অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্পের জন্য ভূমি অধিগ্রহণের আগে অনেক সময় প্রস্তাবিত প্রকল্প এলাকায় নানা ধরনের স্থাপনা নির্মাণের হিড়িক পড়ে যায়। অব্যবহৃত জমির চেয়ে ব্যবহৃত জমি অধিগ্রহণে ক্ষতিপূরণের টাকা বেশি পাওয়া যায় বলে দালাল চক্র এ ধরনের কাজে লিপ্ত হয়। ফলে ভূমি অধিগ্রহণ বাবদ খরচ বেড়ে যায়, আর জনগণের করের টাকার অপচয় ঘটে। সরকারের দায়িত্ব হলো প্রকল্পের কাজ এমনভাবে শুরু করা, যেন দালাল চক্র ভূমি অধিগ্রহণের আগেই জমির দাম বাড়িয়ে নেওয়ার সুযোগ না নিতে পারে।
কিন্তু সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা যদি তার বদলে নিজেরাই ভূমি অধিগ্রহণের আগে জমি কিনে জমির দাম বাড়িয়ে প্রকল্প ব্যয় বাড়াতে থাকে, তাহলে সেটা গুরুতর অপরাধ। প্রকল্পের পরিকল্পনায় শুরু থেকেই যুক্ত থাকার কারণে সরকারের মন্ত্রী কিংবা আমলাদের পক্ষে সম্ভাব্য ভূমি অধিগ্রহণের তথ্য সবার আগে জানা সম্ভব। ফলে এখানে স্বার্থের দ্বন্দ্ব তৈরি হওয়ার ঝুঁকি থাকে। এ রকমই এক গুরুতর স্বার্থের দ্বন্দ্বের অভিযোগ জানা গেল সম্প্রতি প্রথম আলোয় প্রকাশিত এক সংবাদ থেকে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে সরকারি ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এসেনশিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেডের (ইডিসিএল) কারখানার জন্য ৩১ একর জমি অধিগ্রহণ করা হবে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার জাগীর ইউনিয়নের মেঘশিমুল এলাকা থেকে। প্রকল্প পাসের আগেই স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহেদ মালেক ও তাঁর আত্মীয়স্বজন ওই এলাকার জমি কিনে নিয়ে শ্রেণি পরিবর্তন এবং তারপর সে জমি অন্যের নামে হস্তান্তর ও মূল্যবৃদ্ধির কার্যক্রমে লিপ্ত হয়েছেন বলে প্রথম আলোয় সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে, যা স্বার্থের দ্বন্দ্ব ও ক্ষমতার অপব্যবহারের দৃষ্টান্ত।
৩১ একর জমির মধ্যে ২০ একর ৬৫ শতাংশ জমিই কিনেছেন মন্ত্রী, তাঁর ছেলে ও মেয়ে। কেনার পর এই সব জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে একলাফে জমির মূল্য (মৌজা দর) পাঁচ গুণ বৃদ্ধি করা হয়। তারপর স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও তাঁর ছেলেমেয়েরা এসব জমি বর্ধিত দরে ঘনিষ্ঠজনদের নামে দান বা বিক্রি করেছেন।
ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ার শুরুতে জেলা ভূমি ব্যবস্থাপনা কমিটির মূল্যায়নে বিষয়টি উঠে এলে কমিটির সভাপতি মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আবদুল লতিফ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে জানান, প্রস্তাবিত ওই মৌজায় প্রকল্প বাস্তবায়ন করলে সরকারের প্রায় ১০০ কোটি টাকা বেশি খরচ হবে। (সরকারি প্রকল্পে অধিগ্রহণের আগেই জমি কিনে নেন মন্ত্রী ও তাঁর ছেলেমেয়ে, প্রথম আলো, ৫ জুলাই ২০২৩)
স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে, সেটি গুরুতর। এ ধরনের অভিযোগ উঠলে বিশ্বের অন্য যেকোনো দেশের মন্ত্রীদের সাধারণত পদত্যাগ করতে হয়। স্বাস্থ্যমন্ত্রী যেহেতু এ অভিযোগ অস্বীকার করছেন, সরকারের ন্যূনতম দায়িত্ব ছিল এই অভিযোগ বিষয়ে বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত করে জনগণের সামনে তা উন্মুক্ত করা এবং তদন্তের ফলাফল অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া।
কিন্তু ৫ জুলাই সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর এখন পর্যন্ত এ ধরনের কোনো তদন্তের কথা জানা যায়নি। বরং ৮ জুলাই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে বিভিন্ন পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রতিবাদ জানানো হয় এবং জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য পত্রিকায় পরিবেশন করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও তাঁর পরিবারের সম্মানহানির অভিযোগ আনা হয়।
এরপর ১০ জুলাই জমি কিনে নিয়ে দাম বাড়ানোর কারসাজি বিষয়ে অভিযোগ তোলা মানিকগঞ্জের সেই জেলা প্রশাসক (ডিসি) মুহাম্মদ আবদুল লতিফকে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে (ইআরডি) বদলি করা হয়। (সরিয়ে দেওয়া হলো মানিকগঞ্জের ডিসিকে, প্রথম আলো, ১০ জুলাই ২০২৩)
এমনিতে স্বাস্থ্য খাতে বিভিন্ন কেনাকাটা ও নিয়োগ বিষয়ে দুর্নীতির শেষ নেই। স্বাস্থ্য খাতে শীর্ষ থেকে নিচ পর্যন্ত দুর্নীতি রয়েছে বলে সম্প্রতি মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট। (স্বাস্থ্য খাতে শীর্ষ থেকে নিচ পর্যন্ত দুর্নীতি: হাইকোর্ট, ডেইলি স্টার অনলাইন, ৯ মে ২০২৩) টিআইবির গবেষণা অনুসারে, করোনা মহামারির সময় এই দুর্নীতি রীতিমতো মহোৎসবে পরিণত হয়েছিল।
মাস্ক কেলেঙ্কারি, কোভিড টেস্ট নিয়ে জালিয়াতি, জেকেজি আর রিজেন্ট হাসপাতালের জালিয়াতি, স্বাস্থ্য খাতে ১ হাজার ৮০০ জনবল নিয়োগে কোটি টাকা ঘুষের প্রস্তাব, শত শত কোটি টাকার কেনাকাটায় অনিয়ম ও দুর্নীতির খবর বারবার সংবাদ শিরোনাম হয়েছে (করোনাভাইরাস মহামারিকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতির মহোৎসব, বলছে টিআইবি, বিবিসি বাংলা, ১৯ মে ২০২১)।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রধান হিসেবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী এসবের দায় এড়াতে পারেন না। আর খোদ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধেই যদি স্বার্থের দ্বন্দ্ব ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ ওঠে, তাহলে তিনি কী করে স্বাস্থ্য খাতকে দুর্নীতিমুক্ত করবেন! আগাম জমি কেনা বিষয়ে কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট বা স্বার্থের দ্বন্দ্ব ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে যেখানে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে বিচার করা প্রয়োজন ছিল, সেখানে উল্টো কারসাজির ঘটনা ফাঁস করে দেওয়া ডিসির বদলির ঘটনায় দুর্নীতি দমন বিষয়ে সরকারের আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠা এবং সেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া জেলা প্রশাসকের বদলির ঘটনা অবশ্য এবারই প্রথম নয়। এর আগে ২০২২ সালের জানুয়ারিতে চাঁদপুরে সরকারি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য ভূমি অধিগ্রহণের আগেই সেখানকার সাড়ে ৬২ একর জমি মৌজা দরের চেয়ে ২০ গুণ বেশি দাম দেখিয়ে দলিল করে নেওয়ার অভিযোগ ওঠে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিতদের বিরুদ্ধে।
প্রথম আলোর সংবাদ থেকে দেখা যায়, এ বিষয়ে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে দেওয়া প্রতিবেদনে এ ঘটনাকে ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ উল্লেখ করে এই ‘চরম অস্বাভাবিকভাবে বেশি’ দামে ভূমি অধিগ্রহণ করলে সরকারের ৩৫৯ কোটি ১৬ লাখ টাকা ক্ষতির আশঙ্কা করেন। আরও অভিযোগ হলো, কাউকে নামমাত্র দাম দিয়ে আর কাউকে জমি অধিগ্রহণের টাকা হাতে পেলে জমির দাম পরিশোধের আশ্বাস দিয়ে স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে এসব জমি নেওয়া হয় অনেকটা জোর করে।
পরবর্তী সময়ে সেসব জমিই প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নির্বাচন করে এবং জেলা প্রশাসনকে অধিগ্রহণের জন্য বলে। (মন্ত্রী-ঘনিষ্ঠদের দুর্নীতির জাল, প্রথম আলো, ২৭ জানুয়ারি ২০২২)
সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে বছরজুড়ে বিভিন্ন প্রকল্পে নানা ধরনের দুর্নীতির অভিযোগ আসা আর মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে থাকা ব্যক্তিটির বিরুদ্ধে দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আসা এক নয়। নেতৃত্ব দুর্নীতিমুক্ত না থাকলে তাঁর অধীন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্নীতি প্রতিরোধ করা যায় না।
এ ছাড়া শিক্ষামন্ত্রীর ভাই জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি জাওয়াদুর রহিম ওয়াদুদ ওরফে টিপুসহ বেশ কয়েক নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে ভুয়া দলিলের মাধ্যমে ৪৮ একরের বেশি খাসজমি দখল করার সংবাদ প্রথম আলোয় প্রকাশিত হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রীর সংসদীয় আসন চাঁদপুর-৩-এর হাইমচর উপজেলার ৪ নম্বর নীলকমল ইউনিয়নের বাহেরচরের এই খাসজমি প্রতি শতাংশ মাত্র ৪৬৫ টাকা দরে দলিল করে সেখানে মাছের ঘের, গবাদিপশুর খামার ও সবজিবাগান গড়ে তোলা হয় এবং ওই এলাকার নাম বদলে ‘টিপুনগর’ করা হয়। (চাঁদপুরে খাসজমিতে ‘টিপুনগর’, প্রথম আলো, ২৫ মার্চ ২০২২)
মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠদের এই জমি দখল ও কারসাজি বিষয়ে কোনো তদন্ত বা বিচার তো হয়ইনি, উল্টো এসবের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিসকে ২০২২ সালের মে মাসে নেত্রকোনার ডিসি হিসেবে বদলি করা হয়। (শিক্ষামন্ত্রীর ভাইয়ের বিরুদ্ধে মামলা করা সেই ডিসি বদলি, প্রথম আলো, ১৯ মে ২০২২)
সরকারের মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিককালে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত আরও কিছু সুনির্দিষ্ট অভিযোগের খবর দেখা যাক। মৌলভীবাজার-১ আসনের সংসদ সদস্য এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন কর্তৃক মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ায় দুবাই থেকে অবৈধভাবে আনা সোনা উদ্ধারে পুলিশকে দিয়ে এক যুবককে ধরে থানায় এনে পেটানোর ক্ষেত্রে সোনা চোরাকারবারি চক্রের নেতাকে সহায়তার অভিযোগ প্রকাশিত হয়েছে প্রথম আলোয়। (পুলিশকে ফোন দেওয়া সেই ভিআইপি ছিলেন মন্ত্রী, প্রথম আলো, ২৪ মার্চ ২০২৩)
এ বছরের জানুয়ারিতে দৈনিক কালবেলায় সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের বিরুদ্ধে সমাজসেবা অধিদপ্তরের সমাজকর্মী (ইউনিয়ন) পদে পছন্দের প্রার্থীদের নিয়োগ দিতে বিভাগীয় নির্বাচন কমিটিকে চাপ দেওয়ার অভিযোগ প্রকাশিত হয়েছে। (সমাজকল্যাণ মন্ত্রীর ইচ্ছাপূরণের ‘ছক’, কালবেলা, ১৮ জুন ২০২৩)
এর আগে ২০২২ সালের নভেম্বরে প্রথম আলোয় সমাজকল্যাণমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠদের বিরুদ্ধে ভুয়া রোগী বানিয়ে জটিল ছয় রোগের চিকিৎসাসহায়তার জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ আত্মসাতের সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। (ভুয়া রোগী বানিয়ে অর্থ আত্মসাতে মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠরা, প্রথম আলো, ৩০ নভেম্বর ২০২২)
অভিযোগ উঠলেই যেমন সেটাকে শতভাগ সত্য বলে ধরে নেওয়া যায় না, অভিযোগ ওঠার পর বিশ্বাসযোগ্য ও নিরপেক্ষ তদন্তে নির্দোষ প্রমাণিত হওয়ার আগপর্যন্ত অভিযোগ থেকে দায়মুক্তিও পাওয়া যায় না।
এ কারণে ক্ষমতাসীন সরকারের কোনো মন্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ উঠলে সরকারের ন্যূনতম দায়িত্ব হলো এসব অভিযোগ বিষয়ে বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত করে জনগণের সামনে তা উন্মুক্ত করা এবং তদন্তের ফলাফল অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষমতাসীনদের মধ্যে এ ধরনের কোনো চর্চা দেখা যায় না, যেন সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা সব ধরনের আইনকানুন ও জবাবদিহির ঊর্ধ্বে।
সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে বছরজুড়ে বিভিন্ন প্রকল্পে নানা ধরনের দুর্নীতির অভিযোগ আসা আর মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে থাকা ব্যক্তিটির বিরুদ্ধে দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আসা এক নয়। নেতৃত্ব দুর্নীতিমুক্ত না থাকলে তাঁর অধীন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্নীতি প্রতিরোধ করা যায় না।
সরকারের একেকটি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে দৈনন্দিন পরিচালনা ও উন্নয়ন প্রকল্প বাবদ প্রতিবছর হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ হয়। মন্ত্রণালয়ের প্রধান হিসেবে জনগণের করের টাকার সর্বোচ্চ ব্যবহার এবং চুরি-দুর্নীতি প্রতিহত করার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর ওপরই বর্তায়।
এখন যে মন্ত্রীর দায়িত্ব জনগণের সম্পদের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা, তার বিরুদ্ধেই যদি অনিয়ম-দুর্নীতি করা বা প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ ওঠে, তাহলে তাঁর আর সেই দায়িত্বে থাকার নৈতিক অধিকার থাকে না। এ কারণে বিশ্বের দেশে দেশে ক্ষমতাসীন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে পদত্যাগ করাই প্রথা।
এ বছরেরই কিছু দৃষ্টান্ত দেখা যাক: এ বছরের জানুয়ারি মাসে মন্ত্রী ও কর্মকর্তাদের দুর্নীতির দায় নিয়ে পদত্যাগ করেন ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্ট গুয়েন জুয়ান, দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় পদত্যাগ করেন পাঞ্জাবের উদ্যানপালনমন্ত্রী ফৌজা সিং সারারি, দুর্নীতির অভিযোগে ফেব্রুয়ারি মাসে দিল্লির উপমুখ্যমন্ত্রী তথা অর্থমন্ত্রী মণীশ সিসোদিয়া এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রী সতেন্দ্র জৈন ও ইকুয়েডরের কৃষিমন্ত্রী বার্নার্ডো মানজানো এবং মার্চে ভেনেজুয়েলার তেলমন্ত্রী তারেক এল আইসামি পদত্যাগ করেন। তাঁদের কেউ স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন, কেউ পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন।
বাংলাদেশে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান ও বিভাগের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অসংখ্য অভিযোগ উঠলেও এর জন্য দায় নিয়ে কোনো মন্ত্রীর স্বেচ্ছায় বা বাধ্য হয়ে পদত্যাগ করার কোনো সংস্কৃতি নেই। সরকারের দিক থেকেও দুর্নীতির জন্য দায়ী মন্ত্রী-এমপিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের কোনো তাগিদ দেখা যায় না।
আসলে কোনো দেশের সরকারের ক্ষমতায় থাকার জন্য যদি জনমতকে তোয়াক্কা করতে না হয়, তাহলে সেই সরকারের জনস্বার্থ রক্ষার কোনো তাগিদ থাকে না। মন্ত্রী ও তাঁর স্বজনদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ওঠার পরেও কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ার নজির এ রকম একটা বাস্তবতাকেই তুলে ধরে।
কল্লোল মোস্তফা বিদ্যুৎ, জ্বালানি, পরিবেশ ও উন্নয়ন অর্থনীতিবিষয়ক লেখক। প্রকাশিত গ্রন্থ: বাংলাদেশে উন্নয়নের রাজনৈতিক অর্থনীতি, ডিজিটাল কর্তৃত্ববাদ, নজরদারি পুঁজিবাদ ও মানুষের স্বাধীন ইচ্ছার ভবিষ্যৎ। ই-মেইল: [email protected]