গত ২৯ আগস্ট রাশিয়ার ভূখণ্ডে ইউক্রেন সবচেয়ে বড় ড্রোন হামলা চালিয়েছে। হামলার একটি স্থান ছিল এস্তোনিয়ার সীমান্তের কাছে পেসকভ বিমানঘাঁটিতে। যত দূর জানা যায়, ড্রোন হামলায় কমপক্ষে দুটি বা চারটি আইএল–৭৬ জেট বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে।
বহুমুখী কাজে ব্যবহারযোগ্য বিশালাকৃতির আইএল–৭৬ বিমান বিশেষ অভিযানের উপযুক্ত করে তৈরি করা। রুশ বিমানবাহিনীর কেজো ঘোড়া হিসেবে পরিচিত এই বিমান সেনা ও রসদ সরবরাহের কাজে ব্যবহার করা হয়।
১৯৭১ সালে এ ধরনের বিমানের যাত্রা শুরু। রাশিয়াসহ আরও অনেকে এ ধরনের বিমান ব্যবহার করে। এই বিমানের বিভিন্ন সংস্করণ কমপক্ষে এক ডজন বিদেশি সংস্থার কাছে রয়েছে।
পেসকভ বিমানঘাঁটিতে হামলার তাৎপর্য রয়েছে। এটি রাশিয়ার উত্তর–পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত। এস্তোনিয়ার সীমান্ত এলাকা লুহামা থেকে ৬১ কিলোমিটার দূরে এর অবস্থান। আর ইউক্রেনের সীমানা থেকে পেসকভের অবস্থান ৮০০ কিলোমিটার দূরে। ফলে ড্রোন হামলা থেকে চালানো হয়েছে, এ বিষয়ে গুরুতর প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।
দূরপাল্লার ড্রোন পরিচালনার ক্ষেত্রে যোগাযোগের বিশেষ সক্ষমতা প্রয়োজন হয়। যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি রিপারের মতো ড্রোন আকাশ থেকে ভূমিতে উৎক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র বহন করে। এ ধরনের ড্রোন অত্যাধুনিক রাডার ও ইলেকট্রো–অপটিক্যাল গিয়ার দ্বারা সজ্জিত থাকে। জানামতে, ইউক্রেনের কাছে এ ধরনের ড্রোন নেই।
পেসকভ বিমানঘাঁটিতে কোথা থেকে ড্রোন হামলা হলো, তা নিয়ে রাশিয়ান বিশেষজ্ঞরা তিনটি বিকল্পের কথা ভাবছেন। রাশিয়া, বেলারুশ ও এস্তোনিয়া—এসব জায়গা থেকে হামলাটি হয়ে থাকতে পারে। রুশ ভূখণ্ডের অনেক ভেতরে আরও ড্রোন হামলা হওয়ায় এও মনে করা হচ্ছে, ড্রোনগুলো পাচার হয়ে রাশিয়াতে এসেছিল। এমনও হতে পারে মস্কোর কাছাকাছি কোথাও থেকে হামলা পরিচালিত হয়েছে।
ইউক্রেনীয়রা রাশিয়ার ভূখণ্ডের মধ্যে অন্তর্ঘাতমূলক হামলাও করে আসছে। এ কাজে তারা রুশ নাগরিকদের ব্যবহার করে। রাশিয়ার গণমাধ্যমে দেশটির ভেতরে হামলা সম্পর্কে প্রায় কোনো তথ্যই দেওয়া হয় না। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রাশিয়ার যেসব স্থানে হামলা হয়েছে, তার ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। কিছু ক্ষেত্রে এ ধরনের অন্তর্ঘাতমূলক হামলার লক্ষ্যবস্তু হচ্ছে সামরিক স্থাপনা। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সরকারি ভবন, শপিং মল ও গুদাম লক্ষ্য করে প্রচুর হামলা হচ্ছে। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা বাহিনী এ ধরনের হামলা বন্ধ করতে পারছে না।
ড্রোন হামলা ও অন্তর্ঘাতমূলক হামলা ইউক্রেন ভূখণ্ডে যে যুদ্ধ চলছে, তার গতিপথ খুব একটা পাল্টে দেবে না। কিন্তু এই হামলা দিয়ে ইউক্রেনীয়রা দেখাতে চায় যে, রাশিয়ার প্রতিরক্ষাব্যবস্থা দুর্বল এবং নিজেদের দেশের গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ রক্ষার সামর্থ্য রুশ সরকারের নেই। সর্বোপরি রাশিয়ার সাধারণ নাগরিকদের প্ররোচিত করার মধ্য দিয়ে ইউক্রেন এটা দেখাতে চায় যে রাশিয়ায় প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সরকারের বিরুদ্ধে তার দেশেই জোরালো বিরোধিতা রয়েছে। যদিও ২৯ আগস্ট রাশিয়াতে ইউক্রেনের ব্যাপক ড্রোন হামলার দিন, কিয়েভে ব্যাপক বোমা হামলা চালায় রাশিয়া।
রাশিয়ার অভ্যন্তরে এসব হামলার সংখ্যা যত বাড়ছে, ন্যাটোর জন্য উদ্বেগ ততই বাড়ছে। ন্যাটোর সদস্যরাষ্ট্রের সীমান্ত অঞ্চলে হামলা শেষ পর্যন্ত আন্তসীমান্ত সংঘাত ডেকে আনতে পারে। এতে ন্যাটোকে সরাসরি সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে হতে পারে। ইউক্রেনের ইজমেইল শস্য সংরক্ষণাগার ও দানুবু বন্দরে হামলার মধ্য দিয়ে রাশিয়া সম্প্রতি বড় একটা ঝুঁকি নিয়েছে। কেননা, নদীর অপর পাড়েই রোমানিয়া।
এ ব্যাপারে সন্দেহ নেই যে রাশিয়া এখন তাদের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তাব্যবস্থা উন্নত করবে এবং ড্রোন হামলা ঠেকিয়ে দিতে প্রতিরক্ষাব্যবস্থা আরও আধুনিকায়ন করবে। কিন্তু রাশিয়ার অভ্যন্তরে হামলার লক্ষ্যবস্তু ঠিক করার ক্ষেত্রে ইউক্রেনকে সতর্ক হতে হবে। রাশিয়ার পারমাণবিক অস্ত্র যেখানে রক্ষিত আছে কিংবা রাশিয়ার কৌশলগত বিমান যেসব জায়গায় রয়েছে, সেসব অঞ্চল তাদের এড়িয়ে চলা উচিত। এ ধরনের স্থাপনায় হামলা হলে রাশিয়া এই ব্যাখ্যা দাঁড় করাবে যে সরাসরি ন্যাটোর দিক থেকে হামলা হয়েছে। ক্ষণিকের একটি ভুল ইউক্রেন যুদ্ধকে রাশিয়া–ন্যাটো যুদ্ধে পরিণত করতে পারে। এ রকম কোনো যুদ্ধের জন্য মোটেই প্রস্তুত নয় ন্যাটো।
স্টিফেন ব্রায়েন সেন্টার ফর সিকিউরিটি পলিসির সিনিয়র ফেলো
এশিয়া টাইমস থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনূদিত