পথহারা দুনিয়ায় আদর্শ পররাষ্ট্রনীতির পাঠ!

ঘটনাস্থলের ভৌগোলিক দূরত্ব যা-ই হোক, গাজায় ইসরায়েলি বর্বরতা, মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার প্রলম্বিত গৃহযুদ্ধ, মধ্য এশিয়ার রাজনৈতিক ডামাডোল, দক্ষিণ চীন সাগরে বিরোধ বা ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধ থেকে কার্যত মোটেও দূরে নয় বাংলাদেশ।

পণ্য পরিবহন ব্যয়, খাদ্য মূল্যস্ফীতি ও মুদ্রা বিনিময় হার থেকে শুরু করে সোমালি জলদস্যুদের বাংলাদেশি জাহাজ ছিনতাই, সাগরপথে বিদেশযাত্রা ও বাংলাদেশের প্রতি বৃহৎ শক্তিগুলোর সন্দেহজনক আচরণের মধ্যে আমরা এসব আন্তরাষ্ট্রীয় সংকট ও সংঘাতের অভিঘাত দেখতে পাই।  

ঢাকার উদ্যোগে গঠিত দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা সার্কের অঘোষিত মৃত্যুর পর বহুপক্ষীয় কূটনীতিহীন এক অঞ্চলে বাস করছি আমরা। সেই পরিবেশে যুক্ত হয়েছে ভারত মহাসাগরকে ঘিরে পরাশক্তিদের, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের আর্থ–সামরিক প্রতিযোগিতা।

দক্ষিণ, দক্ষিণ-পূর্ব এবং পূর্ব এশিয়ার এ অঞ্চলই শিল্পোৎপাদন, জনশক্তি ও বাজারের আকৃতিতে সভ্যতার সর্বসাম্প্রতিক ভরকেন্দ্র। তাই এর সম্ভাবনা ও ঝুঁকি কোনোটির বাইরে থাকার অবকাশ নেই আমাদের।

জনসংখ্যার বিচারে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের অর্ধেক, রাশিয়ার চেয়ে বৃহদাকার। সমুদ্রে প্রবেশের আশীর্বাদপুষ্ট এই দেশের অনাগত ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব বাংলাদেশকে ক্ষুদ্র রাষ্ট্র ভাবার হীনম্মন্যতায় না-ও ভুগতে পারে।

অবশ্য বড় হতে চাইলে যে কাউকে স্বাধীন সত্তা হিসেবে ভূমিকা পালন এবং পারিপার্শ্বিক চাপ ও উত্তাপ সহ্য করতে হয়। যুদ্ধের মধ্য দিয়ে সৃষ্ট এ দেশ অধিক শান্তিপ্রিয় হবে, সেটিই সংগত। কিন্তু স্থিতিশীল, প্রগতি ও সার্বভৌম অবস্থান নিশ্চিত করতে রাষ্ট্রের মালিকদের কিছুটা মূল্য দিতে প্রস্তুত থাকতে হয়। কারণ, দুনিয়া আমাদের ইচ্ছা অনুযায়ী চলে না; ন্যায়ভিত্তিক আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার ধারণাও এখন অনেক দেশেই নাজুক। ‘দ্য সেকেন্ড কামিং’-এ ডব্লিউ বি ইয়েটস যেমন লিখেছিলেন: ‘সবকিছু চুরমার, কেন্দ্র তো পারছে না আজ কিছু ধরে রাখতে।’

চিন্তাচেতনায় পরগাছারা খেয়াল না করলেও বাস্তব সত্য হচ্ছে, মিয়ানমারে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর সংঘর্ষ, বৈশ্বিক রাজনীতির চলমান দ্বন্দ্বকে বাংলাদেশের সীমান্তে নিয়ে এসেছে। সে দেশের ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা ইতিমধ্যেই এ দেশে আশ্রিত। অথচ তাদের প্রত্যাবাসনে কাছের বন্ধুদের তেমন সহযোগিতা মেলেনি। দ্রুত পরিবর্তনশীল আজকের বিশ্বে অনেক দেশেরই আদর্শ বন্ধু বা স্থায়ী শত্রু চিহ্নিত করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

আরও পড়ুন

ব্যাপক তথ্যপ্রবাহের যুগেও বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্কের নতুন মেরুকরণ কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের পর্যন্ত কিছু ক্ষেত্রে ‘বিশেষভাবে অজ্ঞ’ প্রমাণ করছে। তাঁরা অবাক হচ্ছেন, কোন পরিপ্রেক্ষিতে একটি তাঁবেদার সরকার থাকা সত্ত্বেও সে দেশের বিদ্রোহীদের সশস্ত্র সমর্থন দিতে পারে পাশের বড় দেশ চীন! যেখানে বিদ্রোহীরা সমর্থন পাওয়ার কথা যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর।

দক্ষিণ এশিয়ায় আধিপত্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা এবং ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরকেন্দ্রিক নয়া স্নায়ুযুদ্ধ অবশ্যই স্পর্শ করে আমাদের। যেমন গত তিনটি জাতীয় নির্বাচনে একাধিক ভূমিকায় কয়েকটি বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক মোড়লের নাম জড়িয়ে গেছে।

আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে, আমাদের দেশ একটি ভূরাজনৈতিক দাবা খেলার অংশ অথবা কমপক্ষে বিপদাপন্ন দর্শক। এই পরিস্থিতির সামনে দাঁড়িয়ে আমরা কি জানি জাতি হিসেবে আমাদের করণীয়?

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা একসময় বলতেন, যেকোনো দেশের পররাষ্ট্রনীতির মূল উদ্দেশ্য হলো জাতীয় স্বার্থ বৃদ্ধি, ক্ষমতাসীন সরকারের অগ্রাধিকার নয়। বাস্তবে আমাদের জাতীয় স্বার্থের বোঝাপড়ায় কিছুটা গন্ডগোল রয়ে গেছে৷ আন্তরাষ্ট্রীয় পর্যায়ে বন্ধুত্বের ভিত্তি যে জাতীয় স্বার্থ, তা স্বীকার করা যায় না কারও কারও অতিশয় মতাদর্শিক মনোভঙ্গির কারণে।

বিশ্বায়নের ফলে অনেক দেশের জনসংখ্যাতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য পাল্টে যাচ্ছে এবং জাতীয় স্বার্থের প্রচলিত ধারণাও সেভাবে কাজ করছে না সর্বত্র। দেশে দেশে পররাষ্ট্রনীতির নির্ধারক হিসেবে রাজনীতিকদের অবস্থান ততটা শক্ত নেই এখন। তার চেয়ে বিভিন্ন গোষ্ঠীর অর্থনৈতিক দাবিদাওয়া এবং করপোরেট-অলিগার্কির স্বার্থ রাষ্ট্রের বহিঃসম্পর্ক নির্ণয় ও পরিচালনায় প্রবল প্রভাব রাখছে। গত দেড় দশকে ব্যক্তি খাতসহ আমাদের বৈদেশিক ঋণ চার থেকে পাঁচ গুণ বেড়ে যাওয়া সে ইঙ্গিতই দেয়।

ফলে তাঁরা দু-একটি দেশের চিরস্থায়ী বন্ধুত্বের খোঁজ করেন। অথচ তিন দশকের বেশি আগে সোভিয়েত-মার্কিন শীতল যুদ্ধ অবসানের পর প্রতিটি রাষ্ট্রকে দ্রুত স্বকীয় অবস্থান নিশ্চিতে মনোনিবেশ করতে হয়। এবং ২০০১ সালের ৯/১১-পরবর্তী বিশ্বে দূরদর্শী বৈদেশিক নীতি পরিচালনা আরও নতুন চিন্তার দাবি রাখে।

দুর্ভাগ্যজনকভাবে চলে আসা ধাঁচে দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে বিদেশি হস্তক্ষেপের গ্লানি থেকে মুক্ত হতে পারিনি আমরা। সাধারণত এই অভিযোগ করে সরকার পক্ষ, যেমন ঘটে অন্যান্য দেশেও। তবে আমাদের ক্ষেত্রে বিরোধী দল এবং ভিন্নমতাবলম্বীরা অভিযোগ করছে দেশীয় রাজনীতিতে বাইরের হস্তক্ষেপের।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে-পরে মার্কিন গণতন্ত্র প্রকল্পের ব্যাপারে সমালোচনায় মুখর হন সরকারি দলের নেতারা আর বিরোধীরা ভারতের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে একতরফা নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলকে মদদ দেওয়ার।

যদিও দেশীয় ব্যাপারে বিদেশি সরকারের নাক গলানো, স্বাগতিক দেশের নীতির চেয়ে খেলোয়াড়দের আগ্রহের বহিঃপ্রকাশ, দেশের জন্য এর প্রভাব হয় সুদূরপ্রসারী এবং কখনো তা মারাত্মক। আজকের যুগে কূটনৈতিক শিষ্টাচার এবং আরেকটি দেশের পরিস্থিতি মূল্যায়নের মধ্যে সুস্পষ্ট সীমারেখা টানা দুরূহ।

আরও পড়ুন

মানবাধিকার বা গণতন্ত্র হচ্ছে তেমনই বিষয়, যা নিয়ে বাইরের মানুষের কথা বলার সুযোগ থাকে। কারণ, নিজ দেশেও জনগণকে হত্যা করা বা অধিকারবঞ্চিত রাখার এখতিয়ার নেই কোনো সরকারের।

বিংশ শতাব্দীর শেষ বাঁকে, আন্তর্জাতিক প্রাঙ্গণে সরকারি কূটনীতির বাইরেও আরেকটি ধারা সুস্পষ্ট হয়; তা হলো ‘ট্রাক টু’ ডিপ্লোমেসি বা জনগণের সঙ্গে জনগণের সরাসরি সম্পর্ক। যোগাযোগব্যবস্থায় বিপ্লবী পরিবর্তন, অভিবাসন ও উচ্চশিক্ষার্থে বিদেশ গমন, আন্তরাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ ও বাণিজ্য বৃদ্ধি, পর্যটনশিল্পের বিকাশ, সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান, সিভিল সোসাইটি আন্দোলন ইত্যাদি আন্তর্দেশীয় সম্পর্কে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

বিশ্বায়নের ফলে অনেক দেশের জনসংখ্যাতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য পাল্টে যাচ্ছে এবং জাতীয় স্বার্থের প্রচলিত ধারণাও সেভাবে কাজ করছে না সর্বত্র। দেশে দেশে পররাষ্ট্রনীতির নির্ধারক হিসেবে রাজনীতিকদের অবস্থান ততটা শক্ত নেই এখন। তার চেয়ে বিভিন্ন গোষ্ঠীর অর্থনৈতিক দাবিদাওয়া এবং করপোরেট-অলিগার্কির স্বার্থ রাষ্ট্রের বহিঃসম্পর্ক নির্ণয় ও পরিচালনায় প্রবল প্রভাব রাখছে। গত দেড় দশকে ব্যক্তি খাতসহ আমাদের বৈদেশিক ঋণ চার থেকে পাঁচ গুণ বেড়ে যাওয়া সে ইঙ্গিতই দেয়।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের উত্থানের সঙ্গে সঙ্গে একদিকে জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের উইকিলিকসের কূটনৈতিক তথ্য ফাঁসের মতো ঘটনা এবং একই সঙ্গে সংগঠিত গোষ্ঠীর মিথ্যা ও অপতথ্যের বিস্তার, অন্যদিকে বিশ্বব্যাপী অনলাইনে সীমাহীন গোয়েন্দা নজরদারি, কূটনৈতিক সম্পর্ক পরিচালনা আরও জটিল করে ফেলেছে। এতে সম্পর্কের অস্থিরতা বেড়েছে এবং পররাষ্ট্রনীতির পুরো বিষয়টি শক্তিশালী রাষ্ট্রনায়ক ও কতিপয় ব্যক্তি কূটনীতিক ও ব্যবসায়ী নেতাদের পকেটে ঢুকে পড়েছে।

এ অবস্থা ইতিহাসের সমাপ্তি নয়; আসলে আন্তর্জাতিক রাজনীতির একটি ধারা থেকে আরেকটিতে উত্তরণের এক ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণ পার করছি আমরা।

তাহলে প্রশ্ন থাকছে, এসব নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত কোথায় প্রণীত হওয়া উচিত এবং কীভাবে? যত দূর বুঝি, যুদ্ধ যে রকম জেনারেলদের একক কর্তৃত্ব নয়, কূটনীতিও কূটনীতিকদের একচেটিয়া ব্যবসা নয়।

উদাহরণস্বরূপ, শুধুই আমলাতান্ত্রিক প্রণোদনা ও দূতাবাসগুলোর চিঠি চালাচালিতে যদি অর্থনৈতিক কূটনীতির লক্ষ্য অর্জিত হতো, তাহলে দেশের ১০০টির বেশি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল কবেই বিদেশি বিনিয়োগে ভরে যেত এবং রপ্তানি ও রেমিট্যান্সে দ্বিগুণের দেশি হয় দাঁড়াত যথাক্রমে ২০০ এবং ১০০ বিলিয়ন ডলার।

দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূরাজনৈতিক অনেক বিষয়ের আলোচনা হওয়ার কথা উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে, রাজনীতির ময়দানে, গ্রাম–গঞ্জ-শহরের আড্ডায়, ব্যবসায়িক সেমিনারে, কূটনৈতিক ও সামরিক একাডেমিতে, সংসদে এবং পত্রিকার পাতা ও টেলিভিশনে।

এসব আলোচনা-সমালোচনা জাতির জন্য সর্বোত্তম নীতিনির্ধারণে সাহায্য করতে পারত। এ প্রক্রিয়া কেন অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়বে না, যদি আমরা চিন্তাহীন সমাজ নির্মাণ করি? দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হিটলারের দায়ের কারণে নাৎসি-পরবর্তী জার্মানিতে কয়েকটি প্রজন্মকে প্রমাণ করতে হয়েছে তারা শান্তিবাদী, সমৃদ্ধ জাতি।

আশি ও নব্বইয়ের দশকের বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষণীয় কর্মকাণ্ড, রাজনৈতিক তৎপরতা ও ছাত্রাবাসের তর্কবিতর্কের বিষয়গুলোর মধ্যে আন্তর্জাতিক ঘটনাবলি এবং দেশের ওপর সেগুলোর প্রভাব অনিবার্যভাবেই স্থান পেত। পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনি ইন্তিফাদা, তিয়েনআনমেন স্কয়ারে ছাত্র আন্দোলন দমন, বার্লিন ওয়ালের পতন, ইরাকের কুয়েত দখল, সোভিয়েত ইউনিয়নের ভাঙন, রিও ডি জেনিরোতে বিশ্ব পরিবেশ সম্মেলন, কিংবা বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা গঠন নিয়ে সিরিয়াস আলোচনা হতো তখনকার ক্যাম্পাসে।

১৯৯০-৯১-এর শীতকালীন ছুটিতে গ্রামে গিয়ে দেখলাম বৃদ্ধ দোকানদার বাবুর আলি এবং প্রতিবেশী হালিম বাঘার মধ্যে সান্ধ্যকালীন বিতর্ক। একজনের আপত্তি, কেন সাদ্দাম হোসেন একটি স্বাধীন দেশ কুয়েত দখল করলেন; আরেকজনের যুক্তি, জর্জ বুশ আরব ভূমিতে সৈন্য পাঠাল কোন অধিকারে!

নব্বইয়ের দশকে পররাষ্ট্র বিষয়ে সংসদীয় বিতর্ক দেখেছি আমরা। কিন্তু পরবর্তী সময় অগ্রগতির বদলে হয়েছে অবনতি। কোনো দেশে গৃহযুদ্ধ বা রাজনৈতিক সংকট থাকলে তার পররাষ্ট্রনীতি দুর্বল হয়ে পড়ে। দেশে বিদেশিদের বক্তব্য ও কার্যকলাপ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা যেমন বেড়েছে, রাষ্ট্রীয় নীতিসংক্রান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণও কেন্দ্রীভূত হয়েছে সমান্তরালভাবে।

গত দুই দশকে প্রতিবেশীসহ বিদেশিদের ভূমিকায় দেশের মোটামুটি সচেতন মানুষের সন্দেহ বাড়েনি—এমনটা প্রমাণ করা কঠিন। ঢাকার সঙ্গে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্কে আবদ্ধ বড় শক্তিগুলো সম্পর্কে কিছু মতামত প্রতিফলিত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।

এই প্রক্রিয়ার প্রধান তিনটি শক্তি যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও ভারত। তারা যদি চায় বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্ক গড়বে, সে চেষ্টা তারা করতেই পারে; আর যদি তারা মনে করে এখন যা যা করছে তা ঠিকই আছে, তাহলে আমাদের বুঝতে হবে, সেটাই হচ্ছে বাংলাদেশিদের প্রতি তাদের সুচিন্তিত কৌশলগত নীতি।

এ দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বিদেশি শক্তিকে তাদের এখনকার কর্মকাণ্ডের ভিত্তিতেই মূল্যায়ন করবে এবং তখন কী নীতি অবলম্বন করবে, সেটাও হবে তাদের ব্যাপার। তবে বর্তমান প্রজন্মেরও সুযোগ আছে পররাষ্ট্রনীতি ব্যাপারটিকে নতুন বাস্তবতার আলোকে বিশ্লেষণ করা, জাতীয় স্বার্থসিদ্ধির কৌশল বদলানো ও নীতিনির্ধারণ-প্রক্রিয়া ঢেলে সাজানোর উদ্দেশ্যে কাজ করার।

বিশ্বব্যবস্থার এক ক্রান্তিকালে ‘পররাষ্ট্রনীতি’ হচ্ছে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং ভিনদেশ ও বিভিন্ন সংস্থার প্রতি দেশীয় নীতি ব্যবস্থাপনা। ‘ফরেন পলিসি’ কোনোভাবেই বিদেশে অথবা বিদেশিদের দ্বারা তৈরি নীতি বা সিদ্ধান্ত নয়। পণ্ডিতেরা বারবার বলেছেন, অভ্যন্তরীণ নীতির বিস্তৃতিই হচ্ছে পররাষ্ট্রনীতি। দেশের ভেতরে শাসনব্যবস্থায় জনসম্পৃক্ততা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় বাস্তব বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ থাকলেই জাতীয় স্বার্থে জাতীয় নেতৃত্ব আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অনেক বেশি দর-কষাকষি করতে সক্ষম হতে পারে।

  • খাজা মাঈন উদ্দিন সাংবাদিক।