসেছে, তার একটাও এই মানুষটার অনুকূলে নেই। মনে হয় মানুষটা আর সন্তানের বাবা হতে পারবে না! ভদ্রলোক একজন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট। তিনি খুব ভালোভাবে কিসমত মিয়াকে বললেন, কিছু মাইন্ড করবেন না প্লিজ, এ সম্পর্কে কিছু বললে আমার চাকরি চলে যেতে পারে। আপনি আপনার নিজের ডাক্তারের কাছে চলে যান, সেটাই সবচেয়ে ভালো হবে।

গভীর ভাবালুতায় ডুবে গেছে কিসমত মিয়া। সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগতে লাগল। এখন বরকত ডাক্তারের কাছে গিয়ে রিপোর্ট দেখালে নানান সমস্যা। ডাক্তার জেনে যাবে আসল খবরটা, চারপাশে রটে যাবে পরীবিবি আদৌ বাঁজা নয়। তার কোনো দোষ নেই। আসল দোষটা কিসমত মিয়ার। তখন লজ্জায় তিষ্ঠাতে পারবেন না কিসমত, এমনকি শ্বশুরবাড়ির মানুষের প্ররোচনায় পরীবিবি তার কাছে তালাক চেয়েও বসতে পারে। বাস্তব দুনিয়াটা খুবই নিষ্ঠুর!

দাঁড়িয়ে ছিল কিসমত। ল্যাবের ভেতরের সেই লোকটা তার পাশে এসে বললেন, আপনার ডাক্তার যদি বিদেশে চলে গিয়ে থাকে, তাহলে আপনি এখানেই রিপোর্টটা দেখাতে পারেন। এখানেও অনেক বড় ডাক্তার আছে, দেখাবেন?
হ, দেখামু। লোকটা বললেন, তাহলে ৩০৫ নম্বরে চলে যান। ওখানে ডাক্তার খান বসেন। তিনি বেশ বড় ডাক্তার। ফি নেবেন এক হাজার টাকা।

ডাক্তার খানের চেম্বারে ঘন্টাখানেক পর কিসমত সিরিয়াল পেয়ে গেল। ডাক্তারের সামনে গিয়ে বসল। ভীষণ ভয় লাগছে তার। কী বলেন ডাক্তার! রিপোর্ট দেখে ডাক্তার সাহেব বললেন, আপনার নাম কিসমত মিয়া, বয়স ৩৪ বছর। বললেন, দেখুন কিসমত মিয়া, আমি যা বলব সেটা শুনে ঘাবড়ে যাবেন না। মনে রাখবেন, বেঁচে থাকাটা অনেক বড় বিষয়। আমাদের সামনে এই যে কাগজ, এই কাগজ অনুযায়ী আপনার ফাদার বা বাবা হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম, মানে খুবই কম।
কিসমত মিয়া মাথায় হাত দিয়ে বললেন, স্যার, আর একবার ভালা কইরা দেইখা কন, আমার খুব খারাপ লাগতাছে।

দেখুন এই কাগজ সামনে রেখে আমি আপনার সঙ্গে কথা বলছি, এটা হলো চিকিৎসাবিজ্ঞান, তবে চিকিৎসাবিজ্ঞানের বাইরেও অনেক কিছু থাকে, যেটাকে মানুষ বলে মিরাকল। এই তো, এর বাইরে আমি আর কিছু বলতে পারব না।
নিজের কাছে নিজেকে খুব ছোট মনে হলো কিসমত মিয়ার, এত দিন ডাক্তার বরকতুল্লাহর কাছে যতবার গেছে সে, ততবারই ডাক্তার বোঝাতে চেয়েছে, দোষটা পরীবিবির, ওষুধ দিয়েছে দুজনের জন্যই, কিন্তু এখন পরীক্ষা করাল তার, তাও একেবারে কঠিন একটা পরীক্ষা! এখন কী করবে কিসমত, কোথায় যাবে? ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে বের হয়ে রিকশায় উঠে বসল কিসমত।
কই যাইবেন?
লালবাগ যাও।

ধীরে ধীরে সামনে এগিয়ে যায় রিকশা। হঠাৎ কিসমত মিয়া রিকশাঅলাকে বলে, লালবাগ না তুমি বুড়িগঙ্গার কিনারে যাও।
অইচ্ছা, আপনে বয়া থাকেন, আপনের শরীল খরাপ নিকি বাই?
রিকশাঅলা তার শরীরের কথা জানতে চাইচ্ছে। তাহলে কি তাকে অসুস্থ মনে হচ্ছে!
আরে না না, কিয়ের শরিল খারাপ, তুমি যাও।

আবার সামনে এগিয়ে চলে রিকশা। একবার তার নিজের হাতের দিকে আর একবার পায়ের দিকে তাকায় কিসমত মিয়া। হাত-পা-মাথা, সবই তো ঠিক আছে। কোনো সমস্যা নাই। নদীর পাড়ে গিয়ে রিকশার ভাড়া দিয়ে একটা বটগাছের দিকে হেঁটে যায় কিসমত মিয়া। গাছের নিচে একটা চা-দোকান। একটা টুলের ওপর বসে চায়ের অর্ডার দেয়। সামনে নদী। ইঞ্জিনের নৌকাগুলো প্রচণ্ড শব্দে ভেসে যাচ্ছে নদীর ওপর দিয়ে। হঠাৎ নদীর ওপর থেকে ভেসে আসা ঠান্ডা বাতাস তার শরীর স্পর্শ করে। বাতাস আর নদীর ঢেউ তাকে অন্য কোথাও নিয়ে যায়। মনে হয় নৌকায় নদী পার হয়ে জিঞ্জিরা-শুভাঢ্যার পথে পথে ঘুরতে গেলে মনের ওপরে চেপে থাকা ভারি পাথরটাকে নামাতে পারবে মন থেকে। হালকা হতে পারবে সে। চা-দোকনের চারপাশের মানুষের কেলাহল, বটগাছের ডালে পাখিদের কিচিরমিচির শব্দ, মাইকের গান আর হাতের চা—এসব খুব ভালো লাগে তার। উঠে গিয়ে আর এক কাপ চায়ের অর্ডার দিয়ে চাঅলাকে বলেন, কী দুধ দিয়া বানাইছেন ভাই, বহুত টেস আপনের চা?

আমরা সুভাইড্যার গরুর দুধ দিয়া চা বানাই ভাই, আপনের ভালা লাগছে?
দুকাপ চা খেয়ে, একটা মিষ্টি পান মুখে পুরল। তারপর একটা সিগারেট ধরিয়ে রিকশায় উঠল কিসমত মিয়া।

ঘরে ফিরে কিসমত মিয়া অবাক। গুনগুন করে গান গাচ্ছে পরীবিবি! তাকে দেখে পরীবিবি একটা অদ্ভুত হাসি ছড়িয়ে দিল সমস্ত ঘরের ভেতর! মনটা তছনছ হয়ে আছে কিসমত মিয়ার, তবুও পরীর দিকে তাকিয়ে কিসমত বললেন, এত হাসো ক্যালা পরীবিবি! পরী কিসমতকে তার বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে হেসেই চলেছে। কী করবে সে বুঝতে পারে না। সিনেমার নায়িকাদের মতো গভীর একটা চুমু খায় কিসমতের ঠোঁটে। আকস্মিক পরীর এই ব্যবহারে কিসমত মিয়া ভীষণ অস্বস্তি বোধ করে, বলে, আহা কী হইছে কওনা ক্যালা, জুলদি কয়া ফালাও।
হাসতে হাসতে পরী তার পেট দেখায়, বলে হয় নাই, হইবো, আমি মা হমু।

অন্য আলো ডটকমে লেখা পাঠানোর ঠিকানা: [email protected]