র‍্যাগিংকে কেন উৎসাহিত করছে কর্তৃপক্ষ

সম্পাদকীয়

এক আবাসিক ছাত্রীকে নির্যাতনের দায়ে কুষ্টিয়ায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শিক্ষার্থীকে চিরতরে বহিষ্কার করার পর ধারণা করা গিয়েছিল, দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় ও এর অধিভুক্ত কলেজগুলোতে এ ধরনের নির্যাতন–র‍্যাগিং বন্ধ হবে। কিন্তু সেই আশা যে নিষ্ফল রোদন, সেটাই প্রমাণিত হলো বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের ছাত্রী হলের ঘটনায়।

সেখানে এক ছাত্রীকে দুই দফায় হলের একটি কক্ষে ডেকে নিয়ে শারীরিক নির্যাতন, গালাগাল, হুমকি ও মুঠোফোন তল্লাশি করেন সেই হলেরই দুই জ্যেষ্ঠ আবাসিক ছাত্রী, যাঁরা নিজেদের ছাত্রলীগের নেত্রী বলে দাবি করেন। প্রথমবার দুই ছাত্রীকে নিয়ে এক ছাত্রলীগ নেত্রীর কক্ষে নিয়ে নির্যাতন করা হয়।

এরপর ওই দুই ছাত্রী আরেক আবাসিক ছাত্রীকে বিষয়টি জানালে ফের একজনকে ডেকে নিয়ে তাঁর ওপর মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন চালানো হয়। একপর্যায়ে অচেতন হয়ে পড়লে তাঁকে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

উল্লেখ্য, সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, বিশেষত সব সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে অধিভুক্ত কলেজে র‌্যাগিংবিরোধী কমিটি গঠন করতে উচ্চ আদালত নির্দেশ দেন ২০২০ সালে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর বেশির ভাগই তা আমলে নেয়নি।

শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে ছাত্রী নির্যাতনের সঙ্গে যাঁরা জড়িত, তাঁরা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী। ক্ষমতার জোর খাটিয়ে তাঁরা এসব অপকর্ম চালিয়ে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে। যে কারণে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ও শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের দুই ভুক্তভোগীই নিজ নিজ কর্তৃপক্ষের কাছে নালিশ করেছেন। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রথমে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের লঘু শাস্তি দিলেও উচ্চ আদালতের নির্দেশনায় কঠোর শাস্তি দিতে বাধ্য হয়েছেন।

শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের ক্ষেত্রে কী হবে? ইতিমধ্যে সংবাদমাধ্যমে এসেছে মেডিকেল কলেজ প্রশাসন নাকি ওই ভুক্তভোগী ছাত্রীর কাছে জানতে চেয়েছে, তিনি বিচার চান, না চিকিৎসা চান? এর অর্থ বিচার চাইলে তাঁকে চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করা হবে আর চিকিৎসা চাইলে বিচার পাবেন না।

কলেজের উপাধ্যক্ষ বিষয়টিকে ‘সামান্য ঘটনা’ বলে উড়িয়ে দিতে চেয়েছেন। আরও উদ্বেগের ঘটনা হলো সাংবাদিকেরা ঘটনার খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে সেখানে নিগ্রহের শিকার হয়েছেন। কলেজের শিক্ষক ও একশ্রেণির শিক্ষার্থী সাংবাদিকদের ওপর চড়াও হয়েছেন। তাঁরা একজন সাংবাদিকের ক্যামেরা ভেঙেছেন।

এভাবে একের পর এক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, আবাসিক হলে ছাত্র বা ছাত্রীরা নির্যাতনের শিকার হবে, সেটা চলতে পারে না। শের–ই বাংলা মেডিকেল কলেজের ওই আবাসিক হলের প্রশাসন কী করেছে? ছাত্রীদের নিরাপত্তা দেওয়া কি তাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না?

আমরা মনে করি, ভুক্তভোগী ছাত্রীর সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। সেই সঙ্গে তাঁর নিরাপত্তাও নিশ্চিত করতে হবে। ছাত্রলীগের স্বঘোষিত নেত্রী বা যে–ই হোক না কেন, যারা উল্লিখিত ছাত্রীর ওপর মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন চালিয়েছে, তাদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

সাধারণ ছাত্রীদের নিরাপত্তায় যা যা করণীয়, শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ সেটা করবে, আশা করা যায়। তারা এমন কোনো পদক্ষেপ নিতে পারে না, যাতে হলে নির্যাতকেরা উৎসাহিত হয় এবং সাধারণ ছাত্রীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে।

উচ্চ আদালতের নির্দেশনা মেনে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজসহ সব উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে র‍্যাগিং বা নির্যাতনবিরোধী কমিটি করা হোক। সেটাই হতে পারে উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সাধারণ শিক্ষার্থীদের রক্ষাকবচ।