ট্রাম্প কি যুক্তরাষ্ট্রকে পুলিশি রাষ্ট্রের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন

লস অ্যাঞ্জেলেসে অভিবাসীদের বিরুদ্ধে অভিযানের প্রতিবাদে বিক্ষোভে পুলিশের ধরপাকড়ছবি: রয়টার্স

ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কনীতি থেমে গেছে। তাঁর বড় বিলটিও আটকে গেছে। এমনকি তাঁর বিলিয়নিয়ার প্রযুক্তি গুরুরাও তাঁর দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। তাহলে তিনি এখন কীভাবে তাঁর ক্ষমতা দেখাবেন?

শুক্রবার সকালে, লস অ্যাঞ্জেলেসে অভিযান চালিয়েছে ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই), ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি (ডিএইচএস), এফবিআই এবং মাদকদ্রব্য প্রয়োগ প্রশাসনের (ডিইএ) ফেডারেল এজেন্টরা। তারা দুটি হোম ডিপো এবং একটি পোশাকের দোকানে অভিযান চালায়। তাদের উদ্দেশ্য ছিল কাগজপত্রবিহীন অভিবাসী কর্মীদের খুঁজে বের করা।

বিভিন্ন তথ্য অনুযায়ী, তারা ১২১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। অভিযানের সময় প্রতিবাদকারীরা ডিম ছুড়ে ও স্লোগান দিয়ে তাদের বাধা দেয়। দাঙ্গা পুলিশ ঢাল, লাঠি, মরিচগুঁড়া, রাবার বুলেট, কাঁদানে গ্যাসের শেল এবং ফ্ল্যাশ-ব্যাং গ্রেনেড ব্যবহার করে তঁাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

শনিবার ট্রাম্প পরিস্থিতি আরও সঙিন করে তোলেন। তিনি লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টিতে ন্যাশনাল গার্ডের কমপক্ষে দুই হাজার সৈন্য মোতায়েন করার নির্দেশ দেন। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, অভিবাসন কর্মকর্তাদের কাজে বাধা দিলে তা ‘বিদ্রোহ’ বলে গণ্য করা হবে। হোয়াইট হাউসের ডেপুটি চিফ অব স্টাফ স্টিফেন মিলার এই প্রতিবাদকে ‘বিদ্রোহ’ বলে আখ্যা দেন।

শনিবার সন্ধ্যায়, প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ সক্রিয় মেরিন সেনা মোতায়েনের হুমকি দেন। তিনি বলেন, ‘আইসিই এবং ফেডারেল আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ওপর সহিংস হামলাগুলোর উদ্দেশ্য আমরা জানি। এই হামলাগুলো করা হয়েছে আমাদের দেশ থেকে অপরাধী অবৈধ বিদেশিদের সরাতে বাধা দেওয়ার জন্য। এটি অপরাধী চক্র (বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন) দ্বারা পরিচালিত বিপজ্জনক আক্রমণ। একে আমরা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য বিশাল ঝুঁকি বলে গণ্য করছি। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রশাসন ফেডারেল এজেন্ট এবং ফেডারেল স্থাপনাগুলোর বিরুদ্ধে সহিংসতা ও ধ্বংস সহ্য করবে না।’

আমরা ট্রাম্পের পুলিশি রাষ্ট্রের প্রথম ধাপ দেখছি।

বর্তমানে ট্রাম্পের পুলিশি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রধান প্রতিরোধের দুটি উপায় আছে—ফেডারেল আদালতের দ্বারস্থ হওয়া এবং ব্যাপক শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ করা। শনিবার ১৪ জুন, নো কিংস ডে অব অ্যাকশন পালিত হবে। এতে অনেক শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদকারীরা অংশ নেবেন। এসব আন্দোলনে আমেরিকার নাগরিকদের শান্তিপূর্ণ থাকা জরুরি।

গত সপ্তাহে সান দিয়েগো, মার্থাস ভিনিয়ার্ড ও বার্কশায়ারে অভিবাসনবিরোধী অভিযানের সময় অভিযানে বিক্ষোভ দেখা দেয়। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে যখন ফেডারেল এজেন্টরা কর্মীদের আটক করছিল, তখন লোকজন তাদের বাধা দেন।

ট্রাম্পের এই ধরপাকড় ফেডারেল আদালত পর্যন্ত পৌঁছেছে। আইসিই কর্মকর্তারা যুক্তরাষ্ট্রের আদালতকক্ষের বাইরে জড়ো হচ্ছেন। বিচারকেরা যেসব অভিবাসীর মামলা খারিজ করে দিচ্ছেন, সেই অভিবাসীদের তাৎক্ষণিকভাবে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।

ইতিহাসে দেখা গেছে যে একবার একজন স্বৈরাচারী শাসক একটি পুলিশি রাষ্ট্রের কাঠামো তৈরি করলে, সেই একই কাঠামো যে কারও বিরুদ্ধে ব্যবহার করা যেতে পারে।

ট্রাম্প এবং তাঁর সরকার দ্রুত এমন একটি কাঠামো তৈরি করছেন পাঁচটি ধাপে। ১. তথাকথিত ‘বিদ্রোহ’, ‘অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহ’ বা ‘আক্রমণের’ ভিত্তিতে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা। ২. সেই ‘জরুরি অবস্থা’ ব্যবহার করে দেশের অভ্যন্তরে বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে ফেডারেল এজেন্টদের ক্ষমতা প্রয়োগের জন্য ডেকে আনা। ৩. এই সামরিক এজেন্টদের নির্বিচার অপহরণ এবং বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেপ্তার করার অনুমতি দেওয়া এবং যথাযথ প্রক্রিয়া ছাড়াই লোকদের আটকে রাখা। ৪. আটক ব্যক্তিদের জন্য কারাগারে অতিরিক্ত স্থান এবং আটককেন্দ্র তৈরি করা। ৫. অবশেষে পরিস্থিতি আরও অবনতি ঘটলে সামরিক আইন ঘোষণা করা।

আরও পড়ুন

আমেরিকা এখনো সামরিক আইনে পৌঁছায়নি। কিন্তু একবার চালু হলে, একটি পুলিশি রাষ্ট্রের কাঠামো আপনা–আপনিই গড়ে উঠতে থাকে। তখন অভ্যন্তরীণ মিলিশিয়া, ধরপাকড়, আটককেন্দ্র এবং সামরিক আইন একের পর এক আসতে থাকে।

বেসামরিক নিয়ন্ত্রণ যখন সামরিক নিয়ন্ত্রণে চলে যায়, তখন জাতি বিভক্ত হয়ে পড়ে। এক পক্ষ একে সমর্থন করে। আরেক পক্ষ এর বিরোধিতা করে। স্বৈরাচার উভয় দিকে ভয় ও রাগ উসকে দিয়ে নিজের অবস্থান সংহত করতে থাকে।

বর্তমানে ট্রাম্পের পুলিশি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রধান প্রতিরোধের দুটি উপায় আছে—ফেডারেল আদালতের দ্বারস্থ হওয়া এবং ব্যাপক শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ করা। শনিবার ১৪ জুন, নো কিংস ডে অব অ্যাকশন পালিত হবে। এতে অনেক শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদকারীরা অংশ নেবেন। এসব আন্দোলনে আমেরিকার নাগরিকদের শান্তিপূর্ণ থাকা জরুরি।

এখন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এক ভয়ংকর হতাশাজনক সময়। কিন্তু এ–ও সত্য যে একজন স্বৈরাচারী শাসকের প্রতিষ্ঠা করা পুলিশি রাষ্ট্র উৎখাত করতে জনসংখ্যার মাত্র ৩ দশমিক ৫ শতাংশ প্রয়োজন।

রবার্ট রাইখ সাবেক মার্কিন শ্রমমন্ত্রী, ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, বার্কলেতে ইমেরিটাস অধ্যাপক

গার্ডিয়ান থেকে নেওয়া ইংরেজির অনুবাদ