রাজশাহীর খাদ্যগুদামে নিম্নমানের চাল সরবরাহ এবং তা গোপনে পাল্টে ফেলার ঘটনা স্থানীয়ভাবে আলোচনা তৈরি করেছে। খাদ্যগুদামকে কেন্দ্র করে এ ধরনের দুর্নীতি ও অনিয়ম নতুন নয়।
রাজশাহীর ঘটনা আবারও প্রমাণ করে, সরকারি গুদামের খাদ্যশস্য সংগ্রহ থেকে শুরু করে বিতরণ পর্যন্ত পুরো প্রক্রিয়াটি কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীর যোগসাজশে জিম্মি হয়ে আছে। নাগরিকের ট্যাক্সের টাকায় কেনা খাবার গরিব মানুষের মুখে ওঠার আগেই নিম্নমানের হয়ে যায়, এটি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। এর দায় খাদ্য বিভাগকেই নিতে হবে।
নিয়ম অনুযায়ী কৃষকের কাছ থেকে ধান কিনে তা মিলে ছাঁটাই করে চাল সংগ্রহ করার কথা। কিন্তু এখানে সরাসরি নিম্নমানের চাল গুদামে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে, আর এর মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। এর পেছনে অসাধু ব্যবসায়ীরা যেমন জড়িত, তেমনি খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারাও যুক্ত। এমন দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তা কোনোভাবেই চাকরিতে বহাল থাকতে পারেন না।
উদ্বেগজনক বিষয় হলো, যখন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা এ জালিয়াতি হাতেনাতে ধরেছেন, তখন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দায় এড়ানোর চেষ্টা করেছেন। যেমন একজন ব্যবসায়ী স্বীকার করেছেন যে তাঁর লাইসেন্স না থাকা সত্ত্বেও অন্য মিলারের নামে চাল সরবরাহ করেছেন। আবার কিছু মিলার বলছেন, তাঁরা কোনো ধান বা চাল সরবরাহ করেননি।
তদন্ত কমিটি গঠনের মতো গতানুগতিক পদক্ষেপই যথেষ্ট নয়। সরকারকে অবিলম্বে উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করে এ দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত সবার (কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী, মিলার) মুখোশ উন্মোচন করতে হবে। দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে কেউ এমন অপরাধ করার সাহস না পান।
এ দুর্নীতির গোড়ায় আরও বড় একটি অনিয়ম লুকিয়ে আছে। সেটা হলো বিধি লঙ্ঘন করে কর্মকর্তাদের নিয়োগ। রাজশাহীর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক পদে এমন একজন কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করছেন, যিনি পদমর্যাদায় দুই ধাপ নিচে। একইভাবে যোগ্য পরিদর্শকদের বাদ দিয়ে একজন উপপরিদর্শককে গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, যার বিরুদ্ধে আগেও অনিয়মের অভিযোগ ছিল।
এ ধরনের পদায়ন বা নিয়োগগুলো কোনো সাধারণ প্রশাসনিক ভুল নয়; বরং দুর্নীতির সুবিধার্থে অশুভ চক্রের পরিকল্পিত কারসাজি। যখন চেইন অব কমান্ড ভেঙে পছন্দের ব্যক্তিকে গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো হয়, তখন স্বাভাবিকভাবেই সেখানে জবাবদিহি থাকে না। দুর্নীতিও সেখানে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায়।
এখানে তদন্ত কমিটি গঠনের মতো গতানুগতিক পদক্ষেপই যথেষ্ট নয়। সরকারকে অবিলম্বে উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করে এ দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত সবার (কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী, মিলার) মুখোশ উন্মোচন করতে হবে। বিধিবহির্ভূতভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত সব কর্মকর্তাকে তাঁদের পদ থেকে সরিয়ে দিয়ে যোগ্য ও সৎ কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দিতে হবে। দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে কেউ এমন অপরাধ করার সাহস না পান।