কলেজগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন আনা কতটা বাস্তবসম্মত?

সরকারি কলেজগুলোকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করার একটি প্রস্তাব নিয়ে সম্প্রতি আলোচনা শুরু হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নতুন এই ব্যবস্থার জন্য কতটা প্রস্তুত? এ ক্ষেত্রে কী কী সীমাবদ্ধতা রয়েছে? এই লেখায় সেই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজেছেন শহীদুল জাহীদ

বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষাব্যবস্থায় বড় রকমের সংস্কার নিয়ে আলোচনা চলছে। সংস্কার প্রস্তাবটি হলো দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের কলেজগুলোকে সংশ্লিষ্ট জেলা ও বিভাগীয় শহরে অবস্থিত প্রধানতম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নিয়ে আসা। বলা বাহুল্য, ঢাকার কয়েকটি কলেজ ছাড়া এসব কলেজ এখন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হিসেবে তাদের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।

সংস্কার প্রস্তাবটি নিয়ে সম্প্রতি শিক্ষামন্ত্রী পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন বলে সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে। শিগগিরই এ বিষয়ে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে কার্যকরী নির্দেশনা আসবে বলে শোনা যাচ্ছে।

সংস্কার প্রস্তাবটি বাস্তবায়ন করা হলে এ দেশের উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে সম্ভাব্য কী ফল এবং প্রতিক্রিয়া হতে পারে, তা নিয়ে সংশ্লিষ্ট মহলে রয়েছে নানা প্রশ্ন। এ রকম বাস্তবতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে উচ্চশিক্ষার ধরন এবং বাংলাদেশে সংস্কার বাস্তবায়নের কার্যকারিতা ও সম্ভাব্য ফলাফল বিশ্লেষণ করা হয়েছে এই প্রবন্ধে।

সংস্কার প্রস্তাবটি কি ‘নতুন’

সংস্কার প্রস্তাবটি নতুন করে আলোচনায় এলেও বিষয়টি একেবারে নতুন নয়। ১৯৯২ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আগে এ দেশে এ ধরনের ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল। সে সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অনেক অনার্স ও ডিগ্রি কলেজ অধিভুক্ত ছিল।

ওই সময় এসব বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত কলেজগুলোর পরীক্ষা পরিচালনা, ফলাফল প্রকাশ এবং সনদও প্রদান করত। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বতন্ত্র কলেজ পরিদর্শন বিভাগ ছিল এবং কলেজ পরিদর্শক হিসেবে জনবলও নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নিজস্ব আঙ্গিকে পাঠদানের পাশাপাশি অধিভুক্ত কলেজের শিক্ষার মানোন্নয়ন এবং নিয়ন্ত্রণের প্রক্রিয়াটি মূলত ব্রিটিশ ধাঁচের শিক্ষাব্যবস্থায় বেশি দেখা যায়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় ব্রিটেনের নামকরা অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বহু অধিভুক্ত কলেজ রয়েছে।

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় তাদের নিজস্ব গবেষণা, ডিগ্রি প্রদানের পাশাপাশি অধিভুক্ত কলেজ ও ইনস্টিটিউটগুলোর শিক্ষাব্যবস্থার সামগ্রিক উন্নয়নে ভূমিকা পালন করে থাকে। ব্রিটিশ আমলে প্রতিষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও প্রায় একই ধরনের মডেল চালু ছিল। পরে আরও কিছু বিশ্ববিদ্যালয় এটা অনুসরণ করেছিল।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও শিক্ষা বিস্তারের প্রয়োজনে বাংলাদেশে বহু কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। স্বাধীনতার আগে, এমনকি নিকট অতীতেও এ দেশে প্রতিষ্ঠিত কলেজগুলো দুই ভাগে বিভক্ত ছিল। এগুলো হলো ডিগ্রি ও অনার্স কলেজ। একটা সময় ডিগ্রি কলেজগুলো খুব জনপ্রিয়ও ছিল। তুলনামূলক সহজ সিলেবাস এবং পাস করতে কম সময় লাগার কারণে অনেকেই উচ্চশিক্ষার প্রথম ধাপ হিসেবে ডিগ্রি (পাস) কোর্সকেই বেছে নিতেন।

কলেজের সংখ্যার ক্রমাগত বৃদ্ধির কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে নিজস্ব শিক্ষাক্রম ঠিক রেখে অধিভুক্ত কলেজগুলোর দেখভাল করা কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এমন পরিপ্রেক্ষিতেই বাংলাদেশে কলেজগুলোর মানোন্নয়ন এবং নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ ও স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয়েছিল।

বলা বাহুল্য, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বর্তমানে ২ হাজার ২৫৭টি অধিভুক্ত কলেজ রয়েছে। এসব কলেজের ডিগ্রি ও অনার্স প্রোগ্রাম পরিচালনা, পরীক্ষা গ্রহণ, ফলাফল প্রকাশের পাশাপাশি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ক্যাম্পাসে আন্ডারগ্র্যাজুয়েট, গ্র্যাজুয়েট, এমফিল এবং পিএইচডি প্রোগ্রামও চালু রয়েছে।

আরও পড়ুন

বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষা

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) তথ্যমতে, বাংলাদেশে বর্তমানে ৫৫টি পাবলিক, ১১৪টি বেসরকারি এবং ৩টি আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও জাহাঙ্গীরনগর—চারটি বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশ দ্বারা পরিচালিত অর্থাৎ স্বায়ত্তশাসিত। অন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিভিন্ন সময়ে সংসদে পাস হওয়া আইনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত হচ্ছে।

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে আবার সাধারণ এবং বিশেষায়িত এ রকম ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম বা জাহাঙ্গীরনগর হলো সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়। অপর দিকে শাহজালাল, নোয়াখালী, পটুয়াখালী, টাঙ্গাইল ইত্যাদি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে।

এসবের পাশাপাশি রয়েছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। যেমন বুয়েট, ডুয়েট, রুয়েট ইত্যাদি। এ ছাড়া রয়েছে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ও। যেমন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল ইউনিভার্সিটি (বিএসএমএমইউ)।

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একটি উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে, এদের কোনোটির বয়স শতবর্ষ, আবার কোনো কোনোটি একেবারেই নতুন। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এ দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বৃহৎ ও বৈচিত্র্যপূর্ণ নয়। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মূলত বাজারের চাহিদা অনুযায়ী বিভাগ খোলে এবং শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকসংখ্যা, বিভিন্ন বিভাগ এবং বিষয় বা প্রোগ্রামের বৈচিত্র্য, জাতীয়-আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অবদান, বাজেট, ভৌত অবকাঠামো প্রভৃতি ক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূমিকার পার্থক্য রয়েছে।

সাত কলেজের অধিভুক্তির অভিজ্ঞতা

ঢাকা শহরে অবস্থিত সাতটি বড় ও ঐতিহ্যবাহী কলেজকে ২০১৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়। এসব কলেজ আগে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে তাদের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্তির পর বিভিন্ন মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ করা যায়। সংশ্লিষ্ট কলেজে অধ্যয়নরত ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে অধিভুক্তির ব্যাপারে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা কিছুটা হতাশ হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের হতাশার বিষয়টি অর্থনীতির সূত্র দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায়। এটা হলো, অধিভুক্ত কলেজের গ্র্যাজুয়েটরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেট পাবেন। আর এতে চাকরির বাজারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের জন্য প্রতিযোগিতার মাত্রা আর একটু তীব্রতর হবে।

অন্যদিকে ফলাফল প্রকাশে বিলম্ব ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকেন্দ্রিক বিচরণ নিয়ে অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ-বিক্ষোভ লক্ষ করা যায়। এসব কলেজের শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে এসে তাঁদের দাবি-দাওয়া জানান। তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থীকে তা প্রতিহত করতে দেখা গেছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে সহিংসতার ঘটনাও ঘটেছে।

সাত কলেজের অধিভুক্তির কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীদের কাজের পরিধি অনেক গুণ বেড়ে যায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের সরাসরি পাঠদান করেন না। কিন্তু ভর্তি কার্যক্রম থেকে শুরু করে পরীক্ষা কমিটি গঠন, প্রশ্নপত্র প্রণয়ন, পরীক্ষা গ্রহণ ও ফলাফল প্রকাশের দায়িত্ব তাঁরা পালন করেন।

এসব কাজের ক্ষেত্রে অবধারিতভাবেই বেশ কিছু জটিলতা চলে আসে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে সিলেবাসের ভিন্নতা এবং নিজস্ব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা কার্যক্রম ও গবেষণায় সময় দেওয়ার মতো বিষয়গুলো।

একইভাবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনেরও কাজের পরিধি এবং চাপ বেড়ে যায়। এতে ফলাফল প্রকাশ, মার্কশিট, ফলাফলের মানোন্নয়ন ইত্যাদির ক্ষেত্রে কখনো কখনো বিলম্ব হয়। সাত কলেজের দায়িত্ব পালনে কিছুটা আর্থিক সুবিধা পেলেও কাজের চাপ বেড়ে যাওয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও প্রশাসনের মধ্যে বিষয়টি মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ করা গেছে।

অপর দিকে সাত কলেজে কর্মরত শিক্ষকেরা বিসিএস ক্যাডার। তাঁদের জন্য ভিন্ন নীতিমালা প্রযোজ্য। অনেক কলেজে শিক্ষক-স্বল্পতা আছে। অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার বিবেচনায় অনেক ক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে তাঁদের সমন্বয়ের জটিলতায়ও পড়তে হয়।

বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে বহির্বিশ্বের ধারণা

বহুল প্রচলিত একটি কথা ছিল, গবেষণার প্রয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয় আর ডিগ্রির প্রয়োজনে কলেজ। তবে কালের পরিক্রমায় এই কথা আর প্রযোজ্য নয়। বিশ্বব্যাপী এখন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গবেষণার পাশাপাশি ডিগ্রিও দিয়ে থাকে।

সারা বিশ্বের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে মূলত দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। প্রথমত, গবেষণা বিশ্ববিদ্যালয় এবং দ্বিতীয়ত, ডিগ্রি বিশ্ববিদ্যালয়। আবার প্রাচ্য তো বটেই পাশ্চাত্যেও অনেক বিশ্ববিদ্যালয় আছে, যারা একই সঙ্গে গবেষণাকর্ম সম্পাদনের পাশাপাশি ডিগ্রিও দিয়ে থাকে। সে অর্থে এসব বিশ্ববিদ্যালয়কে গবেষণা ও ডিগ্রির ‘মিশ্র’ বিশ্ববিদ্যালয় বলা যায়।

উন্নত দেশগুলোর বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের দেশের মতো এত বেশিসংখ্যক শিক্ষার্থী ভর্তি হন না। বাস্তবতা হলো উন্নত অর্থনীতির দেশে খুব বেশি শিক্ষার্থী পোস্টগ্র্যাজুয়েট (স্নাতকোত্তর) পর্যায়ে পড়ালেখা করেন না। আন্ডারগ্র্যাজুয়েট (স্নাতক) পাস করে অর্থাৎ গ্র্যাজুয়েট হয়ে তাঁরা কর্মক্ষেত্রে চলে যান।

খুব অল্পসংখ্যক ছাত্রছাত্রী পোস্টগ্র্যাজুয়েট পর্যায়ে পড়ালেখা এবং গবেষণা করে থাকেন। চাকরি বা কাজের প্রয়োজনে যে পড়াশোনা, তা কলেজ অথবা বিশ্ববিদ্যালয় যেকোনো স্থান থেকেই করা যায়। যেমন ইংরেজি সাহিত্যে অনার্স তা কলেজ অথবা বিশ্ববিদ্যালয় যেখান থেকেই হোক না কেন, তাতে মানের ক্ষেত্রে খুব তারতম্য হয় না।

উন্নত দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মূলত জ্ঞান সৃষ্টিতে অবদান রাখে। বিজ্ঞানের অনন্য সব আবিষ্কার, সংস্কৃতির পরিচর্যা, বাণিজ্যের প্রসার ও সহজীকরণ ইত্যাদি বিষয়ে মৌলিক গবেষণা পরিচালনা হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখ্য উদ্দেশ্য। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের সফলতা পরিমাপ করা হয় তাদের গবেষণা ও তার মান, জ্ঞান-বিজ্ঞানে উৎকর্ষ ও আবিষ্কার, বিজ্ঞান ও বাণিজ্যের সংমিশ্রণে ভূমিকা, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিস্তার, যোগাযোগ ও শিল্পের উন্নয়ন এমনকি আন্তর্জাতিক বিভিন্ন পুরস্কারের মাধ্যমে।

অধিভুক্তি নিয়ে যে প্রশ্নগুলো রয়েছে

বাংলাদেশের বিভিন্ন বিভাগ তো বটেই, জেলা পর্যায়েও অনেক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। অনেক জেলায় একাধিক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় আছে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ একেবারে নতুন।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় ভৌত অবকাঠামো অপ্রতুল। শিক্ষার্থীদের আবাসন, পরিবহন ও যোগাযোগ ইত্যাদি সুবিধার পাশাপাশি ব্যবহারিক তথা গবেষণাগার সুবিধা টেকসই পর্যায়ে পৌঁছায়নি। সবচেয়ে বড় অসুবিধা হলো নতুন প্রতিষ্ঠিত অনেক বিশ্ববিদ্যালয় দক্ষ জনবলের অভাবে ধুঁকছে।

বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে দক্ষ জনবল একদিনে তৈরি হয় না। দক্ষ জনবল তৈরিতে বছরের পর বছর সময় লাগে। শিক্ষকদের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা, প্রশাসনের দক্ষতা এবং মানসিকতার উন্নতি একটি ধারাবাহিক চর্চা ও অনুশীলনের বিষয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত দক্ষ জনবল সৃষ্টির জন্য শিক্ষকদের নানাভাবে উৎসাহিত করা। এভাবে একটি বিশ্ববিদ্যালয় জ্ঞান তৈরির জন্য প্রস্তুত হয়।

বাংলাদেশে বিভিন্ন জেলা এবং বিভাগীয় পর্যায়ে অনেক প্রাচীন এবং ঐতিহ্যবাহী কলেজ রয়েছে। ঢাকায় যেমন ঢাকা কলেজ, অনুরূপভাবে রাজশাহীর রাজশাহী কলেজ, বরিশালের বিএম কলেজ, সিলেটের এমসি কলেজ, বগুড়ার আজিজুল হক কলেজ, রংপুরের কারমাইকেল কলেজ, খুলনার বিএল কলেজ, চট্টগ্রামের চট্টগ্রাম কলেজ উল্লেখযোগ্য। এসব কলেজের অধিকাংশই শতাব্দীপ্রাচীন।

এসব কলেজের ক্যাম্পাস ও ভৌত অবকাঠামো নজরকাড়ার মতোই। এসব কলেজ থেকে পাস করা শিক্ষার্থীরা দেশে-বিদেশে সুনামের সঙ্গে কাজ করছেন। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো এসব কলেজের শিক্ষকদের অভিজ্ঞতার বিষয়টি।

এসব কলেজের সঙ্গে নতুন প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভৌত অবকাঠামো, শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা এবং তাঁদের মান নিয়েও সুস্পষ্ট ব্যবধান রয়েছে। শতাব্দীপ্রাচীন এসব কলেজের কোথাও কোথাও ৬০ জন অধ্যাপক থাকলেও একই বিভাগ বা জেলায় নতুন প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ে হয়তো ছয়জনও অধ্যাপক নেই। এমন অপ্রতুল অবকাঠামোর বিশ্ববিদ্যালয়ে কলেজগুলোর অধিভুক্তি কতটা ফলপ্রসূ হবে, তা ভেবে দেখা দরকার।

সাত কলেজের অধিভুক্তির মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। ক্ষেত্রবিশেষে কিছু কিছু চ্যালেঞ্জ কাটিয়েও উঠেছে। তিন-চারটি ছাড়া বাকি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কি সেই সক্ষমতা আছে?

কলেজগুলোর অধিভুক্তির পর বিরূপ পরিস্থিতি তৈরি হলে ওই সব বিশ্ববিদ্যালয় কীভাবে তা মোকাবিলা করবে? পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকাই বা কী হবে? উচ্চশিক্ষার সামগ্রিক মান নিয়ন্ত্রণ করবে কোন প্রতিষ্ঠান?

উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থায় সংস্কার ও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের কলেজগুলোকে সংশ্লিষ্ট জেলা ও বিভাগীয় শহরের প্রধানতম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নিয়ে আসার আগে এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করতে হবে।

  • শহীদুল জাহীদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স বিভাগের অধ্যাপক