ইরান কি নারী প্রেসিডেন্টের জন্য প্রস্তুত?

ফাইজেহ হাশেমি

ইরানে কয় মাস পরই প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। ইরানে যে নির্বাচনী গণতন্ত্র রয়েছে সেটা এই নির্বাচন এলেই বোঝা যায়। নির্বাচনকে ঘিরে জমে ওঠে ক্ষমতার পাশা খেলা। ক্ষমতার ভরকেন্দ্রগুলো কোথায়, সেসবও খানিক টের পাওয়া যায়। বিশেষভাবে সামনে আসে কট্টরপন্থী এবং সংস্কারপন্থীদের মেরুকরণ।

এবারও ইতিমধ্যে কয়েকজন প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর নাম তেহরানের রাজনৈতিক আড্ডাগুলোতে গুঞ্জরিত হচ্ছে। কৌতূহলের বিষয়, তালিকায় একজন নারীও আছেন। তিনি ফাইজেহ হাশেমি।

ফাইজেহ সাবেক প্রেসিডেন্ট আলী আকবর রাফসানজানির মেয়ে। রাফসানজানি ইরান বিপ্লবের অন্যতম সংগঠক। যোগ্যতায় কন্যাও কম যান না। তুমুল বিতর্কিতও। কিন্তু যত যোগ্যই হোন, ফাইজেহ হয়তো নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না। আইনে কোনো বাধা নেই। গার্ডিয়ান কাউন্সিলের মুখপত্র আব্বাস আলী খাদখোদেঈ কয়েক মাস আগে তা ব্যাখ্যাও করেছেন। তারপরও বলা হয়, ইরান এখনো নারী প্রেসিডেন্টের জন্য প্রস্তুত নয়।

‘বিপ্লব’ও যখন নারী-সমতার জন্য যথেষ্ট নয়
ইরানের সংবিধানের ১১৫ নম্বর ধারায় সম্ভাব্য প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর যোগ্যতা তুলে ধরতে ‘রজল-ই সিআইসি’শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। অর্থাৎ তিনি হবেন একজন ‘রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব’। ফারসি সংবিধানে অন্তর্ভূক্ত এই শব্দটি আদতে আরবি। কেউ কেউ এই আরবির তর্জমা করছেন ‘রাজনৈতিক পুরুষ’। এই ব্যাখ্যা বলে ২০০৫-এ আজম তেলেঘানি নামে এক নারীকে নির্বাচন করতে দেওয়া হয়নি। তবে অর্থ যা-ই হোক, ফাইজেহর মতো কোনো নারীকে ইরানের গার্ডিয়ান কাউন্সিলের পক্ষে মেনে নেওয়া কঠিনই হবে। গার্ডিয়ান কাউন্সিলই ইরানে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী বাছাই করে।

ফাইজেহ হাশেমির সমস্যা জনপ্রিয়তা নয়। অন্যত্র। ইরানের বিপ্লবী মনোজগৎ এখনো নারীকে ওই পদে দেখার মতো অবস্থায় আসেনি। যেভাবে খ্যাতিমান বিপ্লবী হয়েও আজম তেলেঘানির স্বপ্নও অধরাই থেকেছে। তিনি ছিলেন আয়াতুল্লাহ মাহমুদ তেলেঘানির মেয়ে। মাহমুদ তেলেঘানি ছিলেন বিখ্যাত দার্শনিক আলী শরিয়তি গ্রুপের সংস্কারপন্থীদের একজন। এদের প্রভাবেই আজম তেলেঘানির রাজনৈতিক জীবন, শাহর কারাগারে বন্দিত্ব, বিপ্লব-পরবর্তী প্রথম পার্লামেন্টে নির্বাচিত হওয়া। কিন্তু তার এই জীবনবৃত্তান্তও গার্ডিয়ান কাউন্সিলের কাছে নাকচ হয়ে যায়, যখন তিনি বিপ্লব-পরবর্তী সমাজে নারীর জন্য বাড়তি সংস্কার চাইতে শুরু করেন। বিরুদ্ধবাদীদের কাছে তাঁর দীর্ঘ হিজাব নয়, নারীর জন্য বাড়তি পরিসর খোঁজার চেষ্টাই মূল পরিচয় হয়ে উঠেছিল। ‘বিপ্লব’ও যে অনেক সময় নারী-সমতার আবহ তৈরি করে না, এটা তার লাল-নিশানা।

কট্টরপন্থীদের সামনে বাধা হয়ে উঠছেন বাইডেন!
৪২ বছর পেরোনোয় প্রতীকীভাবেই বলা হয়, তারুণ্য পেরিয়েছে ইরান বিপ্লব। অন্তত দুটি প্রশ্নে এই বিপ্লব এখন খুব স্পর্শকাতর। প্রথমত, ইরানের যুক্তরাষ্ট্রনীতি। দ্বিতীয়ত, মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে জেনারেল সোলাইমানির ভূমিকা নিয়ে কোনো প্রশ্ন তোলা। ফাইজেহ হাশেমি ঠিক তাই করেন বারবার।

ফাইজেহর মতো নারী-পুরুষেরা ইরানের রাজনীতিতে এ মুহূর্তে এমন এক পক্ষ, যারা চরম চ্যালেঞ্জে আছে। এদেরই প্রতিনিধি প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি। রাজনীতিতে মধ্যপন্থী। সংস্কারপন্থীরা তাঁর ওপরই বাজি ধরেছিল একদা। দেখতে দেখতে শেষ হচ্ছে তাঁর দুই মেয়াদের শাসন। কিন্তু রাজনৈতিক সংস্কারে সামান্য কদমও ফেলতে পারেননি বা ফেলেননি। নাগরিক স্বাধীনতা থেকে শুরু করে বন্দীমুক্তি, কোনো খাতেই সংস্কারপন্থীদের খুশি করার মতো কোনো পদক্ষেপ নেননি রুহানি। প্রধান নেতা আলী খামেনির ওপর তাঁর নিয়ন্ত্রণ আছে কি নেই, সেটাও কখনো স্পষ্ট হয়নি। মুখ্যনেতাও মূলত ক্ষমতার অন্য ভরকেন্দ্রগুলোর চরিত্র বুঝে-শুনে নিজের অবস্থান জাহির করেন। ফলে সংস্কার নিয়ে ইরানি সমাজে এ মুহূর্তে চলছে চরম হতাশা। আগামী নির্বাচন নিয়েও আশাবাদী নন তরুণেরা। এটা অবশ্য একই সঙ্গে কট্টরপন্থীদের জন্য সুযোগ। ইরানের কেউ নয়, তাদের সামনে সামান্য বাধা হয়ে উঠেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট! ব্যাপারটা খানিক অদ্ভুতই বটে। বাইডেনের নমনীয় ইরান নীতি কট্টরপন্থীদের জন্য নিজেদের পেছনে ভোটারদের জড়ো করতে অসুবিধা সৃষ্টি করছে।

ভোটে আগ্রহ হারাচ্ছে তরুণ-তরুণীরা
বিশ্বজুড়ে ভূরাজনীতিতে অদ্ভুত সমীকরণের কমতি নেই। তিন মাস আগে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে যখন নির্বাচনী প্রচার চলছিল, সৌদি আরব থেকে আফগান-তালিবান পর্যন্ত অনেক মুসলমান শক্তিই তখন ট্রাম্পের বিজয় চাইছিল। ইরানে সংস্কারপন্থী ও কট্টরপন্থী—উভয় ধারা থেকেই ও রকম কামনা ছিল। সংস্কারপন্থীদের ওই চাওয়ার পিছনে ছিল একধরনের হতাশা। ট্রাম্পের কঠোর ইরাননীতি দ্বিতীয় বিজয়ে আরও তীব্র হতে পারে, এমনই ভাবছিল তারা। বাড়তি চাপে হয়তো দেশটিতে রাজনৈতিক সংস্কার গতি পাবে, এই ছিল সেই আশাবাদের ভিত্তি।

কট্টরপন্থীদের হিসাব ছিল উল্টো। ট্রাম্প জিতলে তাঁকে প্রতিপক্ষ দেখিয়ে নবীন ভোটারদের একত্র করা সহজ হতো। বিশেষ করে যে ট্রাম্প ‘জেনারেল সোলাইমানির হত্যাকারী’। বাস্তব ঘটনা কোনো ধারারই পছন্দমতো ঘটেনি। বরং ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক সহজ করতে চাইছেন বাইডেন। প্রেসিডেন্ট রুহানির জন্য এটা অক্সিজেনতুল্য। তবে মজলিশের স্পিকার মোহাম্মদ বাগির গালিবাফ, প্রধান বিচারপতি এব্রাহিম রাইসি থেকে শুরু করে সাবেক প্রেসিডেন্ট আহমাদিনেজাদ পর্যন্ত কট্টরপন্থীরা ভাবছেন এতে আসন্ন নির্বাচনে তাঁদের ক্যাম্পের বিজয় হাতছাড়া হতে পারে।

আবার সংস্কারপন্থী বুদ্ধিজীবীরা মনে করেন, বাইডেন যতই ছাড় দেন, সবই রুহানির জন্য দেরি হয়ে গেছে। ইরানে আরেকজন সংস্কারপন্থী প্রেসিডেন্ট পাওয়া কঠিন হবে। কারণ, তরুণ-তরুণীরা রুহানির আট বছরের অচলায়তনে অতিষ্ঠ, হতাশ। তারা আর মনে করে না ভোটের মাধ্যমে পরিবর্তন সম্ভব। এ রকম ভোটারদের আবার ভোটকেন্দ্রে নেওয়া কঠিন হবে। ২০১৭ সালের মতো ৭৩ শতাংশ ভোট পড়ার সম্ভাবনা আর নেই। একই রকম ঘটে ২০২০-এর পার্লামেন্ট নির্বাচনে। মাত্র ৪২ ভাগ ভোট পড়ে, ৪২ বছরের ইরান বিপ্লবে যা সর্বনিম্ন। যদিও ভোট দেওয়াকে এখানে ধর্মীয় দায়িত্ব হিসেবেই প্রচার করা হয় মৌসুম এলে।

আমেরিকা দেরি করে ফেলেছে
ইরানে ক্ষমতার ভরকেন্দ্র কোনটি বা কয়টি বহির্বিশ্ব থেকে তা চট করে আন্দাজ করা কঠিন। সর্বোচ্চ নেতা ছাড়াও ওখানে আছে বিশেষজ্ঞ পরিষদ, অভিভাবক পরিষদ, প্রেসিডেন্ট, পার্লামেন্ট, রেভল্যুশনারি গার্ড, আরও আছে পবিত্র কোম শহরের মুজতাহিদ ও মার্জারা। এরা সবাই ইরানের রাজনীতিকে প্রভাবিত করে। প্রেসিডেন্ট ছাড়া ক্ষমতার এই ভরকেন্দ্রগুলো এখন কট্টরপন্থীদের নিয়ন্ত্রণে। আমেরিকার দীর্ঘ অবরোধ ইরানে কেবল মার্কিন বিরোধিতায়ই কাজে লাগেনি, গণতান্ত্রিক সংস্কারের বিরোধিতায়ও কাজে লেগেছে। দেশের ওপর বহির্বিশ্বের চাপ যত বেড়েছে, গণতান্ত্রিক পরিসরকে তত ছেঁটে ফেলা হয়েছে। তারপরও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে তরুণ-তরুণীরা দল বেঁধে এখনো নিচু স্বরে পরিবর্তনের কথা বলে। এ রকম কথাবার্তার মাঝেই কেউ কেউ নিখোঁজ হয়ে যায়। ভিন্নমতাবলম্বীদের জন্য সর্বত্র নজরদারি কাজ করছে। এ রকম ছোট ছোট তরুণ গ্রুপগুলো আবার বহুধা বিভক্ত। তাদের নেই জাতীয় পরিসরের কোনো নেতা। অথচ তারাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। অন্তত রুহানির দুই দফা নির্বাচনী বিজয় তাই দেখিয়েছিল।

বিপরীতে কট্টরপন্থীদের ভরকেন্দ্রগুলো অনেক সংগঠিত। এ মুহূর্তে আমেরিকা প্রশ্নে ছাড় না দিতে তারা রুহানিকে তীব্র বাধা দিচ্ছে। এ রকম ছাড়টি তারাই দিতে চায় নিজেদের প্রেসিডেন্টের মাধ্যমে, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর। অর্থাৎ যেকোনোভাবে প্রেসিডেন্ট পদটি দখলে নিতে চাইছে তারা। আর বাইডেন চাইছেন রুহানির সঙ্গেই ফয়সালা করতে। তবে আমেরিকার এই নীতির সফলতার জন্য অনেক দেরি হয়ে গেছে। মার্কিন অবরোধ ইরানিদের অর্থনৈতিকভাবে এবং রুহানিকে রাজনৈতিকভাবে পঙ্গু করে দিয়েছে। দোষের ভাগী হতে হয়েছে রুহানিকেই। জনগণ তাদের দুরবস্থার জন্য ভোট দেওয়া প্রেসিডেন্টকেই দুষবে, এটাই স্বাভাবিক।

বাইডেন পুরোনো ভুলগুলো শোধরাতে চাইছেন
ট্রাম্প সর্বনাশ করে গেলেও রুহানির শেষলগ্নে বাইডেন চেষ্টা করছেন ইরানি তরুণ-তরুণীদের মাঝে আশার সলতে জ্বালিয়ে রাখতে। যদিও ইরানে যুক্তরাষ্ট্রকে বিশ্বাস করা হয় কমই। ইসরায়েলের প্রতি দশকের পর দশক অন্ধ মদদের কারণে ওয়াশিংটনের প্রতি ইরানিদের গভীর অবিশ্বাস। পাশাপাশি তারা একই শক্তিকে দেখেছে ইরাকে সাদ্দামের পাশে। সাদ্দামকে নির্মূলেও দেখেছে। একই শক্তির হাতে সোলাইমানিকেও মরতে দেখেছে। এ রকম কাউকে গণতন্ত্রের সংগ্রামে মিত্র ভাবা সহজ নয়। কিন্তু ইরানে তরুণদের সামনে ভরসার বিকল্প কোথায়? এমনকি তাদের ভোট বয়কটেও জিত হবে কট্টরপন্থীদেরই। শেষ পর্যন্ত গার্ডিয়ান কাউন্সিল অনুমোদিত সংস্কারপন্থী (জাভেদ জারিফ?) কাউকে না পেলে মধ্যপন্থী আলী লারিজানির মতো কাউকেই তাদের সমর্থন করতে হবে।

তবে বাইডেন আরও অনেক দিন ইরান বিষয়ে পুরোনো ভুল শোধরাতে চেষ্টা চালিয়ে যাবেন। আগামী কয়েক মাস তাঁর প্রতিটি পদক্ষেপ দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে প্রভাবিত করবে। ইরানের ওপর থেকে অবরোধ তুলে নেওয়াটা হবে রুহানি এবং সংস্কারপন্থীদের জন্য বড় উপহার। তবে এই অবরোধ তুলে নেওয়ার বিনিময়ে ইরানের তরফ থেকে নমনীয় অবস্থান গ্রহণে রুহানি সব উপায়ে বাধা পাবেন। পাশ্চাত্যপন্থী বলে তাঁকে অজনপ্রিয় করে তোলা হবে। বাইডেন ইতিমধ্যে কোরিয়ার ব্যাংকে আটকে থাকা ইরানের কিছু তহবিল ছাড়েরও ইঙ্গিত দিয়েছেন। এভাবে ইরান হয়তো শিগগিরই এক বিলিয়ন ডলার পাবে।

তবে বাইডেন ও আমেরিকা ছাড়াও ইরানে সংস্কারপন্থী-কট্টরপন্থীদের বিরোধের মূলে দেশীয় আরো অনেক প্রশ্ন রয়েছে। ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ সামলানোর নামে দেশটিতে নজরদারির ব্যাপকতায় সমাজ বিরক্ত। গার্ডিয়ান কাউন্সিল থেকে রিপাবলিকান গার্ড পর্যন্ত বিভিন্ন সংস্থার নির্বিচার ক্ষমতায় জনতা একা হয়ে গেছে। ক্ষমতার এসব ভরকেন্দ্রগুলো কর্তৃত্বের বিশাল মিনার হয়ে উঠেছে। তরুণ-তরুণীরা এসবের সংস্কার চায়। ফাইজেহ হাশেমির নির্বাচন করতে না-পারা সে রকম কর্তৃত্বেরই একটা রূপ। তিনি নিজে সংস্কারবাদী নন, বরং কট্টরপন্থী। কিন্তু পুরুষতান্ত্রিক ছাকনিতে আটকে গেছেন ওই শিবিরে থেকেও। আবার কট্টরবাদী হয়েও তিনি জেনারেল সোলাইমানির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। তাঁর ভাষায়, সোলাইমানি ইরানের ভেতরকার মানুষের জীবনযাপনের পরিবর্তনে ঠিক কী ভূমিকা রেখেছেন?

ফাইজেহর মতো মুখগুলো মূলত বলতে চাইছে, ইরানে অভ্যন্তরীণ প্রচুর সংস্কার দরকার। আন্তর্জাতিক ভূমিকা রাখার আগেই সেসব অগ্রাধিকার পাওয়া জরুরি। কিন্তু ইরানে খুব কম নীতিনির্ধারক এ রকম ভিন্নমতাবলম্বীদের সামনে আসতে দিতে চায়। এ রকম প্রতিরোধকারীদের মাঝে আছেন ফাইজেহ হাশেমির ভাই মহসেন হাশেমিও। তেহরান সিটি কাউন্সিলের তিনি প্রধান।

এভাবে ইরান বিপ্লব ৪২ বছরের মাথায় নানা ফিল্টারে আটকে দমবদ্ধ অবস্থায় এসে পৌঁছেছে। নির্বাচন এই অবস্থার মৌলিক ও সুদূরপ্রসারী সমাধান দিতে অক্ষম। ইরানি মনীষা তাই ইতিহাসের বিষণ্নতম সময় পার করছে। ফাইজেহ হাশেমিকেও রাজনৈতিক অতৃপ্তি নিয়ে আজম তেলেঘানির মতোই দুনিয়া থেকে বিদায় নিতে হতে পারে। এমনকি এ ক্ষেত্রে বাবা আকবর হাশেমি রাফসানজানির সেই রহস্যময় মৃত্যুর কথাও মনে রাখতে হবে। এখন থেকে চার বছর আগে উত্তর তেহরানের এক সুইমিংপুলে পাওয়া গিয়েছিল ইরান বিপ্লবের এই দ্বিতীয় প্রভাবশালীর লাশ। ২০১৭ সালের ৮ জানুয়ারির ওই বিকেলে মৃত্যুর সময় পুলের বৈদ্যুতিক বাতিগুলো কেন যেন নিভে যায়। আর রাফসানজানির শরীর মোছার তোয়ালেতে মেলে প্রচুর তেজস্ক্রীয় উপাদান।

প্রতিটি বিপ্লবের পরই এ রকম নানা রহস্যময় ফাঁকফোকর গলে হাজির হয় অনেক প্রতিবিপ্লবী মুহূর্ত। রাফসানজানি কেন মারা গিয়েছিলেন, তা নিয়ে বিস্তর ‘গল্প’ আছে। সেই গল্পের শুরু ২০১৬ সালের মার্চে তাঁর এ রকম এক টুইট থেকে: ‘মিসাইল নয়, আগামী বিশ্ব হবে আলোচনা ও দর-কষাকষির।’ মার্চ ইরানে নওরোজের মাস। পাঁচ বছর পর আরেক নওরোজের আগে ইরান এখনো আলোচনা বনাম মিসাইলের টানাপোড়েনেই আছে এবং ফাইজেহ বাবার অঙ্গীকার বয়ে চলেছেন।
চার ঋতুর ইরানে ফেব্রুয়ারিতে অনেক সময় তুষারপাত হলেও মার্চে বসন্ত চমৎকার। এবার মার্চে কী হবে, জানি না।

আলতাফ পারভেজ দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাস বিষয়ে গবেষক