রাজউকের কেন কানে তুলা, চোখে ঠুলি

সম্পাদকীয়

পূর্বাচল নতুন শহর থেকে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) জমি, টাকা দুই-ই লোপাট হয়েছে। জমির পরিমাণ নেহাত কম নয়—১২৬ একর। কাগজে-কলমে এই জমি অধিগ্রহণ করা। এ জন্য ১১ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল। সেই টাকারও খোঁজ নেই। মানে দাঁড়াচ্ছে, রাজউক জমি অধিগ্রহণ করেনি, আবার টাকাও খরচ করে বসে আছে বা টাকাটা তোলেনি।

রাজউক এ খবর জানতও না কিংবা জেনেও না জানার ভান করে বসে ছিল। সরকারের মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় (সিএজি) তাদের চোখে আঙুল দিয়ে অনিয়মটা ধরিয়ে দিয়েছে। তা-ও তারা চোখ খুলছে না। একটার পর একটা অজুহাত খাড়া করে যাচ্ছে।

সিএজির কর্মকর্তারা জানান, অধিগ্রহণ ও দখলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে তাঁরা প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছেন।

এ নিয়ে প্রথম আলো ‘পূর্বাচলে রাজউকের ১২৬ একর জমি “গায়েব”’ শিরোনামে প্রতিবেদন ছেপেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই অনিয়ম হয়েছে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের। এ নিয়ে প্রকল্প পরিচালককে প্রশ্ন করা হলে তিনি অত্যন্ত নাখোশ হন। বলেন, ‘জায়গা কম পাওয়া যাচ্ছে মানে? আমি হলাম এই প্রকল্পের দশম পিডি। আমি কি জায়গা দখল করেছি?’

রাজউকের কর্মকর্তারা বলেন, পূর্বাচল ৩০০ ফুট সড়কের পাশে আবাসিক প্লট, সড়ক, জলাধার, আবাসিক ব্লক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ফুটপাত, শরীরচর্চার অবকাঠামো, বনায়ন ও ইকোপার্ক নির্মাণ ও সবুজায়নের (আরবান গ্রিন) জন্য জমি অধিগ্রহণ করা হয়। তবে ৩০০ ফুট সড়কসংলগ্ন এলাকার অধিগ্রহণ করা যে জায়গা উধাও হয়ে গেছে, সে সম্পর্কে কর্মকর্তারা কিছু জানেন না।

একজন প্রকল্প পরিচালক বলেছেন, অধিগ্রহণ করা জমি তাঁদের দখলেই আছে। নিরীক্ষাকারীরা হয়তো না বুঝে লিখেছেন। আরেকজন প্রকল্প পরিচালক বলেছেন, হয়তো অধিগ্রহণ করা বা টাকা দেওয়ার কাজ কোনোটাই হয়নি। হয়তো জায়গাটি ওয়াক্ফ করা। দানের জমি অধিগ্রহণ করা হয় না। অডিট আপত্তির খবরও তিনি জানেন না। প্রথম আলোর প্রতিবেদকের কাছ থেকে আপত্তির কথা শুনে বলেছেন, তিনি জবাব দেবেন।

রাজউকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সরকারি সম্পদের প্রতি যে তাঁদের দয়ামায়া নেই, তার নিদর্শন রাখলেন। তত্ত্বাবধানকারী সংস্থা হিসেবে ঢাকা শহরের ভবনগুলো ঠিকঠাক নিয়ম মেনে তৈরি হচ্ছে কি না, তা দেখার দায়িত্ব রাজউকের।

সেদিকে তাঁদের মন নেই বহুদিন ধরে। নিজেরা তো ব্যবসায় জড়িয়েছেন, বড় বড় জমি ও আবাসন প্রতিষ্ঠানকেও দুই বেলা তোষণ করে থাকেন বলে অভিযোগ আছে। এই যখন অবস্থা, তখন রাজউক থেকে আর কী আশা করা যায়!

তবু আমরা বলব, এই ১২৬ একর জমি কোথায় গেল, টাকাটাই বা কোথায়, তা খুঁজে বের করা হোক। গাফিলতির শাস্তি হোক।