রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়

সম্পাদকীয়

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষিকার বিরুদ্ধে ১৪ শিক্ষার্থীর চুল কেটে দেওয়ার যে অভিযোগ এসেছিল, তদন্ত কমিটি তার সত্যতা পেয়েছে। গত বৃহস্পতিবার তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট বৈঠকে বসে। কিন্তু তারা কোনো সিদ্ধান্ত না নিয়ে আইনি পরামর্শের জন্য ১০ দিন সময় নিয়েছে।

উল্লেখ্য, শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার সময়সূচি পরিবর্তনের দাবিতে স্মারকলিপি দেওয়ার উদ্যোগ নিলে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষক ফারজানা ইয়াসমিন ১৪ শিক্ষার্থীর চুল কেটে দেন। এরপর শিক্ষার্থীরা তাঁর অপসারণের দাবিতে ২৮ সেপ্টেম্বর লাগাতার আন্দোলন শুরু করেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রথমে অভিযুক্ত শিক্ষিকাকে প্রশাসনিক দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয় এবং পরে সাময়িক বরখাস্ত করে। কিন্তু শিক্ষার্থীরা তাঁর স্থায়ী বরখাস্তের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রাখেন। একপর্যায়ে শিক্ষামন্ত্রী আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন এবং তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন। গত শুক্রবার সিন্ডিকেটের বৈঠকে কোনো সিদ্ধান্ত না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা শনিবার আমরণ অনশন শুরু করেন।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তথা সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তহীনতা রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি নাজুক করে তুলেছে। প্রথমত অভিযুক্ত শিক্ষিকা তদন্ত কমিটির কাছে দুই দফা সময় নিয়েও জবানবন্দি দেননি। এর মাধ্যমে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকেই চ্যালেঞ্জ করেছেন; যা একজন শিক্ষকের কাছে আশা করা যায় না। গত রোববার শিক্ষার্থীরা আন্দোলনের অংশ হিসেবে প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দিলে পরিস্থিতি বিপজ্জনক মোড় নেয়। ৩০ শিক্ষক-কর্মকর্তা আট ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকেন। একপর্যায়ে দুজন শিক্ষার্থী আত্মহত্যার চেষ্টা চালান। এ অবস্থায় কোনো অঘটন ঘটলে তার দায় সিন্ডিকেট এড়াবে কীভাবে এড়াবে?

শনিবার শিক্ষার্থীরা আমরণ অনশন কর্মসূচি নিলেও পরে কর্তৃপক্ষের অনুরোধে তা প্রত্যাহার করে নেন এবং তাঁরা ঘোষণা দেন অভিযুক্ত শিক্ষিকাকে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত না করা পর্যন্ত তঁারা অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন। বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট কী সিদ্ধান্ত নেবে, সেটি তাদের বিষয়। কিন্তু সিদ্ধান্ত ঝুলিয়ে রেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক হাজার শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে দেওয়ার অধিকার তাদের নেই। এই শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে আছেন প্রায় এক মাস হলো। আইনি পরামর্শ নিতে এত সময় লাগবে কেন?

উপাচার্যের রুটিন দায়িত্বে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ আবদুল লতিফ বলেছেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সার্বিক বিষয় নিয়ে কথা বলছেন। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনার চেষ্টা করছি।’ তাদের এ চেষ্টা কত দিন চলবে? করোনার কারণে দীর্ঘদিন বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকার পর যখন পরীক্ষা ও পাঠদানের জন্য খুলে দেওয়া হলো, তখনই এ অঘটন মেনে নেওয়া যায় না। অবিলম্বে এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় তথা সরকারের হস্তক্ষেপ প্রত্যাশিত।

একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে তিন মাসের বেশি সময় ধরে উপাচার্য ছাড়া চলে কীভাবে? এর আগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছিল। উপাচার্যের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই শিক্ষা মন্ত্রণালয় নতুন উপাচার্য নিয়োগের উদ্যোগ নিলে এ প্রশাসনিক জটিলতা এড়ানো সম্ভব। এই যে এক মাস ধরে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে অচলাবস্থা চলছে, শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা ও পরীক্ষা পিছিয়ে গেল, তার দায় কে নেবে?