এরদোয়ান কেন প্রথম রাউন্ডে জিততে পারলেন না

রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন দ্বিতীয় রাউন্ডে গড়াল। ২৮ মে সেটা হবে। এরদোয়ান প্রথম রাউন্ডে জিততে না পারায় বাংলাদেশের বিরাটসংখ্যক মানুষ হতাশ। বিস্মিতও অনেকে। হতাশাটা রাজনৈতিক। তবে কেউ কেউ যে আশ্চর্য হয়েছেন, এর একটা কারণ তুরস্কে থাকা বাংলাদেশিরা।

তুরস্কে বৈধভাবে থাকা বাংলাদেশির সংখ্যা খুব বেশি নয়। এর একটা ছোট অংশ গবেষক স্তরের শিক্ষার্থী। দেশটির সর্বশেষ প্রেসিডেন্ট নির্বাচন উপলক্ষে প্রায় এক মাস সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই গবেষকদের অনেকের মতামত দেখা গেছে।

এরদোয়ানের কারণে তুরস্কের নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশিদের বিপুল আগ্রহ ছিল। বিশেষ করে যাঁরা ইসলামপন্থী দলের কর্মী-সমর্থক, তাঁরা এরদোয়ানের ব্যাপারে খুব সহানুভূতিশীল। তবে তুরস্কে থাকা বাংলাদেশি গবেষক শিক্ষার্থীরা ওখানকার নির্বাচন নিয়ে নিজ দেশের মানুষের আগ্রহ নির্মোহভাবে মেটাতে পেরেছেন বলা যায় না।

আরও পড়ুন

সামান্য কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া বাংলাদেশের গবেষকেরা নিয়মিত বার্তা দিয়েছেন এরদোয়ান নির্বিঘ্নে নির্বাচনে জিততে চলেছেন। খোদ তুরস্ক থেকে নিজ দেশের উচ্চশিক্ষিতদের এ রকম মতামত দেখে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারী বাংলাদেশের মানুষ প্রথম রাউন্ডেই এরদোয়ানের বিজয়ের ব্যাপারে প্রায় নিশ্চিত ছিলেন। কিন্তু নির্বাচনী মৌসুমের শুরু থেকে মাঠপর্যায়ে বাস্তবতা কখনো এমন ছিল না—এরদোয়ান নিশ্চিত জিতবেন। বরং তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস ছিল।

প্রতিদ্বন্দ্বিতা গণতন্ত্রকে সৌন্দর্য দেয়। তুরস্কে যে জীবন্ত নির্বাচনী গণতন্ত্র আছে—এরদোয়ান যে তা বন্ধ করেননি, সেটা তুরস্কের শক্তি ও সৌন্দর্যের দিক। কিন্তু এবারের নির্বাচনে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতার কথা বাংলাদেশের প্রচারমাধ্যমে যেসব প্রতিবেদনে থাকত, তাতে শত শত বিরূপ মন্তব্য পাওয়া যেত। অনেক পাঠক মনে করতেন, প্রতিদ্বন্দ্বিতার কথা লেখা মানে এরদোয়ানকে হেয় করা।

পাঠকের পছন্দমতো লোকরঞ্জনবাদী না হলে একালে লেখার কদর পাওয়া দায়—বিশেষ করে সংবাদমাধ্যমে। ফলে টিকে থাকার সংগ্রামে এ দেশের অনেক মিডিয়া বহু আগে এরদোয়ানকে একচেটিয়াভাবে জিতিয়েছে। অথচ লোকরঞ্জনবাদ খোদ তুরস্কে এরদোয়ানকে শেষ পর্যন্ত প্রথম রাউন্ডে জিততে দেয়নি। কিন্তু কেন জনপ্রিয় হয়েও বিশ্বখ্যাত এই শাসককে নির্বাচনের দ্বিতীয় রাউন্ডে যেতে হচ্ছে, সেটা বোঝা জরুরি!

আরও পড়ুন

‘প্রথমবারের ভোটারদের’ একাংশ এরদোয়ানকে পছন্দ করেননি

প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী মিলে প্রায় ২১ বছর তুরস্কের সর্বোচ্চ ক্ষমতায় আছেন রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। হয়তো দ্বিতীয় রাউন্ডে জিতে আবারও তুরস্কের প্রেসিডেন্ট হতে পারেন। তবে প্রথম রাউন্ডে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে তিনি মাত্র ৪ শতাংশ ভোটে এগিয়ে ছিলেন। ব্যবধানটি বেশি নয়।

নির্বাচনী গণতন্ত্রে অনেক সময় ভোটাররা পুরোনো মুখে ক্লান্ত হয়ে পড়েন। অন্ধভক্ত এবং সুবিধাপ্রাপ্ত জনগোষ্ঠী ছাড়া অন্যরা সচরাচর নতুন মুখ খোঁজেন। এটা মনস্তাত্ত্বিক ব্যাপার। এরদোয়ান যে ব্যাপক ব্যবধানে প্রথম রাউন্ডে প্রেসিডেন্ট হয়ে যাননি, সেটা প্রাথমিকভাবে পুরোনো মুখ হওয়ার কারণে।

‘ক্ষমতার’ ভেতর বরাবরই জাদু থাকে। এককেন্দ্রিক ক্ষমতা হলে তো কথাই নেই। তখন আর শাসকেরা যেতে চান না। ভিন্নমত শুনতে কম আগ্রহী হন। দলে যোগ্য উত্তরসূরি তৈরিতে মনোযোগ থাকে না। এমনও হয়তো ভাবতে থাকেন—সব সময় তিনি ক্ষমতায় থাকবেন। এ রকম সময়ে এসে এককেন্দ্রিক ক্ষমতাকাঠামো আরও শক্তিশালী হয়ে একনায়কতন্ত্রের আদল নেয়। এরদোয়ানও এমন এক ভাবমূর্তি তৈরি করেছিলেন—যে নেতা সব মৌসুমে নির্বিঘ্নে জিতবেন। কিন্তু সে রকম ঘটেনি।

এর কারণ সম্ভবত এই, ‘মহাশক্তিশালী শাসকের’ ধারণা ইতিহাস বইয়ে যতটা মানানসই, গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিতে ততটা নয়—অন্তত অদলীয় তরুণ ভোটারদের কাছে। তাঁদের পছন্দ ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ। এরদোয়ানের বেলায় তুরস্কে সেটাই ঘটেছে। প্রথমবার ভোট দিতে আসা ৫০ থেকে ৬০ লাখ তরুণ ভোটারের বড় এক অংশকে এরদোয়ান কাছে টানতে পারেননি। তরুণ সমাজ বিশেষভাবে মূল্যস্ফীতিতে ব্যাপক ক্ষুব্ধ ছিল। সংসদ নির্বাচনে এরদোয়ানের একেপির ভোটেও তার প্রতিফলন দেখা যায়। আগের সংসদীয় নির্বাচনে এই দলের ভোট হিস্যা ছিল প্রায় ৪৩ শতাংশ; এবার সেটা ৩৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

কেমাল গরিবদের রান্নাঘরকে টার্গেট করেছিলেন

ক্ষমতায় আসার প্রথম দিনগুলোয় এরদোয়ানের প্রধান জাদু ছিল সাধারণ মানুষের রুজি–রোজগারের উন্নয়ন। এ জন্য তিনি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বাড়িয়েছিলেন। সহজ শর্তে ক্রেতাঋণের ব্যবস্থা করেছিলেন। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর বিশ্ব অর্থনীতিতে যে চাপ তৈরি হয়, তাতে পুরোনো জনতুষ্টিমূলক কর্মসূচিগুলো চালিয়ে নেওয়া সম্ভব নয় এরদোয়ানের পক্ষে। সমাজে তার নেতিবাচক ছাপ পড়েছে।

নির্বাচনী প্রচারণায় এরদোয়ান সমরশিল্পে তাঁর সরকারের সফলতার কাহিনি তুলে ধরেছেন বারবার। কিন্তু মানুষ রান্নাঘরের অর্থনীতি নিয়ে বেশি ভাবনায় থাকে। এরদোয়ানের প্রতিপক্ষ কেমাল কিলিচদারওলু ঠিক এ জায়গাতে মনোযোগী ছিলেন। নির্বাচনী প্রচারণায় কেমেল সব কটি ভিডিও বানিয়েছেন একটা রান্নাঘরকে স্টুডিও বানিয়ে। ভোটারদের সার্বক্ষণিকভাবে তিনি ‘ঘরের’ দিকে নজর কেড়েছেন—আন্তর্জাতিক পরিসরে নয়। গত ২০ বছর আন্তর্জাতিক সমাজে এরদোয়ান তেজি ঘোড়ার মতো দাবড়িয়ে বেড়ালেও দেশের ভেতর ঘরে ঘরে স্বস্তির ঘাটতি পড়েছিল আস্তে আস্তে।

রাজনৈতিক ভাষ্যকাররা সবাই স্বীকার করেন, ব্যক্তি হিসেবে ‘হাসিমাখা বুড়ো’ কেমেল ‘গম্ভীর ও সিরিয়াস’ চেহারার এরদোয়ানের চেয়ে রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে কম আকর্ষণীয়। কিন্তু কেমালের বড় গুণ—বিপরীত আদর্শের দলগুলোকে এক টেবিলে বসাতে পারা। ছয়দলীয় যে জোটের প্রার্থী হিসেবে তিনি নির্বাচনে লড়েছেন, তাতে উগ্র জাতীয়তাবাদী থেকে শুরু করে কুর্দিদের দলও আছে। অনেক তুর্কি জাতীয়তাবাদীর কাছে কুর্দিরা ‘সন্ত্রাসী’।

সিরিয়া, লিবিয়া, আজারবাইজানে প্রত্যক্ষ সামরিক ভূমিকার পাশাপাশি সুদূর আফ্রিকা ও দক্ষিণ এশিয়ার মতো অঞ্চলে এরদোয়ানের তুরস্ক গত ২০ বছর নানানভাবে ছদ্ম রাজনৈতিক ভূমিকা রেখেছে। তাতে দেশটির বৈশ্বিক প্রভাব বেড়েছে। তুরস্কের নতুন ‘পরিচয়’ তৈরি হয়েছে। দূরদূরান্তের সেসব জনপদের অনেকে এই নির্বাচনে এরদোয়ানের বিজয় চেয়েছে। কিন্তু এসব অঞ্চলে এরদোয়ানের প্রকাশ্য-গোপন তৎপরতায় তাঁর প্রতিপক্ষও কম তৈরি হয়নি।

এর মধ্যে সিরিয়া, ইউক্রেনসহ অনেক জায়গায় ইউরোপ-আমেরিকার বিপরীতে দেখা গেছে তুরস্কের অবস্থান। এবারের নির্বাচনে ওই প্রতিপক্ষরা যেকোনোভাবে এরদোয়ানের বিজয় থামাতে চেয়েছে। সেটা যেমন দূর থেকে—তেমনি তুরস্কের ভেতরে থাকা তাদের সমর্থক ভোটারদের মাধ্যমেও। কেমেল এ ক্ষেত্রে খোলামেলাই বলেছেন, তিনি তুরস্কের সঙ্গে পশ্চিমের সম্পর্ক থেকে চাপ সরাতে চান।

তিনি এ-ও বলতে থামেননি, সাংস্কৃতিকভাবেও তাঁর আমলে তুরস্ক আরও কাছাকাছি যাবে ইউরোপ-আমেরিকার। তিনি চেষ্টা করবেন ইইউতে তুরস্ককে যুক্ত করতে—যে প্রচেষ্টা এরদোয়ানের আমলে ধীর হয়ে গেছে তাঁর জাতীয়তাবাদী অহংয়ের কারণে। ন্যাটো জোটে থেকেও এরদোয়ান ন্যাটোর পরিসর বাড়ানোতে আপত্তি তুলে ওয়াশিংটনের ইচ্ছার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন।

আরও পড়ুন

অপেক্ষাকৃত দুর্বল একজন যেভাবে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠলেন

গত ২০ বছর এবং সর্বশেষ নির্বাচনী প্রচারণাতেও এরদোয়ান কুর্দিবিরোধী জাতীয়তাবাদী উত্তাপ ছড়িয়েছেন ব্যাপক। এ রকম লাগাতার জাতীয়তাবাদী চাপ সংখ্যালঘুদের বড় অংশকে বাধ্য করেছে কেমালকে ভোট দিতে। কমবেশি ৬০ লাখ কুর্দিভোটের উল্লেখযোগ্য এক ভাগ নির্বাচনে কেমালের পক্ষে গেছে। সম্ভবত সংখ্যাগুরু ভোটারদের নতুন একটা অংশও উগ্র জাতীয়তাবাদের জায়গায় মধ্যপন্থার রাষ্ট্রীয় নীতি চাইছে। ফলে, কেমাল দুর্বল অবস্থান থেকে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছেন।

২০১৬ সালের ১৫ জুলাই সামরিক অভ্যুত্থান সামাল দেওয়ার পর থেকে এরদোয়ান অনেক সাংবাদিক ও ভিন্নমতাবলম্বীকে কারাগারে ঢুকিয়েছেন। পাশাপাশি লক্ষাধিক মানুষকে চাকরিচ্যুত করেছেন। সামরিক অভ্যুত্থান সামাল দেওয়া এরদোয়ানের বড় এক রাজনৈতিক সফলতা ছিল।

কিন্তু কুখ্যাত ‘১৫ জুলাইকে’ তিনি বিরোধী মত দলনে যেভাবে বছরের পর বছর অজুহাত হিসেবে কাজে লাগিয়েছেন, তাতে অনেকে বিরক্ত। রাজনৈতিক ভিন্নমতাবলম্বীমাত্র ‘অভ্যুত্থানপন্থী’, ‘বিশ্বাসঘাতক’ হিসেবে চিহ্নিত করার রেওয়াজ থামা দরকার বলে মনে করেছে ভোটারদের একাংশ। গত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের চেয়ে তাঁর ভোট কমেছে ৩ শতাংশের বেশি।

এরদোয়ান যে দেশটিতে আবারও মৃত্যুদণ্ডের বিধান চালু করতে আগ্রহী, তা-ও ভীতি ছড়িয়েছে কিছুটা। এভাবে তিনি যত বেশি নিজের ভবিষ্যৎ মসৃণ করতে চেয়েছেন, বহু উপদলে থাকা রাজনৈতিক বিরোধীরা তত বেশি এক জায়গায় জড়ো হতে চেয়েছে। তারপরও অবশ্য এরদোয়ান প্রায় ৫০ ভাগ জনসমর্থন ছোঁয়ার কাছাকাছি অবস্থানে আছেন।

আবার এ-ও সত্য, দেশটি তাঁকে নিয়ে পুরোপুরি দ্বিধাবিভক্ত। বিশেষ করে ভোটের হিসাব গ্রাম থেকে শহরের দিকে যত এগিয়েছে, ততই তাঁর ভোট হিস্যা কমতে দেখা গেল। তবে ফেব্রুয়ারির ভূমিকম্পবিধ্বস্ত এলাকায় এরদোয়ান মোটেই ততটা খারাপ ফল করেননি, যতটা পশ্চিমের প্রচারমাধ্যম বলে বেড়িয়েছে। আবার এরদোয়ানের প্রতিদ্বন্দ্বী কেমাল প্রধান শহরগুলোয় যতটা একচেটিয়া ভোট পাবেন বলে অনুমান করা হয়েছিল, সেটাও ঘটেনি।

আরও পড়ুন

নির্বাচনে এরদোয়ানকে ভুগিয়েছেন আসলে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী কেমেল নন—মাঠ থেকে একে একে সরে যাওয়া অপর তিন প্রার্থী। সর্বশেষ হোমল্যান্ড পার্টির মুহরারম ইনজে ভোট থেকে সরে দাঁড়ানোয় এরদোয়ান মুশকিলে পড়েন। ইনজে দাঁড়িয়ে থাকলে যে ৫ থেকে ৬ শতাংশ ভোট পেতেন, তার অনেকখানি কেমেলের দিকেই গেছে বলে মনে করা হয়। কেমেলের সঙ্গে এরদোয়ানের ‘প্রায় সমান-সমান’ লড়াইয়ের নির্বাচনী চেহারা তৈরি করেছেন ড্রপ আউট তিন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী।

এরদোয়ান চেয়েছিলেন তাঁর বিপরীতে বিরোধী শিবিরের তিন থেকে চারজন প্রার্থী মাঠে থাকুক। শুরুতে সে রকমই ছিল আসর। কিন্তু অনেকেই একে একে প্রার্থিতা প্রত্যাহার শুরু করেন। এরদোয়ান এ রকম অবস্থার জন্য প্রস্তুত ছিলেন না। কেমাল এ অবস্থা থেকে কিছু সুবিধা পেয়েছেন। প্রশ্ন হলো, দ্বিতীয় রাউন্ডে কেমেল কি আদৌ এরদোয়ানের এগিয়ে থাকা ঠেকাতে পারবেন?

বিশেষ করে এই নির্বাচনে তৃতীয় প্রার্থী সিনান ওগানের ৫ ভাগ ভোট পরের রাউন্ডে এরদোয়ানের পক্ষে যেতে পারে। তবে দক্ষিণপন্থী সিনান এরদোয়ানকে সমর্থন করলে মধ্যপন্থী কিছু ভোট তখন তাঁকে ছেড়ে চলে যেতে পারে। সিননের শরণার্থীবিরোধী ইমেজ রয়েছে। আর এরদোয়ানের রয়েছে শরণার্থীবান্ধব ইমেজ। সিননের ভোট যে এরদোয়ান পাবেন, এমন অনুমানেও অনিশ্চয়তা থাকছে।

রাজনৈতিক ভাষ্যকাররা সবাই স্বীকার করেন, ব্যক্তি হিসেবে ‘হাসিমাখা বুড়ো’ কেমেল ‘গম্ভীর ও সিরিয়াস’ চেহারার এরদোয়ানের চেয়ে রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে কম আকর্ষণীয়। কিন্তু কেমালের বড় গুণ—বিপরীত আদর্শের দলগুলোকে এক টেবিলে বসাতে পারা। ছয়দলীয় যে জোটের প্রার্থী হিসেবে তিনি নির্বাচনে লড়েছেন, তাতে উগ্র জাতীয়তাবাদী থেকে শুরু করে কুর্দিদের দলও আছে। অনেক তুর্কি জাতীয়তাবাদীর কাছে কুর্দিরা ‘সন্ত্রাসী’।

তবে মূলধারার তুর্কি সমাজে এত দিন কুর্দিদের যেভাবে ‘খলনায়ক’ হিসেবে দেখা বা দেখানো যেত, সেটা এখন আর কাজ করছে না। সমাজে নতুন খলনায়ক চরিত্র হিসেবে তৈরি করা হচ্ছে সিরিয়ার শরণার্থীদের। কেমেল সামাজিক এই পরিবর্তন ভালোভাবে খেয়াল করেছেন বলে মনে হলো। সে কারণে তিনি শরণার্থীবিরোধী জাতীয়তাবাদী ও কুর্দিদের এক টেবিলে বসিয়ে জোট গড়তে পেরেছিলেন। এই মুনশিয়ানার কিছু ফল ১৪ মে পেয়েছেন তিনি।

কেমাল অতীতে কুর্দিদের প্রতি রাজনৈতিকভাবে সহানুভূতিশীল ছিলেন—এমন নজির কম। অথচ এবার তাদের বড় অংশ তাঁর পক্ষে ছিল। কেমালের এই সম্ভাবনার কথা তুরস্কে থাকা বাংলাদেশি গবেষকেরা হয়তো আমলে নেননি বা নিতে চাননি।

কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আন্ডারডগ বা অপেক্ষাকৃত দুর্বল কখন এগিয়ে যায়, সে প্রশ্নের উত্তর মেলে সমাজের ভেতরকার গভীর অনুসন্ধান থেকে—পূর্বনির্ধারিত কোনো মতাদর্শের ভেতর নয়।

এরদোয়ানের টানা দুই দশকের শাসনামলে তুরস্কে ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতি পক্ষপাত কেন কমল না, দেশটি কেন এত প্রবলভাবে দুই মেরুতে পড়ে আছে, তার উত্তর খুঁজে পাওয়া অবশ্যই এখন প্রধান এক বুদ্ধিবৃত্তিক কাজ হয়ে উঠল। পক্ষপাতমুক্ত ভঙ্গি ছাড়া সেটা করতে পারা দুরূহ।

  • আলতাফ পারভেজ ইতিহাস বিষয়ে গবেষক