দেশের মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলো রোগীদের জন্য বড় ভরসাস্থল। উপজেলা পর্যায় থেকে আসা রোগীরা এসব হাসপাতালে ভিড় করেন বেশি। মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও আমরা তেমন চিত্র দেখি। কিন্তু এ হাসপাতালে এসে রোগীদের রোগনির্ণয়ের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে গিয়ে ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হয়। যন্ত্রপাতি নষ্ট থাকায় বা সচল না থাকায় বেসরকারি রোগনির্ণয় কেন্দ্রের দিকে ঝুঁকতে বাধ্য হচ্ছেন রোগীরা। এতে তাঁদের বাড়তি অর্থ খরচ হচ্ছে। বিষয়টি হতাশাজনক।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রেডিওলজি ও ইমেজিং ও প্যাথলজি বিভাগে দীর্ঘদিন ধরে এক্স-রে ও রোগনির্ণয় বন্ধ থাকায় দূরদূরান্ত থেকে আসা রোগীরা প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। বাড়তি অর্থ খরচ করে হাসপাতালের সামনে গড়ে ওঠা বেসরকারি ক্লিনিক ও রোগনির্ণয় কেন্দ্রগুলো (ডায়াগনস্টিক সেন্টার) থেকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হচ্ছে। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এসব ডায়াগনস্টিক সেন্টার খোলা থাকে। সেখানে দুই থেকে তিন গুণ বাড়তি টাকা খরচ করে প্রতিদিন কয়েক শ রোগীকে স্বাস্থ্যগত পরীক্ষা ও রোগনির্ণয় করতে হচ্ছে।
হাসপাতালে আলট্রাসনোগ্রাম, এক্স-রে, সিটি স্ক্যান, এমআরআই পরীক্ষাসহ সব ধরনের পরীক্ষা বন্ধ আছে। প্রায় ১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে সাড়ে তিন বছর আগে মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একটি এমআরআই যন্ত্র স্থাপন করা হয়। পরীক্ষামূলকভাবে যন্ত্রটি চালু করা হলে গরম হয়ে সেটি বন্ধ হয়ে যায়। এখন পর্যন্ত যন্ত্রটি চালু করা যায়নি। হাসপাতালটিতে অত্যাধুনিক তিনটি ডিজিটাল এক্স-রে যন্ত্র আছে। তবে ফিল্ম নেই। তাই এক্স-রে পরীক্ষা বন্ধ। যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে সিটি স্ক্যানও বন্ধ।
হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) এ কিউ এম আশরাফুল হক প্রথম আলোকে বলেন, প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা ও এক্স-রে সেবা বন্ধ থাকায় রোগীদের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। এসব সংকট সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।
রক্তের পরীক্ষাও যদি বাইরে থেকে করিয়ে নিয়ে আসতে হয়, তা একটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জন্য লজ্জার। জেলা পর্যায়ের একটি হাসপাতালে রোগীদের রোগনির্ণয়ের পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য এমন ভোগান্তি কোনোভাবেই কাম্য নয়। রাজধানীর অদূরে এ হাসপাতালে কার্যকর চিকিৎসাসেবা চালু থাকলে রাজধানীর হাসপাতালগুলোর ওপরেও চাপ কম পড়বে। তা ছাড়া হাসপাতালটিতে যদি রোগীর চিকিৎসা ও রোগনির্ণয়ের যথাযথ ব্যবস্থাপনা না থাকে, মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরাও তঁাদের বাস্তবিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হবেন। আমরা আশা করব, মানিকগঞ্জের হাসপাতালটির সংকটগুলো দ্রুত নিরসন করা হবে।