আজিজুল হক কলেজের হল

সম্পাদকীয়

আধুনিক রাষ্ট্রে দক্ষ মানবসম্পদ সৃষ্টিতে শিক্ষাকে সৃজনশীল বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষার সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ২ হাজার ২৫৭টি কলেজে শিক্ষার্থীর সংখ্যা পৌনে ৩০ লাখ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীপ্রতি সরকারের বার্ষিক ব্যয় যেখানে ২ লাখ ১২ হাজার টাকা, সেখানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীপ্রতি ব্যয় মাত্র ১ হাজার ১৫১ টাকা। প্রশ্ন হলো, সামান্য এ বরাদ্দে তরুণ জনগোষ্ঠীর বিশাল এই অংশের দক্ষতা ও সৃজনশীলতার বিকাশ কীভাবে সম্ভব?

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণের একটি বাস্তব চিত্র পাওয়া যায় বগুড়ার আজিজুল হক কলেজের আবাসিক হল নিয়ে প্রথম আলোর একটি প্রতিবেদনে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন উত্তরবঙ্গের অন্যতম প্রধান এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রদের তিনটি হল বন্ধ রয়েছে ১৩ বছর ধরে।

ছাত্রীদের জন্য নির্মিত নতুন একটি হল অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে রয়েছে পাঁচ বছর ধরে। ফলে বাধ্য হয়েই শিক্ষার্থীদের মেস ভাড়া করে থাকতে হচ্ছে, যা তাঁদের শিক্ষা ও জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়িয়ে দিয়েছে দেড় থেকে দুই গুণ।

উচ্চমাধ্যমিক, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর মিলিয়ে ৩০ হাজার শিক্ষার্থীর তুলনায় আজিজুল হক কলেজে আবাসিক সুবিধা এমনিতেই অপ্রতুল। তারপরও ছয়টি হলের মধ্যে চালু রয়েছে মাত্র দুটি। মেয়েদের জন্য ১০০ আসনের নতুন আবাসিক হলের নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার পর কক্ষগুলোতে আসবাবপত্রও সরবরাহ করা হয়েছে। কিন্তু সেটি চালু না করায় শিক্ষার্থীরা এর সুফল পাচ্ছেন না। অথচ হলটির কয়েকটি কক্ষে সংসার পেতেছেন হলের কর্মচারীরা।

২০০৯ সালের ২০ ডিসেম্বর ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলের সংঘর্ষের পর ছেলেদের তিনটি আবাসিক হল বন্ধ করে দেওয়া হয়। গত ১৩ বছরে হলগুলো এক দিনের জন্য চালু করা না হলেও সেগুলো সংস্কারে বিপুল অঙ্কের অর্থ নিয়মিত ব্যয় করা হচ্ছে। পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকায় হলগুলোর কক্ষ থেকে আসবাব, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম চুরি হয়ে যাচ্ছে। হলগুলোর বিভিন্ন কক্ষে কলেজটির কর্মচারীরা পরিবার নিয়ে থাকছেন। এমনকি সেখানে ছাগলের খামারও গড়ে তোলা হয়েছে।

অধ্যক্ষের দাবি, হলগুলোর ডাইনিং রুমে হাঁড়ি–পাতিল, থালাবাসন ও তৈজসপত্র সরবরাহ না করায় সেটি চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। তাঁর এ দাবি কতটা যৌক্তিক?

এ ঘটনা শুধু কলেজটির প্রশাসনের ব্যর্থতা ও সম্পদ অপচয়ের বাজে দৃষ্টান্ত নয়, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দায়হীনতারও বহিঃপ্রকাশ। শিক্ষার্থীদের স্বার্থে আজিজুল হক কলেজের আবাসিক হলগুলো দ্রুত চালু করতে হবে।