মার্কিন দলিল বিশ্লেষণ
পশ্চিম পাকিস্তানকে রক্ষা করতেই যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব
দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশিদের মনে একটি প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে, তা হলো মহান মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনী মুক্তিবাহিনীর কাছে না করে কেন ভারতের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিল? যুক্তরাষ্ট্র সরকারের প্রকাশনা ফরেন রিলেশনস (১৯৬৯-১৯৭৬) থেকে সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছেন নাদিম মাহমুদ। দুই পর্বের এই লেখায় আজ ছাপা হলো শেষ পর্ব
পাকিস্তানকে দুর্বল করে দেয় করাচিতে আক্রমণ
১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ভারতীয় সেনা ও মুক্তিবাহিনীর গেরিলারা পূর্ব পাকিস্তানের অনেক জায়গায় নিয়ন্ত্রণ নেওয়া শুরু করেন। তাঁরা ঢাকা থেকে ২২ মাইল দূরে অবস্থান করা শুরু করেন বলে ৯ ডিসেম্বর জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হেনরি কিসিঞ্জার মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিক্সনকে অবহিত করেন। দক্ষিণ-পূর্বে প্রধান বন্দর চট্টগ্রামকে ঢাকা থেকে বিচ্ছিন্ন করার পাশাপাশি জলপথ বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফলে এই অবস্থায় পাকিস্তানি সেনারা প্রতিরোধ গড়ে তুলবে নাকি আত্মসমর্পণ করবে, সেটাই দেখার বিষয় বলে হোয়াইট হাউসে আলোচনা শুরু হয়। (পৃ. ৭১০)
পূর্ব পাকিস্তানে যখন পাকিস্তানি হানাদারদের নাস্তানুবাদ অবস্থা, তখন পশ্চিম ফ্রন্টেও পাকিস্তানি সেনারা একই ধরনের পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে। ভারতীয় সেনারা করাচির দক্ষিণ দিকে অগ্রসর হয়ে পুরো পাকিস্তানের সামরিক ঘাঁটিগুলোয় বিমান হামলা চালায়। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী পাঞ্জাবের সমভূমিতে এবং বিশেষ করে কাশ্মীর সীমান্তে কিছু আক্রমণের উদ্যোগ নিলেও তা করতে পারেনি। ভারতের আক্রমণে করাচির বিমান ও ট্যাংকারের জন্য সংরক্ষিত ৫০ শতাংশ মজুত করা তেল ধ্বংস করে দেওয়া হয়। (পৃ. ৭১৩)
পাকিস্তানি সেনারা মনে করেছিল, ভারতীয় সেনা ও বাংলার গেরিলারা যদি পূর্ব পাকিস্তানে জয়ী হয় এবং এরপর যদি ভারতীয় বাহিনী পশ্চিমে আক্রমণ করে, তাহলে নিশ্চয় আন্তর্জাতিক চাপের অধীনে আসবে এবং তারা অপ্রয়োজনীয়ভাবে পশ্চিমে বড় কোনো ভারতীয় পাল্টা-আক্রমণে উসকানি দেবে না। অন্যদিকে যদি ভারতীয় বাহিনী পশ্চিম ফ্রন্টে পূর্ণমাত্রার আক্রমণ চালায়, তাহলে পাকিস্তানি বাহিনী তাদের মূল ভূখণ্ড রক্ষা করতে বেশি মনোযোগী হবে।
যুদ্ধের রসদ ফুরিয়ে যাওয়া
পাকিস্তানের যখন যুদ্ধের রসদের সংকট চরমে এবং ভারতের আক্রমণ ঠেকাতে নাকানিচুবানি খাচ্ছিল, তখন দেশটি বন্ধুরাষ্ট্রগুলোর কাছ থেকে সহায়তা আহ্বান করে। এই বন্ধুরাষ্ট্রের মধ্যে ছিল চীন ও যুক্তরাষ্ট্র। ওয়াশিংটন থেকে নির্দেশ পেয়ে ইরানে মার্কিন দূতাবাসের কর্মকর্তা ৮ ডিসেম্বর ইরানের রেজা শাহর (মুহাম্মদ রেজা পেহলভি) সঙ্গে দেখা করে পাকিস্তানকে ইরানের সামরিক সহযোগিতা পাওয়ার বিষয়ে জানতে চান। জবাবে শাহ ইরানে পাকিস্তান দূতাবাসের কর্মকর্তাদের জানিয়ে দেন যে ভারত ও সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে ইরানের চুক্তি থাকার কারণে তারা পাকিস্তানে কোনো যুদ্ধবিমান পাঠাতে পারবে না। তিনি পরামর্শ দেন, জর্ডান সম্ভবত এফ-১০৪ জঙ্গি বিমান পাকিস্তানে পাঠাতে পারে। তবে আইনগত বাধার কারণে যুক্তরাষ্ট্রও সামরিক যন্ত্রপাতি জর্ডানের মাধ্যমে পাঠাতে পারেনি। (পৃ. ৭০১)
৯ ডিসেম্বর স্টেট ডিপার্টমেন্টের কর্মকর্তারা হেনরি কিসিঞ্জারের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে কর্মকর্তা জোসেফ সিসকো বলেন, ‘আমরা জানি, সোভিয়েত ইউনিয়ন (রাশিয়া) ভারতকে সহযোগিতা করে যাচ্ছে। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি না, মধ্যপ্রাচ্যের ইরান, ইসরায়েল বা অন্য কোনো দেশ চাইবে যে যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ এশিয়ায় (যুদ্ধে) জড়িয়ে পড়ুক।’
যুদ্ধ বন্ধে মার্কিন সিদ্ধান্ত
যুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ে ৬ ডিসেম্বর মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিক্সনের নেতৃত্বে নিরাপত্তা পরিষদের একটি বৈঠক হয়। সেই বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী রজার্স বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ার সংঘাতের জন্য যুক্তরাষ্ট্র যে দায়ী নয়, তা এখন অনেকটাই স্পষ্ট। দীর্ঘদিন ধরে জিইয়ে রাখা রাজনৈতিক সমস্যাগুলোর সমাধান এ অঞ্চলের জনগণের হাতেই রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের কাজ হলো বর্তমান সংকটের একটি শান্তিপূর্ণ সমাধান খুঁজে বের করতে সহায়তা করা। সেখানে যে মানবিক সহায়তা আন্তর্জাতিক মহল থেকে দেওয়া হয়েছে, তার চেয়ে যুক্তরাষ্ট্র বেশি দিয়েছে। ইতিমধ্যে আমরা কংগ্রেসের কাছে আরও ২৫ কোটি ডলার মানবিক সহায়তার অনুরোধ করেছি।’
রজার্স সেখানে উল্লেখ করেন, প্রেসিডেন্ট নিজে জাতিসংঘে যুদ্ধবিরতি ও পারস্পরিক সেনা প্রত্যাহারের প্রস্তাবে ১১টি দেশের সমর্থন আদায় করেছিল। কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়ন ও পোল্যান্ড এটিকে প্রত্যাখ্যান করে। এ ধরনের প্রস্তাবের পক্ষে স্পষ্ট সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকা সত্ত্বেও সোভিয়েত অনমনীয়তার (ভেটো) কারণে যুক্তরাষ্ট্র তখন ‘শান্তিচুক্তি’র প্রস্তাবের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে (পৃ. ৬৭০)।
ওই বৈঠকে প্রেসিডেন্ট নিক্সন নিরাপত্তা পরিষদকে বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে ইন্দিরা গান্ধীর ও প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার সঙ্গে কথা বলেছি এবং চিঠি লিখেছি। ইয়াহিয়া অত্যন্ত সদিচ্ছা দেখিয়ে বলেছেন, যদি ভারত রাজি থাকে তাহলে সে সীমান্ত থেকে তাঁর বাহিনী প্রত্যাহার করতে প্রস্তুত। কিন্তু মিসেস গান্ধী প্রস্তাবটিতে কোনো আগ্রহ দেখাননি।’
৭ ডিসেম্বর মার্কিন গোয়েন্দারা ওয়াশিংটনে এক বার্তা পাঠান। সেখানে বলা হয়, ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী পাকিস্তানকে যুদ্ধবিরতির পক্ষে রাজি করানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আগামী জাতিসংঘে সাধারণ পরিষদের বৈঠকের আগে বাংলাদেশকে স্বাধীন ঘোষণা করতে হবে। কাশ্মীরের দক্ষিণাংশকে স্বাধীন ঘোষণাসহ পাকিস্তানের বিমানঘাঁটির শক্তিমত্তা ধ্বংস করতে হবে, যাতে পাকিস্তান আর ভারতে কোনো আগ্রাসন না চালাতে পারে (পৃ. ৬৮৭)।
৮ ডিসেম্বর প্রেসিডেন্ট নিক্সনকে সতর্ক করে হেনরি কিসিঞ্জার বলেন, ভারতের পরিকল্পনা এখন অনেকটাই পরিষ্কার। তারা এখন পূর্ব পাকিস্তান হয়ে পশ্চিম পাকিস্তানে যেতে চায়। সেখানে গিয়ে কাশ্মীর দখল করে নিতে চাইবে, পাকিস্তানকে শেষ করে দেবে।
ইয়াহিয়া খান পরে মার্কিন রাষ্ট্রদূত ফারল্যান্ডকে জানিয়েছেন যে তিনি পূর্ব পাকিস্তানে অবশ্যম্ভাবী ফলাফলকে ‘মেনে নিয়েছেন’। মার্কিন কর্মকর্তারা অনেকটাই নিশ্চিত হন, ‘পূর্ব পাকিস্তান হারিয়ে গেছে এবং এই বাস্তবতাকে আমাদের উভয়েরই স্বীকার করতে হবে। পশ্চিম পাকিস্তানকে রক্ষা করার জন্য নানা ধরনের পরামর্শ আসতে থাকে।’
৯ ডিসেম্বর ওয়াশিংটন থেকে জরুরি বার্তা ইয়াহিয়ার কাছে পাঠানো হয়। সেই বার্তার একটি অংশে বলা হয়, এখন যা করা প্রয়োজন, তা হলো যুদ্ধ বন্ধ করা। আর সে জন্য একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রয়োজন। এটি অর্জনের সর্বোত্তম উপায় হলো একটি রাজনৈতিক সমাধানের মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের ইচ্ছার স্বীকৃতি দেওয়ার পরিবেশ সৃষ্টি করা। যুদ্ধবিরতি ছাড়া পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের আইনসংগত অধিকার ও স্বার্থের প্রতি সম্মান নিশ্চিত করা যাবে না এবং লাখ লাখ শরণার্থীর প্রত্যাবর্তনের জন্য প্রয়োজনীয় পরিবেশ সৃষ্টি করা সম্ভব হবে না বলে ওয়াশিংটন মনে করে। (পৃ. ৭২৮)।
ওই চিঠিতে ইয়াহিয়াকে বলতে বলা হয়, যুদ্ধবিরতি এবং পূর্ব পাকিস্তানে রাজনৈতিক সমাধান বিষয়ে পাকিস্তান সরকার ও পূর্ব পাকিস্তানের নেতাদের মধ্যে অবিলম্বে আলোচনা আবার শুরু প্রয়োজন। ১০ ডিসেম্বর সকাল ১০টা ৫১ মিনিটে প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন ও হেনরি কিসিঞ্জার যে আলোচনা করেন, সেখানে বলা হয়, পূর্ব পাকিস্তান হাতছাড়া হয়েছে। এখন প্রধান সমস্যা হলো পশ্চিমাঞ্চলকে রক্ষা করতে হবে। ‘“বাংলাদেশ”কে মার্কিন স্বীকৃতি দেওয়া হবে’—এমন বার্তা দিয়ে হলেও ওয়াশিংটন থেকে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব আসে।
চূড়ান্ত আত্মসমর্পণে পাকিস্তান
পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে যোগ দিতে নিউইয়র্কে আসেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকালে নিক্সনের সঙ্গে দেখা করতে চান বলে ওয়াশিংটনকে আগেই জানানো হয়। ১১ ডিসেম্বর হেনরি কিসিঞ্জার প্রেসিডেন্টকে টেলিফোনে বলেন, ‘ভুট্টো আমাকে টেলিফোন করেছিলেন। তিনি আপনার সঙ্গে দেখা করতে চান। কিন্তু আমি সেটি প্রত্যাখ্যান করেছি। তখন তিনি অভিযোগ তুলে বলেছেন, চীন পাকিস্তানের যুদ্ধে সহযোগিতা করছে, কিন্তু আমেরিকা করছে না।’ (পৃ. ৭৭২)
সেদিনই ভুট্টোকে আবার টেলিফোন করে কিসিঞ্জার বলেন, ‘আমি প্রেসিডেন্টের (নিক্সন) সঙ্গে কথা বলেছি। এ বিষয়ে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি হলো, আমরা যা কিছু করেছি, তার পরিপ্রেক্ষিতে এই অভিযোগ আসা একেবারেই অনুচিত। বলতে গেলে আমরা আমাদের নিজস্ব জনমত, আমাদের পুরো প্রশাসন সবকিছুর বিরুদ্ধে গিয়ে দাঁড়িয়েছি। এখন আমাদের সোভিয়েত ইউনিয়নের মতামতের (যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে) জন্য অপেক্ষা করতে হবে।’
১২ ডিসেম্বর ইসলামাবাদ থেকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত ফারল্যান্ড জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হেনরি কিসিঞ্জারের কাছে বার্তা পাঠান। সেখানে ফারল্যান্ড ইয়াহিয়াকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘তিনি যুদ্ধবিরতিতে রাজি কি না।’ জবাবে ইয়াহিয়া বলেছেন, ‘এ অবস্থায় যেটি করা যুক্তিসংগত, আমরা সেটাই করতে প্রস্তুত।’ পাকিস্তানের প্রথম যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব কেন পরের দিন নিয়ে যেতে চেয়েছিল, সেটাও তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হয়। ফারল্যান্ডের প্রশ্নের জবাবে ইয়াহিয়া তাঁকে জানান, ‘কিছু ভুল–বোঝাবুঝির’ ঘটনা ঘটেছিল। তিনি আরও বলেন, পররাষ্ট্রসচিব বিষয়টি ঠিক করার কাজ করছেন (পৃ. ৭৮৫)।
এ আলোচনায় অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে যায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবে পাকিস্তান ভারতের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলছে; যদিও প্রথম দিকে ইয়াহিয়া খান রাজি হননি, তবে যুদ্ধের পরাজয়ের বাস্তবতা আর পশ্চিম পাকিস্তানে ভারতের যুদ্ধের শঙ্কা থেকে মুক্তি পেতে যুদ্ধবিরতিই উত্তম প্রস্তাব ছিল বলে মার্কিন গোয়েন্দাদের ভাষ্যে উঠে আসে।
১২ ডিসেম্বর ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শরণ সিং এবং মার্কিন কূটনৈতিক জর্জ বুশ দুই ঘণ্টাব্যাপী একটি বৈঠক করেন। সেই বৈঠকে বুশকে বোঝানো হয় যে ভারত মূলত বাংলাদেশের স্বীকৃতি দেওয়ার মাধ্যমে পাকিস্তানি বাহিনীকে আত্মসমর্পণ এবং পরে তাদের স্বদেশে প্রত্যাবর্তনের সুযোগ দিচ্ছে। এটা ব্যতীত ভারতের কোনো ভূরাজনৈতিক বা আঞ্চলিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা নেই।
একই কথা মস্কো থেকে প্রেসিডেন্ট নিক্সনকে পাঠানো সোভিয়েত নেতৃত্বের একটি চিঠিতে ১৪ ডিসেম্বর বলা হয়, ‘ভারতীয় নেতৃত্বের কাছ থেকে আমরা দৃঢ় আশ্বাস পেয়েছি যে পশ্চিম পাকিস্তানের কোনো ভূমি দখলের পরিকল্পনাও ভারতের নেই। তারা (ভারত) জানিয়েছে, পাকিস্তান সরকার যদি পূর্ব পাকিস্তান থেকে নিজেদের বাহিনী প্রত্যাহার করে এবং সেখানে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের আইনসম্মত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ সমাধান করা সম্ভব হয়, তাহলে ভারত যুদ্ধবিরতিতে সম্মত এবং তাদের বাহিনীও প্রত্যাহার করা হবে। পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ নিজেরাই তাদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে বলেও নিক্সনকে জানানো হয়। (পৃ. ৮০২)
সোভিয়েত ইউনিয়নের এই চিঠি পাঠানোর কয়েক ঘণ্টা পর রাত তিনটার দিকে তাঁরা দ্রুত শান্তি প্রতিষ্ঠার দিকে যাওয়া এবং ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়ার প্রস্তাব দেন। ১৪ ডিসেম্বর প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান প্রেসিডেন্ট নিক্সনকে চিঠি লিখে রাশিয়ার আগ্রাসনের জন্য বিরক্তি প্রকাশ করেন, ‘আমার জনগণ যুক্তরাষ্ট্রের যেকোনো সিদ্ধান্ত মেনে নিতে প্রস্তুত।’
ওই দিন বিকেল ৫টা ২০ মিনিটে জেনারেল নিয়াজি ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের কর্মকর্তা হারব্রেট স্পিভ্যাককে ফোন করেন। পরে মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলীসহ দেখা করে বলেন, ‘ঢাকায় যেভাবে বোমা বিস্ফোরণ হচ্ছে, তাতে আমাদের যুদ্ধ বন্ধ করতে হবে।’ ফরমান আলী যুদ্ধবিরতির একটি খসড়াপত্র নয়াদিল্লিতে পাঠানোর পর পূর্ব পাকিস্তানে ভারতীয় বাহিনীর প্রধানের কাছে পাঠানোর জন্য যোগাযোগ করেন। পরে জেনারেল নিয়াজি স্বাক্ষরিত চিঠিটি পাঠানো হয়।
১৫ ডিসেম্বর ভারতের সেনাপ্রধান জেনারেল স্যাম মানেকশ নিয়াজির চিঠির উত্তর দিয়ে বলেন, ‘আমি জেনারেল ফরমান আলীকে নিশ্চয়তা দিয়েছি যে বাংলাদেশে আত্মসমর্পণ করলে পাকিস্তানি সেনাদের জেনেভা কনভেনশন চুক্তি অনুযায়ী নিরাপত্তা দেওয়া হবে। এর মধ্যে ভারত ও বাংলাদেশের কমান্ডারের দায়িত্বে থাকা জেনারেল অরোরাকে আমি নির্দেশ দিয়েছি।’ (পৃ. ৮২৯)
পরে নানা আলোচনার পর ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানের জেনারেল নিয়াজি এবং মিত্রবাহিনীর পক্ষে ভারতের জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা মধ্যে আত্মসমর্পণ চুক্তি হয়।
নাদিম মাহমুদ গবেষক, ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়।
ই–মেইল: [email protected]
মতামত লেখকের নিজস্ব
