বিশ্লেষণ
সড়কে বিশৃঙ্খলা: জবাবদিহিমূলক নতুন সড়ক সংস্কৃতির সন্ধানে
ঢাকার পরিবহনব্যবস্থার সংকট কেবল একটি ‘সেক্টরাল’ সমস্যা নয়। এটি এক গভীর শাসনব্যবস্থার সংকট। আমাদের রাস্তাগুলোর বিশৃঙ্খলা কোনো দুর্ঘটনা নয়; এটি আমাদের প্রশাসনিক সমন্বয়হীনতা, দুর্নীতি ও নীতিবিচ্ছিন্নতার অনিবার্য ফলাফল। ঢাকার পরিবহনব্যবস্থার সংকট নিয়ে দুই পর্বে লিখেছেন সাজেদুল হক। আজ প্রকাশিত হলো দ্বিতীয় ও শেষ পর্ব।
রাস্তায় গর্ত, বাসরুটের বিশৃঙ্খলা, অবৈধ পার্কিং, ট্রাফিক সিগন্যালের বিকল অবস্থা এবং ঘন ঘন সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মধ্যে একধরনের বিশেষ মিল আছে; এসবের দায়ভার সব সময়ই ‘অন্য কারও’।
বাংলাদেশের পরিবহনব্যবস্থার প্রতিটি অংশ—সড়ক নির্মাণ, আইন প্রয়োগ, চালকের লাইসেন্স, যানবাহনের ফিটনেস, নগর-পরিকল্পনা, জরুরি সেবা, জনসচেতনতা—এই সবই বর্তমানে ভিন্ন ভিন্ন মন্ত্রণালয়, সংস্থা বা স্থানীয় কর্তৃপক্ষের হাতে দেওয়া আছে। কিন্তু কোনো সংস্থা এককভাবে এই বহুমুখী সমস্যাগুলোর সমাধান করার জন্য পর্যাপ্ত ক্ষমতা, অর্থায়ন বা সমন্বয়ের সুযোগ পায় না।
আমাদের পরিবহনসংকট এত জটিল ও ব্যাপক যে কোনো এক দপ্তরের মাধ্যমে তা মোকাবিলা করা এখন আর সম্ভব নয়। তবু আমরা যেন একাধিক অঙ্গের জটিল রোগবালাইকে বিচ্ছিন্ন সব চিকিৎসা দিয়ে সারানোর চেষ্টা করে যাচ্ছি। যদি আমরা সত্যিই আমাদের যোগাযোগব্যবস্থাকে সংস্কার করতে, নাগরিকদের জীবন বাঁচাতে এবং রাস্তায় স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনতে চাই, তবে প্রয়োজন সরকারের সর্বোচ্চ দপ্তরের নির্দেশনায় এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় একটি সম্মিলিত উদ্যোগ।
আজকের আলোচনার কেন্দ্রে রাখছি দুটি বিষয়। একটি হলো জবাবদিহি ও কার্যকর প্রশাসনিক সংস্কার। আরেকটি হলো আমাদের সড়ক ব্যবহারের সংস্কৃতির পরিবর্তন। এর কারণ হলো, কাঠামোগত ব্যর্থতা আর সংস্কৃতিগত বিশৃঙ্খলা একে অপরকে পুষ্ট করে আর সেখান থেকেই জন্ম নেয় আমাদের বর্তমান নগর পরিবহনের সংকট।
সমন্বয়হীন প্রশাসনিক ব্যবস্থা আর জবাবদিহির অভাব
বাংলাদেশের পরিবহনব্যবস্থার বড় সমস্যা হলো অকার্যকর দায়িত্বের বিভাজন। এর কিছুটা বিশ্লেষণ আমরা আগের পর্বে দেখেছি। বিআরটিএ ড্রাইভারদের লাইসেন্স দেয় এবং গাড়ি নিবন্ধন করে, কিন্তু তাঁরা রাস্তায় আইন প্রয়োগ করতে পারে না। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করে, কিন্তু সড়ক নকশা বা বাস রুট নির্ধারণে তাঁদের কোনো ভূমিকা নেই। সিটি করপোরেশন রাস্তা সংস্কার ও ফুটপাত মেরামতের কাজ করে, কিন্তু গণপরিবহন পরিকল্পনা থেকে তাঁরা প্রায়ই বাদ থাকে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দুর্ঘটনার পর জরুরি সেবা বা ট্রমা কেয়ার সিস্টেমের কোনো অংশ নয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও গণমাধ্যমকে এ ব্যাপারে কোনো ধরনের সচেতনতা বা শিক্ষামূলক কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা হয় না।
এসবের ফলাফল হচ্ছে প্রশাসনিক ভাঙন। এক বিভাগের উদ্যোগ অন্য বিভাগের উদাসীনতায় থেমে যায়। যেমন সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন স্কুল বা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান পর্যন্ত পৌঁছায় না, আইন প্রয়োগ হয় বিচ্ছিন্নভাবে আর পরিকল্পনা কাগজে আটকে থাকে।
এ অবস্থায় দুর্নীতি ও স্বার্থান্বেষী মহল সহজেই প্রভাব বিস্তার করে। মালিক সমিতি বা শ্রমিক সংগঠনের চাপ, রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয় আর ঘুষের সংস্কৃতি প্রশাসনিক সিদ্ধান্তকে বারবার বিফল বা স্তিমিত করে। এর ফলে জনগণের জীবন ঝুঁকিতে থেকেও কার্যকর কোনো জবাবদিহি নেই।
যে কারণে বিচ্ছিন্ন পদক্ষেপগুলো ব্যর্থ হয়
বাংলাদেশে ট্রাফিক ও পরিবহন সংস্কারের বিভিন্ন কার্যক্রম বারবার ঘোষিত হয়েছে, কিন্তু এসবের অধিকাংশই হয় ক্ষণস্থায়ী। কখনো এক সপ্তাহের হেলমেট অভিযান, কখনো হঠাৎ ফিটনেস চেক, আবার কখনো বাসরুট পুনর্গঠনের নির্দেশনা। এসব পদক্ষেপ কখনো স্থায়ী ফল আনে না।
কারণ, এগুলোতে থাকে না দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা, আন্তপ্রাতিষ্ঠানিক সমন্বয়, কিংবা স্পষ্ট জবাবদিহি। ফলে কার্যক্রম ব্যর্থ হলে কেউ দায় নেয় না; সাফল্য পাওয়া গেলে হলে কেউ তা টিকিয়ে রাখতে চায় না এবং পরিসংখ্যানভিত্তিক অগ্রগতি মাপার কোনো ব্যবস্থা হয় না। এভাবে এসব ক্ষেত্রে তৈরি হয়েছে একধরনের ‘প্রতিক্রিয়াশীল প্রশাসন’। অর্থাৎ যখন কোনো দুর্ঘটনা বা জনরোষ তৈরি হয় তখন শুরু হয় হঠাৎ অভিযান, তারপর আবার নীরবতা।
জাতীয় টাস্কফোর্স কেমন হওয়া উচিত
আমাদের পরিবহন অবকাঠামোর সংস্কার ও বিস্তারের জন্য প্রয়োজন একটি সর্বোচ্চ পর্যায়ের জাতীয় উদ্যোগ। একটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন জাতীয় টাস্কফোর্স গঠন করা আবশ্যক, যা প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ দপ্তরের অধীনে থাকবে এবং কাজ করবে।
এ রকম একটি জাতীয় পরিবহন সংস্কার ও সড়ক নিরাপত্তা টাস্কফোর্সের সভাপতি হিসেবে থাকতে হবে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা বা সচিবালয়ের প্রতিনিধিকে। সদস্য হিসেবে থাকতে পারেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় (ট্রাফিক পুলিশ), স্থানীয় সরকার বিভাগ, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগ (ডিজিটাল মনিটরিং ও অটোমেশন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় (সচেতনতা ও শিক্ষা কার্যক্রম), স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় (ট্রমা ও জরুরি সেবা সমন্বয়), সিটি করপোরেশন এবং ঢাকা ট্রান্সপোর্ট কো-অর্ডিনেশন অথরিটির প্রতিনিধি। এ ছাড়া সিভিল সোসাইটি ও একাডেমিক বিশেষজ্ঞদেরও (পরামর্শক) অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
■ আমাদের পরিবহন অবকাঠামোর সংস্কার ও বিস্তারের জন্য প্রয়োজন একটি সর্বোচ্চ পর্যায়ের জাতীয় উদ্যোগ। একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন জাতীয় টাস্কফোর্স গঠন করা আবশ্যক। ■ একটি নতুন সড়ক সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে, যেখানে পথচারীর অধিকার সংরক্ষিত হবে; অ্যাম্বুলেন্সকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে; শিশুরা নিরাপদে বাইসাইকেল চালাতে পারবে।
এই টাস্কফোর্সের কার্যক্রমে ট্রাফিক আইন প্রয়োগের দুর্বলতা মোকাবিলায় প্রাথমিকভাবে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। বর্তমানে ট্রাফিক পুলিশ সাধারণ পুলিশ ইউনিট থেকে বদল হয়, যা প্রশিক্ষণ ও ধারাবাহিকতার অভাব তৈরি করে। একটি বিশেষায়িত, স্থায়ী কর্মী ও আধুনিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ট্রাফিক পুলিশ বাহিনী গঠন অপরিহার্য। এটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং এই টাস্কফোর্সের মধ্যে সমন্বয় রেখে কাজ করবে।
টাস্কফোর্সের কাজ
টাস্কফোর্সের কাজ হবে জাতীয় পরিবহন এবং সড়ক নিরাপত্তা কৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন; বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও পৌরসভার মধ্যে নীতিমালাগত জোট এবং সমন্বয় বজায় রাখা; স্পষ্টভাবে লক্ষ্য, কর্মক্ষমতা সূচক এবং সময়সীমা নির্ধারণ, বাস্তবায়ন পর্যবেক্ষণ ও অগ্রগতি নিয়ে ত্রৈমাসিক রিপোর্ট প্রকাশ; স্বচ্ছ তহবিল সংগ্রহ, সুষ্ঠু ক্রয় প্রক্রিয়া নিশ্চিতকরণ, কেন্দ্রীয় ড্যাশবোর্ড তৈরি (যেখানে দুর্ঘটনা, আইন লঙ্ঘন, সচেতনতা কর্মসূচির তথ্য নাগরিকেরা দেখতে পাবেন); আইন প্রয়োগ, চালক প্রশিক্ষণ, ডিজিটাল টিকেটিং, তথ্য ব্যবস্থাপনা, বাস কিংবা গণপরিবহনের রুট ইত্যাদির জন্য জাতীয় মান নির্ধারণ।
সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো এই টাস্কফোর্সের আইনগত ক্ষমতা থাকতে হবে, যাতে কেবল পরামর্শক নয়, বাস্তবায়নের দায়িত্বশীল সংস্থা হিসেবে কাজ করতে পারে।
সংস্কারের আন্তর্জাতিক দৃষ্টান্ত
বেশ কিছু উন্নয়নশীল দেশ এ ধরনের সংস্কারের জাতীয় পর্যায়ে সমন্বিত উদ্যোগ এরই মধ্যে নিয়েছে এবং ফলে ভালো ফলও পেয়েছে। ভিয়েতনামের ট্রাফিক নিরাপত্তা কমিটি গঠিত হয়েছিল ১৯৯৭ সালে, যার নেতৃত্বে থাকেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী এবং যা ভিয়েতনামের পরিবহনব্যবস্থার বার্ষিক ফলাফল পর্যালোচনা করে। উপরন্তু দেশটির প্রদেশগুলো সরাসরি এই কমিটিকে রিপোর্ট করে—যাতে তথ্যের বিচ্যুতি না হয়।
ইথিওপিয়া দাতাদের সমন্বয়ে ও আন্তমন্ত্রণালয় নেতৃত্বে একটি জাতীয় শহর পরিবহন নীতি গঠন করেছে, যা জমি ব্যবহার, দূষণ, সড়ক নিরাপত্তা এবং জনপরিবহন সংস্কার নিয়ে একত্রে কাজ করে।
ভারতের জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা পরিষদ এমন একটি উদাহরণ, যার চেয়ারম্যান হিসেবে থাকেন দেশটির পরিবহনমন্ত্রী। এই পরিষদের রাজ্য প্রশাসন স্তরে অংশগ্রহণ ও বিচার বিভাগীয় নজরদারি রয়েছে। এই পরিষদ নতুন আইন প্রণয়ন, ডিজিটাল আইন প্রয়োগ এবং সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাসে এখন পর্যন্ত সফলতা দেখিয়েছে।
এ উদাহরণগুলো প্রমাণ করে যে রাষ্ট্র যখন সড়ক নিরাপত্তাকে বিচ্ছিন্ন সমস্যা হিসেবে না দেখে শাসনব্যবস্থায় অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করে, তখন সত্যিকার অর্থে বাস্তব পরিবর্তন সম্ভব।
প্রস্তাবিত পদক্ষেপগুলো কেমন হতে পারে
জাতীয় নির্দেশিকা জারি: উন্নয়ন ও জনস্বাস্থ্য বিবেচনায় ট্রাফিক নিরাপত্তাকে জরুরি ঘোষণা করা। সরকারি গেজেট ব্যবহার করে ও রাজনৈতিক দৃশ্যমানতা বজায় রেখে ৯০ দিনের মধ্যে এই টাস্কফোর্স গঠন। নগর পরিবহনে জড়িত সব সংস্থা, প্রকল্প এবং তাদের বাজেটের একটি চিত্র তৈরি এবং এদের মধ্যে দ্বন্দ্ব দূরীকরণের প্রস্তুতি।
কেন্দ্রীয় সড়ক নিরাপত্তা ড্যাশবোর্ড চালু করা: স্বচ্ছতা ও জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে একটি রিয়েল টাইম ড্যাশবোর্ড তৈরি করতে হবে, যা সব নাগরিকের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। এতে সড়ক অবস্থা, ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন, দুর্ঘটনা, আইন প্রয়োগ কার্যক্রম এবং জনসচেতনতা প্রচারের তথ্য থাকবে।
বিশেষ করে একটি সহজবোধ্য সামগ্রিক অগ্রগতি সূচক বা ‘পরিবহন স্বাস্থ্য সূচক’ থাকবে, যা সংস্কার কার্যক্রমের সামগ্রিক প্রভাব পরিমাপ করে জনগণকে জানাবে। এই ড্যাশবোর্ডকে নিয়মিত হালনাগাদ করা হলে এই প্ল্যাটফর–সংশ্লিষ্ট সব সংস্থার জবাবদিহি বাড়বে এবং নাগরিকেরা জানতে পারবে কীভাবে প্রতিটি পদক্ষেপ নিরাপদ ও কার্যকরভাবে রাস্তায় ভূমিকা রাখছে। যেসব মন্ত্রণালয় সমন্বিত কর্মক্ষমতা সূচকে ভালো করবে, তাদের বাজেটের মাধ্যমে সমন্বয়ের প্রণোদনা প্রদান করা।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং সংস্থাদের প্রয়োজনমতো সংশ্লিষ্ট করা: পরিবহন শ্রমিক সমিতি, বেসরকারি বাসমালিকেরা, সিভিল সোসাইটি, করপোরেট লজিস্টিক কোম্পানি, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ইত্যাদিকেও এই সংস্কার সম্পাদন এবং পর্যবেক্ষণের কাজে সাহায্য করতে হবে।
নাগরিক সংস্কৃতির সংস্কার
যত বড় কাঠামোই তৈরি করা হোক, তা সফল হবে না, যদি না আমাদের নাগরিক আচরণ বদলায়। বর্তমানে বাংলাদেশের রাস্তায় প্রভাবশালী মানেই জয়ী। লাল বাতি মানা হয় না, অ্যাম্বুলেন্স আটকে থাকে, পথচারী হয় বিপন্ন। একটি নতুন সড়ক সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে, যেখানে পথচারীর অধিকার সংরক্ষিত হবে; অ্যাম্বুলেন্সকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে; শিশুরা নিরাপদে বাইসাইকেল চালাতে পারবে; বয়স্করা নিশ্চিন্তে ফুটপাতে হাঁটতে পারবে; এসব শুধু দুর্ঘটনা কমাবে না, নাগরিক জীবনে সহমর্মিতা ও আস্থাও ফিরিয়ে আনবে।
সবার অংশগ্রহণ প্রয়োজন
এই পরিবর্তন শুধু রাষ্ট্রের একক দায়িত্ব নয়। প্রয়োজন বহুপক্ষীয় অংশগ্রহণ।
সরকার: সচেতনতামূলক প্রচারণা, স্কুল পাঠ্যক্রমে সড়ক নিরাপত্তা, স্থায়ী ট্রাফিক পুলিশ বাহিনী।
বেসরকারি খাত: রাইড শেয়ার ও করপোরেট যানবাহনে নিরাপদ চালনা নীতি, সঠিক পার্কিং ব্যবস্থাপনা।
গণমাধ্যম: ভিআইপি গাড়ির কীর্তন আর স্তুতি বন্ধ করা, আর মানবিক গল্প প্রচার।
তরুণ সমাজ ও নাগরিক সংগঠন: ২০১৮ সালের নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের চেতনা দীর্ঘ মেয়াদে কাজে লাগানো, ট্রাফিক আইল্যান্ড এবং ফুটপাতে সচেতনতামূলক কার্যক্রম।
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: সাপ্তাহিক খুতবা বা বক্তব্যে সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে বার্তা অন্তর্ভুক্ত করা।
প্রযুক্তি খাত: দুর্ঘটনাপ্রবণ স্থানের তথ্য, ড্রাইভার স্কোরকার্ড, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক ঝুঁকির পূর্বাভাস।
সংস্কারকে দৃশ্যমান করতে হবে
জনসাধারণের আস্থা অর্জনের সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো অগ্রগতিকে দৃশ্যমান করা। ওপরে প্রস্তাবিত কেন্দ্রীয় সড়ক নিরাপত্তা ড্যাশবোর্ডে একটি সংস্কারের অগ্রগতির সূচক থাকতে পারে, যা নিয়মিত হালনাগাদ করা হবে এবং যা দেখাবে কার্যক্রমের অগ্রগতি। যেমন: প্রশিক্ষণ, আইন বাস্তবায়ন, সচেতনতামূলক প্রচারণা কীভাবে সড়ক নিরাপত্তা উন্নত করছে এবং যানজট, দুর্ঘটনা কিংবা মানুষের হতাশা কমাচ্ছে। যখন মানুষ দেখবে, তখন বিশ্বাস গড়ে উঠবে; তারাও অংশগ্রহণ করতে অনুপ্রাণিত হবে; আচরণ বদলাতে মনোযোগী হবে। দৃশ্যমানতা সংস্কারকে গ্রহণযোগ্য করবে আর গ্রহণযোগ্যতা সেই সংস্কারকে গতিশীল করবে।
শেষ কথা
রাষ্ট্রকে কখনো না কখনো ভাবতেই হয়, নগরের সড়ক এবং উন্মুক্ত স্থানগুলোয় নাগরিকদের কী দেওয়া উচিত অথবা সর্বসাধারণের এসব থেকে কি পাওয়ার কথা? আমরা তো আমাদের রাস্তাঘাটকে দৈনন্দিন অবিচার বা নৈরাজ্যের প্রতীক হয়ে থাকতে দিতে পারি না। এই লেখায় নীতি, অনুশীলন এবং জনমনের ভাবনাকে নতুনভাবে দেখার একটি উপায় তুলে ধরেছি।
কিন্তু এই সবই অর্থহীন হবে যদি আমরা বর্তমান বিশৃঙ্খলতার ব্যাপারে নিষ্ক্রিয় থাকি। কারণ, দিন শেষে সড়ক ও যানজট আসল সমস্যা নয়—এসবের ব্যাপারে অবজ্ঞাই হলো মূল সমস্যা। এবং আমরা সবাই মিলে এর থেকে বেরিয়ে আসার পথ বেছে নিতে পারি। এটি শুধু যানজট কিংবা সড়কের প্রশ্ন নয়, বিশ্বায়নের এই যুগে এটি আমাদের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিচয়ের প্রশ্ন। সিদ্ধান্ত এখন আমাদের হাতে।
● সাজেদুল হক উন্নয়নবিশেষজ্ঞ ও প্রেসিডেন্ট, বাংলাদেশ ট্রাফিক অ্যান্ড ট্রান্সপোর্ট ফোরাম
* মতামত লেখকের নিজস্ব