ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস এবং এর আশপাশের এলাকায় অপরাধের পরিমাণ বেড়ে গেছে। ছিনতাই, নারী হেনস্তা, মারধর, মাদক বেচাকেনা ও সেবন এবং চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়েরই কতিপয় শিক্ষার্থী। এর সঙ্গে ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মীদের নাম আসছে বারবার।

এ ছাড়া প্রলয় গ্যাং নামে শিক্ষার্থীদের একটি অপরাধ চক্রের নাম এখানে আলাদাভাবে উচ্চারিত হচ্ছে। ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী ও প্রলয় গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে মামলা-গ্রেপ্তারসহ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হলেও থামছে না অপরাধ কর্মকাণ্ড। ফলে ক্যাম্পাস ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় এ নিয়ে একধরনের নিরাপত্তাহীনতা তৈরি হয়েছে।

চলতি বছরের মার্চে এক সহপাঠীকে মেরে রক্তাক্ত করার ঘটনায় প্রথম সংবাদমাধ্যমে আলোচনায় আসে প্রলয় গ্যাং। এ ঘটনায় মামলা হলে গ্যাংয়ের কয়েকজন সদস্যকে গ্রেপ্তারও করে পুলিশ। এরপর একের পর এক বেরিয়ে আসে তাদের নানা অপকর্ম। মূলত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু উচ্ছৃঙ্খল শিক্ষার্থীকে নিয়ে এ গ্যাং গড়ে ওঠে। তাদের এমন বেপরোয়া হয়ে ওঠার পেছনে ছাত্রলীগের প্রশ্রয়ও আছে বলে অভিযোগ ওঠে।

প্রলয় গ্যাংয়ের কয়েকজন সদস্যকে সাময়িকভাবে বহিষ্কারও করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। গ্যাংটির বিরুদ্ধে নানা ব্যবস্থা নেওয়া হলেও তাদের কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। সম্প্রতি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রকে মারধর ও ছিনতাইয়ের অভিযোগ উঠেছে গ্যাংটির বিরুদ্ধে।

এ নিয়ে গ্যাংয়ের কয়েকজন সদস্যের বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে। অবাক করা বিষয় হচ্ছে, যে ছাত্রকে মেরে প্রলয় গ্যাং প্রথম আলোচনায় এসেছিল, সাম্প্রতিক ঘটনায় সেই ছাত্রও যুক্ত ছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে। মামলায় তাঁকেও আসামি করা হয়েছে।

প্রলয় গ্যাং আলোচনায় আসার পর আরও কিছু গ্যাংয়ের সক্রিয় থাকার বিষয়ে আমরা জানতে পারি। যাদের মধ্যে আছে ‘নিশাচর’ ও ‘নিশাচর-২’ ইত্যাদি। রাত যত গভীর হয়, ততই তাদের অপকর্ম বাড়তে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছাড়াও ক্যাম্পাস এলাকায় ঘুরতে আসা, চলাচলকারী নানা পেশার মানুষ তাদের অপকর্মের শিকার হন। শহীদ মিনার এলাকা ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তাদের বিচরণ লক্ষণীয়। এসব গ্যাংয়ের সদস্যরা কেউ কেউ ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত।

সাম্প্রতিক ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি বলে শাহবাগ থানা জানিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। আগের ঘটনায় প্রলয় গ্যাংয়ের দুজনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছিল। কিন্তু প্রলয় গ্যাং ফৌজদারি অপরাধসহ যেসব অপকর্মের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েছে, তাতে সাময়িক বহিষ্কার কোনোভাবে যে কার্যকর শাস্তি হতে পারে না, সাম্প্রতিক ঘটনায় তা প্রকাশ পেয়েছে।

এসব গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে নমনীয় থাকার কোনো সুযোগ নেই। তবে শিক্ষার্থীরা কেন এমন অপরাধমূলক গ্যাং গড়ে তুলছেন, তা নিয়েও ভাবতে হবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা বিভাগ ও শিক্ষকদের দায়দায়িত্বও এখানে যুক্ত। সবাই মিলে এ সংকটের প্রতিকার অনুসন্ধান করুন।