ভোক্তাসাধারণকে স্বস্তি দিন

সরকারের ‘যৌক্তিক’ মূল্যকে অযৌক্তিক ও কল্পনাপ্রসূত বলে আখ্যায়িত করেছে দোকান মালিক সমিতি। বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম কিংবা সরকারের কোনো প্রতিনিধির কাছ থেকে এর প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি। তবে দোকান মালিক সমিতির সংবাদ সম্মেলনের দুই দিন আগে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম যে বার্তা দিয়েছেন, সেটা নমনীয় বলে মনে হয়। তিনি বলেছেন, চাপ দিয়ে নয়; সমন্বয় করে নির্ধারিত দামে পণ্য বিক্রির ব্যবস্থা করতে হবে।

কথায় বলে বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধবে কে? প্রতিমন্ত্রী মহোদয় যে সমন্বয়ের কথা বলেছেন, সেই কাজটি কে করবে? বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, দাম বেঁধে দেওয়া প্রতিষ্ঠান কৃষি বিপণন অধিদপ্তর, না সমন্বিত কোনো সংস্থা?

প্রথম আলোর খবর অনুযায়ী, রোজার মধ্যে পণ্যের বাড়তি দাম নিয়ন্ত্রণে ১৫ মার্চ ২৯টি পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দেয় সরকারি সংস্থা কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। এক সপ্তাহ পর বাজার ঘুরে দেখা গেছে, নির্ধারিত সেই দরে বাজারে পণ্য বিক্রি হচ্ছে না। তবে গত এক সপ্তাহে খুচরা বাজারে কয়েকটি পণ্যের দাম কমলেও কিছু পণ্যের দাম বরং আগের তুলনায় বেড়েছে।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর শেওড়াপাড়া, তালতলা ও মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট ঘুরে এবং ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এক সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে আলু, রসুন, জিরা ও চালের দাম বেড়েছে। তবে এ সময় কমেছে পেঁয়াজ, ব্রয়লার মুরগি, মসুর ডাল ও ডিমের দাম। এ ছাড়া কমেছে কয়েক ধরনের সবজির দামও। এসব পণ্যের দাম কমলেও তা সরকারের ঘোষণা করা যৌক্তিক মূল্যের চেয়ে বেশি।

নির্ধারিত পণ্যের সঙ্গে গত কয়েক দিনে চালের দামে ঊর্ধ্বগতি গরিব ও স্বল্প আয়ের মানুষকে আরও বেশি বিপদে ফেলেছে। সবজি, মাছ কিংবা ডিম কম কিনে ঘাটতি পূরণ করা গেলেও চালের ক্ষেত্রে সেটি সম্ভব নয়। নির্দিষ্ট পরিমাণ চাল তাঁকে কিনতেই হবে। 

দোকান মালিক সমিতি মুক্তবাজার অর্থনীতিতে হস্তক্ষেপ না করে সরকারকে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পণ্য সরবরাহের পরামর্শ দিয়েছেন। অন্যদিকে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, চাপ প্রয়োগ নয়, সমন্বয়ের মাধ্যমে নির্ধারিত দামে পণ্য বিক্রির ব্যবস্থা করা হবে। ভোক্তারা কার কথা বিশ্বাস করবে?

যেসব পণ্যের দাম সরকার বেঁধে দিয়েছে, সেসব পণ্যের প্রায় সবই দেশে উৎপন্ন হয়। সে ক্ষেত্রে উৎপাদন খরচ, পরিবহন ব্যয় এবং বিপণনের বিষয়টি সরকারের অজানা নয়। পত্রিকান্তরের খবর অনুযায়ী, পণ্যের হাতবদল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দাম অনেক বেড়ে যায়। এখানেই বিপণনব্যবস্থার প্রশ্ন আসে। মধ্যস্বত্বভোগীরা যখন লাভের গুড় পুরোটা হাতিয়ে নেন, তখন ভোক্তা ও উৎপাদক দুই–ই ক্ষতিগ্রস্ত হন। সে ক্ষেত্রে তদারক প্রয়োজন।

দোকান মালিক সমিতি সরকারকে বিকল্প ব্যবস্থায় পণ্যের সরবরাহ বাড়ানোর যে পরামর্শ দিয়েছে, সেটা অগ্রাহ্য করা যাবে না। সরকারের বেঁধে দেওয়া কিংবা বেঁধে দেওয়ার বাইরে যেসব পণ্যের দাম বেড়েছে, সেসব পণ্য সরকারকে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সরবরাহ বাড়াতে হবে। টিসিবির মাধ্যমে এখন যে পণ্য দেওয়া হয়, সেটা খুবই কম এবং বাজারে কোনো প্রভাব ফেলতে পারছে না।

সরকারকে মনে রাখতে হবে বাজার একটি বিজ্ঞান। বিজ্ঞানের সূত্র ধরেই এগোতে হবে। জবরদস্তি করলে ফল উল্টো হতে পারে। সরকার রোজার মাসে ভোক্তাদের স্বস্তি দেওয়ার কথা বলেছিল। কিন্তু সেটা অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কৃষি বিপণন অধিদপ্তর দাম বেঁধে দেওয়ার আগে কি সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে কথা বলেছে? যদি কথা বলত, এটা হওয়ার কথা নয়। অনেকেই ২৯ পণ্যের দাম বেঁধে দেওয়াকে লোকদেখানো পদক্ষেপ বলে অভিহিত করেছে। এটা যে লোকদেখানো নয়, সেটা প্রমাণ করতে হবে নির্ধারিত দামে পণ্য বিক্রির ব্যবস্থা করে। রোজা প্রায় মাঝামাঝি পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে, যা করার এখনই করতে হবে।