এই যে এত বিরোধিতা, বাধাবিপত্তির মুখেও তিনি (তাজউদ্দীন আহমদ) সবাইকে নিয়ে চলার মতো একটা কঠিন পরীক্ষায় পাস করেছিলেন...
শারমিন আহমদ: তাজউদ্দীন আহমদ যে অসহযোগ আন্দোলনটাকে সংগঠিত করলেন পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে, সেই ’৭১ সালে, সেটা অভূতপূর্ব ছিল। ওই অর্গানাইজিং টেকনিক, ওখানে ব্যাংকিং সেক্টরে কখন টাকা তুলবে, কত তুলবে, ছাত্র-শিক্ষক, ইঞ্জিনিয়ার—তাদের কী রোল হবে। মানে প্রতিটি ব্যাপারে তিনি দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। জীবনব্যাপী তাঁর সেই প্রস্তুতিটাই কাজে লেগেছিল একাত্তরে, সেই উত্তাল একটা সময়, যখন কী করবেন, সরকার গঠন হবে কি না, কোনো নির্দেশনা তিনি পাননি। ওটার মধ্য থেকে তিনি যে কাজগুলো এত সুন্দরভাবে করলেন, ওই জীবনভর প্রস্তুতির কারণেই। একটা জাতির মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়া সুকঠিন ছিল। কারণ, ভেতর থেকে একধরনের বাধা, এদিকে আবার ধরেন ভারতীয় ইন্টেলিজেন্স, তাদের একটা আলাদা ব্যবস্থা ছিল—সেখান থেকে বাধা; একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র, চীনের বাধা।
দেখেন, পররাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে তাঁর কত বড় জ্ঞান ছিল। ভারত আমাদের অস্ত্রগুলো ঠিকমতো দিতে পারছিল না। কারণ, ভারতের এক পাশে চীন, এক পাশে পাকিস্তান এবং যুক্তরাষ্ট্র, মানে বৈরী শক্তি। সে সময়কার জিওপলিটিক্যাল, স্ট্র্যাটেজিক্যাল অ্যালাইনমেন্টটা আলাদা ছিল আজকের থেকে। সেই অবস্থায় ভারতও ভাবছে, তার পাশে তো কোনো পরাশক্তি নেই, বড় শক্তি নেই।
সোভিয়েত ইউনিয়নকে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে আনার জন্য আমরা ভারতের ভূমিকাটা জানি। কারণ, ভারত আমাদের মুক্তিযুদ্ধের স্টোরিটা যেভাবে সাজিয়েছে, বলেছে, আমাদের পক্ষ থেকে কিন্তু আমরা আমাদের যুদ্ধের কথা তুলিনি। এখন আমার কষ্ট লাগে, যেহেতু আমাদের স্টোরি, আমাদের বীরত্বগাথা—আমাদের নৌ কমান্ডো, বৈমানিকেরা কত ত্যাগ-তিতিক্ষার সঙ্গে যে যুদ্ধটা করেছিলেন! পাকিস্তানে ভারত যখন পাল্টা হামলা করল, তার আগেই কিন্তু আমাদের বিমানবাহিনী ভারতকে বলছিল, ‘আমরা আগে অ্যাটাক করব।’
চিন্তা করে দেখেন, একটা কমার্শিয়াল হেলিকপ্টারের জানালা-দরজা খুলে ওটাকে একটা যুদ্ধ হেলিকপ্টারের মতো করে সাজিয়ে নিচু জায়গা দিয়ে উড়ে গিয়ে বোমা ফেলল। এটা যে কত বড় দুঃসাহসিক কাজ ছিল, আমাদের এয়ারফোর্স হিস্ট্রিতে, আমাদের স্কুল-কলেজের পাঠ্যসূচিতে ওই কথাটা কোথায়?
আমি বলি, মুক্তিযুদ্ধের সময়টায় ৯-১০ বছরের কাজ তিনি ৯ মাসে কীভাবে সামাল দিলেন! সোভিয়েত ইউনিয়ন বলেছে, ‘আমরা বাংলাদেশের পক্ষে ভারতের পাশে এসে দাঁড়াই।’ এ কারণে আমরা দেখছিলাম, এখানে একটা প্রজ্ঞাশীল নেতৃত্ব আছে। তাঁরা যখন তাজউদ্দীন আহমদের সঙ্গে কথা বললেন, তাজউদ্দীন আহমদ বাংলাদেশ পলিসি সেলের মাধ্যমে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি, তার ভৌগোলিক চিন্তা—তারা কীভাবে একটা নবজাত রাষ্ট্রকে গড়ে তুলছে, এই কথাগুলো তখন যারা এমন কনভিন্সিংভাবে সোভিয়েত ইউনিয়নকে জানায়, সেটার ফলে ভারত-সোভিয়েতের ওই মৈত্রী চুক্তি হয় আগস্ট মাসে। সেটার পেছনে বাংলাদেশ সরকার, তাজউদ্দীন আহমদের অভূতপূর্ব অবদান ছিল। একটা বিশ্বশক্তিকে নিয়ে আসার জন্য তাঁর যে মেধা, দক্ষতা, এটা আজকের প্রজন্ম যত জানবে, তত গর্বিত হবে।
একই সঙ্গে দেখেন, তখন ভারতের সরকার, ভারতের আরও অন্যান্য রাজ্যের বামপন্থী গণতন্ত্রী সরকার এই তাজউদ্দীন আহমদ বা বাংলাদেশের প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের এসব উদ্যোগকে সমর্থন করেছে। এবং বিশ্বব্যাপী একটা জোট ভারতকে সমর্থন করল—সোভিয়েত ইউনিয়ন–সমর্থক সব রাষ্ট্র এবং আরও অন্য শক্তিগুলোরও একটা ভূমিকা ছিল। সেভাবেই একটা মুক্তিযুদ্ধের সর্বদলীয় উপদেষ্টা পরিষদ হয়েছে, যেটা কাজ করতে পারল না এবং এটা গঠনের পেছনে কিন্তু তাজউদ্দীন আহমদের একটা বড় ভূমিকা, চেষ্টা ছিল দলের ভেতরে বিরোধিতা থাকা সত্ত্বেও। সবাইকে নিয়ে চলা; আবার শুধু নিজ দল নয়, দলের বাইরে অন্যদেরও যুক্ত করে নিয়ে আসা। সেখানে মাওলানা ভাসানী, মনোরঞ্জন ধর, কংগ্রেস দল, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি বা কমিউনিস্ট পার্টি—সবাইকে মিলিতভাবে নিয়ে উপদেষ্টা পরিষদ হয়েছিল এবং এই কৃতিত্ব তাজউদ্দীন আহমদের।
শারমিন আহমদ: তিনি জাতীয়ভাবে সব দল মিলে করতে চেয়েছিলেন। ওই দলেরই কিছু লোক বলছিলেন যে তাঁরা বিরোধী দলকে নেবেন না।
তখন এটা না হলে সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে ভারতের চুক্তি বা সোভিয়েত সমর্থনটা কতটুকু হতো, এটাও একটা বড় প্রশ্ন ছিল। সে জন্য এই ধরনের উদ্যোগগুলোর পেছনে তাজউদ্দীন আহমদের একটা বড় ভূমিকা আমরা সব সময় দেখতে পাই।
আরেকটু পেছনে একটা ঘটনায় নিয়ে যাই। তিনি যখন চলে গেলেন, তার দু-তিন দিন পর জোহরা তাজউদ্দীন একটা ছোট চিরকুট পেলেন, ‘আমি চলে গেলাম। দেখা হলো না। তোমরাও সাত কোটি মানুষের সঙ্গে মিশে যেয়ো এবং দেখা হবে মুক্তিযুদ্ধের সফলতার পরে।’ এই যে তাঁর চলে যাওয়া, তার তিন মাস পর কিন্তু আপনারা কলকাতায় গেলেন। তখন মুক্তিযুদ্ধে প্রবাসী সরকারের সিদ্ধান্ত ছিল, কেউ পারিবারিক জীবন যাপন করবেন না। সে জন্য তিনি কিন্তু তাঁর অফিসে থাকতেন। এই যে জীবনযাপন, এটাও কিন্তু তাঁর শৈশব থেকে পরবর্তী জীবনে আমরা দেখলাম। এই কলকাতায় আপনাদের জীবন, এই কাহিনি কিছু মনে পড়ে আপনার—ওই সময়কার কথা, যা মায়ের কাছ থেকে শুনেছেন?
শারমিন আহমদ: ওই সময় যেহেতু আমার বয়স ১১, আমার স্মৃতিতে অনেক কিছু স্পষ্ট-উজ্জ্বল মনে আছে। আম্মার কাছে যখন চিরকুটটা এল, তিনি তাতে বললেন, ‘লিলি, যাওয়ার সময় কিছু বলে আসতে পারিনি, মাফ করে দিয়ো। তুমি ছেলেমেয়ে নিয়ে সাড়ে সাত কোটি মানুষের সঙ্গে মিশে যেয়ো। কবে দেখা হবে জানি না।...ইতি দোলনচাঁপা।’ দেখেন কী সুন্দর! একজন পুরুষ, একজন যুদ্ধরত রাজনীতিবিদ, তাঁর নামটা কিন্তু দোলনচাঁপা। দেখেন কত কাব্যিক! ওটা আব্বু-আম্মুরও প্রিয় ফুলের একটা। দোলনচাঁপা দেখলে আম্মা বুঝে নিতেন যে এটা আব্বুই। এখনো যখন আব্বুর শেষশয্যায় যাই, দোলনচাঁপা নিয়ে যাই। তাঁর প্রিয় ফুল। আম্মা বেলি ফুল পছন্দ করতেন, বেলি ফুল নিয়ে যাই।
১৯৭১ সালের ২৫ মে, কবি নজরুলের জন্মদিনের দিন বা ও রকম কাছাকাছি দিনে আমরা সীমান্ত পার হলাম। যাওয়ার পর আম্মুর তো খুব আগ্রহ, ‘তোমার আব্বুকে সব ঘটনা বলতে হবে।’ কারণ, পাকিস্তান আর্মি স্টেনগান আম্মার বুকে ধরল। আম্মা উর্দু খুব ভালো বলতে পারতেন, ওটা বলে বেঁচে গেলেন। ভাড়াটে সেজে রক্ষা পেলেন। আমাদের নাম ডেথ লিস্টে ছিল। ওরা বলছিল যে তাজউদ্দীন আমাদের মূল শত্রু, সেটা তো জানেন।
রাও ফরমান, খাদিম হোসেন রাজা, এমনকি ভুট্টো—তাদের লেখনীতে আছে, ‘আমাদের মূল শত্রু কিন্তু আসলে তাজউদ্দীন আহমদ।’ আমরা মৃত্যুতালিকায়। আম্মা বলছিলেন, এসব রোমহর্ষ কাহিনি বলতে হবে, তাজউদ্দীনকে জানাতে হবে। কিন্তু তাজউদ্দীন আহমদ রাতের বেলায় আম্মার ফোনটা ধরলেন। আমরা তখন হোসেন আলী সাহেব, যিনি বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে আনুগত্য প্রকাশ করলেন, তাঁর বাসভবনে। তাঁকে আব্বু বললেন, ‘আমি আসব রাতের বেলায়।’
আপনারা সেখানে প্রথম গিয়ে উঠলেন?
শারমিন আহমদ:…গিয়ে উঠলাম, প্রথমে তো বিধ্বস্ত। সোনামুড়া, বক্সনগর, আগরতলা—নানা জায়গায় থেকে তারপর কলকাতায় তাঁর বাড়িতে উঠলাম। আব্বু বললেন, ‘তুমি এসে গেছ। আচ্ছা রাতে দেখা হবে।’ রাত একটার দিকে তিনি এলেন। আমার স্পষ্ট মনে আছে, আমি তখন অধীর আগ্রহে জেগে আছি। বারান্দায় আমি বই পড়ছিলাম, দেখি আব্বু ঢুকছেন। হোসেন আলী সাহেব তাঁকে নিয়ে ঢুকছেন। তিনি এসে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে প্রথম কথা কী জিজ্ঞেস করলেন জানেন? আমার মাথায় হাত বুলিয়ে ‘আচ্ছা আচ্ছা ভালো’ বলেই তিনি বললেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের অবস্থা কী? আমাদের ওই কাপাসিয়ায়, ওসব এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের কী তৎপরতা?’
তিনি একটা ১১ বছরের মেয়েকে বলছিলেন কথাগুলো! মানে তিনি যে কতখানি নিবেদিত ছিলেন! আমিও আবার বললাম, আমাদের কাপাসিয়ার ছেলেরা উত্তরখানের, দক্ষিণখানের এলাকায় ট্রেনিং নিচ্ছে। ওখানে ট্রেনিং নিয়ে তারা এখন সংগ্রামে গেছে। কাপাসিয়া থানা থেকে ওদের অনেক অস্ত্র হাতে এসেছে। সেসব দিয়ে পাকিস্তানি বাহিনীর মোকাবিলা করছে।
আম্মার সঙ্গে যখন দরজার সামনে আমি, আব্বু—হোসেন আলী সাহেব নক করলেন, আম্মা বের হয়ে এলেন। ওই দরজার সামনে দাঁড়িয়েই আব্বু সোহেল, মিমি, ওদের দেখেন। রিমি ওরা ঘুমে। আব্বু বলেন, ‘লিলি, তোমাকে একটা কথা বলব, আমরা প্রতিজ্ঞা করেছি, ক্যাবিনেটের আমরা পারিবারিক জীবন যাপন করব না, যত দিন দেশ স্বাধীন না হয়। এটা একটা সরকারি অফিসারের বাসা, এখানে থাকাটা সমীচীন নয়। তোমাদের অ্যাজ সুন অ্যাজ পসিবল মুভ করা হবে।’ সম্ভবত এক-দুই মিনিট। আম্মা বলেন, ‘আমি অবাক দৃষ্টিতে তাজউদ্দীনের দিকে তাকিয়ে আছি। এ কে? ইনি কি একজন মহামানব? আমি তাঁর সেই যুগান্তকারী সিদ্ধান্তের সঙ্গে একাত্মতা জানিয়েছিলাম এবং আমার দৃষ্টি দিয়েই আমি তাঁর সঙ্গে একাত্মতা জানিয়েছিলাম এবং তিনিও সে দৃষ্টি দিয়ে বুঝলেন আমি বুঝেছি।’ কী সুন্দর!
এসেছিলেন সাত মিনিটের জন্য…
শারমিন আহমদ: অবিশ্বাস্য! মাই ফাদার ওয়াজ আ ওয়াকিং লেসন অব মোরালিটি, এথিকস, ইন্টেগ্রিটি…অল দ্যাট ওয়ান কুড থিংক অফ। অ্যামেজিং। আমার এটা মনে পড়ে। আরেকটা তো নিজের চোখেই দেখলাম, আব্বু কাপড় কাচছেন। আব্বুর বুকের ফোড়া ফেটে রক্ত বের হচ্ছে। আমরা আব্বুকে জানান না দিয়ে তাঁকে দেখতে গিয়েছিলাম—সেই ৮ নম্বর থিয়েটার রোডের যে ঘরটায় থেকে যুদ্ধ পরিচালনা করতেন। বাথরুমের ফ্লোরের মধ্যে ওই জ্বর নিয়ে তিনি কাপড় কাচছেন। একমাত্র কাপড় কেচে শুকিয়ে ওটা পরে সিনেটর কেনেডির সঙ্গে দেখা করতে যাবেন। এ রকম একজন মানুষকে আমরা কেন জানি না? তাঁকে কেন লুকিয়ে রাখা হলো? ইতিহাসের এই কারচুপিটা কেন করা হলো? জাতিকে প্রশ্ন করতে হবে না?
তরুণ প্রজন্ম আজ খুব গর্বিত বোধ করবে—এমন একজন বিশ্বমানের মানুষ ছিলেন। তাঁকে খুঁজতে গেলে আরও অনেক ভালো মানুষ তারা খুঁজে পাবে মুক্তিযুদ্ধে। আমি একটা কথা লিখেছিলাম, বাংলাদেশ একদিন তার নিজস্ব প্রয়োজনে তাজউদ্দীন আহমদকে খুঁজে নেবে। আমার মনে হয়, সেই সময় আগত।
আপনি যে বললেন, আমরা সেভাবে স্মরণ করিনি, মনে করিনি; আসলে স্বাধীনতার পর থেকে সঠিকভাবে তাঁর উপস্থাপনাটা হয়নি দেশবাসীর সামনে। তাই আমরা দেখি তাজউদ্দীন আহমদের ভূমিকাকে খাটো করার চেষ্টা হয়েছে। এগুলো কিন্তু ইতিহাসের পাতায় ঠিক সেভাবে স্থান পায়নি।
তাজউদ্দীন আহমদ ছয় দফার অন্যতম রূপকার। এটা প্রতিষ্ঠিত একটা সত্য। রেহমান সোবহান, যিনি ছয় দফা প্রণয়নের সঙ্গে যুক্ত, তিনি নিজেই বলছেন, ওটার ভেতরের যে যুক্তি, ইকোনমিক পলিসিগুলো আব্বু যেমন গভীরভাবে বুঝতেন, খুব কম মানুষই সেগুলো বুঝতেন। অথচ আমরা এই পর্যায়ে এসে পৌঁছেছিলাম। কিন্তু এটা তো ব্যাকফায়ার হলো। আজকে যদি সবার ইতিহাসটা তুলে ধরা হতো, তাহলে তো এই জায়গায় আমরা পৌঁছাই না।
শারমিন আহমদ: এমনি একটা উদাহরণ দিই। একজন তরুণ লেখক, সে লিখেছে ছোটদের তাজউদ্দীন। তাজউদ্দীন আহমদকে নিয়ে এটাই ছোটদের জন্য দ্বিতীয় বই। চমৎকার বই। মেয়েটা গোল্ড মেডেলও পেয়েছে। ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট পিস অ্যান্ড কনফ্লিক্ট স্টাডিজে। নাম নাসরিন জেবিন। সে তাজউদ্দীন আহমদকে ছয় দফার অন্যতম রূপকার লিখেছিল। তাকে কিন্তু রীতিমতো থ্রেট করা হয়েছে, ‘রূপকার’ শব্দটা যেন লেখা না হয়। বইটা প্রকাশিত হয়েছে ২০২৪ সালের জুলাইয়ের আগে।
অভ্যুত্থানের পর প্রকাশিত হলে হয়তো লিখতে পারত। কিন্তু তখন ওই রূপকার কথাটা বদলে ওরা মুখবন্ধ লিখেছিলেন। যাঁরা প্রকাশনার সঙ্গে যুক্ত, তাঁরা তাকে বলেছিলেন, এটা করলে তোমার বিপদ হবে। ছাত্রলীগের হামলার শিকার হতে পারো। মানে কোন দেশে আমরা বাস করতাম?
তাজউদ্দীন আহমদ ছয় দফার অন্যতম রূপকার। এটা প্রতিষ্ঠিত একটা সত্য। রেহমান সোবহান, যিনি ছয় দফা প্রণয়নের সঙ্গে যুক্ত, তিনি নিজেই বলছেন, ওটার ভেতরের যে যুক্তি, ইকোনমিক পলিসিগুলো আব্বু যেমন গভীরভাবে বুঝতেন, খুব কম মানুষই সেগুলো বুঝতেন। অথচ আমরা এই পর্যায়ে এসে পৌঁছেছিলাম। কিন্তু এটা তো ব্যাকফায়ার হলো। আজকে যদি সবার ইতিহাসটা তুলে ধরা হতো, তাহলে তো এই জায়গায় আমরা পৌঁছাই না।
আমরা কিন্তু অধ্যাপক নুরুল ইসলাম, অধ্যাপক রেহমান সোবহান, অধ্যাপক আনিসুর রহমান—তাঁদের লেখাগুলো পড়লে দেখতে পাই, এই ছয় দফা গঠন এবং পরবর্তী কার্যক্রমের যে বিভিন্ন রকম তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ বা আলোচনা, সেখানে তাজউদ্দীনকে তাঁরা যথেষ্ট পরিমাণে গুরুত্ব দিয়েই বলছেন। এই স্বীকৃতি কিন্তু প্রত্যেকের লেখায় এখন পাওয়া যায়। এ ধরনের লেখা আরও হচ্ছে, আরও হবে বলে আমরা মনে করি। আমি দেখছি এটা হচ্ছে।
শারমিন আহমদ: তাজউদ্দীন আহমদ বেঁচে থাকলে তো তা-ই চাইতেন। তিনি সব সময় ভালোদের সামনে নিয়ে আসতেন, কিন্তু নিজেকে আড়ালে রাখতেন। তাঁর প্রবণতাটাই ছিল না সব জাহির করার। তিনি আবার একটু লাজুক প্রকৃতিরও ছিলেন। আমরা যদি এই কালচারটা আবার নিয়ে আসতে পারি, জাতি উঠে যায়। সবাই তো যার যার পরিধিতে একেকটা নক্ষত্র।
( আগামীকাল শুক্রবার সাক্ষাৎকারের তৃতীয় ও শেষ পর্ব প্রকাশিত হবে )