স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা

অবস্থাটা এমন হয়েছে যে মাস্ক ব্যবহার করতে যত বেশি নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে, তত বেশি তা লঙ্ঘনের প্রবণতা যেন বেড়েছে। আসন্ন শীত মৌসুমে করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় সরকার নাগরিকদের নানাভাবে সতর্ক করার চেষ্টা করছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও বিশিষ্টজনেরা মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেই যাচ্ছেন। স্বাস্থ্য বিভাগ ও গণমাধ্যমও মানুষের কাছে নানাভাবে আবেদন-নিবেদন করছে। কিন্তু অবস্থাটা হচ্ছে—কে শোনে, কার কথা?

মাস্কের ব্যবহার নিয়ে সরকার এ পর্যন্ত বেশ কয়েকটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে, এ নিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ের ৯টি নির্দেশনা রয়েছে। এমনও বলা হয়েছে যে প্রয়োজনে মাস্ক পরতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে। ঢাকাসহ বেশ কিছু স্থানে আদালত অভিযান চালিয়েছেন এবং জরিমানাও করছেন। এত কিছুর পরও মাস্ক ব্যবহারে অনীহা বরং বেড়েছে বলেই মনে হয়। রাস্তাঘাট, হাটবাজার ও জনাকীর্ণ স্থানগুলোতে মানুষের চলাফেরা অনেকটাই করোনা-পূর্ব স্বাভাবিক সময়ের মতোই। প্রশ্ন হচ্ছে এমন একটি জনগুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে মানুষ কেন সচেতন হচ্ছে না, মানুষকেই-বা কেন সরকার উদ্বুদ্ধ করতে পারছে না।

এ প্রসঙ্গে একটি কথা বলে রাখা ভালো, জনগণ কথা শুনছে না বা স্বাস্থ্যবিধি মানছে না, এটা বলে কিন্তু দায়িত্ব শেষ করার সুযোগ নেই। স্বাস্থ্যবিধি মানানোর দায়িত্বটা সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিভাগ ও দায়িত্বপ্রাপ্তদের। এ ক্ষেত্রে সরকারের কঠোরতা ও আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগ একান্তই কাম্য।

এ প্রেক্ষাপটে সরকার ‘নো মাস্ক, নো সার্ভিস’ নীতি গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর মানে, সরকারি ও বেসরকারি অফিসে কেউ মাস্ক ছাড়া গেলে সেবা পাবেন না। গত রোববার মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে সরকারের এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়। এখন এ সিদ্ধান্ত যথাযথভাবে বাস্তবায়নই হচ্ছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। তবে একইভাবে হাটবাজার, গণপরিবহন এবং জনসমাগমস্থলে মাস্ক ব্যবহারে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে অনুরোধ ও বাধ্য করা—দুটিই দরকার, প্রয়োজনে জরিমানার বিধান কার্যকর করা যেতে পারে। সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন ২০১৮ অনুযায়ী, কেউ স্বাস্থ্যবিধি না মানলে জেল-জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে। তাই মাস্ক না পরে বাইরে বের হলে ভ্রাম্যমাণ আদালত কিন্তু জরিমানা করতেই পারেন।

করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্যবিধি মানা ছাড়া এখন পর্যন্ত আর কোনো বিকল্প কারও কাছে নেই। এখন পর্যন্ত করোনার টিকা বাজারে আসেনি এবং এ জন্য আরও কয়েক মাস হয়তো অপেক্ষা করতে হবে। তাই মাস্ক পরা, নিয়ম মেনে হাত ধোয়া এবং সামাজিক দূরত্ব মেনে নিজেকে সুরক্ষিত করা ও অন্যকে নিরাপদে রাখার দায়িত্ব কিন্তু প্রত্যেক নাগরিককে পালন করতে হবে।

সরকার ও জনস্বাস্থ্যবিদেরা বলছেন, দেশে করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ আসার সম্ভাবনা প্রবল। বিশ্বের অনেক দেশে কিন্তু দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে। সোমবার আনন্দবাজার পত্রিকার খবরের শিরোনাম ছিল, ‘রাজ্যে লাফিয়ে বাড়ল সংক্রমণের হার।’ ২০ অক্টোবর থেকে পশ্চিমবঙ্গে পরপর ছয় দিন সংক্রমণের প্রবণতা ঊর্ধ্বমুখী।

জনগণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চললে বাংলাদেশে সংক্রমণ পরিস্থিতি তীব্র হতে পারে। আসুন, আমরা সবাই সচেতন হই। শুধু প্রশাসনিক ব্যবস্থায় সুফল মিলবে, এমনটি এখন আর মনে হচ্ছে না। এ পরিস্থিতিতে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতাদের দায়িত্বটা অনেক বেশি। তাঁরা ছাড়াও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, মসজিদের ইমাম, শিক্ষকসহ সমাজে পরিচিত ও গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের সম্পৃক্ত করে স্বাস্থ্যবিধি মানতে মানুষকে সচেতন ও উদ্বুদ্ধ করা যেতে পারে।