বিচারহীনতা নির্যাতন বন্ধ না হওয়ার বড় কারণ

জেনেভা
জেনেভা

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, নির্যাতনবিরোধী জাতিসংঘ সনদের আলোকেই ২০১৩ সালে বাংলাদেশের আইনটি তৈরি করা হয়েছে। তিনি বলেন, দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের সংগ্রামের ইতিহাস দীর্ঘ এবং নির্যাতিতের পাশে দাঁড়ানো হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর দর্শন, যা অনুসরণে সরকার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। আজ মঙ্গলবার জেনেভায় জাতিসংঘের নির্যাতনবিরোধী কমিটি ক্যাটের সভায় তিনি এ কথা বলেছেন। জাতিসংঘের এই বিশেষজ্ঞ কমিটি সরকারের পেশ করা প্রাথমিক প্রতিবেদন ও বেসরকারি মানবাধিকার সংগঠনগুলোর বেশ কয়েকটি প্রতিবেদনের আলোকে বাংলাদেশের নির্যাতন পরিস্থিতির পর্যালোচনা করছে।

সভায় বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর সদস্যদের জবাবদিহি না থাকার অভিযোগ তুলে বলা হয়, জাতিসংঘ সনদের অনেক বাধ্যবাধকতা ২০১৩ সালের নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু নিবারণ আইনে উপেক্ষিত হয়েছে। কমিটির সভায় মতপ্রকাশ করা হয়, নির্যাতন বন্ধ না হওয়ার বড় কারণ হচ্ছে বিচারহীনতা।

কমিটির সভাপতি হ্যান্স মডভিচ ও সদস্য যুক্তরাষ্ট্রের মিস এফ গায়ের সরকারের প্রতিনিধিদের উদ্দেশে অনেক প্রশ্ন রাখেন। এসব প্রশ্নের মধ্যে ছিল হেফাজত ও রিমান্ডে নির্যাতন, বিচারবহির্ভূত হত্যা, অঘোষিত আটক রাখা, গুম, কারাগারের দুরবস্থা, বিচারকদের স্বাধীনতা, নির্বাচনী সহিংসতা, ভোটারদের ভোটাধিকারবঞ্চিত করাসহ বিভিন্ন বিষয়। আগামীকাল বুধবার সরকারের পক্ষ থেকে এসব প্রশ্নের জবাব দেওয়ার কথা আছে।

আইনমন্ত্রী সরকারের গৃহীত বিভিন্ন আইনি, প্রশাসনিক ও প্রাতিষ্ঠানিক পদক্ষেপের বিবরণ তুলে ধরেন। এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন সময় আদালত বিশেষ করে সুপ্রিম কোর্টের বিভিন্ন নির্দেশনার কথাও তিনি উল্লেখ করেন। সভায় আইনমন্ত্রী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগের তদন্ত ও বিচারের কিছু পরিসংখ্যান তুলে ধরেন। মন্ত্রী বলেন, সন্ত্রাসবাদ, সহিংসতা এবং নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা মোকাবিলার পাশাপাশি মানবাধিকার সুরক্ষার ভারসাম্য রক্ষা করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ এবং সরকার তা পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করছে।

কমিটির সদস্য যুক্তরাষ্ট্রের মিস এফ গায়ের মন্ত্রী যেসব পরিসংখ্যান সূচনা বক্তব্যে দিয়েছেন তা প্রতিবেদনে উল্লেখ না করার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তিনি জানতে চান, যাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা ২০১৩-র আইনে কি না? এই আইনের দুর্বলতাগুলো তুলে ধরে তিনি দুদক, মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত সব বাহিনীর সদস্যদের এই আইনের আওতাভুক্ত করার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন। র‍্যাব, স্পেশাল ব্রাঞ্চ ও পুলিশ স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য এই আইন থেকে অব্যাহতি চাওয়ার যে দাবি জানিয়েছে, সরকার তা প্রত্যাখ্যান করবে কি না, তিনি সেই প্রশ্নও রাখেন।

নারায়ণগঞ্জে সাত খুনের মামলায় র‍্যাব কর্মকর্তাদের দণ্ডিত হওয়ার বিষয়ে কমিটির সভায় বলা হয়, এই ঘটনা প্রমাণ করেছে যে র‍্যাবের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো তদন্তে অভ্যন্তরীণ অনুসন্ধান ব্যবস্থা যথেষ্ট নয়। র‍্যাবের মতোই পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো তদন্তের জন্য স্বাধীন বেসামরিক তদন্ত সংস্থা গঠনের কথা বলেন কমিটির সভাপতি হ্যান্স মরডিচ।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে আন্তধর্মীয় সম্মেলনে অংশগ্রহণের সময়ে প্রিয় সাহা পিরোজপুরে সংখ্যালঘুদের জমি দখলের যে অভিযোগ করেছেন সেই অভিযোগের কোনো তদন্ত হয়েছে কি না এবং দেশে ফিরলে তাঁকে কোনো ধরনের হয়রানি করা হবে কি না, সে কথাও সভায় জানতে চাওয়া হয়।