চারদিকে থই থই পানি, কিন্তু সে পানি খাওয়ার যোগ্য নয়। নিরাপদ খাওয়ার পানির অভাবে লাখ লাখ বন্যাদুর্গত মানুষের জীবনে নেমে এসেছে সীমাহীন দুর্ভোগ। শুধু তাই নয়, অনিরাপদ পানি বড় ধরনের স্বাস্থ্যগত ঝুঁকির কারণ হতে পারে। আমাদের সৌভাগ্য যে দেশের বন্যাদুর্গত এলাকাগুলোতে এখনো ডায়রিয়া, কলেরাসহ অন্যান্য পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটেনি। কিন্তু বিশুদ্ধ পানির যে সংকট চলছে, তা অব্যাহত থাকলে রোগের প্রাদুর্ভাবের আশঙ্কা থেকেই যাবে।
এ বছরের জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় শুধু যে বিপুলসংখ্যক মানুষের ঘরবাড়ি ও ফসলের ক্ষতি হয়েছে তা-ই নয়, তাদের দৈনন্দিন জীবনযাপনেও নেমে এসেছে দীর্ঘস্থায়ী দুর্ভোগ। খাদ্যাভাবের পাশাপাশি চলেছে নিরাপদ খাওয়ার পানির তীব্র সংকট। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, তিন মাসের বন্যায় দেশের ২৭টি জেলায় ৯৭ হাজার ৭২৩টি নলকূপ সম্পূর্ণ ও আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গ্রামাঞ্চলের মানুষের নিরাপদ খাওয়ার পানির একমাত্র উৎস নলকূপ। নলকূপ নষ্ট হওয়া মানে তাদের জীবনধারণের অন্যতম মৌলিক উপাদানের সংকট সৃষ্টি হওয়া।
অনেক বন্যাদুর্গত এলাকার মানুষেরা এখনো নিজ নিজ ঘরবাড়িতে ফিরতে পারেনি। অনেকের ঘরবাড়ি আর বসবাসের উপযোগী নেই। এই ঘরহারা মানুষেরা বিভিন্ন উঁচু চরের অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে এখনো রয়ে গেছে। সেসব জায়গায় নিরাপদ খাওয়ার পানির ব্যবস্থা নেই। সরকারি প্রশাসন কিছু অগভীর নলকূপ বসিয়েছে, কিন্তু আশ্রিত মানুষের সংখ্যার তুলনায় নলকূপের সংখ্যা নিতান্তই কম। যেমন বগুড়া জেলার সারিয়াকান্দির চালুয়াবাড়ি ইউনিয়নের আউচপাড়া চরে আশ্রয় নিয়েছে ৪০০টি বন্যার্ত পরিবার। সেখানে প্রতি ৫০টি পরিবারের জন্য মাত্র একটি করে নলকূপ বসানো হয়েছে। কিন্তু এটা যে প্রয়োজনের তুলনায় নিতান্তই কম, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
বন্যায় ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত জেলা কুড়িগ্রামের রাজীবপুর উপজেলার কোদালকাটি ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য রফিকুল ইসলাম বন্যাদুর্গত মানুষের নিরাপদ পানির কষ্টের কথা স্বীকার করে বলেছেন, শুধু তাঁর ওয়ার্ডেই ৩০টি নলকূপ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে; কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে নষ্ট নলকূপগুলো সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। আসলে এবারের বন্যায় সারা দেশে যত নলকূপ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তার অর্ধেকই কুড়িগ্রাম জেলায়। হাওরাঞ্চলের জেলা সুনামগঞ্জেও শত শত নলকূপ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কোনো কোনো ইউনিয়নের শতভাগ নলকূপ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বন্যার পানি অনেকটাই নেমে গেছে। কিন্তু তাতে নিরাপদ পানির সংকট কাটেনি। নষ্ট ও ক্ষতিগ্রস্ত নলকূপগুলো মেরামত না করা পর্যন্ত এই সংকট কাটবে না। তাই অবিলম্বে নলকূপ সংস্কার এবং স্থানবিশেষে নতুন নলকূপ বসানোর উদ্যোগ নেওয়া একান্ত জরুরি।