জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন দ্রুত নিশ্চিত করুন

জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন অতি গুরুত্বপূর্ণ নাগরিক সেবা। নাগরিকের নানান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার সঙ্গে এই পরিষেবা সম্পৃক্ত। তবে সম্প্রতি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) বিভিন্ন ওয়ার্ডে নিবন্ধনকাজ বন্ধ থাকায় নাগরিকদের ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। 

বিশেষত গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে অনেকগুলো ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয়ে নিবন্ধন কার্যক্রম বন্ধ। এ পরিষেবা বন্ধের পেছনে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয়গুলোর ওপর হামলা, ভাঙচুর ও দাপ্তরিক যন্ত্রপাতি লুটপাটের ঘটনা কাজ করছে। 

এ কারণে দুই মাস ধরে নাগরিকেরা জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন করতে পারছেন না। এটি তাঁদের অন্যান্য সেবা পাওয়ার প্রক্রিয়াকে মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত করছে। যেসব সেবাপ্রাপ্তি জন্মনিবন্ধন সনদের ওপর নির্ভরশীল, সেসব সেবা নাগরিকেরা পাচ্ছেন না। পাসপোর্ট, শিক্ষাবৃত্তি, সামাজিক নিরাপত্তা ভাতাসহ কমপক্ষে ২২টি সরকারি পরিষেবা জন্মনিবন্ধন সনদের ওপর নির্ভর করে। জন্মনিবন্ধন সনদ ছাড়া এই সুবিধাগুলো পাওয়া যায় না।

কাজেই এই নিবন্ধনসেবা বন্ধ থাকায় নাগরিকদের দৈনন্দিন জীবন ও প্রশাসনিক কাজকর্ম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। অবশ্য ডিএনসিসির রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. যাহিদ হোসেন জানান, নিবন্ধনকাজ বন্ধ না থাকার জন্য বিকল্প ব্যবস্থার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং ৮০ জন কর্মকর্তাকে নিবন্ধনের পাসওয়ার্ড সরবরাহ করা হয়েছে। 

তবে বাস্তবতা হলো, এই ব্যবস্থাগুলো তেমন কার্যকর হয়নি এবং যথাযথ প্রচারণার অভাবে অনেক নাগরিক জানেন না, তাঁরা নিবন্ধনসেবা কোথায় পাবেন। এ সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে। প্রথমত, সংশ্লিষ্ট সব কর্মকর্তার মধ্যে দায়িত্ব ভাগ করে দিতে হবে এবং নাগরিকদের সঠিক তথ্য প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে। আন্দোলনকারীদের আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্ত কার্যালয়গুলোর সামনে তথ্যবহুল ব্যানার টাঙানোর মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করা যেতে পারে, যাতে তাঁরা বিকল্প সেবাকেন্দ্রের সন্ধান পান। দ্বিতীয়ত, নিবন্ধনসেবার ক্ষেত্রে অনলাইনভিত্তিক ব্যবস্থার উন্নয়ন করে নাগরিকেরা ঘরে বসে নিবন্ধনের আবেদন করতে পারবেন—এমন ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। এতে সরাসরি কার্যালয়ে উপস্থিত না হয়েও সেবা গ্রহণের সুযোগ থাকবে। 

যেহেতু জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধনের সেবা অচল রেখে নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করা অসম্ভব, সেহেতু বিষয়টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে দ্রুত এই সমস্যা সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সচেষ্ট হওয়া শুধু বিধেয় নয়, জরুরিও।