সিলেটে গ্যাসের পাইপলাইন

টিলা কাটা সহজ কিন্তু হাজার কোটি টাকা খরচ করে আরেকটি টিলা তৈরি করতে পারবেন না বলে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন যে মন্তব্য করেছেন, সেটি দশ কথার এক কথা। সোমবার মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলায় কৃষকদের মধ্যে বিনা মূল্যে হাইব্রিড ধানের বীজ বিতরণ অনুষ্ঠানে অনলাইনে যুক্ত হয়ে মন্ত্রী এসব কথা বলেছেন।

কেবল টিলা কেন, পাহাড়, নদী, বন, জলাভূমি একবার ধ্বংস হয়ে গেলে সেসব কখনোই উদ্ধার করা যায় না। সমতলভূমির বাংলাদেশে
সিলেট ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে কিছু কিছু টিলা-পাহাড় আছে। কিন্তু অতিলোভী মানুষের আগ্রাসনে সেসব ধ্বংস হতে চলেছে। প্রতিবছর বর্ষার মৌসুমে অনেক পাহাড়-টিলা ধসে পড়ে এর পাশে মাটি কেটে নানা রকম স্থাপনা নির্মাণের কারণে।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর অনুষ্ঠানটি আয়োজন করেছিল স্থানীয় কৃষকদের মধ্যে হাইব্রিড ধানের বীজ বিতরণ করতে। মন্ত্রী যে কৃষকদের সদুপদেশ দিয়েছেন, তাঁরা কখনো পাহাড়-টিলা ধ্বংস করেন না। কাজটি করেন প্রভাবশালী ও ধনাঢ্য ব্যক্তিরা, যাঁদের সঙ্গে মন্ত্রী-সাংসদদের দহরম-মহরম কারও অজানা নয়। অনেক সময় ক্ষমতাসীন দলের হোমরাচোমরা ব্যক্তিরাও পাহাড়-টিলা-বন দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করে থাকেন। পরিবেশমন্ত্রীকে বুঝতে হবে, শুধু কথায় কাজ হবে না। ধর্মের কাহিনি বলে পাহাড়-টিলাখেকোদের নিবৃত্ত করা যাবে না।

পরিবেশমন্ত্রী যেদিন কৃষকদের পরিবেশ রক্ষার উপদেশ দিয়েছেন, সেদিনই প্রথম আলোতে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্কে গ্যাস-সংযোগের পাইপলাইন বসানোর জন্য শহরে টিলা কাটার খবর প্রকাশিত হয়। গত শনিবার দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, টিলাটির দুই পাশে দুটি লাল নিশান টাঙানো। সিলেট-কোম্পানীগঞ্জ সড়কের জন্য টিলাটির এক পাশে প্রতিরক্ষাদেয়াল রয়েছে। সেখান থেকে কাটা হয়েছে টিলা। পশ্চিম দিকের অংশ যত্রতত্রভাবে খোঁড়া। টিলার ঢাল থেকে চূড়ার দিকের প্রায় চার শতক খোঁড়া অবস্থায় রয়েছে। পূর্ব দিকে টিলার ঢাল কেটে নেওয়ায় খাড়া হয়ে পড়েছে একাংশ। এ জন্য কোম্পানি পরিবেশ অধিদপ্তর বা উচ্চ আদালতের অনুমতি নেয়নি। কোম্পানির কর্মকর্তারা বলেছেন, তাঁরা অনুমতির জন্য পরিবেশ বিভাগের কাছে আবেদন করেছেন। আবেদন করেই কি তাঁরা টিলা কাটতে পারেন?

পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫-এর ৬(খ) ধারা অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সরকারি বা আধা সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন বা দখলাধীন বা ব্যক্তিমালিকানাধীন পাহাড় ও টিলা কর্তন করতে পারবে না। তবে অপরিহার্য জাতীয় স্বার্থে অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নিয়ে পাহাড় বা টিলা কাটা যেতে পারে। পরিবেশ অধিদপ্তরে একটি দরখাস্ত পাঠিয়েই যদি টিলা কাটা যায়, তাহলে আর কোনো পাহাড়-টিলা অবশিষ্ট থাকবে না। উন্নয়নের নামে এভাবে যথেচ্ছ পাহাড়-টিলা কাটা বন্ধ হোক।