দ্রুত সংকট নিরসন করুন

সম্পাদকীয়

আমাদের দেশে শিশুর জন্মের পরপরই জন্মনিবন্ধন প্রক্রিয়া গড়ে ওঠেনি। অথচ বাইরের দেশে জন্মের পরপরই শিশুকে হাসপাতাল থেকে একটি জন্মসনদ দিয়ে দেওয়া হয়। আমাদের এখানে একটি শিশুর পরিচয়ের দালিলিক প্রমাণ হচ্ছে টিকাকেন্দ্র থেকে পাওয়া কার্ড। পরে সেই কার্ডের ওপর ভিত্তি করে শিশুর জন্মনিবন্ধন হয়। কিন্তু বরিশাল জেলায় সেই টিকা কার্ড না পাওয়ায় শিশুর জন্মনিবন্ধন করতে চরম বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে অভিভাবকদের। এ ছাড়া নবজাতক ও মায়ের জন্য সরকারি যেসব সুবিধা আছে, সেসব পেতেও সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। ছয় মাস ধরে জন্ম নেওয়া অধিকাংশ শিশু এ টিকা কার্ড পায়নি। মূলত স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে হলুদ কার্ড সরবরাহ বন্ধ থাকায় এ সংকটের সৃষ্টি হয়েছে বলে আমরা জানতে পারছি।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, বরিশাল সদর হাসপাতালের টিকাকেন্দ্রে নগর ও সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকার শিশুদের টিকা দেওয়া হয়। সে জন্য মাসে ১৬০ থেকে দুই শতাধিক নতুন কার্ডের প্রয়োজন হয়। সর্বশেষ চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে কিছু টিকা কার্ড এলেও তা ছিল চাহিদার তুলনায় একেবারেই কম। একই পরিস্থিতি বিভাগের অন্যান্য জেলা বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, পিরোজপুর ও ঝালকাঠির ইপিআইয়ের কেন্দ্রগুলোতেও। কার্ডের সংকটের কারণে ইপিআই (সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি) টিকাদানকেন্দ্রগুলোতে সাদা কাগজের স্লিপে লিখে টিকা প্রয়োগ করা হচ্ছে। সাদা কাগজেই লিখে দেওয়া হচ্ছে পরবর্তী টিকাদানের তারিখ। এখন সেই স্লিপ দিয়ে জন্মনিবন্ধন করার সুযোগ নেই। ফলে কয়েক মাস ধরে শিশুর জন্মনিবন্ধন করানো যাচ্ছে না। অন্যদিকে টিকা কার্ড দিতে না পারায় প্রায়ই টিকাকেন্দ্রের কর্মী ও অভিভাবকদের মধ্য কথা-কাটাকাটি ও বাগ্‌বিতণ্ডার ঘটনা ঘটছে।

করোনার সংক্রমণ শুরুর পর থেকে ইপিআই টিকাদান কার্ডের সংকট দেখা দেয়। স্বাভাবিকভাবে করোনার টিকা কার্যক্রম বেশি গুরুত্ব পাওয়ায় অন্যান্য টিকা কর্মসূচিতে এর প্রভাব পড়ে। যার কারণে প্রচুর কোভিড টিকা কার্ড জেলা পর্যায়ে গেলেও ইপিআই টিকাদান কার্ডের সরবরাহ কমে যায়। যেমন গত বছরের মাঝামাঝিতে শুধু বরিশাল জেলার জন্য আড়াই লাখ ইপিআই কার্ড চাওয়া হয়েছিল, বারবার চাহিদাপত্র দেওয়া সত্ত্বেও এখনো তা মেলেনি। ফলে বোঝা যাচ্ছে, ঊর্ধ্বতন পর্যায় থেকে এ সংকটের সূত্রপাত। সেটি নিরসনে জেলা সিভিল সার্জন ও বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয় কার্যকর পদক্ষেপ নিক। দ্রুত এ জনদুর্ভোগের অবসান ঘটুক।