নদী রক্ষায় সেনাবাহিনীকে সম্পৃক্ত করার সময় এসেছে

লালমনিরহাট শহরে বাসস্ট্যান্ড থেকে কয়েকশ গজ উজানে সতী নদী তিন ফুটে পরিণত হয়েছেছবি : তুহিন ওয়াদুদ

তুহিন ওয়াদুদের লেখা সতী নদীর কথা পড়ে মন খারাপ হয়ে যায়। একসময়ের চওড়া নদী এখন মাত্র তিন ফুট প্রশস্ত ড্রেনে পরিণত হয়েছে। নদী দখলদারেরা কোনো আইনের তোয়াক্কা না করে দিব্যি নদী ও জলাশয় ভরাট করে দখলে নিচ্ছেন।

অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, এদের বেশির ভাগই ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের আশ্রয়প্রাপ্ত বা প্রভাবশালী মহলের সঙ্গে জড়িত। তাঁরা বিভিন্ন ভুয়া দলিল দেখিয়ে নিজেদের দখলকে বৈধ প্রমাণ করতে চান।

তবু সরকার কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। কিছু নদ-নদীর সীমানা চিহ্নিত করে সীমানা পিলার স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু এখানেই থেমে গেছে বাস্তবায়ন। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) জনবল, দক্ষতা এবং সদিচ্ছার অভাবে দায়িত্ব পালনে সম্পূর্ণরূপে সক্ষম নয়।

আরও পড়ুন

আমি ১৯৮৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রে প্রশিক্ষণে গিয়েছিলাম। আমার বাসস্থানের কাছেই ছিল যুক্তরাষ্ট্র সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের একটি দপ্তর। সেখানেই জানতে পারি, ইউএস আর্মি করপস অব ইঞ্জিনিয়ার্স যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ১২ হাজার মাইল অভ্যন্তরীণ নদী, লেক, খাল ও জলপথ রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে। তাদের মূল কাজ হলো জলপথের নাব্যতা রক্ষা, ড্রেজিং, বন্যা প্রতিরোধ ও নদী ব্যবস্থাপনা।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতেও রয়েছে ‘রিভারাইন ইঞ্জিনিয়ার্স’ নামে বিশেষায়িত একাধিক ব্যাটালিয়ন। পৃথিবীর আর কোথাও এমন ইউনিট আছে কি না, আমার জানা নেই। তবে বাংলাদেশের ভূপ্রকৃতি ও নদীমাতৃক চরিত্র বিবেচনায় আমাদের জ্যেষ্ঠ সেনা নেতৃত্ব বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জন্মলগ্নে এমন ইউনিট গঠন করেছিলেন, যারা নদীভিত্তিক প্রতিরক্ষায় দক্ষ ও প্রস্তুত। তাঁদের রয়েছে বিভিন্ন রকমের জলযান ও দক্ষ জনবল।

এই পরিপ্রেক্ষিতে আমি পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি—বিশেষভাবে বর্তমান উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসানের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় আনুন।

বাংলাদেশের নদ-নদী ও জলাশয় রক্ষার দায়িত্ব সেনাবাহিনীর রিভারাইন ইঞ্জিনিয়ার্স ইউনিটকে দিন। এদের অনেক সময় টহল ও রক্ষণাবেক্ষণের অভিজ্ঞতা রয়েছে, সীমিত সরঞ্জামও রয়েছে, প্রয়োজনে আরও কিছু সরঞ্জাম যুক্ত করা যেতে পারে। তাঁরা নিয়মিত টহল দিতে পারবে, নদীর সীমানা রক্ষা, নাব্যতা নিশ্চিতকরণ এবং বন্যা প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে।

আমরা যদি এখনই নদীগুলোর সুরক্ষা নিশ্চিত না করি, তবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য বাংলাদেশ রক্ষা করা কঠিন হয়ে যাবে। পরিবেশ রক্ষা করা শুধু সরকারের নয়, আমাদের সবার নৈতিক ও পবিত্র দায়িত্ব।

তুষার কান্তি চাকমা, অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তা