নৃশংসতা

মানুষকে বলা হয় ‘আশরাফুল মাখলুকাত’ অর্থাৎ সব সৃষ্টির মধ্যে সেরা জীব। কেননা, সব জীবের মধ্যে একমাত্র মানুষেরই রয়েছে ‘বিবেক’। অথচ সেই মানুষই আজ হয়ে উঠেছে সবচেয়ে হিংস্র ও ভয়ংকর, তুচ্ছ কারণে অসহিষ্ণু, মানুষ হত্যা, খুন, পুড়িয়ে মারাসহ নানা নৃশংস পন্থার আশ্রয় নিচ্ছে নির্দ্বিধায়। প্রতিদিন চারদিকে এত নৃশংস ঘটনা ঘটছে যে ‘মনুষ্যত্বের’ অস্তিত্ব আদৌ আছে কি না সন্দেহ হয়!
আপাতদৃষ্টিতে মানুষের এই নৃশংসতা হঠাৎ করে বেড়ে গেছে বলে মনে হলেও এটি আসলে হয়েছে ধীরে ধীরে। এর পেছনে মূল কারণটি সমাজের অনেক গভীরে নিহিত। সমাজ পরিবর্তনের ধারাবাহিকতায় দ্রুত নগরায়ণ এবং যৌথ পরিবারগুলো ভেঙে ক্রমেই একক পরিবারের (নিউক্লিয়ার ফ্যামিলি) বিকাশ ঘটছে। শহরে বাবা-মা দুজনই ব্যস্ত থাকেন তাঁদের ক্যারিয়ার নিয়ে। একক পরিবারের সন্তানেরা বড় হচ্ছে একা একা অথবা গৃহপরিচারিকার কাছে। ফলে সন্তানেরা মা-বাবা বা অন্য আত্মীয়দের কাছ থেকে পর্যাপ্ত গুণগত সময় পাচ্ছে না, যা তাদের ‘নৈতিক গুণাবলিসম্পন্ন একজন মানবিক মানুষ’ হতে সাহায্য করে। উপরন্তু স্কুল কোচিংয়ের অতিরিক্ত চাপও তাদের নানা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড, খেলাধুলা, মুক্তবুদ্ধির চর্চা ইত্যাদি থেকে বিরত রাখছে। ফলে তারা একাকী, স্বার্থপর ও মানবিক গুণাবলিবিবর্জিত মানুষ হিসেবে বড় হচ্ছে।
অভিভাবকেরা সন্তানদের লেখাপড়া ও প্রতিষ্ঠা নিয়ে যতটা উদ্বিগ্ন ও যত্নশীল; সন্তান মানবিক গুণাবলিসম্পন্ন মানুষ হিসেবে গড়ে উঠছে কি না, সে ব্যাপারে ততটাই উদাসীন।
আসলে আমরা সবাই কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, হিংসা—এই রিপুগুলোর দ্বারা তাড়িত হয়ে বিবেকহীনভাবে এক অসুস্থ অবস্থায় বসবাস করছি। এ থেকে উত্তরণের পথ আমাদের এখনই খুঁজতে হবে, সবকিছুর আগে সন্তানদের একজন ভালো মানুষ হওয়ার ব্যাপারে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। তা না হলে অদূর ভবিষ্যতে আমাদের এই সুন্দর দেশটিতে ‘সত্যিকারের মানুষ’ খুঁজে পাওয়াই কঠিন হবে।
সাবিনা পারভীন, গোড়ান, ঢাকা।