ভোটের ফল দেখার অপেক্ষায় পশ্চিমবঙ্গ

পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল কংগ্রেস, কংগ্রেস-বাম জোট ও বিজেপির নেতারা এত দিন অপেক্ষার প্রহর গুনছিলেন। আজ বৃহস্পতিবার তাঁদের অপেক্ষার পালা শেষ হতে যাচ্ছে। কেননা, আজই পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করা হবে। গত ৪ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া ৬ দফার নির্বাচন শেষ হয়েছে ৫ মে।
ইতিমধ্যে বুথফেরত সমীক্ষা ইঙ্গিত দিয়েছে মমতার দলের জয়ের। তাও আবার বিপুল ভোটের ব্যবধানে। তবে বুথফেরত সমীক্ষাকে অতটা গুরুত্ব দিতে নারাজ বিরোধী পক্ষগুলো। কারণ, ভোটাররা কাকে ভোট দিয়েছেন, তা কেবল ভোটযন্ত্র বা ইভিএম বলতে পারে। আর সেই ভোটযন্ত্র মুখ ফুটে কথা বলবে আজ। আজই জানিয়ে দেবে এই ভোটের খেলায় কে জিতেছে আর কে হেরেছে। তবু বিরোধী পক্ষগুলো আশায় বুক বেঁধে একটি অঘটনের প্রহর গুনছে। শুধু বিরোধী দলই নয়, অঘটনের প্রহর গুনছে মমতার তৃণমূল কংগ্রেসও। তবে তা অন্যভাবে। যদিও মমতা আগে থেকে নিশ্চিত ছিলেন, তাঁর দলই ক্ষমতায় ফিরছে। কিন্তু কত আসনের ব্যবধানে তাঁরা জিততে চলেছেন, এ নিয়ে সংশয়ে ছিলেন মমতা। তৃণমূল চাইছে এমন এক অঘটন ঘটুক, যাতে দুই-তৃতীয়াংশ আসনে জয়ী হয় তারা। আর কংগ্রেস-বাম জোট চাইছে এমন একটি অঘটন ঘটে যাক, যাতে এই জোটই ক্ষমতায় আসতে পারে।
মমতা বিধানসভায় দুই-তৃতীয়াংশ আসন পাওয়ার প্রত্যাশা করছেন ইন্ডিয়া টুডের বুথফেরত সমীক্ষা দেখে। ওই সমীক্ষায় বলা হয়েছে, মমতার তৃণমূল কংগ্রেস জিততে চলেছে ২৩৩ থেকে ২৫৩টি আসন। আর বাম-কংগ্রেস জোট জিততে চলেছে ৩৮ থেকে ৫১টি আসন। বিজেপি পেতে যাচ্ছে মাত্র ১ থেকে ৫টি আসন। পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় রয়েছে ২৯৪টি আসন।

>বিজেপির সাবেক রাজ্য সভাপতি রাহুল সিনহাও বলেছেন, ‘এই সমীক্ষার গুরুত্ব নেই তাঁদের কাছে। একাধিক নির্বাচনে বুথফেরত সমীক্ষা ভুল বলে প্রমাণিত হয়েছে।’

এবিপি আনন্দ–নিয়েলসনের বুথফেরত সমীক্ষা বলছে, তৃণমূল পাচ্ছে ১৬৩টি আসন আর বাম-কংগ্রেস জোট পাচ্ছে ১২৬টি। পাশাপাশি এ কথাও বলা হয়েছে, এসব আসনের মধ্যে এমন ২৫টি আসন রয়েছে, যার জয়-পরাজয় হবে অতি সামান্য ভোটের ব্যবধানে। এই ২৫টি আসনকে তারা তৃণমূলের ঝুলিতে রেখে দিয়েছে। বিজেপিকে এবিপি আনন্দ–নিয়েলসন আসন দিয়েছে মাত্র একটি। এনডিটিভি দিয়েছে তিনটি। টাইমস নাউ দিয়েছে চারটি। এতে সন্তুষ্ট নয় বিজেপি। তারা মনে করে, তারা অন্তত ১০টি আসনে জিতবে। তাই তারাও গুরুত্ব দিচ্ছে না বুথফেরত সমীক্ষাকে।
তৃণমূল মনে করছে, ঘটনা তো অবশ্যই ঘটবে, তবে সেটা কারও কারও কাছে অঘটনও হতে পারে। অনেক প্রচার হয়েছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। হয়েছে অপপ্রচারও। তাই এবার নতুন করে অঘটন ঘটিয়ে প্রমাণ করা হবে এই রাজ্যের মানুষ তৃণমূলের পাশে আছে। তৃণমূলের উন্নয়নের শরিক তারা।
আর বাম-কংগ্রেস জোট ভাবছে, এটা কেমন করে হয়? যাঁদের বিরুদ্ধে সারদার কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের মামলা ঝুলছে, নারদকােণ্ড যে দলের নেতাদের ঘুষ গ্রহণের ছবি প্রকাশ্যে এসেছে, সেই নেতাদের মানুষ ভোট দিয়েছেন? তাহলে সততার স্থান কোথায় রইল? এসব নেতা জিতলে তো তাঁরা আরও শক্তিশালী হবেন। আরও দুর্নীতি করবেন। কংগ্রেসের নেতা ওমপ্রকাশ মিশ্র বুথফেরত সমীক্ষাকে উপেক্ষা করে বলেছেন, ‘বাম-কংগ্রেস জোটই সরকার গড়বে। গত বছরের বিহার বিধানসভা নির্বাচনে সব সংবাদমাধ্যম বুথফেরত সমীক্ষায় ইঙ্গিত দিয়েছিল, ক্ষমতায় আসছে বিজেপি। বিজেপিও তখন জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী ছিল। কিন্তু ভোট গণনার পর দেখা গেল, সব উল্টে গেছে। জিতেছে লালু প্রসাদের রাষ্ট্রীয় জনতা দল, নিতীশ কুমারের সংযুক্ত জনতা দল আর কংগ্রেসের জোট। এবার পশ্চিমবঙ্গে সেই ঘটনাও তো ঘটতে পারে?’ সেটা ঘটবে বলেই এখনো মনে করছেন বাম-কংগ্রেস জোটের নেতারা। বিরোধীদলীয় সিপিএম নেতা মহম্মদ সেলিম, কংগ্রেস নেতা মানস ভূঁইয়ারা বলেছেন, তাঁরা আস্থা রাখতে পারছেন না এই বুথফেরত সমীক্ষার ওপর। তাঁদের দলীয়ভাবে করা সমীক্ষায় দেখা গেছে, সরকার গড়ছে বাম-কংগ্রেস জোট।
আবার বিজেপির সাবেক রাজ্য সভাপতি রাহুল সিনহাও বলেছেন, ‘এই সমীক্ষার গুরুত্ব নেই তাঁদের কাছে। একাধিক নির্বাচনে বুথফেরত সমীক্ষা ভুল বলে প্রমাণিত হয়েছে।’ আর তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ও সাংসদ সুব্রত বক্সি বলেছেন, বুথফেরত সমীক্ষার ব্যাপারে তাঁদের কোনো আগ্রহ নেই।
তাই বলা চলে, এখন পশ্চিমবঙ্গের বাম-ডান সব দলই তাকিয়ে আছে ভোটযন্ত্রের দিকে। কী বলে ভোটযন্ত্র, তা-ই শোনার জন্য অপেক্ষা। আজ ভোটযন্ত্র ভোটের ফলাফল ঘোষণা করবে।
অমর সাহা: প্রথম আলোর কলকাতা প্রতিনিধি।