ঢালাওভাবে রুশ সিনেমা বর্জন শিল্পের ভাষা নয়

রাশিয়ার সিনেমা বর্জনের ডাকে এ প্রতীক ব্যবহার করা হচ্ছে
ছবি : সংগৃহীত

পুতিনের ট্যাংকগুলো ইউক্রেনের সীমান্ত অতিক্রম করার দিন কয়েকের মধ্যে আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবগুলোতে রাশিয়ার ছবি নিষিদ্ধ করার আহ্বান জানিয়ে করা একটি আবেদনে স্বাক্ষর করার জন্য আমাকে অনুরোধ করা হয়েছিল। ওই আবেদনে ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব ফিল্ম প্রডিউসারস অ্যাসোসিয়েশনস থেকে মস্কো ইন্টারন্যাশনাল ফিল্মকে বহিষ্কার করার দাবি জানানো হয়। এ ছাড়া সেখানে সব প্রযোজক ও পরিবেশককে রাশিয়ায় কিংবা রাশিয়ার সঙ্গে কাজ করার বন্ধ করার দাবি করেছে।

পিটিশন বা আবেদনটি পড়ার পর আমার ডেনিশ-ফিলিস্তিনি পরিচালক মাহদি ফ্লাইফেলের স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র আই সাইন দ্য পিটিশন–এর কথা মনে পড়ল।

২০১৭ সালে ব্রিটিশ রক সুপারগ্রুপ রেডিওহেড ইসরায়েলে কনসার্ট করার সিদ্ধান্ত নিলে আন্তর্জাতিক শিল্পকলার অনেক গুণীজন তাদের ওই সফর বাতিল করার জন্য একটি আবেদন জানান। সেখানে ফ্লাইফেলকে সই করতে অনুরোধ জানানো হয়। সেই পিটিশনে দুবারের পামদ’র বিজয়ী কেইন লোচের মতো আলোকিত ব্যক্তিরাও তাতে স্বাক্ষর করেছিলেন।

পিটিশনে সই করার পর সই করা ঠিক হয়েছে কি না, তা নিয়ে ফ্লাইফেল ভাবনায় পড়ে যান। এ নিয়ে সেই ছবির গল্প।

ইউক্রেনের পিটিশনটি চলচ্চিত্র সম্প্রদায়ের কাছ থেকে বেশ ভালো প্রতিক্রিয়া পেয়েছে। স্টকহোম ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল ঘোষণা করেছে, তারা রাশিয়ান চলচ্চিত্রকে জায়গা দেবে না।

ইএফএ এ বছরের পুরস্কারে রাশিয়ান চলচ্চিত্রগুলোকে প্রতিযোগিতা থেকে নিষিদ্ধ করায় তিনি সংক্ষুব্ধ হন। লোজনিৎসা বলেছেন, ‘আমাদের অবশ্যই পাসপোর্টের ভিত্তিতে কাউকে বিচার করা উচিত নয়। আমরা তাদের কাজের ওপর বিচার করতে পারি।’ তাঁর এ অবস্থানের জন্য তাঁকে ইএফএ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

গ্লাসগো ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল রুশ পরিচালক কিরিল সোকোলভ পরিচালিত নো লুকিং ব্যা এবং লাদো কোয়াতানিয়া পরিচালিত থ্রিলার দ্য এক্সিকিউশন—এ দুটি রাশিয়ান ছবি প্রদর্শনী থেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছে।

গ্লাসগোর সিদ্ধান্তের বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হয়েছে। লোকেরা যুক্তি দিয়েছিল, এ চলচ্চিত্রগুলো প্রত্যাহার করায় এমন বার্তা দেওয়া হয়েছে যে এ ছবি দুটোর পরিচালকদের উৎসবের আয়োজকেরা পুতিনের এজেন্ট হিসেবে বিবেচনা করেছেন।

গ্লাসগো ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল কারণ ব্যাখ্যা করে বলেছে, তারা পরিচালকদের জাতীয়তার কারণে ছবিগুলো বাদ দেয়নি। এর কারণ হলো, এ ছবি দুটোর প্রযোজনায় যে ট্রাস্টি অর্থায়ন করেছে, সেই ট্রাস্টি বোর্ডে পুতিন সরকারের একজন বর্তমান মন্ত্রী এবং রাশিয়ান সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

আরও পড়ুন

কান চলচ্চিত্র উত্সব বলেছে, তাদের কাছে যে রাশিয়ান চলচ্চিত্রগুলো জমা পড়েছে, সেগুলোর বিষয়ে তারা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পরীক্ষা করবে। সেখানে রাশিয়ার সরকারি প্রতিনিধি, এমনকি রাশিয়ান সরকারের সঙ্গে যুক্ত কারও জায়গা হবে না।

তবে উত্সব কমিটি সেই রাশিয়ান শিল্পী এবং চলচ্চিত্র পেশাদারদের সাহসের প্রশংসা করেছে, যাঁরা পুতিনের স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করা বন্ধ করেননি।

ভেনিস ও সান সেবাস্তিয়ানের মতো অন্যান্য উত্সবও কানের পদ্ধতিকে অনুসরণ করছে। তারাও বুঝতে পারছে, যদি একেবারে সবাইকে বাদ দেওয়া হয়, তাহলে আপনি যঁাকে সমর্থন করেন, তিনিও বাদ পড়ে যাবেন।

আরও পড়ুন

ঢালাওভাবে ব্যবস্থা নেওয়ার অনিচ্ছাকৃত পরিণতি হতে পারে। দনবাসের পুরস্কার বিজয়ী ইউক্রেনের চলচ্চিত্র নির্মাতা সের্গেই লোজনিতসা সম্প্রতি ইউরোপিয়ান ফিল্ম একাডেমির (ইএফএ) সদস্যপদ ছেড়ে দিয়েছেন। তিনি মনে করেছেন, পিটিশনটি যথাযথ হয়নি। ইএফএ এ বছরের পুরস্কারে রাশিয়ান চলচ্চিত্রগুলোকে প্রতিযোগিতা থেকে নিষিদ্ধ করায় তিনি সংক্ষুব্ধ হন। লোজনিৎসা বলেছেন, ‘আমাদের অবশ্যই পাসপোর্টের ভিত্তিতে কাউকে বিচার করা উচিত নয়। আমরা তাদের কাজের ওপর বিচার করতে পারি।’ তাঁর এ অবস্থানের জন্য তাঁকে ইএফএ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

আমি নিজে লোজনিৎসার সঙ্গে একমত। কারণ, পুতিনের রাশিয়াতেই এমন অনেক চলচ্চিত্র নির্মাতা ও কলাকুশলী আছেন, যাঁরা নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অনেক ছবি বানান। ইরানের দিকে তাকালে দেখা যাবে সেখানে অনেক পরিচালক তাঁদের সিনেমার মাধ্যমে ভিন্নমত প্রকাশ করতে পেরেছেন। জাফর পানাহির মতো কেউ কেউ গ্রেপ্তার বা চলচ্চিত্র নির্মাণ থেকে নিষিদ্ধ হওয়ার পরও নিজের কাজ অব্যাহত রেখেছেন। আব্বাস কিয়ারোস্তামি এবং অতি সম্প্রতি আসগর ফারহাদির চলচ্চিত্রও আমাদের এ বিষয়ে ধারণা দেয়।

এশিয়া টাইমস থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনূদিত

কলিম আফতাব একজন চলচ্চিত্র সমালোচক এবং রেড সি ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের আন্তর্জাতিক প্রোগ্রামিং পরিচালক