অর্থমন্ত্রীর কি কিছুই করার নেই

সম্পাদকীয়

২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট পেশের পর অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সংবাদ সম্মেলনে যা ঘটেছে, তা স্বাভাবিক নয়। সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারও উপস্থিত ছিলেন। রীতি অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কোনো প্রশ্ন এলে তাঁর জবাব দেওয়ার কথা।

কিন্তু অর্থমন্ত্রীর সূচনা বক্তব্যের পর সাংবাদিকদের পক্ষে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি (ইআরএফ) মোহাম্মদ রেফাতুল্লাহ মীরধা তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন গভর্নর। সে জন্য আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, কেউ তাঁর বক্তব্য শুনব না। তিনি কোনো বক্তব্য দিলে আমরা তা বর্জন করব।’ এরপর সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর কোনো বক্তব্য দেননি। পুরো সময় নিশ্চুপ বসে ছিলেন। এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংকে আয়োজিত খোদ গভর্নরের একটি সংবাদ সম্মেলনও বর্জন করেন সাংবাদিকেরা।

এ ঘটনার সূচনা হয় গত এপ্রিল মাসে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে। বাংলাদেশ ব্যাংক সিদ্ধান্ত নেয় যে সাংবাদিকেরা ব্যাংকের অস্থায়ী পাস নিয়ে শুধু মুখপাত্রের কাছে যেতে পারবেন। কোনো কর্মকর্তা যদি সাংবাদিকদের পাস দেন, সে ক্ষেত্রে তাঁরা শুধু সেই কর্মকর্তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারবেন। আগের মতো সাংবাদিকেরা অবাধে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোনো বিভাগে প্রবেশ করতে পারবেন না।

সাংবাদিক সমাজ বাংলাদেশ ব্যাংকের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করে, ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের নেতারা আন্দোলনের পাশাপাশি গভর্নরের সঙ্গে বৈঠক করে বিষয়টি সুরাহা করার চেষ্টা করেন। কিন্তু গভর্নরের অনমনীয় মনোভাবের কারণে সেটি সফল হয়নি। সাংবাদিকদের দাবি ছিল, তাঁদের বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রবেশের ক্ষেত্রে আগের নিয়মই চালু রাখা হোক। আগের নিয়ম ছিল, বাংলাদেশ ব্যাংকের সব ভবনের নিচতলায় অভ্যর্থনা বিভাগে রাখা রেজিস্টার বইয়ে পরিচয় লিখে সই করে বিশেষ ‘পাস’ নিয়ে তাঁরা ভেতরে যেতে পারতেন।

প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই এ রীতি চালু হয়ে এলেও কেন হঠাৎ পরিবর্তন করতে হলো, সেই প্রশ্নের জবাব নেই। আর সিদ্ধান্তটি নেওয়া হয়েছে এমন সময়ে, যখন ব্যাংকিং খাতের দুর্নীতি, অনিয়ম ও অব্যবস্থা নিয়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে ধারাবাহিক খবর প্রকাশিত ও প্রচারিত হচ্ছিল। এ প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিলে সন্দেহ করার যথেষ্ট অবকাশ থেকে যায় যে ব্যাংকিং খাতের দুর্নীতি, অনিয়ম ও অব্যবস্থার খবর চেপে রাখতেই বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন বিধিনিষেধ জারি করেছে কি না।

সরকার একদিকে জোর গলায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির কথা বলছে, দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের কথা বলছে, অন্যদিকে তথ্য লুকিয়ে রাখার কৌশল অবলম্বন করছে। এটা কেবল স্ববিরোধী নয়, অনৈতিকও। আমরা আশা করেছিলাম, অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের ক্ষোভ ও প্রতিবাদের বিষয়টি আমলে নিয়ে দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন। কিন্তু দুঃখের বিষয়, তিনি এ বিষয়ে আগেও কোনো পদক্ষেপ নেননি, ওই দিনের সংবাদ সম্মেলনেও কিছু বলেননি। তাহলে কি আমরা ধরে নেব, বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্তের পেছনে অর্থমন্ত্রীরও সায় আছে?

সেদিন সংবাদ সম্মেলনে যা ঘটেছে, তা গভর্নরের জন্যও বিব্রতকর। কিন্তু এই সমস্যার সমাধান কী? সাংবাদিকদের ন্যায্য দাবির বিষয়টি অগ্রাহ্য করে এর সমাধান পাওয়া যাবে না। এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে সরকারের উচিত হবে বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশের ওপর বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করে আগের নিয়ম চালু করা। এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রীরও ভূমিকা রাখার সুযোগ আছে।