প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও তাঁর কর্তৃত্ববাদী সরকার মিথ্যা বয়ান ছড়াচ্ছে। তারা বলছে, রাশিয়ার অর্থনীতি শক্তিশালী এবং পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞায় তাদের যুদ্ধযন্ত্রের কোনো ক্ষতি হয়নি। এই মিথ্যা অবশ্যই খণ্ডন করতে হবে। প্রকৃতপক্ষে, রাশিয়ার অর্থনীতির যে পতন হচ্ছে, এ রকম অনেকগুলো লক্ষণ দৃশ্যমান। নিষেধাজ্ঞা ও অন্যান্য পদক্ষেপে রাশিয়ার অর্থনীতিকে দুর্বল করার জন্য কার্যকর, কিন্তু তাদের জন্য আরও কিছু করার আছে। আমাদের অবশ্যই পুতিনের শাসনের ওপর চাপ বাড়াতে হবে এবং ইউক্রেনকে সমর্থন দিতে হবে।
ওয়াশিংটনে সম্প্রতি অনুষ্ঠেয় হয়ে যাওয়া ন্যাটো সম্মেলনে পশ্চিমা নেতারা ইউক্রেনের প্রতিরক্ষায় তাঁদের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন; কিন্তু ইউক্রেনের বিরুদ্ধ রাশিয়ার যুদ্ধ শুধু মাঠের সৈন্যরা লড়ছেন না। এটা তথ্যের যুদ্ধও। রাশিয়ার অর্থনীতি শক্তিশালী, এটা প্রচারে ও তথ্যযুদ্ধের কাজে ক্রেমলিন বছরে ১২০ কোটি ডলার ব্যয় করছে। পু
তিন ও তাঁর কর্তৃত্ববাদী সরকার আমাদের এই বিশ্বাস জন্মাতে চায় যে নিষেধাজ্ঞা এবং ইউক্রেনের মুক্তি ও গণতন্ত্র রক্ষায় যে সমর্থন, সেটা কোনো কাজ করছে না। সুতরাং ক্রেমলিন থেকে যেসব তথ্য আসছে, সেটা যথাযথ কি না, তা যাচাই করা রাজনীতিবিদ, গণমাধ্যম ও অর্থনৈতিক সংস্থার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
যুদ্ধে অর্থ জোগাতে পুতিন সরকার রাশিয়ার জাতীয় তহবিল থেকে সম্পদ নেওয়ার ফাঁদে আটকা পড়েছে। ব্লমবার্গের তথ্যমতে, ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রার আগ্রাসন শুরুর পর রাশিয়ার জাতীয় সম্পদের পরিমাণ অর্ধেকে নেমে এসেছে। ইউক্রেন আগ্রাসন চালিয়ে যাওয়ার জন্য দেশটির সরকার ভবিষ্যৎ সমৃদ্ধিকে জলাঞ্জলি দিচ্ছে।
রাশিয়ার মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি হতেই পারে। কিন্তু দেশটির অর্থনীতি ক্রমাগত যুদ্ধ-অর্থনীতিতে রূপান্তরিত হচ্ছে এবং বিপুল পরিমাণ প্রণোদনা জোগাতে হচ্ছে। এটা প্রবৃদ্ধির অন্তহীন উৎস নয়, স্থিতিশীল অর্থনীতির উৎসও নয়।
ক্রেমলিনের যুদ্ধ-অর্থনীতির উৎপাদন সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। বেকারত্ব এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে খবর পাওয়া যাচ্ছে, ভ্লাদিমির পুতিন জোরপূর্বক শ্রমের জন্য কারাদণ্ড প্রতিস্থাপনের অনুমোদন দিয়েছেন। একেবারে আঁটসাঁট মজুরির বাজার মজুরির ওপর ঊর্ধ্বমুখী চাপ সৃষ্টি করছে। রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক উচ্চ হারের সুদের হারের জন্য লড়াই করছে। তা সত্ত্বেও দুর্বল হতে থাকা রুবল আমদানির মূল্য বাড়িয়ে দিচ্ছে এবং ক্রমবর্ধমান উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে অবদান রাখছে।
যুদ্ধে অর্থ জোগাতে পুতিন সরকার রাশিয়ার জাতীয় তহবিল থেকে সম্পদ নেওয়ার ফাঁদে আটকা পড়েছে। ব্লমবার্গের তথ্যমতে, ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রার আগ্রাসন শুরুর পর রাশিয়ার জাতীয় সম্পদের পরিমাণ অর্ধেকে নেমে এসেছে। ইউক্রেন আগ্রাসন চালিয়ে যাওয়ার জন্য দেশটির সরকার ভবিষ্যৎ সমৃদ্ধিকে জলাঞ্জলি দিচ্ছে।
অর্থনীতির ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপের জন্য মস্কো চরম ধরনের বেশ কিছু নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে। অভ্যন্তরীণ সরবরাহ নিরাপদ রাখার জন্য চিনি ও পেট্রলের ওপর রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। বেসরকারি খাতের পুঁজি দেশ থেকে যেন বাইরে না যেতে পারে এবং রুবলের পতন ঠেকাতে পুঁজির ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে। এরপরও দেশটি থেকে শত শত কোটি মার্কিন ডলার বিদেশে চলে যাচ্ছে।
রাশিয়ার অনেক মানুষের কাছে ক্রেমলিনের যুদ্ধকালীন এই অর্থনৈতিক নীতি পুরোনো দিনের স্মৃতিতে ফিরিয়ে নিচ্ছে। পুঁজির নিয়ন্ত্রণ, রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা এবং যুদ্ধ শিল্পে বিশাল বিনিয়োগ অর্থনীতির নতুন নীতি নয়, বরং সোভিয়েত জামানার নিয়মকানুনে ফিরে যাওয়া। রাশিয়ার প্রবৃদ্ধির গল্প নিয়ে বড় একটা ভুল করা হচ্ছে। সত্য হচ্ছে, অর্থনীতিকে পুনরায় সোভিয়েতকরণ করা হচ্ছে।
যে গল্পটি রাশিয়া বলতে পছন্দ করবে না সেটা হলো, রাশিয়ার যুদ্ধ-অর্থনীতিকে লক্ষ্যবস্তু করে দেওয়া নিষেধাজ্ঞা কার্যকর ও প্রয়োজনীয়। রাশিয়ার পররাষ্ট্র বাণিজ্যের ভূগোল নতুন আকার দিয়েছে, যুদ্ধক্ষেত্রের উচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া বাণিজ্যের বাইরে অন্য বাণিজ্যের সুযোগ সীমিত হয়ে গেছে।
রাশিয়ার রাজস্ব বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ ও ২০২৩ সালের মধ্যে রাশিয়ার রপ্তানি থেকে রাজস্ব আয় এক-তৃতীয়াংশ কমে গেছে।
আর এখন যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তাতে রাজস্ব আয় আরও কমে যাবে। জুন মাসে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ১৪তম নিষেধাজ্ঞা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস ও রাশিয়ার ছদ্মবেশী জাহাজ, যেগুলো বিশ্বজুড়ে রাশিয়ার তেল বহন করছে, সেগুলোও রয়েছে।
এর মধ্যে জি-৭ সম্মেলনে নেতারা চীন যাতে নিষেধাজ্ঞাকে বিভ্রান্ত করে রাশিয়াকে সহযোগিতা করতে না পারে, এ জন্য পদক্ষেপ নিয়েছে। ইউক্রেনকে ৫০ বিলিয়ন ডলার ঋণসহায়তা দিতে সম্মত হয়েছে। এই পদক্ষেপ নিশ্চিতভাবেই রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সম্পদ থেকে ভবিষ্যতে রাজস্ব আহরণ করা কঠিন করে তুলবে। এগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
যাহোক, রাশিয়াকে ঠেকাতে ও ইউক্রেনকে সমর্থন জোগাতে আরও পদক্ষেপ দরকার।
এরই মধ্যে ইউক্রেনের জন্য যে সমর্থন দেওয়া হচ্ছে, সেটা অব্যাহত রাখা দরকার। কিয়েভকে অবশ্যই আরও অস্ত্র ও গোলাবারুদ দেওয়া দরকার। আমরা সব দেশ, ইউক্রেনকে সামরিক ও আর্থিক—দুই দিক থেকেই উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সমর্থন দিয়ে চলেছি। আর যত দিন পর্যন্ত দরকার, তত দিন আমরা সেটা করে যাব।
কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ খাত, যেমন জ্বালানি, প্রযুক্তি ও আর্থিক খাতে নিষেধাজ্ঞা জোরালো করা দরকার। সীমান্তদেশ ও উৎসদেশ—সবাইকে একটা জায়গায় আসতে হবে, যাতে রাশিয়ার যুদ্ধযন্ত্র সচল থাকে, এমন পণ্য মস্কোয় না পৌঁছাতে পারে।
এলিজাবেথ সুভান্তেসুন সুইডেনের অর্থমন্ত্রী
স্টেফানি লুজ ডেনমার্কের অর্থমন্ত্রী
মার্ক ভর্কলিয়েভ এস্তোনিয়ার অর্থমন্ত্রী
রিকা পুরা ফিনল্যান্ডের অর্থমন্ত্রী
জিনতারে স্কাইস্তে লিথুনিয়ার অর্থমন্ত্রী
ইলকো হাইনেন নেদারল্যান্ডসের অর্থমন্ত্রী
আন্দ্রে দমাস্কি পোল্যান্ডের অর্থমন্ত্রী
দ্য গার্ডিয়ান থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে সংক্ষিপ্তাকারে অনূদিত